মঙ্গলে প্রাণ ছিল! পরীক্ষা করতে গিয়েই তা নষ্ট করে দিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা?
Life on Mars: মঙ্গলে প্রাণ আছে কিনা সেই সন্ধান করতে গিয়ে প্রাণের চিহ্ন মুছে ফেলেছিল বিজ্ঞানীদের কৌতূহলী প্রচেষ্টাই?
মঙ্গল গ্রহে একাধিক অভিযান হয়েছে। মঙ্গলে প্রাণ আছে কিনা এই প্রশ্নের তবু সদুত্তর মেলেনি। মঙ্গলে প্রাণের উপস্থিতি নিশ্চিত করার মতো কোনও প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। তবে প্রাণ সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকার মতো উপাদান সেখানে আছে। সে যাইহোক, বেশ কয়েক দশক আগে, ১৯৭০-এর দশকে প্রথম লাল গ্রহে নেমেছিল ভাইকিং ল্যান্ডার। মঙ্গল গ্রহে অবতরণ করা এবং অন্বেষণ চালানোর প্রথম সফল মার্কিন মিশন ছিল সেইটিই। সম্ভবত, প্রাণ আছে কিনা সেই সন্ধান করতে গিয়ে প্রাণের চিহ্ন মুছে ফেলেছিল বিজ্ঞানীদের এই কৌতূহলী প্রচেষ্টা।
একজন গবেষক বলছেন, মঙ্গলগ্রহের মাটির নমুনায় প্রাণের প্রমাণ থেকে থাকতে পারে। এই প্রাণের অস্তিত্ব নিশ্চিত করতে গিয়ে "আমাদের অনুসন্ধানকালে আমরা অসাবধানতাবশত সেই চিহ্ন মুছে ফেলেছি।" জার্মানির বার্লিনের টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির জ্যোতির্বিজ্ঞানী ডার্ক শুলজ-মাকুচের মতে, মঙ্গলে আণুবীক্ষণিক জীবের লক্ষণ শনাক্ত করার জন্য যেসব পরীক্ষা হয়েছে, তাই মারাত্মক হতে পারে। তাঁর অনুমান, যে পদ্ধতিতে বিজ্ঞানীরা প্রাণের সন্ধান করছেন তা ধ্বংসাত্মক হতে পারে।
আরও পড়ুন- লালগ্রহে ৩৭৮ দিন! নাসার কৃত্রিম অভিযানে মঙ্গলের মাটিতে ফলল শাকসবজিও
১৯৭৬ সালে, NASA-এর ভাইকিং ১ মিশন দু'টি মহাকাশযান পাঠিয়েছিল মঙ্গল গ্রহে। লাল গ্রহে নানা পরীক্ষা চালাতে এবং জীবনের লক্ষণ অনুসন্ধানই ছিল ভাইকিং ১ মিশনের লক্ষ্য। মঙ্গলগ্রহের মাটির নমুনার সঙ্গে জল এবং পুষ্টির মিশ্রণ ঘটিয়ে দেখা হয়েছিল এই ধারণার উপর ভিত্তি করে যে পৃথিবীর মতো মঙ্গলেও প্রাণের বেঁচে থাকার জন্য তরল জলের প্রয়োজন হবে। প্রাথমিক ফলাফলগুলিতে বোঝা গিয়েছিল, জীবনের সম্ভাবনা রয়েছে। কয়েক দশক ধরে এই নিয়ে বিতর্ক চলে। বেশিরভাগ গবেষকরাই পরে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছন যে, সম্ভবত মঙ্গলে প্রাণের সম্ভাবনা নেই।
শুলজ-মাকুচ বলছেন, প্রাণের সম্ভাবনা ছিল। ভাইকিং ল্যান্ডাররা, মঙ্গলগ্রহের জীবন অনুসন্ধান করার সময় অসাবধানতাবশত সেই সম্ভাবনার চিহ্ন ধ্বংস করে ফেলেছিল। শুলজ-মাকুচ বলছেন, মঙ্গলগ্রহে যে সম্ভাব্য জীবন ছিল তা অনেকটা চরম অবস্থার মধ্যে বেঁচে থাকা অণুজীবদের মতো। যেমন চিলির আটাকামা মরুভূমির মতো চরম পরিবেশে যে অণুজীবদের পাওয়া যায় তারা বায়ুমণ্ডল থেকে আর্দ্রতা শুষে নেওয়ার জন্য লবণের উপর নির্ভর করে খুব শুষ্ক অবস্থাতেও বেঁচে থাকতে পারে। তিনি বলছেন, "নাসার ভাইকিং ল্যান্ডাররা যে পরীক্ষাগুলি করেছে তাতে হয়তো দুর্ঘটনাক্রমে খুব বেশি জল যোগ করে মঙ্গলগ্রহের জীবনকে শেষ করে ফেলেছে।"
আরও পড়ুন- মঙ্গলগ্রহে ইন্টারনেট বসাতে উদ্যোগী এলন মাস্ক! কারা ব্যবহার করবে এই নেটওয়ার্ক?
নাসা কিন্তু পৃথিবীর বাইরে জীবন অনুসন্ধানের করতে গিয়ে বরাবরই জলকেই প্রাধান্য দিয়ে এসেছে। শুলজ-মাকুচ বলছেন, তরল জলকে প্রাধান্য দেওয়ার পরিবর্তে, ভবিষ্যতের মিশনগুলির উচিত হাইড্রোস্কোপিক লবণের দিকে নজর দেওয়া। এই লবণগুলি বায়ুমণ্ডলীয় আর্দ্রতা শোষণ করে৷ সোডিয়াম ক্লোরাইড হচ্ছে মঙ্গল গ্রহে পাওয়া প্রথম লবণ। সুতরাং অণুজীবের থাকার সম্ভাবনা আছেই।
শুলজ-মাকুচ মঙ্গলের অণুজীবের উপর ভাইকিং পরীক্ষার সম্ভাব্য প্রভাবকে আটাকামা মরুভূমির একটি ঘটনার সাথে তুলনা করেছেন। সেই মরুভূমিতে মুষলধারে বৃষ্টি হওয়াতে ৭০-৮০% স্থানীয় ব্যাকটেরিয়াকে মারা গিয়েছিল কারণ তারা জলের প্রবাহের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারেনি। ভাইকিং মিশনের প্রায় ৫০ বছর পরে, শুলজ-মাকুচ মঙ্গল গ্রহে জীবন অনুসন্ধানের জন্য নতুন, উন্নত প্রযুক্তি এবং গ্রহের চরম পরিবেশ সম্পর্কে জ্ঞানকে মাথায় রেখেই নতুন অভিযানের আহ্বান জানিয়েছেন।