এবার রাশিয়ার দখল নিচ্ছে ইউক্রেন সেনা! প্রত্যাঘাত ফিরিয়ে দেবেন পুতিন?

Russia-Ukraine war: গত সপ্তাহেই সীমান্ত দিয়ে ঢুকে রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলের পশ্চিম অংশের দখল নিয়েছে ইউক্রেন সেনা। ২০২২ সালে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধঘোষণা করেছিল রাশিয়া। তার পরে রাশিয়ায় ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় অনুপ্রবেশ এটি।

২০২২ সালের গোড়ায় হঠাৎ করেই ইউক্রেন আক্রমণ করে বসেছিল রাশিয়া। সেই যুদ্ধের জের এখনও চলছে। এখনও শান্তি ফেরেনি দু'দেশের মধ্যে। ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতের শুরু অবশ্য আরও আগেই। তবে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সেই সংঘাত চরমে পৌঁছয়। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধঘোষণা করে দেয় ভ্লাদিমির পুতিন সরকার। তার পর থেকে কেটে গিয়েছে প্রায় ৯০০ দিন। রুশ সেনার হামলায় কার্যত বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল সে সময় ইউক্রেন। হাজার হাজার বাসিন্দা দেশ ছেড়ে আশপাশের দেশগুলিতে আশ্রয় নেন। তবে পুতিনের আগ্রাসনের সামনে মাথা নোয়াননি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনেস্কি। বরং প্রবল বিপদের মুহূর্তেও মাটি কামড়ে পড়েছিলেন তিনি ইউক্রেনের। সেই যুদ্ধ বাড়তে বাড়তে কেটে গিয়েছে দু'বছরেরও বেশি সময়। মধ্যিখানে রাশিয়া ফের আক্রমণের তীব্রতা বাড়ায় ইউক্রেনে। এর মধ্যে পাল্টা আঘাত ফিরিয়ে দিচ্ছে ইউক্রেন। সম্প্রতি জানা গিয়েছে, রাশিয়ার কুরস্ক সীমান্ত অঞ্চলের ২৮টি শহর ও গ্রামের দখল নিয়েছে ইউক্রেন সেনা। ওই সব শহরের বাসিন্দারা ইতিমধ্যেই এলাকা ছাড়তে শুরু করেছে।

স্বাভাবিক ভাবেই বিষয়টিকে ভালো চোখে দেখছেন না রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সম্প্রতি তিনি জানিয়েছেন, ইউক্রেন দেশের দক্ষিণে ঢুকে রাশিয়ার স্থিতিশীলতা নষ্ট করার চেষ্টা করছে। আর তার ফলাফল যে ভালো হবে না। ইউক্রেনকে যোগ্য জবাব দিতে কোনও ত্রুটি রাখবে না রাশিয়া, সে কথাও সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে তাদের তরফে।

আরও পড়ুন: নিরাপদ আল-জালা রাতারাতি যুদ্ধক্ষেত্র! ইজরায়েলের হুমকি পেয়ে খান ইউনিস ছাড়ছেন হাজার হাজার গাজাবাসী

গত সপ্তাহেই সীমান্ত দিয়ে ঢুকে রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলের পশ্চিম অংশের দখল নিয়েছে ইউক্রেন সেনা। ২০২২ সালে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধঘোষণা করেছিল রাশিয়া। তার পরে রাশিয়ায় ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় অনুপ্রবেশ এই ঘটনা বলেই খবর। ইউক্রেন বাহিনী রাশিয়ার অন্তত ১২ কিলোমিটার ভিতরে ঢুকে এসেছে। এবং প্রায় ৪০ কিলোমিটার প্রশস্ত এলাকা জুড়ে মোতায়েন রয়েছে ইউক্রেনের বাহিনী। কোথায় কোথায় তাদের সেনাবাহিনী গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে, তা বোঝাও যাচ্ছে না দূর থেকে।

ইউক্রেনের এই নয়া অনুপ্রবেশের পর ওই সব এলাকা, ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাদার বাসিন্দা। ৬০ হাজারের কাছাকাছি মানুষ এখনও রয়েছেন। সেখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত আঞ্চলিক গভর্নর অ্যালেক্সেই স্মিরনভ সম্প্রতি এ বিষয়ে পুতিনকে সতর্ক করেছেন। এ নিয়ে সোমবার রাশিয়ার শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকও করেন তিনি।

ক্রমে রাশিয়ার ইউক্রেনীয় সেনার ঘোরাঘুরি বাড়ছে। যে কোনও ভাবে ইউক্রেনের সেনাকে দেশ থেকে হঠাতে বদ্ধপরিকর রাশিয়া। তবে এই পরিস্থিতিতে বাসিন্দাদের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে তাঁদের দিতে সবরকম সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট। একই সঙ্গে দেশের সীমান্তে নিরাপত্তা বাড়াতে এবং শত্রুকে দেশছাড়া করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রককে। একই সঙ্গে ইউক্রেনের অনুপ্রবেশ প্রতিবেশী ব্রায়ানস্ক অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন পুতিন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কার্যত এই প্রথম বার কোনও দেশ রাশিয়ার ভূখণ্ডে ঢুকে পড়ে তার দখল নিয়েছে। ২০২২ সালে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়া যুদ্ধঘোষণার পর থেকে এত বড় প্রত্যাঘাত কখনও ফেরেনি রাশিয়ার কাছে। ইতিমধ্যেই এ নিয়ে রাশিয়ার তরফে জেলেনেস্কিকে সতর্ক করা হয়েছে। এদিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় জেলেনেস্কি সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, রাশিয়ার কুরস্ক এলাকায় আক্রমণাত্মক অভিযান চলছে ইউক্রেনের তরফে। ইতিমধ্যেই রাশিয়ার প্রায় ১০০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা দখল করেছে তারা।

পুতিন অবশ্য বলছে, রুশ সামাজের ঐক্য ও সংহতি নষ্ট করার চেষ্টা করছে ইউক্রেন। মানুষকে ভয় দেখিয়ে বিভেদ ও বিবাদ তৈরি করার চেষ্টা করছে শত্রুদেশ ইউক্রেন। এই পরিস্থিতিতে আলোচনার মাধ্যমে কিয়েভে যুদ্ধ শেষ করা ও পূর্বদিকের অঞ্চলে মস্কোর আক্রমণ থামানোর প্রসঙ্গ তুলেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট। এখনও পর্যন্ত রুশ ভূখণ্ড কুরস্কে দেড় লক্ষ মানুষ এলাকা ছেড়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ১২ জন সাধারণ মানুষের, জখম অন্তত ১২১। কুরস্ক কর্তৃপক্ষ সোমবার ঘোষণা করেছে বেলভস্তি জেলায় এখনও অন্তত ১৪ হাজার বাসিন্দা রয়েছেন। তাঁদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে।

আরও পড়ুন:ইউক্রেনে ভয়াবহ রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার! রাশিয়ার বিরুদ্ধে যে ভয়ঙ্কর অভিযোগ তুলল আমেরিকা

বহু দিন ধরে রুশ আগ্রাসন সহ্য করছে ইউক্রেন। এতদিনে পাল্টা হামলা চালানোর ভূমি তৈরি করতে পেরেছে তারা। জেলেনেস্কি সম্প্রতি জানিয়েছেন, কুরস্ক সীমান্তের ঠিক উল্টোদিকেই রয়েছে ইউক্রেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সুমি অঞ্চল। যেখানে গত ১ জুন থেকে কম করে হলেও ২১০০ বার আঘাত করেছে, হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এতদিন ইউক্রেনে যা খুশি তা-ই করেছে রুশ বাহিনী। এখন রাশিয়ার জন্য পাল্টা ভয় তৈরি করার পালা। এর মধ্যে ইউক্রেনে গ্লাইডিং বোমা থেকে শুরু করে নানা ধরনের যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার করে এসেছে রাশিয়া। ইউক্রেনের প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রি জাগোরোদনিউক জানাচ্ছেন, ইউক্রেনের কুরস্ক অভিযান দেখে মনে হচ্ছে, পূর্ব ফ্রন্ট থেকে রুশ বাহিনী ও নেতৃত্বকে বিভ্রান্ত করাই এর লক্ষ্য। আপাতত রাশিয়ার জন্য সমস্যা তৈরি করতেই এই পদক্ষেপ ইউক্রেনের। তবে তার পাল্টা হিসেবে রুশ বাহিনী ঠিক কী পদক্ষেপ করে, সেটাই ভাবনার বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।

More Articles