কংগ্রেস-তৃণমূল বন্ধুতার পথে কাঁটা অতিরিক্ত 'বামপ্রীতি'! মালদহের সভা থেকে যা বললেন মমতা
Mamata Banerjee: কংগ্রেসের সঙ্গে জোট না করার জন্য ফের বামেদেরকেই দুষেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন সিপিএমের উপর।
ভারত জোড়ো যাত্রা নিয়ে বাংলায় রাহুল। লোকসভা ভোটের আগে আরও ভাল করে প্রচার ও জনসংযোগই প্রধান লক্ষ্য। তার মধ্যে এবার আবার ছাব্বিশটি দল মিলে গড়ে উঠেছে বিজেপি বিরোধী জোট INDIA। আর সেই ছাব্বিশটি দলের মধ্যে অন্যতম কংগ্রেস এবং তৃণমূল। আর সেই দুই দলের মধ্যেই তেমন বনিবনা নেই। বরং ক্রমশ রেষারেষি এমন জায়গায় পৌঁছেছে, যে রাহুলের যাত্রার দিনেই মালদহে নিজের সভা রেখেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু তা-ই নয়, সেই সভা থেকে কংগ্রেসের সঙ্গে মতবিরোধের আশঙ্কাতেই আরও একবার সিলমোহর লাগালেন তিনি। মালদহের সভা থেকে একই সঙ্গে প্রশ্ন তুলে দিলেন ইন্ডিয়া জোটের ভবিষ্যৎ নিয়েও।
দিন কয়েক দিন ধরেই রাজ্য-রাজনীতি উত্তাল তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরীর বাকবিতণ্ডায়। গোড়া থেকেই এই লোকসভা ভোটে একা লড়ার কথা বলে আসছেন মমতা। বিজেপি বিরোধী জোটের শরিক হওয়া সত্ত্বেও বারবার তিক্ততাই বেড়েছে এই দুই দলের। এমনকী ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকেও কখনও একাসনে বসতে দেখা যায় অধীর ও মমতাকে। আর সেই তিক্ততা যে বাড়তে বাড়তে কতখানি বেড়েছে, তা বুধবার কার্যত স্পষ্ট করে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সভামঞ্চ থেকে পরিষ্কার করে দিলেন, জোট হলেও তিনি অধীরের বহরমপুরের লোকসভা আসনটি মোটেও তাঁকে ছেড়ে দিচ্ছেন না। যদিও একবারও ভুল করেও অধীর চৌধুরীর নামটুকুও নেননি মমতা।
আরও পড়ুন: ‘ন্যায় যাত্রা’ নিয়ে মালদহে রাহুল, নিজের গড়ে কেন গড়হাজির ডালু?
বরং কংগ্রেসের সঙ্গে জোট না করার জন্য ফের বামেদেরকেই দুষেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন সিপিএমের উপর। তাঁর কথায়, ‘‘আমাকে সিপিএম অনেক মেরেছে। মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। তা সত্ত্বেও মনে রাখবেন আপনাদের আর্শীবাদে, দোয়ায় আমি বেঁচে আছি। সেই সিপিএমকে আমি কোনওদিনও ক্ষমা করব না। সিপিএমের সঙ্গে যাঁরা ঘর করে তাঁরা বিজেপির সঙ্গেও ঘর করে, আমি ওদের ক্ষমা করি না। ওরা বিজেপির সঙ্গে জোট করে। আমি পঞ্চায়েত ভোটের সময় দেখেছি।’’ একই সঙ্গে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন বণ্টন নিয়ে ঝামেলার কথাও স্পষ্ট করে দেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমি কংগ্রেসকে বললাম, তোমাদের একটাও এমএলএ নেই, দু’টি এমপি আছে। একটা মালদহে। আরও একটা রয়েছে। আমি মালদহের দুটো আসন ছেড়ে দিচ্ছি। আমরা জিতিয়ে দেব। বলল না, আমার অনেক চাই। আমি বললাম তোমায় আমি একটাও দেব না। তুমি আগে সিপিএমের সঙ্গ ছাড়ো। সিপিএম তোমার নেতা। সিপিএম আমাদের ওপর কী অত্যাচার করেছে!’’
অর্থাৎ কংগ্রেসের সঙ্গে মতপার্থক্যের মূল কারণ হিসেবে মমতা কংগ্রেসের বামপ্রীতিকেই দুষেছেন প্রত্যক্ষ ভাবে। বামেদের সঙ্গে কংগ্রেসের এই দোস্তি অবশ্য আজকের ব্যপার নয়। এক সময় এই দুই দল মিলে কেন্দ্রে সরকার গঠন পর্যন্ত করেছিল। পরে অবশ্য দূরত্ব বাড়ে দুই দলের। তবে বছর কয়েক আগে ফের ভোটময়দানে কাছাকাছি আসে দুই দল। বাংলায় গড়ে ওঠে জোটও। তবে তা নিয়েই আপত্তি রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের। সে জন্যই নাকি রাহুলের 'ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা' বারবার আমন্ত্রণ পাওয়া সত্ত্বেও, তা এড়িয়েছেন তিনি।
তবে তার পরেও মালদহ উত্তর ও দক্ষিণ কেন্দ্রের আসন দু'টি কংগ্রেসকে ছেড়ে দেওয়ার কথা জানিয়েছেম তৃণমূল সুপ্রিমো। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বহরমপুর ও মালদহ দক্ষিণ আসনে জয় পায় কংগ্রেস। বহরমপুর আসনে পঞ্চম বারের জন্য জয়ী হন অধীর, আর মালদহ দক্ষিণ আসনে জেতেন সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরী। তাঁকে আসন ছাড়তে রাজি হলেও, বহরমপুরের পাঁচবারের সাংসদ হলেও, তাঁকে আসন ছাড়তে রাজি ছিলেন না মমতা। গত লোকসভা নির্বাচনে সিপিএমের সমর্থন পেয়েই ওই আসনে জয় পান অধীর। ২০২৪ সালের নির্বাচনে অধীর যে বহরমপুর আসনে আবারও সিপিএমের সমর্থন পাবেন, তা বুঝেই তাঁকে সমর্থন দিতে নারাজ মমতা। তেমনটাই মত অভিজ্ঞমহলের একাংশের। বহরমপুর লোকসভার অধীন সাতটি বিধানসভা আসনের মধ্যে ছ’টি বর্তমানে তৃণমূলের দখলে, বহরমপুর বিধানসভায় আবার জয়ী হয়েছে বিজেপি। তাই এমন একটি আসন কোনও ভাবেই অধীরকে ছেড়ে দিতে চায় না তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। আর তার ফলে জোটের যাবতীয় সম্ভাবনা যে খারিজ হয়ে যাচ্ছে, তা-ও একপ্রকার কারণ-সহ ব্যাখ্যা করে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী।
মাটি ছাড়তে নারাজ অধীর চৌধুরী নিজেও। জোট নিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, এই জোটের প্রক্রিয়ার মধ্যে তিনি নেই! তৃণমূলকে, বিজেপিকে হারিয়ে তিনি জিতেছেন। আগামী দিন কংগ্রেস তাঁকে লড়তে বললে তিনি এ ভাবেই লড়বেন। বাকি জোটের কী কথা, না কথা, কার সঙ্গে জোট হবে, না হবে— এই ব্যাপারে কিছুও তিনি জানেন না। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁর বিরুদ্ধেই প্রার্থী হতেও চ্যালেঞ্জও করেন তিনি। আর তার পরে তৃণমূলনেত্রী তো বটেই, তৃণমূলের অনেকেই তাঁর উপর ক্ষুব্ধ হয়েছেন।
আরও পড়ুন: কাঁচ ভাঙল রাহুলের গাড়ির! ন্যায় যাত্রায় নিরাপত্তার ব্যবস্থাই করেনি তৃণমূল প্রশাসন?
যদিও তা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন না অধীর। রবিবার রাহুলের জলপাইগুড়ি সভার সময়ে গোটা সময়টাই তাঁকে দেখা গিয়েছে রাহুলের পাশে। তবে এই টানাপড়েন ইন্ডিয়া জোটের ভবিষ্যৎকে একেবারে কিনারায় নিয়ে গেল কিনা, তা নিয়ে একটা প্রশ্ন তো থেকেই যাচ্ছে। যতই রাজ্যে একা লড়ুক মমতা, জাতীয় রাজনীতির ময়দানে বিজেপিকে একা ঠেকানো সম্ভব হবে তো একা তৃণমূলের পক্ষে। এমনটাই মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহলের একটি অংশ।