প্যালেস্টাইনে যুদ্ধ থামাক ইজরায়েল, কেন অবস্থান বদলে হঠাৎ শান্তি চাইছে আমেরিকা?

Israel-Gaza war: এর আগে জাতিসঙ্ঘে ভোটের সময় 'যুদ্ধবিরতি' শব্দটিকেই এড়িয়ে গিয়েছিল আমেরিকা। আর এবার জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতি নিয়ে খসড়া প্রস্তাব উঠিয়েছে খোদ আমেরিকাই।

প্রায় পাঁচ মাস হয়ে গেলেও শান্তি ফেরেনি গাজায়। এখনও একই রকম ভাবে আগ্রাসন জারি রেখেছে ইজরায়েল। আন্তর্জাতিক আদালতে কোণঠাসা হওয়ার পরেও যুদ্ধের তীব্রতা কমায়নি বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সরকার। অক্টোবর মাসে ইজরায়েলে ঢুকে অতর্কিতে হামলা চালিয়েছিল প্যালেস্টাইনি সশস্ত্র সংগঠন হামাস। আর তার পরেই হামাসের বিরুদ্ধে, কার্যত গাজার বিরুদ্ধেই যুদ্ধঘোষণা করে দিয়েছিল ইজরায়েল। সে সময় ইজরায়েলকে সর্বৈব ভাবে মদত দিয়েছে আমেরিকা। বিশ্বের সমস্ত দেশ যুদ্ধশান্তির পক্ষে সওয়াল করলেও ইজরায়েলকে যুদ্ধের পক্ষে থাকার বার্তা দিয়ে গিয়েছে আমেরিকা। এমনকী ওই পরিস্থিতিতেই ইজরায়েলে গিয়ে নেতানিয়াহুর সঙ্গে দেখাও করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এত এত মৃত্যু, এত রক্তপাত, এত ধ্বংস দেখার পর ইজরায়েলকে যুদ্ধ থেকে সরে আসার পরামর্শ দিচ্ছে আমেরিকা।

ইতিমধ্যে ইজরায়েল রাফাহ-র বিরুদ্ধে আরও এক দফা হামলার হুমকি দিয়ে রেখেছে ইজরায়েল। নেতানিয়াহু সরকার জানিয়েছে, রমজানের মধ্যে হামাসদের কবলে থাকা বন্দিদের যদি মুক্তি না দেওয়া হয়, তাহলে রাফাহ এলাকায় নতুন করে হামলা চালাবে ইজরায়েলি সেনা। ফের স্থলহামলার আশঙ্কায় কাঁপছে গোটা প্যালেস্টাইন। এখনও পর্যন্ত ইজরায়েলের হামলায় অন্তত ২৯ হাজার ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে একটা বড় সংখ্যক অংশ জুড়ে রয়েছে শিশু। গত চার মাস ধরে হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে দক্ষিণ দিক ঘেঁষেই হামলা চালিয়ে গিয়েছে ইজরায়েলি সেনা। যার ফলে যাঁরা কোনওমতে বেঁচে গিয়েছেন যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা ও প্যালেস্টাইনের বিচ্ছিন্ন অংশে, তাঁদের শেষ বাসস্থান হয়ে উঠেছে মিশরের সীমান্ত সংলগ্ন রাফাহ এলাকা। আর এবার ইজরায়েল নিশানা করতে চাইছে প্যালেস্টাইনের সেই অন্তিম আশ্রয়টুকুকেই।

আরও পড়ুন: প্যালেস্টাইনে ইজরায়েলি জবরদখলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে ৫২ দেশ! ফিরবে সুদিন?

গাজার খান ইউনিস-সহ আশপাশের সমস্ত শরণার্থী শিবিরগুলি দখল করেছে বলে দাবি করেছে ইজরায়েল। বোঝা যাচ্ছে, গাজা-সহ একাধিক ফিলিস্তিনি এলাকার বাসিন্দারা পালিয়েছেন রাফাহ-র দিকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) সূত্রের খবর,খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে সম্প্রতি একাধিক হামলা করেছে ইজরায়েল। বিদ্যুৎ নেই। গত কয়েক দিনে বিমান ও স্থলপথে হামলায় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। যার মধ্যে অধিকাংশই মহিলা ও শিশু। মোট জনসংখ্যার অন্তত ৮৫ শতাংশ নাগরিকই বাস্তুচ্যুত। প্রতি চারজনের মধ্যে একজনের পেটে খাবার নেই বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রসঙ্ঘ।

Rafah Is Already in a Humanitarian Crisis. Now, an Israeli Offensive Looms.  - WSJ

দীর্ঘদিন ধরেই যুদ্ধশান্তির পক্ষে সওয়াল করে আসছে বিশ্বের অধিকাংশ দেশই। তবে সেই তালিকায় এতদিন ছিল না আমেরিকা, ব্রিটেনের মতো বেশ কয়েকটি ক্ষমতাবান দেশ। যুদ্ধের প্রতিটি পর্যায়ে কার্যত আমেরিকার সমর্থন পেয়ে এসেছে ইজরায়েল। ইজরায়েলের সঙ্গে বরাবরই সখ্যতা বজায় রেখে চলে। গাজার বিরুদ্ধে ইজরায়েল যুদ্ধ ঘোষণার পর পরই ইজরায়েল সফরে এসেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। জো বাইডেনের পর ইজরায়েলে এসে নেতানিয়াহুর সঙ্গে দেখা করেন ইংল্য়ান্ডের প্রেসিডেন্ট ঋষি সুনকও। বাকি সমস্ত দেশ শান্তির পক্ষে কথা বললেও আমেরিকার মুখে শোনা গিয়েছে সর্বদাই যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার বার্তা। সেই আমেরিকা শেষপর্যন্ত অবস্থান বদলাচ্ছে। ইজরায়েলি আগ্রাসনের মুখে যুদ্ধবিরতি চাইছে এবার আমেরিকাও।

এর আগে জাতিসঙ্ঘে ভোটের সময় 'যুদ্ধবিরতি' শব্দটিকেই এড়িয়ে গিয়েছিল আমেরিকা। আর এবার জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতি নিয়ে খসড়া প্রস্তাব উঠিয়েছে খোদ আমেরিকাই। ইজরায়েলকে পরাস্ত করতে এবার জাতিসঙ্ঘে আরও একটি খসড়া প্রস্তাব ভেটো করার পরিকল্পনা করছে জো বাইডেন সরকার। যেখানে মানবিকতার খাতিরে যুদ্ধবিরতির দাবি জানানো হবে ইজরায়েলের কাছে। এখনও পর্যন্ত যতবার ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে হামলার হুমকি দিয়েছে ইজরায়েল, তা কার্যত ঘটিয়ে ছেড়েছে তারা। ফলে ইজরায়েলের হুমকি যে ফাঁকা হুমকি নয়, তা পরিষ্কার বুঝে গিয়েছে বিশ্ব।

আরও পড়ুন: সাত দিন ধরে টানা যোগাযোগহীন গাজা, ব্ল্যাকআউটই কি গণহত্যার নয়া ‘অস্ত্র’ ইজরায়েলের?

মিশর সীমান্ত লাগোয়া রাফাহ শহরে যুদ্ধের আগে মাত্র আড়াই লক্ষ মানুষ বসবাস করত। সেখানে এখন জনসংখ্যা কোথায় গিয়ে ঠেকেছে, বলা মুশকিল। পানীয় জল থেকে খাবার, সব কিছুর সঙ্কট দেখা গিয়েছে রাফাহ। তবু কোনও ক্রমে ইজরায়েলি হামলার থেকে মাথা বাঁচিয়ে টিকে রয়েছে মানুষগুলো। ইজরায়েল যা বলছে, সেই অনুযায়ী যদি হামলার পথে যায়, তাহলে মৃত্যুর সংখ্যা এক লহমায় বিরাট লাফ দিতে পারে বলে অনুমান করছেন বিশেষজ্ঞেরা। এই পরিস্থিতিতে বিশ্বের সমস্ত দেশের শান্তিপ্রস্তাবে কি সায় দেবে ইজরায়েল। অন্তত সুহৃদ জো বাইডেনের শান্তির ডাকে কি সাড়া দেবেন যুদ্ধবাজ নেতানিয়াহু। আপাতত সেই জবাবই খুঁজছে গোটা পৃথিবী।

More Articles