দেওয়ালে প্রস্রাব করলে তা ফিরে আসবে নিজেরই গায়ে! দুর্দান্ত এই রঙ দেওয়ালে লাগালেই কেল্লাফতে

Anti Pee Paint: দেওয়ালে এমন একটি রঙের প্রলেপ দেওয়া হচ্ছেন যাতে নিজের মূত্র ব্যুমেরাং হয়ে নিজেরই গায়ে লাগবে!

দেওয়ালে কালো কালিতে বড় বড় করে লেখা 'এখানে প্রস্রাব করিবেন না'। তবু বিদ্রোহী নাগরিক মন তো মানে না। যেখানে বারণ করা হয় সেখানেই প্যান্টের চেন নামিয়ে দেওয়াল ভিজিয়ে অনাবিল আনন্দ পান মানুষ। সব দেশেই মোটামুটি এরকমই চিত্র, হয়তো ভারতে একটু বেশিই। মনের খেয়ালে এই যে পুরুষ নাগরিকরা চেন খুলে নিজের বর্জ্যতরল দেওয়ালের গায়ে দান করে যান, একদিন যদি দেখা যায় দেওয়াল তাদের গায়ে সেই প্রস্রাব ফিরিয়ে দিচ্ছে! দেওয়াল তো জড়, তার তো মূত্রত্যাগের ব্যাপারটাই নেই। তাহলে? যদি আপনারই মূত্র আপনার গায়ে ফিরিয়ে দেয় দেওয়াল? লন্ডনে এমনটাই সম্ভব হয়েছে। রাস্তাঘাটে জনসাধারণের মূত্রত্যাগের সমস্যায় জেরবার লন্ডন দুর্দান্ত একটি পরিকল্পনা করেছে৷ লন্ডনের বিখ্যাত এলাকা সোহোর কর্মকর্তারা দেওয়ালে এমন একটি রঙের প্রলেপ দিচ্ছেন যাতে নিজের মূত্র ব্যুমেরাং হয়ে নিজেরই গায়ে লাগবে! এমনও সম্ভব?

এই রঙের প্রলেপের উপর যদি জল ফেলা হয় তাহলে জল আবার ধাক্কা খেয়ে ফিরে আসে। এই রঙের পোশাকি নাম অ্যান্টি-পি পেইন্ট। এই পেইন্ট একটি স্বচ্ছ জলস্তর তৈরি করে যা প্রস্রাবের সংস্পর্শে এলে প্রস্রাবকে ফের ধাক্কা মেরে ফিরিয়ে দেয়। এই দুর্দান্ত উদ্ভাবনী রঙের পিছনে রয়েছে সহজ সরল প্রাকৃতিক বিজ্ঞান। পদ্মপাতায় কি জল লেগে থাকে? সে তো টলমল করে। জল পদ্মপাতাকে ভেজায় না, জলে ভেজার কোনও চিহ্নও রেখে যায় না। এই বৈশিষ্ট্যটিকে বিজ্ঞানের ভাষায় হাইড্রোহাইড্রোফোবিক বলে। এই কৌশলটিই এখন লন্ডনের দেওয়ালে ব্যবহার করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন- উচ্চবর্ণের মলমূত্র আজও সাফাইয়ের দায় ওদের! আর কতদিন চলবে এই অন্যায়!

অ্যন্টি-পি পেইন্ট আসলে কী?

এই রঙের বেশিরভাগটাই অ্যাসিটোন এবং সিলিকা দিয়ে তৈরি যার প্রধান উপাদান হল বালি। এর সুপারহাইড্রোফোবিক আবরণ জিনিসপত্রকে শুষ্ক রাখে এবং এর উপর নিক্ষিপ্ত প্রায় প্রতিটি তরলকে ঠেকাতে সক্ষম। আর কী কী দিয়ে এই রঙ তৈরি তা অবশ্য সংস্থার তরফে জানানো হয়নি, তবে বিশেষজ্ঞদের বিশ্বাস পলিমার মেশানো থাকতে পারে এই রঙে। এই রঙের আবরণটি দু'টি পর্যায়ে প্রয়োগ করতে হয়। প্রথম পর্যায়ে এটি বেস প্রাইমার হিসাবেই কাজ করে। এই প্রাইমারটি দেওয়ালকে মসৃণ করে, এটিকে হাইড্রোফোবিক করে তোলে যার পরে পরবর্তী প্রলেপ লাগানো হয়। হাইড্রোফোবিক পৃষ্ঠ তরলকে লেগে থাকতে দেয় না।

আরও পড়ুন- টয়লেটে ফ্লাশ করে নষ্ট করছেন! মানুষের মল মূত্রেই জন্মায় বিষহীন সবজি, জানাল গবেষণা

এই রঙের প্রস্তুতকারক আল্ট্রা-এভার ড্রাই জানিয়েছে, এই রঙটি 'ওমনিফোবিক', এটি কোনও বস্তুকে ঢাকার পরে জ্যামিতিক আকারের কিছু চূড়া বা উঁচু বিন্দুর মতো টেক্সচার তৈরি করে। এই উঁচু বিন্দুগুলি জল, কিছু কিছু তেল, ভেজা কংক্রিট এবং অন্যান্য তরল পদার্থকে বিকর্ষণ করে।

২০১৫ সালের একটি গবেষণা বলছে, পদ্মপাতার উপরিভাগ সুঁচের মতো মোমের টিউব দ্বারা আবৃত। এটিই জলের ফোঁটাকে ঠেকিয়ে রাখে। এই রংটিও সেই উঁচু বিন্দুগুলি তৈরি করে। রঙ প্রস্তুতকারকদের দাবি, এই রঙটি নোংরা জল এবং কিছু তেলকে দূর করে দেওয়াল পরিষ্কার এবং ব্যাকটেরিয়ামুক্ত রাখে।

তবে লন্ডনই প্রথম শহর নয় যারা এভাবে প্রকাশ্যে মূত্রত্যাগ ঠেকাতে অভিনব কৌশল ব্যবহার করল। ২০১৫ সালে জার্মানির কোলন প্রথম এই রঙটি ব্যবহার করে। ভারতের দেওয়ালে ত্যাগ করা মূত্র কবে সুনাগরিকদের ভিজিয়ে দেবে? এই প্রশ্ন, সম্ভবত উত্তরহীনই।

 

More Articles