"আলবিদা কুস্তি", কেন চিরতরে কুস্তি ছাড়তে বাধ্য হলেন ভারতের গর্ব ভিনেশ ফোগাট?

Vinesh Phogat Retires: “মা, কুস্তি মেরে সে জিত গ্যয়ি, ম্যায় হার গ্যয়ি," লিখেছেন ভিনেশ।

কথায় বলে স্পোর্টস পার্সন স্পিরিট। যে জেদ, যে হার-জিতে অভ্যস্ত হওয়া চেতনা, যে লড়াই করার দম, মুখ থুবড়ে পড়ার পর ওঠার দাপট একজন খেলোয়াড়কে তৈরি করে সেই সমস্তটা একরাতের মধ্যে ভেঙে গেলে কী হয়, ভিনেশ বিশ্বকে দেখিয়ে গেলেন। ভিনেশ লড়াকু, ভিনেশ উদ্যমী, ভিনেশ নিগ্রহের বিরুদ্ধে লড়তে ভয় পান না, তবু ভিনেশ ভেঙে গেলেন। দুমড়ে-মুচড়ে গেলেন এক রাতে। মাত্র ১০০ গ্রাম ওজন বেশি হওয়াতে প্যারিস অলিম্পিকের শেষ পর্ব থেকে বাদ পড়ে গেলেন। চুল কেটে দিয়ে, পোশাক ছোট করে, সারা রাত ধরে ব্যায়াম করেও ১০০ গ্রাম বেশি থেকে গেছিল। খাদের ধারে যেমন একাকী হয়ে যায় মানুষ, ভিনেশ অলিম্পিকের সেই সকালে হয়ে গেলেন একাকী মানুষটি। কষ্ট করে অর্জিত রুপোর পদকটিও পেলেন না নিয়মের জালে আটকে। এই চরম মোড়ে এসে সেই সিদ্ধান্তটা নিয়েই নিলেন ভিনেশ যা হয়তো আরও এক দশক পর নেওয়ার কথা ছিল তাঁর। ভিনেশ চলে গেলেন, আলবিদা বলে। কুস্তির সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ। এবার অবসর।

ভিনেশের হৃদয় ভেঙেছে, ভেঙেছে ভারতের অসংখ্য মানুষের যারা একজন কুস্তিগীরকে জিততে দেখতে চেয়েছিলেন। ভিনেশই ছিলেন অলিম্পিকের ফাইনালে ওঠা প্রথম ভারতীয় মহিলা কুস্তিগীর। প্রস্তুতির প্রতিটাক্ষণে যে লক্ষ্য সামনে রেখে এগিয়েছেন একজন খেলোয়াড়, সেই লক্ষ্যের এত কাছে এসে ১০০ গ্রাম ওজনের জন্য ছিটকে যাওয়া ঠিক কী ক্ষত তৈরি করে তা বোধহয় ভিনেশ ছাড়া এই মুহূর্তে কেউই অনুভব করতে পারছেন না। ভিনেশ সেই ঘায়ের ব্যথা নিয়েই কুস্তি থেকে অবসর ঘোষণা করলেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, তিনি হেরে গেলেন, কুস্তি জিতে গেল।

আরও পড়ুন- চুল কেটে, পোশাক ছোট করেও শেষরক্ষা হল না! কেন রাতারাতি ওজন বেড়ে গেল বিনেশের?

“মা, কুস্তি মেরে সে জিত গ্যয়ি, ম্যায় হার গ্যয়ি," লিখেছেন ভিনেশ। লিখেছেন, “ক্ষমা করো, তোমার স্বপ্ন, আমার সাহস, সবটাই ভেঙে গেছে। এর চেয়ে বেশি শক্তি আর অবশিষ্ট নেই আমার। আলবিদা, কুস্তি (২০০১-২০০৪)"।

 

মঙ্গলবার প্রথম ভারতীয় মহিলা কুস্তিগীর হয়ে তাঁর ৫০ কেজির বিভাগে স্বর্ণপদক প্রতিযোগিতায় পৌঁছে ইতিহাস গড়েছিলেন ভিনেশ। তিনি এই ম্যাচে হেরে গেলেও অন্তত রুপোর পদক পেতেনই। কিন্তু বুধবার সকালে ওজন করতে গিয়ে দেখা যায় ১০০ গ্রাম বেশি ওজন ভিনেশের। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সারাহ অ্যান হিলডেব্র্যান্ডের বিরুদ্ধে ফাইনাল ম্যাচ থেকে ভিনেশ বাদ পড়ে যান। এই ঘটনায় একেবারে ভেঙে পড়েন ২৯ বছরের ভিনেশ। ভিনেশ আপিলও করেন যাতে তাঁকে তাঁর অর্জিত রৌপ্য পদকটি দেওয়া হয়। ফাইনালে ভিনেশের জায়গায় খেলেন কিউবার ইউসনেলিস গুজমান লোপেজ, যাঁকে ভিনেশ সেমিফাইনালে হারিয়েছিলেন। লোপেজ শেষ পর্যন্ত এই চ্যাম্পিয়নশিপ ম্যাচে হিলডেব্র্যান্ডের কাছে হেরে যান।

আরও পড়ুন- গাফিলতি নাকি ষড়যন্ত্র! কার ভুলে অলিম্পিকে এত বড় ভাগ্য বিপর্যয় বিনেশের?

কুস্তির আন্তর্জাতিক নিয়মানুসারে, ওজন মাপার সময় যদি কোনও কুস্তিগীরের ওজন নির্দিষ্ট মাপকাঠির চেয়ে বেশি হয়, তাহলে তাঁকে ম্যাচ থেকে বাদ দেওয়া হবে। ভারতীয় অলিম্পিক কন্টিনজেন্টের চিফ মেডিকেল অফিসার দিনশ পারদিওয়ালা জানিয়েছিলেন সেমিফাইনালের সময় ওজন সীমার চেয়ে ২.৭ কেজি বেশি ছিল ভিনেশের। খাবার না খেয়ে, জল খাওয়া কমিয়ে তাঁর ওজন কমানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। কমেওছিল। ১০০ গ্রাম বেশি থেকে গেছিল কেবল।

ভিনেশ এর আগে প্রতিবারই ৫৩ কেজির বিভাগে লড়েছেন। অলিম্পিকে মাত্র কয়েক মাস আগে ৫০ কেজিতে নিজেকে নামিয়ে আনার কঠিন কাজটি তিনি করতে বাধ্য হন কারণ ৫৩ কেজির বিভাগে অন্তিম পাঙ্গল প্যারিস অলিম্পিকে নির্বাচিত হন। অন্তিম পাঙ্গল প্রথম রাউন্ডেই হেরে যান।

More Articles