২০ ঘণ্টার জেরা-তল্লাশি! জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে ইডির গ্রেফতারি কি সত্যিই 'ষড়যন্ত্র'?
Jyotipriya Mallick Arrested : ভোরবেলা প্রথম জ্যোতিপ্রিয়ের সল্টলেকের বাড়িতে তল্লাশি শুরু করে ইডি। সল্টলেকের বিসি ব্লকে মন্ত্রীর দু’ খানি বাড়ি রয়েছে।
দ্বাদশীর রাত। তখনও শহরের দুর্গাপ্রতিমা নিরঞ্জনের রেশ কাটেনি। মানুষ উৎসবেই মেতে আছেন তখনও। ২০ ঘণ্টার তল্লাশি জিজ্ঞাসাবাদের পর, এবার ইডির হাতে গ্রেফতার হলেন রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। বৃহস্পতিবার জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বাড়িতে ব্যাপক তল্লাশির পর রাত ৩ টেয় রেশন বণ্টন মামলায় গ্রেফতার হলেন বনমন্ত্রী। শিক্ষক নয়োগ, গরুপাচারের পর এবার রেশন বন্টন নিয়ে দুর্নীতি এবং তার জেরে ফের শাসকদল তৃণমূলের মন্ত্রী গ্রেফতার। ইডি জানিয়েছে, মন্ত্রীর বাড়ি থেকে রেশন বণ্টন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ নথি মিলেছে। সিজিও কমপ্লেক্সে যখন তাঁকে নিয়ে আসা হচ্ছে, জ্যোতিপ্রিয় জানান, “গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার হলাম আমি। শুধু এটুকুই বলে গেলাম। ভারতীয় জনতা পার্টি খুব ভাল কাজ করেছে। তারা আমাকে শিকার করলেন।”
ইডি কেন্দ্রীয় সংস্থা, একথা সত্য। শাসক দল তৃণমূল বরাবরই ইডি-সিবিআইয়ের ধরপাকড়কে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হিসেবেই দেখে একথাও সত্য। কিন্তু রেশন বন্টন নিয়ে এই দুর্নীতির শিকড় কোথায়? কেন সোজা মন্ত্রীকে গ্রেফতার? সে প্রসঙ্গে আসার আগে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৬টা থেকে রাত্রি ৩ টে পর্যন্ত যে ঘটনাপ্রবাহ দেখল বঙ্গবাসী, তার দিকে খানিক নজর দেওয়া যাক। ভোরবেলা প্রথম জ্যোতিপ্রিয়ের সল্টলেকের বাড়িতে তল্লাশি শুরু করে ইডি। সল্টলেকের বিসি ব্লকে মন্ত্রীর দু’ খানি বাড়ি রয়েছে। তল্লাশি চালানো হয় দুই বাড়িতেই। জ্যোতিপ্রিয়ের বাড়ির পাশাপাশি ওই সময়েই তাঁর আপ্তসহায়ক অমিত দে-র নাগেরবাজারের যে দু’টি ফ্ল্যাট, সেখানেও পৌঁছে যান ইডির আধিকারিকরা। অমিত দে-র একটি ফ্ল্যাট ভগবতী পার্ক এলাকায়, অন্যটি স্বামী বিবেকানন্দ রোডে। দু’টি ফ্ল্যাটই সেই সময় বন্ধ ছিল।
আরও পড়ুন- পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের উত্থান ও পতন
বেলেঘাটায় মন্ত্রীর আপ্তসহায়ক অমিতের বন্ধু রনির বাড়িতেও হানা দেয় ইডি। বিকেলে বাড়ি ফেরেন জ্যোতিপ্রিয়ের আপ্ত সহায়ক অমিত। শুধু আপ্তসহায়ক বা আপ্তসহায়কের বন্ধু নয়, ইডির দল বেনিয়াটোলায় জ্যোতিপ্রিয়ের পৈতৃক বাড়িতেও হানা দেয়। সারাদিন ধরে এই ম্যারাথন তল্লাশি ও হানা দেখে সাংবাদিকদের ডেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, "বালু (জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ডাকনাম) সুগারের রোগী। ওর যদি কিছু হয়, তা হলে আমি বিজেপি এবং ইডির বিরুদ্ধে এফআইআর করব।’’ ইডি জানাচ্ছে, রেশন বন্টন দুর্নীতি মামলায় বাকিবুর রহমানের গ্রেফতারির পরেই নাম উঠে এসেছে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও দাবি করেন রেশন দুর্নীতিতে আগাগোড়াই যুক্ত জ্যোতিপ্রিয়। মন্ত্রী যতই 'ষড়যন্ত্র' তত্ত্ব খাড়া করুন না কেন, আসলে দুর্নীতির চরম প্রমাণ রয়েছে ইডির হাতে।
তথ্য বলছে, ১৯৬৫ সালে রেশন বন্টন ব্যবস্থা শুরু হয় রাজ্যে। সেই সময় বন্টনের পরিবহনের দায়িত্ব নিয়েছিলেন সিরাজ বাবু নামে এক ব্যক্তি। সিরাজ দীর্ঘদিন খাদ্য দফতরের সঙ্গে কাজ করেছেন। এই সিরাজ বাবুর ভাগ্নে হচ্ছেন বাকিবুর। ২০০৪ সালে খাদ্য দফতরের পরিবহনের কাজে যুক্ত হন বাকিবুর। বাকিবুর প্রথমে চারটি লরি নিয়ে কাজ শুরু করেন। ধীরে ধীরে একটি রাইস মিল তৈরি করেন। ২০১১ সালে রাজ্যে সরকার পরিবর্তন হলে, সেই বছরই একটি আটার মিল তৈরি করেন বাকিবুর। প্রতিপত্তি বাড়তে থাকে ক্রমেই। শাসকদলের প্রভাবশালীদের মদতে খাদ্য দফতরের কোয়ালিটি কন্ট্রোলের ল্যাবরেটরিতে জালিয়াতি শুরু করেন বাকিবুর। অভিযোগ রয়েছে, খারাপ মানের আটাকে ভালো বলে পরীক্ষার প্রতিবেদন তৈরি করে বিল করানো শুরু করে বাকিবুর। খাদ্য দফতরের ট্যাগ থাকা রাইস মিলের বা আটা মিলের পণ্যের বেশিরভাগটাই খাদ্য দফতরকে সরবরাহই করেনি বাকিবুর। সেগুলি সব বাইরে বিক্রি করা হতো।
সদ্য বাকিবুরকে হেফাজতে নেওয়ার পরেই প্রথম নাম উঠে আসে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের। নিয়ম অনুযায়ী, সিজিও কমপ্লেক্স থেকে বের করে মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হবে মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে। দুপুরে তাঁকে আদালতে পেশ করা হবে।