৩৫০০ বছর ধরে বরফের মধ্যে 'বহাল তবিয়তে'! যে প্রাচীন ভালুকের দিকে নজর বিজ্ঞানীদের

3500 years old Bear frozen : তাও যে সে প্রাণী নয়, প্রায় ৩৫০০ বছরের প্রাচীন এক ভালুক! এতদিন বরফের নিচে চাপা ছিল সেটি।

উত্তরবঙ্গ হোক বা রাশিয়া, আমেরিকা – পৃথিবীর নানা জায়গায় ভালুকের সমারোহ দেখা যায়। তার এক একরকম চরিত্র, এক একরকম বৈচিত্র্য। কখনও সফট টয় হিসেবে, কখনও আবার গল্পে, কার্টুনে – ভালুকের সঙ্গে আমাদের ‘সম্পর্ক’ আজকের নয়। ঈশপের গল্পেও দিব্যি রয়েছে তার উপস্থিতি। এবার সেই ভালুকই বিজ্ঞানীদের নজরে। তাও যে সে প্রাণী নয়, প্রায় ৩৫০০ বছরের প্রাচীন এক ভালুক! এতদিন বরফের নিচে চাপা ছিল সেটি। হঠাৎ করে বিজ্ঞানীদের টেবিলে চলে এসেছে সে। আপাতত এমন ‘আবিষ্কার’ নিয়েই উচ্ছ্বসিত বিজ্ঞানীরা।

সাইবেরিয়ার উত্তরে বেশিরভাগ অঞ্চলই ঘন বরফে ঢাকা। সেখানেই বল্গা হরিণ চরাতে বেরিয়েছিলেন কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা। হঠাৎই তাঁদের নজর পড়ে বরফের একটি বিশেষ জায়গায়। কিছু একটা যেন রয়েছে সেই পুরু, সাদা বরফের নিচে। রাশিয়ার প্রাণকেন্দ্র মস্কোর থেকে প্রায় ৪৬০০ কিলোমিটার দূরে, বলশয় লিয়াকোভস্কি দ্বীপে এমন ঘটনা ঘটে। তারপরই শুরু হয় অনুসন্ধান। তখনই পুরু বরফের নিচ থেকে পূর্ণবয়স্ক একটি স্ত্রী ভালুকের দেহ আবিষ্কার করেন বিজ্ঞানীরা। ওইরকম বরফের রাজ্যে এমন ভালুক কী করে এল? শুরু হয় গবেষণা।

গবেষণা চলার পরই আসল তথ্য সামনে আসে। সেটা নিয়েই উৎসাহী বিজ্ঞানীরা। পুরো সাইবেরিয়ার লাজারেভ ম্যামথ মিউজিয়াম ল্যাবরেটরির গবেষকদের বক্তব্য, এই ভালুকের দেহ আজকের নয়। অন্তত ৩৫০০ বছরের পুরনো! কোনও কারণে মৃত্যুর পর সাইবেরিয়ার তীব্র শীতে, বরফের নিচে চাপা পড়ে গিয়েছিল এই প্রাগৈতিহাসিক স্ত্রী ভালুকটি। বলশয় এথেরিচান নদীর কাছে এই দেহটি পাওয়া গিয়েছে বলে নামকরণ করা হয়েছে ‘এথেরিকান ব্রাউন বিয়ার’।

আরও পড়ুন : প্রাণ ফিরেছে হাজার হাজার বছরের ‘মৃত’ জীবের, যে ঘটনা শুনলে চমকে উঠবেন আপনিও

কিন্তু এই প্রাচীন ভালুকের দেহটি নিয়ে বিজ্ঞানীরা এত উচ্ছ্বসিত কেন? কারণ, বরফের নিচে দীর্ঘদিন চাপা পড়ে থাকলেও, ভালুকের শরীরে কোনও পচন ধরেনি। শরীরের কোষ-কলাগুলি এখনও ঠিকঠাক আছে। ঠিক এই জায়গাতেই আশার আলো দেখছেন গবেষকরা। ভালুকের পূর্বপুরুষের এই দেহাবশেষ যেহেতু এখনও অনেকটা ঠিকঠাক রয়েছে, তাই গবেষণা চালাতে অসুবিধা হবে না। প্রায় পাঁচ ফুট লম্বা, ৭৮ কেজি ওজনের এই ভালুকটি কী খেত, সেসবও খুঁজে বের করেছেন গবেষকরা। পাশাপাশি তার মস্তিস্ক সহ দেহের অন্যান্য অঙ্গগুলিরও পরীক্ষা করা হবে।

গবেষকরা বলছেন, ভালুকটির শরীরের বিভিন্ন কোষ, অঙ্গ, জেনেটিক গঠন ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা চলছে। এত ভালোভাবে প্রাচীন এই দেহটি পাওয়ার ফলে সেই সময়ের পরিবেশ, প্রাণীদের চরিত্র সহ আরও বিভিন্ন দিক খুব সহজেই জানা যাবে। পরবর্তী গবেষণার জন্য যা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। শরীরের ভেতরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গও এখনও অটুট রয়েছে। ফলে এই বিশেষ আবিষ্কার, প্রাগৈতিহাসিক জীবজন্তু, ভালুকদের চরিত্র বিশ্লেষণে অনেকটাই সাহায্য করবে।

More Articles