এবার পূজিতা হবেন 'মণিপুরের মা', নারীশক্তির অন্যরূপ ফুটিয়ে তুলছেন শিল্পী ভবতোষ সুতার
Durga Idol on Manipur: দুর্গাপুজোয় যাঁদের কাজ বেশ কয়েক বছর ধরেই খ্যাতি পেয়েছে, সেই শিল্পীদের মধ্যে অন্যতম ভবতোষ সুতার। আর এবার তার হাতেই ফুটে উঠছে মণিপুরের মা।
মণিপুর। উত্তরপূর্বের এই ছোট্ট রাজ্যটি থেকে দু-এক মাস আগে পর্যন্ত দফায় দফায় এসেছে হিংসার খবর। নারী নির্যাতনের যে নজির দেখেছে বিশ্ব, তা যে কোনও সভ্য সমাজের ব্যাখ্যার বাইরে। একবার নয়, বারবার এমনই ভয়াবহ নারী নির্যাতনের ইতিহাসের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে মণিপুর। মনোরমা থেকে শুরু করে আজকের মণিপুরের নগ্নিকা, এতদিন পরেও বদলায়নি কিছুই। সেই মণিপুরের মা-কেই এবার মাটি-তুলিতে ফুটিয়ে তুলছেন কলকাতার এক শিল্পী। এ বছরের শারদোৎসবে দুর্গারূপে পূজিত হতে চলেছেন সেই মণিপুরের মা-ই।
দিনের পর দিন ধরে অকথ্য নির্যাতন চলেছে মণিপুরের মেয়েদের উপরে। জাতি সংঘর্ষের নামে চলেছে অপরিসীম হিংসা। এমনকী নগ্ন করে হাঁটানো হয় মণিপুরের দুই কন্যাকে। সেই ছবি ভাইরাল হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। যা দেখে ভয়ে শিউরে উঠেছিল গোটা দেশ মায় বিশ্ব। নড়েচড়ে বসেন রাষ্ট্রনেতারা, বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠনগুলির ঘুম ওড়ে। তার পরেও পরিস্থিতি বদলায়নি। বিশ্বের সামনে সেসব ছবি আসা বন্ধ হয়েছে শুধু। এবার সেই অপরিসীম হিংসার বিরুদ্ধেই প্রতিবাদ শানাল কলকাতার একটি দুর্গাপুজো কমিটি।
আরও পড়ুন: উত্তর কলকাতায় নামছে বিক্রম ল্যান্ডার! দুর্গাপুজোয় যে বিশাল চমক পাচ্ছে কলকাতাবাসী
দুর্গাপুজোয় যাঁদের কাজ বেশ কয়েক বছর ধরেই খ্যাতি পেয়েছে, সেই শিল্পীদের মধ্যে অন্যতম ভবতোষ সুতার। আর এবার তার হাতেই ফুটে উঠছে মণিপুরের মা। এবারের দুর্গা প্রতিমা বানাতে গিয়ে শিল্পীর ভাবনায় রয়েছে সেই মণিপুর। থিম পুজো কলকাতায় কোনও নতুন বিষয় নয়। বহু বছর ধরেই কলকাতার বড় প্যান্ডেলগুলির ক্ষেত্রে কাজ করেছে বিশেষ কোনও বিষয় ভাবনা।
এবার কলকাতার বাগুইআটি এলাকার একটি সর্বজনীন দুর্গাপুজোর থিম হিসেবে মণিপুরকে বেছে নিয়েছেন শিল্পী ভবতোষ সুতার। প্যান্ডেল জুড়ে থাকছেন সাধারণ শাড়ি পরিহিত মণিপুরের মা- দুর্গা। দৃঢ়চেতা তাঁর চেহারা। পাশে লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক এবং গণেশকে নিয়ে একটি শোভাযাত্রার নেতৃত্ব দিচ্ছেন মণিপুরের সেই মা।
ভবতোষ সুতার জানিয়েছেন, মণিপুরের সামগ্রিক পরিস্থিতি তাঁকে যন্ত্রণা দিয়েছে। আর সেই যন্ত্রণাকেই তিনি মাটি আর রঙে তুলির মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন। ভবতোষ জানান, নারীকে সমাজ দেবীর আসনে বসায়, দেবী দুর্গা, কালীর মতো স্ত্রীশক্তিকে পুজো করে, সেই সমাজেই নারীকে চাঁদমারি করে চলে হামলা। সেই সমাজই নারীর পোশাক নিয়ে তাঁকে অসম্মান করে। যে কোনও দেশের প্রতিটি যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হন নারীরাই। সহজ লক্ষবস্তু যেন তাঁরাই। সেই আশ্চর্য সমাজব্যবস্থারই বিরোধিতা করেছেন শিল্পী তাঁর কাজের মাধ্যমে।
শিল্পী জানিয়েছেন, তাঁর এই মণিপুরের দুর্গা প্রতিমাটির গঠন হবে রুক্ষ। বেশিরভাগ দুর্গাপ্রতিমার ক্ষেত্রে যে মসৃণতা লক্ষ্য করা যায়, তা থাকছে না এক্ষেত্রে। বরং নারীদের জীবন, বিশেষত মণিপুরের মায়েদের জীবন যেমন রুক্ষ, সেই রুক্ষতাকেই প্রতিমার মাধ্যমে তুলে ধরতে চেয়েছেন তিনি। সেই দেবীর সন্তানেরা মিশে থাকবেন ভিড়ে, লোকের মাঝে। সমসাময়িক পরিস্থিতির যে কঠিন রূপ তাকেই উৎসবের মেজাজে তুলে ধরেছেন ভবতোষ সুতার।
আরও পড়ুন: মৃৎশিল্পীর ভুলে দেবী হয়ে গেলেন নীল, কৃষ্ণনগরের দুর্গাপুজোর ইতিহাস আজও বিস্ময় জাগায়
প্রতিবছরই তাঁর গড়া প্রতিমার থিমে ছড়িয়ে থাকে সমসাময়িক পরিস্থিতির ছবি। গত বছর অভিবাসী শ্রমিকদের ঘরে ফেরার ছবি তুলে ধরেছিলেন তিনি প্রতিমার মাধ্যমে। এবারও তেমনই একটি ভাবনাকে দুর্গাপুজোর মাধ্যমে ফুটিয়ে তুললেন শিল্পী বাগুইআটির অর্জুনপুর পুজো মণ্ডপে। সমাজ নারীদের নিয়ে সচেতন হোক, শুধু দেবী হিসেবে নয়, মানুষ হিসেবে সম্মান করুক, পাশাপাশি মণিপুরের পরিস্থিতির কথা ছড়িয়ে পড়ুক জনসাধারণের মধ্যে, সেই বার্তাটুকু পৌঁছে দিতেই এই প্রচেষ্টা বলে জানিয়েছে মণ্ডপ কর্তৃপক্ষ।