ভূমিকম্পের সময় আকাশে রহস্যময় আলো! আসল সত্য জানালেন বিজ্ঞানীরা...

Earthquake Lights: একজন টুইটার ব্যবহারকারী ভূমিকম্পের সময়কালীন একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন। ওই ভিডিওতে আকাশে বিভিন্ন রঙের আলোর ঝলকানি দেখা যাচ্ছে।

আফগানিস্তানে হিন্দুকুশের ভয়াবহ ভূমিকম্পের জেরে কেঁপে উঠেছে দিল্লি-হিমাচলপ্রদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। আফগানিস্তানের ভূমিকম্পের প্রভাব ভারত ও পাকিস্তান জুড়ে অনুভূত হয়েছে। এরই মাঝে একটি নতুন বিষয় ভাবাচ্ছে বিজ্ঞানীদের। ভূমিকম্পের ঠিক পর মুহূর্তে আকাশে এক রহস্যময় আলোর ঝলকানি দেখা গিয়েছে। টুইটারে সেই বিষয়ক একটি ভিডিও-ও বেশ ভাইরাল। ভূমিকম্পের সঙ্গে মাটির সম্পর্ক রয়েছে, কিন্তু আকাশে এমন রহস্যময় আলো কেন? বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, এই রহস্যময় আলো আর্থকোয়েক লাইট (EQL) নামেই পরিচিত। একজন টুইটার ব্যবহারকারী ভূমিকম্পের সময়কালীন একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন। ওই ভিডিওতে আকাশে বিভিন্ন রঙের আলোর ঝলকানি দেখা যাচ্ছে। তবে ভিডিওটি মঙ্গলবার রাতের ভূমিকম্পের পরে নাকি আগে তা এখনও নিশ্চিত করা যায়নি।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এমন ঘটনা নতুন নয়। এই ধরনের দৃশ্য সারা বিশ্বেই দেখা গিয়েছে। তবে হ্যাঁ, বিষয়টি রহস্যময়। এই বিষয়টি কেন ঘটে তা নিয়ে নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। প্রামাণ্য তথ্য পেতে আরও গবেষণার প্রয়োজন।

ভূমিকম্পের আলো আসলে কী?

ইউনাইটেড স্টেটস জিওলজিক্যাল সার্ভে ভূমিকম্পের আলোকে শিট লাইটেনিং, আলোর বল, স্ট্রিমার এবং স্থির আভা- এসব বলেই অভিহিত করেছে। বিষয়টি যে ভূমিকম্পের সঙ্গে সম্পর্কিত তা নিয়ে সন্দেহ নেই। তবে রহস্যময় এই ঘটনা ব্যাখ্যা করার জন্য কোনও শক্তপোক্ত প্রমাণ নেই। গবেষকরা জানিয়েছেন, ভূমিকম্পের আলো ভূমিকম্পের আগে বা ভূমিকম্পের সময় দেখা যায়। তবে ভূমিকম্পের পরে সাধারণত দেখা যায় না।

আরও পড়ুন- একটানা দু’মিনিট ধরে কাঁপল রাজধানী, কেন আফগানিস্তানের ভূমিকম্পের জের বইছে ভারতও?

ইউএসজিএস-এর মতে, ভূ-পদার্থবিদদের একাংশ মনে করেন, ভূমিকম্পের সময় এবং কেন্দ্রস্থলের কাছাকাছি এই অস্বাভাবিক আলোর ঝলকানি আসলে EQL। কেউ কেউ আবার মনে করেন, এই আলো যে EQL তা এত নির্দিষ্ট করে বলা যায় না। অন্য এক অংশ আবার মনে করেন, কিছু কিছু ঘটনায় এই আলোর সঙ্গে EQL-এর মিলে পাওয়া যাচ্ছে, তবে সবক্ষেত্রে না।

 

সিসমোলজিক্যাল সোসাইটি অব আমেরিকার গবেষকরা ২০১৪ সালের একটি গবেষণাপত্রে দেখিয়েছেন, ভূমিকম্পের আলোগুলি ফাটলের কাছাকাছি দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি। উপ-উল্লম্ব চ্যুতি বা ফাটলগুলির চাপে এখানে বৈদ্যুতিক স্রোত ভূপৃষ্ঠে দ্রুত প্রবাহিত হয়। গবেষকরা বলেছিলেন, বৈদ্যুতিক চার্জের ফলে এই আলোগুলির জন্ম। এই চার্জ ভূমিকম্পের সময় নির্দিষ্ট ধরনের শিলাতে সক্রিয় হয়ে ওঠে।

ব্যাসাল্ট এবং গ্যাব্রোর মতো শিলার স্ফটিকগুলিতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চ্যুতি রয়েছে যা বৈদ্যুতিক চার্জের জন্ম দেয়। গবেষকরা আরও দেখেছেন, তাদের বিশ্লেষণ করা ৬৫টি ভূমিকম্প আলোর ক্ষেত্রে মহাদেশীয় ফাটলের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। গবেষকরা ৩.৬ থেকে ৯.২ মাত্রার ভূমিকম্প বিশ্লেষণ করেন, যার ৮০ শতাংশেরই মাত্রা ছিল ৫.০ এর চেয়ে বেশি।

উপকেন্দ্রের সময় এবং দূরত্ব ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়। বেশিরভাগ EQL ভূমিকম্পের আগে এবং/অথবা ভূমিকম্পের সময় দেখা যায়, কিন্তু ভূমিকম্পের পরে খুব কমই দেখা গিয়েছে। EQL গঠনের জন্য দায়ী হতে পারে চ্যুতি ও চাপ। ভূমিকম্পের তরঙ্গ প্রবাহের সময় এই সব চ্যুতি বা ফাটল এবং স্থানীয় চাপের দ্রুত পরিবর্তন হয়। তবে এই ঘটনাটি এখনও পুরোপুরি প্রমাণিত হয়নি। ভূমিকম্প সম্পর্কিত এই রহস্যময় ঘটনাটি নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

More Articles