মৃতের সংখ্যা ছাড়াতে পারে ২০ হাজার! তুরস্কের ভূমিকম্পে কেন কঠিন হয়ে পড়ছে উদ্ধারকার্য?

Turkey Earthquake: তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তের কাছে বিধ্বংসী ভূমিকম্পের পরে দুই দেশে মৃতের সংখ্যা ৪,৩০০ ছাড়িয়ে গিয়েছে। রিখটার স্কেলে ভূকম্পের মাত্রা ৭.৮।

কেউ কি বেঁচে আছে? কারও মধ্যে কি এক ছটাক প্রাণের স্পন্দনও আছে! তুরস্ক এবং সিরিয়ার উদ্ধারকারীরা মঙ্গলবার হাড় কাঁপানো শীতের রাতে খুঁজে যাচ্ছেন বেঁচে থাকার ঘ্রাণ। এমন ভয়াবহ ভূমিকম্প বহুকাল দেখেনি বিশ্ব! ভেঙে পড়া হাজার হাজার বাড়ির ধ্বংসস্তূপ থেকে যাদের বের করা হচ্ছে সাড়া দিচ্ছে না কেউই, লাশের স্তূপ ছাড়িয়ে যাচ্ছে ধ্বংস্তূপকেও। বেঁচে থাকার উত্তাপ খুঁজে মরছেন উদ্ধারকারীরা। তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তের কাছে বিধ্বংসী ভূমিকম্পের পরে দুই দেশে মৃতের সংখ্যা ৪,৩০০ ছাড়িয়ে গিয়েছে। রিখটার স্কেলে ভূকম্পের মাত্রা ৭.৮।

তুরস্ক এবং সিরিয়ার দুর্যোগ মোকাবিলা দলগুলি জানাচ্ছে ৫,৬০০ টিরও বেশি বাড়ি একেবারে ধুলোয় মিশে গেছে, যার মধ্যে অনেকগুলিই বহুতল। প্রথম ভূমিকম্পের সময় এই বাড়িগুলির বাসিন্দারা ঘুমে নিথর ছিলেন। দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্কের কাহরামানমারাস শহরের প্রত্যক্ষদর্শীরা এখনও বিপর্যয়ের তাৎক্ষণিক আঘাত থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি। তুরস্কের ত্রাণ সংস্থা এএফএডি জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত কেবল সেই দেশেই ২,৯২১ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আধিকারিকদের অনুমান, মৃতের সংখ্যা ২০,০০০-ও ছাড়াতে পারে।

সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের অগণিত উদ্বাস্তুদের আবাসস্থল গাজিয়ানটেপ শহরে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে প্রাণ খুঁজছেন উদ্ধারকারীরা। আটকে পড়া মানুষ বাঁচতে চেয়ে চিৎকার করছেন, কংক্রিটের চাংড়ের মধ্যে থেকে আকুল বাঁচতে থাকা হাত নিথর হয়ে নেতিয়ে গেছে। প্রাথমিক ভূমিকম্পটি এতই ভয়াবহ ছিল যে গ্রিনল্যান্ডে পর্যন্ত সেই কম্পন অনুভূত হয়েছে। ইউক্রেন থেকে শুরু করে নিউজিল্যান্ড- বহু বহু দেশই সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যদিও বরফ বৃষ্টি এবং হিমাঙ্কের নীচে তাপমাত্রায় উদ্ধারের স্বাভাবিক ছন্দও ব্যহত হয়ে পড়ছে। তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় শহর সানলিউরফাতে উদ্ধারকারীরা ধসে পড়া সাততলা বাড়ির ধ্বংসাবশেষ থেকে বেঁচে যাওয়া মানুষদের উদ্ধারে সারা রাত্রি কাজ করে গিয়েছেন।

সকাল দুপুরেও কথা হয়েছে যে প্রিয়জন-বন্ধুদের সঙ্গে, গভীর রাতে ধ্বংসাবশেষের তলায় চলে গিয়েছে সেই মানুষ। সাড়া নেই, সাড়া নেই- মৃত্যুর শৈত্য যেন ছাড়িয়ে গিয়েছে হিমাঙ্ককেও। আর যারা প্রাণে বেঁচেছেন, সর্বস্ব হারা হয়ে গিয়েছেন। সন্তানদের নিয়ে রাস্তার ধারে কোনওমতে টিকে আছেন। কাহরামানমারাস এবং গাজিয়েনটেপের মতো ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের কাছাকাছি জায়গায় আস্ত শহরটাই প্রায় বরফের নিচে ধ্বংসস্তূপে পড়ে আছে।

সোমবার প্রথম ভূমিকম্পটি ভোর ৪:১৭ নাগাদ তুরস্কের গাজিয়ানটেপ শহরের কাছে প্রায় ১৮ কিলোমিটার গভীরতায় আঘাত করে। এখানে প্রায় দুই মিলিয়ন লোকের বাস। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, তুরস্কে এখন পর্যন্ত ১৪,০০০-এরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন, সিরিয়া বলেছে অন্তত ৩,৪১১ জন আহত হয়েছেন। তিনটি প্রধান বিমানবন্দর অকার্যকরী হয়ে পড়ায় জরুরি সাহায্য পাঠাতেও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। পাশাপাশি শীতকালীন তুষারঝড়ে এলাকার প্রধান রাস্তাগুলিও বরফে ঢেকে গিয়ে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে।

সতর্কতা হিসাবে বিশাল অঞ্চল জুড়ে প্রাকৃতিক গ্যাস এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জাতিসংঘের সাংস্কৃতিক সংস্থা ইউনেস্কো ঐতিহ্যের তালিকায় থাকা দু'টি শহর- সিরিয়ার আলেপ্পো এবং তুরস্কের দিয়ারবাকিরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছে।

তুরস্ক বিশ্বের অন্যতম সক্রিয় ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল। ১৯৩৯ সালে ঠিক এই মাত্রারই এক ভূমিকম্প হয়েছিল। পূর্ব এরজিনকান প্রদেশে সেবার ৩৩,০০০ মানুষের মৃত্যু ঘটে। তুর্কির ডুজসে ১৯৯৯ সালে ৭.৪-মাত্রার ভূমিকম্পে ১৭,০০০-এরও বেশি মানুষ মারা যান।

More Articles