যেভাবে বিশ্বের প্রথম কার্বন নিরপেক্ষ শিশু হয়ে উঠল ২ বছরের ছোট্ট আদাভি
Carbon-Neutral Baby Aadavi: আদাভির জন্মের তিনমাস আগে এই দম্পতি তামিলনাড়ুর কৃষ্ণগিরির আনচেটি গ্রামে দুই একর জমি কিনেছিলেন।
কার্বন-নিরপেক্ষ শিশু! শুনতে খটোমটো ঠিকই, তবে জটিল কিছুই নয়। সারা বিশ্বজুড়ে কার্বন নির্গমন কমানোর লক্ষ্যে নিরন্তর নতুন নতুন পথ বাতলানোর কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা। কেউ কেউ, বিবেচক-প্রকৃতির শুভাকাঙ্খী মানুষও নিজের নিজের জায়গা থেকে চেষ্টা করে যাচ্ছেন এই গ্রহটিকে আরেকটু সুস্থ করে তুলতে। কার্বন-নিরপেক্ষ এই শিশুর বেড়ে ওঠার কাহিনিও ঠিক তেমনই। কার্বন-নিরপেক্ষ শিশু মানে, তাঁর বেড়ে ওঠার পথে কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমানো। তা হতে পারে বিভিন্ন অভ্যাসের মাধ্যমে বা বিভিন্ন পণ্যের মাধ্যমেও। শিশু যত্ন, পণ্য এবং পরিষেবাগুলির সঙ্গে যুক্ত গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাস করাই এর মূল লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যে বিশ্বের প্রথম কার্বন-নিরপেক্ষ শিশু হলো আদাভি। বয়স মাত্র ২ বছর। তথ্য বলছে, একজন ভারতীয় বার্ষিক গড়ে ২ টন কার্বন নিঃসরণ করেন। আদাভির স্বপ্নদর্শী বাবা-মা দীনেশ এসপি এবং জনগা নন্দিনী, আদাভির আজীবনের কার্বন ফুটপ্রিন্ট বন্ধ করার জন্য ৬,০০০টি গাছ লাগিয়েছেন।
বিশ্বকে আদাভির জন্য আরও খানিক বাসযোগ্য করে তুলতে চেয়েছিলেন দীনশ ও জনগা। মেয়ের জীবনের কার্বন নিঃসরণ শূন্য করার লক্ষ্যে তাই আদাভির জন্মের আগেই কাজ শুরু করে দিয়েছিলেন তাঁরা। তামিলনাড়ুর কৃষকদের সঙ্গে মিলে ৬,০০০টি ফলের গাছ লাগিয়েছেন তাঁরা যা আদাভির সঙ্গেই বেড়ে উঠবে। আদাভির আজীবনের কার্বন নিঃসরণ শূন্য করে তোলার জন্য যথেষ্ট পরিমাণে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করবে এই গাছগুলি। এশিয়া বুক অফ রেকর্ডস এই ছোট্ট আদাভিকেই "বিশ্বের প্রথম কার্বন-নিরপেক্ষ শিশু" হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
আরও পড়ুন- গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের জিয়নকাঠি! যেভাবে পরিবেশের সর্বনাশ করছে কার্বন ডাই অক্সাইড
তবে গাছ লাগিয়েই গল্প থেমে নেই। আদাভির বাবা-মা একটি এনজিও গড়ে তুলেছেন, সীরাখু। এটি কার্বন-নিরপেক্ষ ভারত তৈরি করতে এবং বৃক্ষ রোপণের মাধ্যমে তাদের কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমাতে ভারতীয়দের সচেতন ও শিক্ষিত করার কাজ করে। মাত্র ২ বছরেই এই দম্পতি আরও বহুজনকে অনুপ্রাণিত করে বনাঞ্চল বাঁচিয়ে ৪ লক্ষ গাছ লাগিয়েছেন!
বিশ্বের জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় দীনেশ ও জনগার এই কাজটি এক শক্তিশালী বিকল্পকে তুলে ধরছে। নিজের সীমিত জায়গা থেকেও কীভাবে পরিবেশকে বাঁচাতে বড় পদক্ষেপও করা সম্ভব তার উদাহরণ তৈরি করেছেন তাঁরা। জীববৈচিত্র্যকে বাঁচানো, বায়ুর গুণমান উন্নত করা এবং বায়ুমণ্ডল থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে সত্যিই এক বাসযোগ্য পৃথিবীর স্বপ্ন দেখাচ্ছেন এই দম্পতি।
আদাভির জন্মের তিনমাস আগে এই দম্পতি তামিলনাড়ুর কৃষ্ণগিরির আনচেটি গ্রামে দুই একর জমি কিনেছিলেন। কৃষকদের সহায়তায়, দীনেশ এবং তাঁর স্ত্রী এক হাজার গাছ, গুল্ম লাগান যা স্থানীয় বন্যপ্রাণীদের খাদ্য ও বাসস্থান জোগানোর পাশাপাশি বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন শোষণ ও সঞ্চয় করবে। দীনেশ ও জনগা আরও জানিয়েছেন, “আমরা ভারতে জন্ম নেওয়া প্রতিটি শিশুর জন্য কমপক্ষে ৫০টি গাছ লাগাতে চাই।” ভারত ২০৭০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন শূন্যে কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সেই লক্ষ্যে দীনেশ-জনগার এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে এক বিপুল অবদান।