টানা ১৪ মাস ধরে প্রস্রাব করছেন না এই যুবতী! যে ভয়ংকর রোগের শিকার হতে পারেন আপনিও

UK Woman 14 Months Unable to Urinate : সেই মূত্রই দিনের পর দিন জমতে থাকে শরীরে? তাও এক-দু’দিন নয়, এক বছরেরও বেশি সময় ধরে যদি মূত্রত্যাগই না হয়!

সঠিক পরিমাণে জল পান, পরিমিত খাবার খাওয়া এবং প্রত্যেকদিন নিয়মমাফিক মূত্রত্যাগ – সুস্থ শরীর বজায় রাখার অন্যতম নিয়ম। আমাদের শরীরের ভেতর যাবতীয় ক্ষতিকর বস্তু, বর্জ্য, আবর্জনা মল ও মূত্র আকারে জমা হয়। সেগুলো শরীর থেকে বেরিয়ে গেলেই সার্বিকভাবে মঙ্গল। কিন্তু যদি সেই মূত্রই দিনের পর দিন জমতে থাকে শরীরে? তাও এক-দু’দিন নয়, এক বছরেরও বেশি সময় ধরে যদি মূত্রত্যাগই না হয়! তখন কী হবে?

কথাটা খানিকটা অদ্ভুত শোনালেও, ইংল্যান্ডের এলি অ্যাডামসের (Elle Adams) কাছে এটা একেবারেই নতুন কিছু নয়। ৩০ বছর বয়সি এই সুন্দরী যুবতী সোশ্যাল মাধ্যমে বেশ সক্রিয়। বিভিন্ন ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি করেন, নিজের ছবিও আপলোড করেন। যথেষ্ট ফিট এবং নিজের শরীরের প্রতিও খেয়াল রাখেন। কিন্তু হঠাৎই শুরু হয় নতুন সমস্যা। এমনি সব ঠিকঠাকই ছিল; কিন্তু এই সমস্যা শুরু হওয়ার পর সবকিছু এক মুহূর্তে বদলে গেল।

কী সমস্যা? কয়েকদিন ধরেই এলি লক্ষ্য করছিলেন, দিনে একবারও তাঁর মূত্রত্যাগ হচ্ছে না। যতবারই জল কিংবা অন্যান্য পানীয় খান না কেন, কিছুতেই প্রস্রাব হচ্ছিল না। অদ্ভুত ব্যাপার, সেই বেগও আসছিল না। ব্যাপারটা কী? সন্দেহ হতেই লন্ডনের সেন্ট থমাস হাসপাতালে চলে যান এলি অ্যাডামস। সেখানে পরীক্ষার পর দেখা যায়, তাঁর মূত্রাশয়ের ভেতর অন্তত এক লিটার মূত্র জমে রয়েছে! সাধারণত মেয়েদের ক্ষেত্রে যেটা ৫০০ মিলিলিটার থাকার কথা। অর্থাৎ, স্বাভাবিকের থেকে দ্বিগুণ মূত্র জমে আছে এলির শরীরে!

আরও পড়ুন : কিছুতেই হজম হচ্ছে না খাবার, ভিতরে ভিতরে বাসা বাঁধছে ভয়ংকর রোগ, যেসব উপায়ে হতে পারে প্রতিকার

সেই সময় এমারজেন্সি হিসেবে ক্যাথিটার দিয়ে সেই জমে থাকা মূত্র বের করে দেওয়া হয়। তারপরও বেশ কয়েক সপ্তাহ কেটে যায়। ডাক্তাররা বলেন, হয়তো একটু যোগাসন, ব্যায়াম করলেই সবটা ঠিক হয়ে যাবে। সেটাও করলেন এলি। কিন্তু লিছুতেই কিছু হল না। ফের একবার পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হল। তখনই ধরা পড়ল আসল কারণ। ডাক্তাররা বললেন, ‘ফাউলারস সিন্ড্রোম’-এ আক্রান্ত হয়েছেন এলি অ্যাডামস। এর কারণেই ১৪ মাস ধরে মূত্রত্যাগই করতে পারেননি তিনি।

 
 
 
 
 
View this post on Instagram
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 

A post shared by Elle Adams 💫 (@ellenextdoor)

কী এই ফাউলারস সিন্ড্রোম (Fowler's Syndrome)?

সহজ ভাষায় বলতে গেলে, মানুষের মূত্র বা রেচনতন্ত্রের একটি বিশেষ রোগ এটি। এই রোগ হলে মূত্রত্যাগ করতে অসুবিধা হয়। আমাদের মূত্রাশয়ে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ মূত্র জমার পর বেগ আসে। তখনই আমরা প্রস্রাব করার জন্য ছুটি। কিন্তু ফাউলারস সিন্ড্রোম হলে সেই ব্যাপারটি হয় না। মূত্রত্যাগের বেগও আসে না, আর শরীরের ভেতরেই সেই বর্জ্য একটু একটু করে জমতে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যুবতীরা এই রোগে আক্রান্ত হন। কিন্তু কেন হয় এই রোগ, তার সঠিক কারণ আজও জানা যায়নি। ডাক্তাররা এখনও সেসব নিয়ে গবেষণা করছেন।

এর চিকিৎসা কী?

ডাক্তাররা প্রথমে ক্যাথিটারের নিয়ম শিখিয়ে দিয়েছিলেন এলিকে। সেভাবেই বেশ কয়েকদিন নিজে নিজেই ক্যাথিটারের মাধ্যমে মূত্রত্যাগ করছিলেন তিনি। পরে তাঁর সমস্যার একটা সমাধানের জন্য বিশেষ একটি অপারেশন হয় – স্যাক্রাল নার্ভ স্টিমুলেশন (Sacral Nerve Stimulation বা SNS)। এই অপারেশনে স্যাক্রাল নার্ভের সঙ্গে একটি বিশেষ, সরু তার যুক্ত করে দেওয়া হয়। অনেকটা মূত্রাশয়ের পেসমেকারের মতো কাজ করে এই সিস্টেম। এর ফলে পেশিগুলি ফের সচল হয় এবং কিছুটা হলেও স্বাভাবিকভাবে মূত্রত্যাগ করা যায়। সমস্যা হল, এই রোগ যে কোনও কারও হতে পারে। বিশেষ করে যুবতী মেয়েরা এরকম লক্ষণ দেখলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। এখন অবশ্য ঠিক আছেন এলি অ্যাডামস। কিন্তু বছরের পর বছর এই মূত্র শরীরে জমতে থাকলে আমাদের দেহও দুর্বল হয়ে পড়ে। দেখা দেয় আরও অন্যান্য রোগ। তাই, সঠিক সময় সঠিক চিকিৎসা প্রয়োজন।

More Articles