যাঁদের জন্য লেখিকাকে নির্বাসন, তাঁদের হাতেই দেশছাড়া হাসিনা! কী বলছেন তসলিমা?

Taslima Nasreen on Sheikh Hasina: তসলিমার বিখ্যাত বই 'লজ্জা' নিয়ে মৌলবাদী সংগঠনগুলি তাঁকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। সেই প্রেক্ষিতে ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ ছাড়তে হয়েছিল তসলিমাকে।

ইতিহাস কিছু ভোলে না। সমুদ্রের ঢেউ যেমন ফেরায়, হারানো যা কিছু, এক না একদিন! সময়ও ফেরায়। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ থেকে নির্বাসিত হয়েছিলেন তসলিমা নাসরিন। বিতর্কিত লেখিকাকে দেশছাড়া করার নেপথ্যে ছিলেন শেখ হাসিনা। সেই বাংলাদেশকেই ছেড়ে যেতে বাধ্য হলেন খোদ শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের লেখিকা তসলিমা নাসরিন বরাবরই সাম্প্রদায়িকতার কট্টর সমালোচক। ছাত্রদের বিক্ষোভ, তা দমন, হিংসা, মৃত্যু ও শেষমেশ হাসিনার অপসারণের পর ২৫ বছর আগের সেই দিনটিকে মনে করেছেন তসলিমা।

তসলিমা নাসরিন বলছেন, যে শেখ হাসিনা এককালে 'ইসলামপন্থীদের খুশি করার জন্য' তাঁকে বাংলাদেশ থেকে বের করে দিয়েছিলেন, সেই 'একই ইসলামপন্থীরা'-ই এবারের ছাত্র আন্দোলনের অংশ ছিল যার জেরে দেশ ছাড়তে বাধ্য হলেন শেখ হাসিনা। "আমার মাকে মৃত্যুশয্যায় দেখতে বাংলাদেশে যাওয়ার পর ইসলামপন্থীদের খুশি করার জন্য হাসিনা আমাকে আমার দেশ থেকে বের করে দিয়েছিলেন এবং আমাকে আর কখনও দেশে প্রবেশ করতে দেননি। সেই একই ইসলামপন্থীরা ছাত্র আন্দোলনের অংশ ছিল যারা হাসিনাকে আজ দেশ ছাড়তে বাধ্য করল," নিজের সোশ্যাল মিডিয়াতে লিখেছেন লেখিকা তসলিমা নাসরিন।

আরও পড়ুন- “পরবর্তী পাকিস্তান হবে বাংলাদেশ”, কেন বলছেন শেখ হাসিনার পুত্র জয়?

হাসিনাকে মাফিয়া বলেছেন তসলিমা, বলেছেন ফ্যাসিস্ট, বলেছেন নার্সিসিস্ট। হাসিনার পদত্যাগে এই ফ্যাসিজমের যুগ শেষ হলো বলে মনে করছেন তিনি। তসলিমার অভিযোগ, হাসিনাই বাংলাদেশে ইসলামপন্থীদের বেড়ে উঠতে মদত জুগিয়েছেন। দুর্নীতি ফুলে ফেঁপে উঠেছে তাঁরই আমলে। তবে আগামীতে বাংলাদেশে আবার মৌলবাদী সরকারই আসবে না তো? তসলিমা বলেছেন, বাংলাদেশে সেনা শাসনের বিরুদ্ধে। গণতন্ত্র চেয়েছেন তিনি।

 

এর আগে একটি পোস্টে তসলিমা লেখেন, "হাসিনাকে পদত্যাগ করে দেশ ত্যাগ করতে হয়েছে। তিনি নিজেই তাঁর এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। তিনিই ইসলামপন্থীদের বেড়ে উঠতে দিয়েছিলেন। তিনিই তাঁর লোকদের দুর্নীতিতে জড়িত হতে দিয়েছিলেন। বাংলাদেশ যেন কোনওভাবেই পাকিস্তানের মতো না হয়ে যায়। সেনাবাহিনীর শাসন উচিত নয়। রাজনৈতিক দলগুলোকে বাংলাদেশে গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা আনতে হবে"।

বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর হামলার কিছু উড়ো খবরও আসছে। নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন সেই প্রসঙ্গে লিখেছেন, "সারা দেশে হিন্দুদের ওপর হামলা শুরু হয়ে গেছে। হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী যারা দুলে দুলে আমার সোনার বাংলা, কারার ওই লৌহ কপাট, ও আমার দেশের মাটি গাইল, তারা কোথায়? তারা কি গণভবনের হাঁস-মুরগি-খাসি চুরি করায় আর হাসিনার ব্রা চুরি করায় ব্যস্ত? নাকি তাদের দায়িত্ব তাদের জিহাদি ভাইব্রাদারদের হাত থেকে দেশের মাটির দেশের মানুষদের প্রাণ বাঁচানো?”

 

আরও পড়ুন- শেখ হাসিনার পতনের কারণ তাঁর জিভ ও চাটুকার সাংবাদিকবর্গ 

তিন দশক ধরে নির্বাসিত জীবনই কাটাচ্ছেন তসলিমা নাসরিন। পেশায় চিকিৎসক তসলিমা নিজে নারীবাদী, ধর্মনিরপেক্ষ এবং মানবতাবাদী। তাঁর একের পর এক লেখায় মহিলাদের নিপীড়ন এবং ইসলাম ধর্মের সমালোচনা করেছেন তিনি। মহিলাদের যৌন আকাঙ্খা নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন তিনি। সেই কারণেই কট্টর ইসিলামপন্থীদের রোষানলেও পড়েছেন। তসলিমা নাসরিনের বিখ্যাত বই 'লজ্জা' নিয়ে মৌলবাদী সংগঠনগুলি তাঁকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। সেই প্রেক্ষিতে ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ ছাড়তে হয়েছিল তসলিমাকে। ১৯৯৩ সালের এই লজ্জা বইটি বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হলেও অন্যত্র বেস্টসেলার হয়ে ওঠে। সেই সময় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শেখ হাসিনার চির প্রতিদ্বন্দ্বী খালেদা জিয়া। লজ্জা উপন্যাসটি প্রকাশের পর একুশে বইমেলায় তসলিমাকে শারীরিকভাবে নিগ্রহও হতে হয়। কাউন্সিল অব ইসলামিক সোলজার্স নামক এক ইসলামপন্থী সংগঠন তাঁর বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করে। এরই সঙ্গে তসলিমা নাসরিনের লেখা দ্বিখণ্ডিত, উতল হাওয়া সহ একাধিক আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ নিষিদ্ধ করা হয় বাংলাদেশে।

মুক্তমনের এই লেখা ইসলামপন্থীদের সহ্য হয়নি। তসলিমার ফাঁসির দাবি উঠতে শুরু করে তাঁদের মধ্যে থেকে। তসলিমার শাস্তির দাবিতে সাধারণ ধর্মঘট ডাকা হয়। সিলেটের একটি সভায় তসলিমার মাথার দাম ঘোষণা করা হয় ৫০ লাখ টাকা।

গত সোমবার বাংলাদেশ জুড়ে চলা প্রায় একমাস ব্যাপী আন্দোলন-বিক্ষোভের জেরে অবশেষে শেখ হাসিনা ইস্তফা দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে। তারপর একটি সামরিক বিমানে ভারতে পালিয়ে আসেন। শোনা যাচ্ছে, ব্রিটিশ যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় নিতে পারেন তিনি।

More Articles