বাসন ভাঙা থেকে আসবাব ছোড়া! অবাক করবে বর্ষবরণের যেসব রীতি
New Year’s Eve Traditions: সেখানে নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হয় প্রতিবেশীর দরজায় বাসনপত্র ভেঙে। এতে নাকি আগামী বছরের ভাগ্যদেবী সুপ্রসন্ন হন। এমনটাই রীতি।
আরও একটা নতুন বছর। পুরনো সমস্ত বোঝা ঝেড়ে ফেলে নতুন একটা সালকে আহ্বান জানানোর পালা। নতুন বছরের এই সময়টা সকলেই উৎসবের আনন্দে মেতে ওঠে। নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে কেউ আয়োজন করে পার্টির, তো কেউ বেরিয়ে পড়েন বেড়াতে। কিন্তু শুধু পার্টি বা খাওয়াদাওয়া নয়, বন্ধুবান্ধব, পরিবারের সঙ্গে হইহই করাও নয়। অনেক দেশেই রয়েছে নতুন বছরকে আবাহন জানানোর নিজস্ব আদবকায়দা। কারওর কারওর ক্ষেত্রে তা বেশ অদ্ভুতও। আসুন জেনে নেওয়া যাক কোন দেশে নববর্ষে পালন করা হয় কোন কোন নিয়ম?
১২ আঙুরের টোটকা- স্পেন
এক আশ্চর্য নিয়মের মাধ্যমে নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হয় স্পেনে। মধ্যরাত পর্যন্ত ঘড়ির প্রতিটি কাঁটা এক ঘর করে এগোয়, আর একটি করে আঙুর খান স্পেনের মানুষ। এই ভাবে বারোটি আঙুর মুখে পুরে নতুন বছরকে স্বাগত জানান তাঁরা। বিশ্বাস যে এই গোটা প্রক্রিয়াটা যদি সময়ের মধ্যে শেষ করতে পারেন কেউ, তাহলে নতুন বছরে তাঁর সৌভাগ্য আটকায় কে! না, এটুকুই নয়। আঙুরের স্বাদ মিষ্টি হবে না টক- এই ভবিষ্যদ্বাণীও কিন্তু নতুন বছরের সমৃদ্ধির নির্ধারক বলে মনে করা হয় স্পেনে। স্থানীয় ভাষায় এই ঐতিহ্যের নাম লাস ডোসে উভাস দে লা (বারোটি ভাগ্যবান আঙুর)। ১৯০৯ সাল নাগাদ স্প্যানিশের একটি এলাকায় ব্যতিক্রমী ভাবে দুর্দান্ত আঙুরচাষ হয়েছিল। সেখান থেকেই এই রীতির সূচনা।
আরও পড়ুন: বিশ্বের সবচেয়ে অভিশপ্ত পুতুল! ১১৭ বছরের রবার্ট দ্য ডল ঘিরে কেন তোলপাড়?
বাসন ভাঙার রীতি- ডেনমার্ক
কাঁচের বা চিনামাটির বাসন না-ভাঙাই আমাদের কাছে সৌভাগ্যের প্রতীক। কিন্তু ডেনমার্কে এই নিয়ম একেবারে উল্টো। সেখানে নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হয় প্রতিবেশীর দরজায় বাসনপত্র ভেঙে। এতে নাকি আগামী বছরের ভাগ্যদেবী সুপ্রসন্ন হন। ৩১ ডিসেম্বর ডেনমার্কবাসীরা নিজেদের স্বজন-বন্ধুদের বাড়ির সামনে বাসনপত্র ছুঁড়েই থাকেন। যার দরজার সামনে যত ভাঙা বাসনের স্তূপ, নতুন বছর তাঁদের জন্য তত সৌভাগ্য নিয়ে আসতে চলেছে। সারা বছর ধরে বন্ধুভাগ্যও তাঁদের তত ভালো।
কুশপুতুল দহন- ইকুয়েডর
এ দেশে দোলের সময় ন্যাড়া পোড়ানোর রীতির সঙ্গে তো অনেকেই পরিচিত। ইকুয়েডরে এই সময়টা কুশপুতুল পোড়ানোর প্রথা রয়েছে। এভাবেই তাঁরা স্বাগত জানান নতুন বছরকে। মজার ব্যাপার, এই কুশপুতুলটিকে গড়া হয় কোনও রাজনীতিবিদ, কোনও পপ তারকা বা অন্য কোনও বিশিষ্ট ব্যক্তির আদলে। স্থানীয় ভাষায় তাকে বলে অ্যানো ভিজো। পুরনো জামাকাপড়, কাগজ, পুরনো বাতিল জিনিস দিয়ে বানানো হয় ওই কুশপুতুলটি। এরপর সেটির উপর বিখ্যাত ব্যক্তির আদলে একটি মুখোশ লাগানো হয়। এবার সেই কুশপুতুলগুলি নববর্ষের আগে মধ্যরাতে পোড়ানো হয়। গত বছরের সমস্ত দুর্ভাগ্য এতে দূর হবে বলেই বিশ্বাস করেন ইকুয়েডরের মানুষ।
নানা রঙের অন্তর্বাস- ল্যাটিন আমেরিকা
নববর্ষ উপলক্ষে নতুন জামাকাপড় পরার রীতি নতুন নয়। তবে তাই বলে রঙিন অন্তর্বাস! মেক্সিকো, বলিভিয়া বা ব্রাজিলের মতো ল্যাটিন আমেরিকার বহু দেশেই এই রীতি রয়েছে। তাঁরা বিশ্বাস করেন, অন্তর্বাসের রংই ঠিক করে দেবে আপনার আগামী বছরের সৌভাগ্য। যেমন ধরুন, লাল অন্তর্বাস, তা আপনার জীবনে নিয়ে আসবে প্রেম। হলুদ অন্তর্বাস নিয়ে আসবে সম্পদ। আর সাদা অন্তর্বাস পরলে আপনার জীবনে শান্তি, সমৃদ্ধি। ফলে নববর্ষে পোশাক বাছার সঙ্গে সঙ্গে অন্তর্বাসটিও কিন্তু বুঝেশুনে বাছতে ভুলবেন না।
১০৮টি ঘণ্টার বেজে ওঠা- জাপান
'রিং আউট ওয়াইল্ড বেলস'-র আদলে নীরেন্দ্রনাথ লিখেছিলেন পাগলা ঘণ্টিদের বেজে ওঠার কথা। জাপানে নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হয় ১০৮টি ঘণ্টাধ্বনির মাধ্যমে। মনে করা হয়, মানুষের মনের ১০৮ অশুভ দিক দূরে চলে যাবে এই ঘণ্টাধ্বনিতে। গত বছরের যাবতীয় পাপ থেকে শুদ্ধ করবে এই শব্দ। জাপানি ভাষায় নববর্ষকে বলা হয় ওশোগাতসু। বছরের শেষ দিনে ১০৭টি ঘণ্টা বাজানো হয়, এবং নতুন বছর পড়লে বাজানো হয় শেষ ঘণ্টাধ্বনিটি। এভাবেই তাঁরা স্বাগত জানান তাঁদের ওশোগাতসু-কে।
সৌভাগ্যের গোল - ফিলিপ্পিনস
সৌভাগ্য এবং সমৃদ্ধির সঙ্গে অর্থের একটা যোগ তো আছেই। আর সেই অর্থ যদি গোলাকার হয়, তাহলে তো কথাই নেই। ফিলিপ্পিনসের মানুষ বৃত্তাকার জিনিসকেই সৌভাগ্যের প্রতীক মনে করে। তাই নববর্ষকে তাঁরা মুড়ে রাখেন গোলাকার জিনিসপত্রে। পকেটে গোলাকার মূদ্রা, খাবারে গোলাকার আঙুর আর পোশাকে পলকা ডটস। নববর্ষে আর কি চাই!
আসবাব তছনছ- ইতালি
নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে আসবাবপত্র ছুড়ে ফেলা, তাও আবার জানলা দিয়ে! এমন আশ্চর্য প্রথা দেখা যায় ইতালিতে। নতুন বছরে পুরনো বোঝার জায়গা নেই জীবনে। এই ভাবনা থেকেই সমস্ত পুরনো, অবাঞ্ছিত আসবাবপত্র ছুড়ে ফেলেন বাসিন্দারা জানলা দিয়ে। তবে কারওর যাতে আঘাত না লাগে ছোট ছোট নরম হালকা আসবাবগুলিই জানলা দিয়ে ছুড়ে ফেলার চেষ্টা করেন তাঁরা। তবে নববর্ষের আগে আগে ইতালির কোনও রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময়ে খুব সাবধান! দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গেও নাকি এমনই রীতি প্রচলিত রয়েছে।
প্রথম পা - স্কটল্যান্ড
নতুন বছরে বাড়িতে যিনি প্রথম পা রাখবেন, উপহার নিয়ে আসাটা তাঁর আশু কর্তব্যের মধ্যে পড়ে স্কটল্যান্ডে। যা খুশি উপহার হলেই কিন্তু চলবে না। মুদ্রা, কয়লা, পাউরুটি, নুন, বা হুইস্কির ড্রামের মধ্যে কিছু একটা হতে হবে। মনে করা হয়, তা সৌভাগ্যের প্রতীক। তবে বাড়িতে পা রাখা প্রথম মানুষ হিসেবে বেছে নেওয়া হয় লম্বা কালোকেশ বিশিষ্ট কোনও পুরুষকেই। দরজায় কুড়ুল ও তলোয়ার নিয়ে পাহারাতেও থাকেন কেউ কেউ। এমনটাই রীতি।
ব্যাগে স্কেল- জার্মানি
কোথাও বৃত্তাকারে সৌভাগ্য, তো কোথাও আস্ত স্কেলে। সম্পদ ও ভাগ্য বজায় রাখতে মানিব্যাগে স্কেল রাখার প্রথা চালু রয়েছে জার্মানিতে। ব্যাগে স্কেল নেই মানে যে সৌভাগ্য়ও জানলা গলে অন্যের পার্সে, এই ধ্রুববাক্য মনে রেখে চলেন জার্মানির বাসিন্দারা। ফলে নতুন বছরের প্রথম দিনে তো সেই স্কেল রাখার প্রথা অবশ্যই পালন করে জার্মানির অধিবাসীরা।
আরও পড়ুন:ফিরে দেখা ২০২৩: যে ভারতীয় ক্রিকেট তারকারা নজর কাড়লেন
এমনই আশ্চর্য কাজ-কারবার, রীতিনীতি বছরের পর বছর ধরে নতুন বছরে পালন হয়ে আসছে বিভিন্ন দেশে। কথায় বলে, 'মর্নিং শো'জ দ্য ডে'। ফলে প্রথম বছরে শুরুটা সৌভাগ্যময় হলে যে গোটা বছরটাই সুখ ও সমৃদ্ধিতে ঠাসা হবে, তা নিদারুণ ভাবেই বিশ্বের প্রায় সমস্ত প্রান্তের বাসিন্দারাই বিশ্বাস করেন। আর সেই বিশ্বাসে ভর করেই নিজেদের সংস্কৃতি মেনে নতুন বছরকে আবাহন জানান তারা। যাতে আসন্ন বছরটা যুদ্ধবিহীন হয়, প্রকৃতির রোষ না পড়ে নতুন বছরে আর। আর কোনও প্রাণ অকালে না ঝরে দু-দেশের টানাপড়েনে। এই কামনা নিয়েই নতুন বছরকে আবাহন জানায় গোটা বিশ্ব।