উত্তরপ্রদেশে যদি ফের বিজেপি আসে....|| কথাবার্তায় সন্দীপ পান্ডে, পরঞ্জয় গুহঠাকুরতা

সন্দীপ পান্ডে ভারতের অন্যতম সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মী। বর্তমানে সোশ্যালিস্ট পার্টি (ইন্ডিয়া)র সাধারণ সম্পাদক। ড: দীপক গুপ্তা (বর্তমানে আই আই টি কানপুরের প্রফেসর) এবং ভি জে পি  শ্রীবাস্তবের সঙ্গে ‘আশা ফর এডুকেশন’ তৈরি করেছেন তিনি। আইআইএম ব্যাঙ্গালোর থেকে বেনারসের আই আই টি–দেশের নামিদামী সংস্থাগুলিতে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে শিক্ষকতা করেছেন। ২০০২ সালে পেয়েছেন র‍্যামোন ম্যাগাসেসে পুরস্কারও। সম্প্রতি নিউজক্লিকে তাঁর একটি সাক্ষাৎকার নেন প্রখ্যাত সাংবাদিক পরঞ্জয় গুহঠাকুরতা। নীচে নিউজক্লিকের অনুমতিক্রমে সেই সাক্ষাৎকারের অনুলিখন প্রকাশিত হল–

পরঞ্জয়: আচ্ছা সন্দীপবাবু, এবার উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ দাবিগুলি কী কী? পদ্ম তো এবারও সেই মন্দির-মসজিদ আর শ্মশান-কবরের বাইরে বেরোচ্ছে না! অযোধ্যা, কাশী, আগ্রা, মথুরা—সেই চর্বিতচর্বণ। অথচ বিরোধীদের বহু ধরনের দাবি সামনে আসছে। বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি তো রয়েইছে, উপরন্তু করোনাকালে গঙ্গায় ভেসে যাওয়া একের পর এক লাশ, রয়েছে উত্তরপ্রদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা–অবশ্যই আপনি আমার থেকে ভালো জানবেন। আপনার মতে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ দাবিগুলি কী?

সন্দীপ:  গত এক বছর ধরে দিনরাত এক করে খাটছি ছেড়ে রাখা পশুদের সমস্যা নিয়ে। বিশেষত কৃষক আন্দোলনের পর থেকেই। এদিকে নিয়ন্ত্রণ সমন্বয় মূল্য নিয়ে প্রতিরোধ তেমন হয়নি। কারণ এদিকের কৃষকরা দাম তো পায়ই না, দাম পাওয়ার আশাটুকুও তাঁদের মরে গেছে। কিন্তু কৃষকদের একটা বড় সমস্যা ছেড়ে দেওয়া গবাদি পশু। ক্ষেতেই চরে বেড়াচ্ছে সব। আর এ কিন্তু একদিনের সমস্যা না। ২০১৭ সালে যেবার যোগী মুখ্যমন্ত্রী হলেন, সেবার মেহমুদাবাদের সীতাপুর অঞ্চলের কয়েকজন গ্রামপ্রধান আমায় ডেকে সমস্যাটার কথা জানান। তখনই তাঁরা বলেছিলেন, সমস্যাটা বেশ বড়োসড়ো আকার নিচ্ছে। গ্রামে গ্রামে গোশালা না করলে কিন্তু খুব বিপদ। জিজ্ঞেস করেছিলাম, আপনারা নীলগাইয়ের কথা তো বললেন না? সাধারণত চাষীদের তো সে সমস্যার মোকাবিলা করতে হয় বেশি! বললেন, “আরে নীলগাই বাদ দিন, সে তাড়ালে পালিয়ে যায়! এ তো গাঁয়ের লোকেদের পোষা পশু। লোকেরাই ছেড়ে রেখেছে। ক্ষেত সাফ করে ফেলছে। তাড়ালেও নড়ে না!” আমি তখনই মুখ্যমন্ত্রীর অফিসে চিঠি দিই। আমায় বলা হয় ব্যপারটা ওঁরা জানেন, উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে যোগী গরুকে গুড় খাওয়ানোর ছবি বিজ্ঞাপিত করলেন। খাতায় কলমে গোশালার কাজকর্ম শুরু হল। কিন্তু বাস্তবে গোশালাগুলোতে চরম অব্যবস্থা। এই খাতে তেমন পয়সাই বরাদ্দ করা হয়নি যাতে করে প্রত্যেকটি গ্রামে যথোপযুক্ত গোশালা গড়ে তোলা যায়। কুড়ি-পঁচিশটা থেকে শুরু করে কোথাও কোথাও হাজারে হাজারে পশু চরে বেড়াচ্ছে। গোমতীর তীরে হরদোই-সীতাপুর সীমান্তে তো এমন অবস্থা কৃষকরা চাষবাস ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। এ কারণে গত বছরে সাত আটখানা প্রদর্শন করেছি।

২৬ শে জানুয়ারি যখন কৃষকেরা ট্রাক্টর নিয়ে দিল্লি মিছিল করল, আমরাও ঘোষণা করলাম যে সমস্ত পশু নিয়ে মিছিল করে হরদোই-উন্নাও-বারাবঙ্কি থেকে যোগীর কাছে যাব, এবং ওঁর দরজার সামনে পশুগুলোকে বেঁধে রাখব। খাওয়াক তারপরে এদের যোগী, কত খাওয়াবে! ডিসেম্বরে আন্দোলন একটু জোরদার হয়ে ওঠে। আমরা এও জানিয়েছিলাম, ১৭ জানুয়ারির মধ্যে যদি এই সমস্ত পশুকে সামলানোর ব্যবস্থা না করা হয় তাহলে ১৮ জানুয়ারি আমরা হরদোই জেলার ভরাওন বিকাশ খণ্ডকেই গোশালা বানিয়ে সমস্ত গরু আটকে রাখব। তবু কোনও সরকারি পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। এতদিন পরে গত পরশু মোদিজী উন্নাওয়ে ভাষণ দিতে গিয়ে বলেছেন, বিজেপিকে আবার নির্বাচিত করলে ওঁরা এই ছাড়া পশুদের একটা ব্যবস্থা করবেন। সেটা কী? না, গোবরগুলো ওঁরা কিনে নেবেন। যদিও এসব ছত্রিশগড়ে চলছে দীর্ঘদিন। মজার ব্যাপার, মোদিজির মনে করছেন যখন মানুষে হাতে কলমে দেখবে যে গরুর দুধ বাদে গোবরেও আর্থিক লাভ করার সুযোগ রয়েছে, তখন গরুকে ঠিক নিজের দরজার সামনেই বেঁধে রাখবে। হাস্যকর যুক্তি।

পরঞ্জয়: আপনি যা বলছেন এটা অবশ্যই একটা বড় সমস্যা। কিন্তু তারপরেও, প্রচুর লোকে তো মোদিকে এখনও ভগবান মনে করেন, করছেনও। উত্তরপ্রদেশের গরিব মানুষদের মধ্যে এটা লক্ষ্যণীয়। ফ্রিতে একটা গ্যাস সিলিন্ডার পাওয়া গিয়েছে, ব্যাস! আর কী চাই! সে আমাদের আরেকটা সিলিণ্ডার কেনার পয়সা থাকুক আর না থাকুক। রাজনাথ সিং তো কথা দিয়েছেন যে হোলি এবং দিওয়ালির মতো উৎসবেও সিলিন্ডার দেওয়া হবে। ছোট ছোট জমি রয়েছে যে সব কৃষকের তাদের খাতাতেও হাজার ছয়েক টাকা ঢুকে গিয়েছে। করোনাকালের এই আঠেরো মাসে প্রতিটি গরিবের বাড়িতে প্রতি মাসে কিলো পাঁচেক গম, আড়াই কিলো ছোলার ডাল পৌঁছেছে। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা রয়েছে। হ্যাঁ কিছু টাকা না হয় খাওয়াতেই হল প্রধানকে, তবু আশি নব্বই হাজার টাকা তো ঢুকেছে। মানে আমি যেটা বলতে চাইছি আরকি, এইসব কাজকর্ম দেখে সাধারণ মানুষ কিছু কিছু ক্ষেত্রে তো মনে করছেনই যে মোদীর বিকল্প নেই, তাই মোদীকেই ভোটটা দেব আবার। আপনার এ ব্যাপারে কী মত?

সন্দীপ: ঠিকই বলেছেন। কিছু এমন ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার, যাতে আপাতভাবে মনে হতে পারে গরিবরাই লাভবান হয়েছেন। তবে সাধারণ মানুষ এখন মোটামুটি বুঝতে পারছেন তাদের টুপি পরানো হচ্ছে। যে ফ্রি রেশনের কথা আপনি বলছেন, তাতে মোদী এবং যোগীর ছবি লাগানো রয়েছেদ। মানুষ কিন্তু এখন প্রশ্ন করছে, এই ফসল কি মোদি আর যোগী ফলিয়েছেন? ছ হাজার আপনারা দিচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু কৃষকের ফলানো ফসলে নিজের ছবি দিয়ে প্রচার করছেন, এতদিন ধরে আন্দোলন চলছে কৃষকদের, তারপরেও তাদের দাবি মানছেন না, উল্টে তাদের ক্ষতি করছেন—তাহলে কার স্বার্থ দেখছে সরকার?

পরঞ্জয়: আপনি তো এও দেখিয়ে ছিলেন, পৃথিবীতে ভারত একমাত্র দেশ যার করোনার টিকাকরণের প্রমাণপত্রে দেশের প্রধানমন্ত্রীর ছবি ছাপা হচ্ছে।

সন্দীপ: (হেসে) হ্যাঁ। প্রচারের যা বাড়াবাড়ি চলছে।  লখনউতে নির্বাচনের দিনই টাইমস্‌ অফ ইন্ডিয়া, দৈনিক জাগরণের গোটা পাতা জুড়ে বিজেপির বিজ্ঞাপন। এ তো নির্বাচন কমিশনের নিয়মবিরুদ্ধ। আমাদেরও প্রার্থী লড়ছে। আমরা তো নির্ধারিত সময়ের আগে, ভোটের আগের দিন বিকেল পাঁচটার সময় প্রচার বন্ধ করে দিয়েছি।

পরঞ্জয়: আচ্ছা আপনি তো স্বীকার করে নিলেন খানিক আগে যে কৃষক আন্দোলনের অন্যতম প্রধান আপত্তি যে সর্বোচ্চ সহায়ক মূল্য নিয়ে, তা নিয়ে উত্তরপ্রদেশের কৃষকদের মধ্যে তেমন বিরোধিতা চোখে পড়েনি। নানান সমস্যা নিয়ে ক্ষোভ হয়তো আছে, কিন্তু দেখুন, বছর পাঁচেক আগেও তো নোটবন্দির মতো ঘটনা ছিল, তা নিয়ে লোকের বিক্ষোভও ছিল চোখে পড়ার মতো। অথচ সেবার উত্তরপ্রদেশে কী বিপুল ভোটে জিতেছিল বিজেপি! লোকে তো অবাক হয়ে গিয়েছিল। ৪০৩টি বিধানসভা আসনে ৩১২টি বিজেপি একাই, অন্যান্য সহযোগী দলগুলি ধরলে সংখ্যাটা ৩২২-২৩এর কাছাকাছি ঠেকবে। ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়া যেন। এবার নির্বাচনে অবস্থা ঠিক তেমন নয়। পরিবর্তিত পরিস্থিতিটা একটু যদি বুঝিয়ে বলেন।

সন্দীপ: দেখুন, ক্ষমতায় এসেই বিজেপি সাম্প্রদায়িক হিংসাটা খুব ভাল করে লোকের মধ্যে উস্কে দিতে পেরেছিল। বহু শিক্ষিত লোককে পর্যন্ত বলতে শুনেছি, “যাই করুক আর তাই করুক, মুসলিমদের তো হাড়ে হাড়ে টেরটা পাওয়াচ্ছে। যথেষ্ট।” তারপর বিজেপির অহংকার বাড়ল। যে যেখানে এদের বিরোধিতা করছিল, তার নামেই এরা মামলা করছিল। কাফিল খানের কেসটা যেমন। 

পরঞ্জয়: একবার না, তিন তিনবার জেলে গিয়েছেন কাফিল খান…

সন্দীপ: একদমই। শুধু তাই না, চাকরি থেকেও বরখাস্ত করেছে ওঁকে! এসব তো আছেই। যোগী নিজের নামে রুজু হওয়া যাবতীয় মামলা তুলে নিয়ে বলছে উত্তরপ্রদেশে আর অপরাধের নামগন্ধও নেই! উন্নাওয়ে থানার ভিতরে ফয়জলকে পিটিয়ে খুন করল পুলিশ। তার অপরাধ সে লকডাউনে ঠেলায় করে সবজি বিক্রি করছিল। কাশগঞ্জে বলা হল আলতাফ নাকি আত্মহত্যা করেছে! কোথা থেকে, না একটা ফুট তিনেক উঁচু পাইপ থেকে। লখনউতে এক আইটি কোম্পানির কর্মীকে চৌরাস্তায় গুলি করে মারল পুলিশ। কানপুরের এক ব্যবসায়ী, তাকে গোরখপুরে পুলিশ মেরে ফেলল।

পরঞ্জয়: সে আবার নিজেই বিজেপির সমর্থক…

সন্দীপ: হ্যাঁ, এদের এক এসপি মাহোবা থেকে পালিয়ে গিয়েছে। তার কোনও খোঁজ খবর নেই। অভিযোগ সে এক ব্যবসায়ীকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করে। আর অমিত শাহ দূরবীন দিয়েও নাকি অপরাধী খুঁজে পাচ্ছেন না! অথচ ওঁর পাশেই দাঁড়িয়ে অজয় মিশ্রা টেনি। যার আশ্রিত গুণ্ডারা চারজন কৃষক ও একজন সাংবাদিককে গাড়িতে পিষে খুন করেছে।

পরঞ্জয়: ওদের জামিনও হয়ে গিয়েছে?

সন্দীপ: হ্যাঁ। এ জিনিস তো হামেশাই হচ্ছে। তবে আশার কথা চাকরির দাবি নিয়ে লোকে এবার সচেতন হচ্ছেন। প্রতিরোধ চোখে পড়ছে। এই নির্বাচনের আগেই উত্তরপ্রদেশের শিক্ষা নির্দেশালয়ে শিখা পাল নামে একটি মেয়ে চাকরির দাবিতে ১৭০ দিন জলের ট্যাঙ্কির উপর চেপে প্রতিবাদ করছিল। সে বি এড করেছে, সরকার যা যা যোগ্যতা দাবি করে সমস্ত তার রয়েছে, সরকারি শিক্ষকের পদ খালি রয়েছে, কিন্তু তাকে চাকরি দেওয়া হচ্ছে না। আজকের বিজ্ঞাপনেই তো পরিষ্কার। ওরা বলছেন, শিক্ষকতার সমস্ত শূন্যপদে যোগ্য প্রার্থী নিয়োগ করা হবে। অর্থাৎ স্বীকার করছেন শিক্ষকের পদ খালি রয়েছে। এখানে ইকো গার্ডেন বলে একটি জায়গা রয়েছে, সেখানে চাকরির দাবিতে দিনের পর দিন ধর্ণা চলছে। তার মধ্যে সেইসব অ্যাম্বুলেন্স কর্মীরাও রয়েছেন, যাঁরা করোনায় জীবন তুচ্ছ করে মানুষের সেবা করেছিলেন, যাঁদের উপর হেলিকপ্টার থেকে পুষ্পবৃষ্টি করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, তাঁরা দেবদূত। চাকরি থেকে তাদেরও বের করে দেওয়া হয়েছে। এখন তাঁরা বেকার, চাকরির দাবিতে ধর্ণায় বসেছেন।

পরঞ্জয়: সন্দীপবাবু, আর একটি প্রশ্ন আমি আপনার কাছে রাখব। এবার বিরোধী শক্তি কেউ কারোর সঙ্গে তেমন জোট করছে না। সবাই আলাদা ভাবে লড়ছে। এতে ভোট ভাগ হয়ে গিয়ে আখেরে বিজেপিই লাভবান হবে না কি?

সন্দীপ: আসলে এর আগে যে দুটো বড় জোট হয়েছিল, মানে কংগ্রেস আর সমাজবাদী পার্টির জোট এবং সমাজবাদী পার্টি আর বহুজন সমাজ পার্টির জোট–কোনোটাই টেকেনি। সেই জন্যেই হয়তো বড় বড় দলগুলো ভাবছে একা লড়াই ভালো। ক্ষতি তো এতে হবেই। বিজেপিও লাভের গুড় খাবে। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আমার যা অভিজ্ঞতা, সমাজের নানান বর্গের লোক এই সরকারকে নিয়ে বিক্ষুব্ধ। ব্রাহ্মণ থেকে দলিত–সবাই। এবং তাঁরা নামোল্লেখ পর্যন্ত করে বলছে—এই সরকার আর না, এবার অখিলেশকে  সুযোগ দেওয়া উচিত।

পরঞ্জয়: সে অবশ্য আমরা ১০ মার্চেই বুঝতে পারব নির্বাচনের ফলাফল কী দাঁড়াবে। এ পর্যন্ত কেউ পরপর দুবার উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেননি। সেদিক দিয়ে এই নির্বাচনের ফলাফল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও মানুষ আলোচনা করছে চারদিকে যে উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনী ফলাফল ভারতের সামগ্রিক রাজনীতির উপর প্রভাব ফেলবে। শুধু রাজনীতিই নয়, ভারতের গণতন্ত্রের পরিণতি কী–এও নির্ধারণ করবে। এ বিষয়ে আপনার কী মত? এটিই আমার শেষ প্রশ্ন।

সন্দীপ: দেখুন, যোগী সম্ভবত নরেন্দ্র মোদীর পরে বিজেপির দ্বিতীয় বৃহত্তম নাম। হিন্দুত্বের একজন আইকন যোগী। এবং আমরা দেখেছি বাজপেয়ী, আডবানি, মোদী, অমিত শাহ–একের পর এক বিজেপির মুখেরা ক্রমশ আক্রমণাত্মক হয়ে উঠছে। সেই পরম্পরার স্বার্থক উত্তরসূরীও যোগী। অনেকে ভবিষ্যতের প্রধানমন্ত্রী বলে থাকেন ওঁকে। কিন্তু ওঁর রাজনীতির ধরন কী? গোরখপুরে একটা ছোট মঠাধ্যক্ষ ছিলেন। টুকটাক সিদ্ধান্ত নিজেই নিতেন। উত্তরপ্রদেশে হামেশাই হয়ে থাকে এমন। সামন্ততান্ত্রিক লোকেরা নিজের এলাকায় নিজেই সমস্তটা ঠিক করেন, কে কী করবে না করবে। এই অজয় মিশ্রা টেনিই যেমন আর কি। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরেও যোগী তাই ভেবেছিলেন, যে বেশ বড় একটা মঠের হয়তো মালিক হলেন। এবার যা ইচ্ছে তাই করা যাবে। মঞ্চ থেকে সরাসরি মানুষজনকে খুন করার হুমকি দিতে লাগলেন। সি এ এ-র বিরুদ্ধে যাঁরা প্রতিবাদ করেছিলেন তাঁদের বিরুদ্ধে নোটিশ জারি হয়ে গিয়েছিল। অ্যাডভোকেট মহ শোয়েব, এস আর দারাপুরী তখন গৃহবন্দী। অথচ ওঁদের সবার বিরুদ্ধে নোটিশ এসেছিল। গৃহবন্দী থাকাকালীন কেউ কীভাবে ভায়োলেন্সে জড়াতে পারে আমার মাথায় ঢোকে না। আর বারবার তখন বলেছি, যাঁরা দোষী প্রমাণিত হয়নি তাঁদের আপনারা কীভাবে শাস্তি দেন? কেউ শোনেনি। শেষে সুপ্রিম কোর্টও সেই রায় দিল। তখন সবাইকে ছাড়তেই হল। যোগী উত্তেরপ্রদেশে আইনকানুন চমৎকার করে তুলেছেন বলে থাকেন না কথায় কথায়? এই ঘটনায় সরকারের স্বেচ্ছাচার মোটামুটি পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। এই স্বেচ্ছাচার নিয়েও লোকে প্রচণ্ড বিক্ষুব্ধ। খানিকটা সে কারণেই গতবারের মতো বিজেপির প্রতি নিরবচ্ছিন্ন সমর্থন দানা বাঁধেনি এবার।

পরঞ্জয়: যদি বিজেপি ফের আসে, ভারতে কি গণতন্ত্র বলে কিছু থাকবে?

সন্দীপ: নেই। এখনও গণতন্ত্র ভারতে আর আছে বলে মনে করি না। বিজেপি আসার পর থেকেই নেই। হিজাব নিয়ে যে বিতর্ক চলছে তাতেই সবটা পরিষ্কার। এই সরকার ফিরে এলে পরিস্থিতি আরো বিপজ্জনক হবে। তবে আশার ব্যাপার, লোকে বুঝতে পারছেন। বিজেপিরই তিনজন অনগ্রসর বর্গের প্রতিনিধি, শাসকদলের মন্ত্রীত্ব ছেড়ে বিরোধী দলে যোগ দিয়েছেন, তাঁদের মনে হয়েছে, বিজেপি দলিত বিরোধী, কৃষক বিরোধী, যুববিরোধী। একের পর এক আইন পাশ হচ্ছে বিনা আলোচনায়, বিনা বিরোধিতায়। লোকে ঠিকই বুঝছেন এখন। সরকারের স্বেচ্ছাচার যে সংবিধান এবং গণতন্ত্রকে যে শেষ করে দিচ্ছে তাও তাঁরা অনুভব করছেন। তাই দেখুন, আন্দোলনের পর আন্দোলন হচ্ছে। সি এ এ বিরোধী আন্দোলন থেকে কৃষক আন্দোলন। গান্ধী এবং আম্বেদকরের ছবি বারবার দেখা যাচ্ছে এই সব আন্দোলনে। গান্ধীজীর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ধারণা এবং আম্বেদকরের সংবিধানের প্রতি মানুষ আবার শ্রদ্ধাশীল হচ্ছে–এ বড়ই আশার কথা।

More Articles