কলকাতায় সেমিকন্ডাক্টর কারখানা! বাঙালির বিপুল কর্মসংস্থানের স্বপ্ন সত্যি হবে?

Semiconductor Plant in Kolkata: পশ্চিম বাংলায় সেমিকন্ডাক্টর কারখানা হলে শুধু কর্মসংস্থানের জন্য নয়, বিশ্ব রাজনীতির ক্ষেত্রেও তার গুরুত্ব হবে অসীম।

পশ্চিমবঙ্গ তাদের ফিরিয়ে দিয়েছে। আসন কমিয়ে দিয়েছে। শহুরে বাঙালিদের একাংশ তো একেবারেই তাচ্ছিল্য করে ফিরিয়ে দিয়েছে। তবু হাল ছাড়েনি বিজেপি। এবার অস্ত্র শিল্প! তাও আবার খাস কলকাতায়! এবং সেই আলোচনা হয়েছে আবার আমেরিকায় বসে! নরেন্দ্র মোদি এবং জো বাইডেনের বৈঠকে কলকাতায় কারখানা তৈরি নিয়ে বিশদে আলোচনা হয়েছে! সব ঠিকঠাক এগোলে কলকাতায় তৈরি হবে সেমিকন্ডাক্টর কারখানা। কী এই সেমিকন্ডাক্টর? কলকাতায় এমন কারখানা গড়ে কতটা লাভ হবে?

সেমিকন্ডাক্টর। ছোটবেলায় পদার্থবিদ্যার বইতে এই নাম অনেকেরই শোনা। সেমিকন্ডাক্টর হচ্ছে এমন এক বস্তু, যা নির্দিষ্ট কিছু পরিস্থিতিতে তড়িৎবাহী হতে পারে। এই মুহূর্তে বিশ্বজুড়ে সেমিকন্ডাক্টরের চাহিদা বিপুল কারণ আমাদের নিত্য ব্যবহৃত নানা বস্তুতে এই সেমিকন্ডাক্টর অত্যাবশ্যকীয় উপাদান, বিশেষ করে বিভিন্ন বৈদ্যুতিন যন্ত্রপাতির ক্ষেত্রে। মোবাইল, ক্যামেরা, ল্যাপটপ, টিভির মতো যন্ত্রগুলিকে সচল রাখে এক বিশেষ ধরনের ‘চিপ’ বা ‘মাইক্রোচিপ’। এই ‘চিপ’ তৈরির অত্যাবশ্যকীয় উপাদানই হচ্ছে সেমিকন্ডাক্টর। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে, ক্রমেই মানুষের প্রযুক্তি নির্ভরতা বাড়ছে আর সেমিকন্ডাক্টরের চাহিদাও ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইলেক্ট্রনিক যে সব বস্তুতে চিপ ব্যবহার করা হয়, সেই চিপ মূলত এখন তৈরি করে চিন। তবে সম্প্রতি সারা পৃথিবীতেই চিনে উৎপন্ন চিপ ব্যবহারের প্রবণতা কমছে। আর সেমিকন্ডাক্টর যেহেতু চিপ তৈরির অন্যতম উপাদান তাই পশ্চিম বাংলায় সেমিকন্ডাক্টর কারখানা হলে শুধু কর্মসংস্থানের জন্য নয়, বিশ্ব রাজনীতির ক্ষেত্রেও তার গুরুত্ব হবে অসীম।

আরও পড়ুন- বাংলাদেশের রদবদল কি আদানিদের বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য সুখবর?

উল্লেখ্য, চলতি বছরের লোকসভা নির্বাচনের আগেই তিনটি সেমিকন্ডাক্টর কারখানার প্রস্তাবিত প্রকল্পে সম্মতি দিয়েছিল কেন্দ্র। এর মধ্যে গুজরাতের সানন্দে আরও একটি সেমিকন্ডাক্টর কারখানা তৈরিতে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে কেন্দ্র। সেটি তৈরি করছে ‘কেন্স সেমিকন’ নামে একটি সংস্থা। এবার খাস কলকাতাতেও সেমিকন্ডাক্টর কারখানা তৈরি হতে চলেছে?

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এবং আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে কলকাতায় কারখানা তৈরি নিয়ে আলোচনা করেছেন। তারপর প্রধানমন্ত্রী মোদির দফতর থেকে একটি বিবৃতি ঘোষণা করে জানানো হয়, জাতীয় নিরাপত্তা, নতুন প্রজন্মের টেলিযোগাযোগ এবং দূষণমুক্ত পরিবেশ গড়ার লক্ষ্যে অত্যাধুনিক সেন্সিং এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কথা হয়েছে দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের। সেই প্রসঙ্গেই নতুন সেমিকন্ডাক্টর কারখানা তৈরির প্রসঙ্গ আসে। বিবৃতি অনুযায়ী, এই কারখানা তৈরির মূল উদ্দেশ্য ইনফ্রারেড, গ্যালিয়াম নাইট্রাইড এবং সিলিকন কার্বাইড সেমিকন্ডাক্টর তৈরি করা। ‘গ্লোবাল ফাউন্ডারিজ’ নামে নিউ ইয়র্কের একটি বহুজাতিক সংস্থা বিভিন্ন দেশের সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে। কলকাতাতেও ওই সংস্থাই কারখানা তৈরি করতে পারে বলে জানা যাচ্ছে। তবে এখানে রয়েছে আরেকটি অদ্ভুত বিষয়। সম্ভাবনা।

আরও পড়ুন- প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে সোজা ফোর্বসের তালিকায়, কীভাবে কোটিপতি হলেন ভারতীয় এই শিল্পপতি?

মোদি-বাইডেন বৈঠকের ঢের আগেই সেমিকন্ডাক্টর কারখানা তৈরি নিয়ে গ্লোবাল ফাইন্ডারিজের সঙ্গে নাকি কথা হয়েছে এই রাজ্যের সরকারের। গ্লোবাল ফাইন্ডারিজের সঙ্গে রাজ্য সরকারের মউ স্বাক্ষরও হয়েছিল কিন্তু তারপর বিশেষ কিছু এগোয়নি। মাঝখান থেকে মোদি জানিয়ে দিয়েছেন তাঁদের এই পরিকল্পনার কথা! রাজ্য প্রশাসন এখন বলছে, এই সেমিকন্ডাক্টর কারখানার নেপথ্যে পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল সরকারের দীর্ঘ উদ্যোগ রয়েছে। কলকাতায় আমেরিকার বিনিয়োগের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘গত বছরের গোড়া থেকেই রাজ্য সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি দফতর এবং ওয়েবেল ‘সেমি কন্ডাক্টর’ সংস্থাগুলিকে আর্জি জানাচ্ছিল। এই ধরনের চিপ তৈরির ছোট ছোট স্টার্টআপগুলিকে ওয়েবেল আইটি পার্কে জায়গাও দিয়েছে।’’ গত বছর গ্লোবাল ফাউন্ডারিজের আমেরিকার প্রতিনিধিরা কলকাতায় এসে ওয়েবেলের সদর দফতরেও যান।

এই মুহূর্তে বিশ্বে যে যে সংস্থা সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের অগ্রগণ্য, গ্লোবাল ফাইন্ডারিজ সেই ক্ষেত্রের প্রথম তিনটি সংস্থার মধ্যে একটি। ইতিমধ্যেই টেগোর টেক নামের একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাকে গ্লোবাল ফাইন্ডারিজ অধিগ্রহণ করেছে। মোদি ও বাইডেন কলকাতায় গ্লোবাল ফাউন্ডারিজের যে কারখানা তৈরির বিষয়ে সহমত হয়েছেন তার পোশাকি নাম হতে পারে ‘জিএফ কলকাতা পাওয়ার সেন্টার’।তাহলে, কর্মসংস্থানের আশা কি দেখতে পারেন বাংলার বর্তমান ছাত্রছাত্রীরা? বাঙালিদের কি নিজের রাজ্যেই চাকরি করার সুযোগ ঘটবে এবার? নাকি রাজনৈতিক জটে আটকে যেতে পারে আরও একটি শিল্প-সম্ভাবনা? এই বাংলায় এমন প্রশ্ন অমূলক নয়।

More Articles