কোন মন্ত্রে ওয়ানাড়ে রাহুল গান্ধির চেয়েও বেশি ভোটে জয় প্রিয়াঙ্কা গান্ধির?
Priyanka Gandhi’s Wayanad victory: রাহুল গান্ধির রেকর্ড ভেঙে প্রিয়াঙ্কা গান্ধি কেরলের ওয়ানাড় লোকসভা কেন্দ্রে একাই প্রায় ৭০ শতাংশ ভোট পেয়েছেন।
ভাই রাহুল গান্ধি জোড়া আসনে জিতেছিলেন লোকসভা নির্বাচনে। ওয়ানাড়েও, রায়বরেলিতেও। জনপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুসারে শুধুমাত্র একটি নির্বাচনী এলাকার হয়েই সাংসদ হতে পারবেন কোনও প্রার্থী। তাই রায়বরেলি আসনটি ধরে রাখেন রাহুল। অগত্যা ওয়ানাড়ে লোকসভা উপনির্বাচন। ভাইয়ের আসনে এবার জিতলেন দিদি প্রিয়াঙ্কা গান্ধি, তাও রাহুলের চেয়েও বেশি ভোটের মার্জিনে! কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধি বঢরা শনিবার ওয়ানাড় লোকসভা উপনির্বাচনে ৪,১০,০০০ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন।
প্রিয়াঙ্কা গান্ধির নির্বাচনী আত্মপ্রকাশ ছিল ওয়ানাড় লোকসভা উপনির্বাচনটি। তাঁর ভাই কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি এই বছরের শুরুতেই লোকসভা নির্বাচনে ওয়ানাড় আসনে ৩.৬ লক্ষ ভোটের ব্যবধানে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির অ্যানি রাজাকে পরাজিত করেছিলেন। রাহুল গান্ধি ২০১৯ থেকে এই বছরের লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত আসনটির প্রতিনিধিত্ব করেছেন এবং জিতেওছেন। তবে প্রিয়াঙ্কার আরও বেশি ভোটে নিরঙ্কুশ জয় কি কংগ্রেসের কাছে আরও বড় বার্তা হতে পারে?
মা সনিয়া গান্ধি বা ভাই রাহুল গান্ধির হয়ে নির্বাচনী প্রচারের কাজ বহু বছর ধরে করে চলেছেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধি বঢরা। তবে সরাসরি রাজনীতির অংশ ছিলেন না গান্ধি পরিবারের এই মহিলা। বছর পাঁচেক আগে সরাসরি সক্রিয় রাজনীতিতে আসেন প্রিয়াঙ্কা। ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক হয়ে পূর্ব উত্তরপ্রদেশে দলের কাজকর্ম দেখাশোনার দায়িত্ব নেন প্রিয়াঙ্কা। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন কংগ্রেসের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। দেশজুড়ে বিজেপির ঝড়ের মধ্যে কংগ্রেস এবং ইন্ডিয়া জোট খড়কুটোর মতো ভেসে যাবে কিনা আশঙ্কা ছিল। তবে এবারের লোকসভা ভোটে কংগ্রেস হালে খানিক পানি পেয়েছে। বিজেপির অবস্থা বেশ কঠিন হয়েছে। জোড়া আসনে রাহুল জিতে প্রমাণ করে দিয়েছিলেন, কৌশলে ভুল করেনি কংগ্রেস।
আরও পড়ুন-রাহুল আর প্রিয়াঙ্কা গান্ধির সম্পর্ক আসলে কেমন? যা প্রমাণে মরিয়া বিজেপি…
২০২৪ সালের গোড়ায় লোকসভা নির্বাচনের আগেই শোনা যাচ্ছিল প্রিয়াঙ্কা গান্ধি এবার লড়বেন ভোটে। রায়বরেলি আসনে প্রার্থী হতে পারেন তিনি। তাঁর পরিবারের গড় আমেঠি থেকেও লড়তে পারতেন তিনি। কিন্তু নির্বাচনী রাজনীতির শুরুটা হয়নি সেবারেও। কংগ্রেস স্মৃতি ইরানিকে জবাব দিতে ওই আসনে কেএল শর্মাকে প্রার্থী করে। কংগ্রেস বলেছিল, প্রিয়াঙ্কা তখনই লোকসভা ভোটে প্রার্থী হয়ে গেলে দলে গুরুত্বপূর্ণ তারকা প্রচারকের অভাব দেখা দিত। কিন্তু জীবনে প্রথম ভোটে লড়েই প্রিয়াঙ্কা বুঝিয়ে দিলেন প্রচারের থেকেও সংসদীয় পদেই তাঁর গ্রহণযোগ্যতা বেশি। রাহুল গান্ধির রেকর্ড ভেঙে প্রিয়াঙ্কা গান্ধি কেরলের ওয়ানাড় লোকসভা কেন্দ্রে একাই প্রায় ৭০ শতাংশ ভোট পেয়েছেন।
২০০৯ সালের আসন পুনর্বিন্যাসের ফলে কেরলের ওয়ানাড় লোকসভা আসনটি তৈরি হয়। এই আসনে কখনই হারেনি কংগ্রেস। তাহলে কি অপেক্ষাকৃত সহজ আসনে লড়ে জেতার কোনও কৃতিত্ব আলাদা করে নেই প্রিয়াঙ্কার? প্রিয়াঙ্কা গান্ধি জয়ী হওয়ার পর, শনিবারই বলেছেন, “এই জয় প্রমাণ করে যে আমার ভাই এখানে কঠোর পরিশ্রম করেছেন এবং তাঁর প্রতি মানুষের ভালোবাসা আছে এবং আমার প্রতি তাঁদের আস্থা আছে।" নিজের সংসদীয় রাজনৈতিক আত্মপ্রকাশেই এমন বিপুল জয় কি শুধু রাহুল গান্ধির প্রতি মানুষের ভালোবাসায় সম্ভব?
ওয়ানাড়, মালাপ্পুরম এবং কোঝিকোড় জেলা জুড়ে বিস্তৃত এই ওয়ানাড় আসনটি বরাবরই কংগ্রেসের ঘাঁটি। এই আসন প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখানে শুধুমাত্র কংগ্রেসের সাংসদরাই নির্বাচিত হয়েছেন। এই আধিপত্যের নেপথ্যে হাত আছে কংগ্রেসের জোটশরিক ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগের (IUML) শক্তিশালী প্রভাবের। উল্লেখযোগ্য পরিমাণে সংখ্যালঘু সমর্থন পায় কংগ্রেস। দীর্ঘদিন ধরেই ভোটারদের সঙ্গে কংগ্রেসের সংযোগ, বিশেষ করে গান্ধি পরিবারের প্রতি ভোটারদের স্নেহ এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সিপিআই এই অঞ্চলে কংগ্রেসের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও নির্বাচনী লড়াইয়ে কার্যত অনুপস্থিতই ছিল তারা। তবে প্রিয়াঙ্কার ক্ষেত্রে আরও একটি বিষয় বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মহিলা ভোটারদের ব্যাপক সমর্থন পেয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন- রাহুল অতীত? এবার দেশে কংগ্রেসের মুখ কি প্রিয়াঙ্কা গান্ধিই?
প্রিয়াঙ্কা গান্ধির ব্যাপক প্রচারাভিযান, রোডশো এবং জনসভায় মহিলা ভোটারদের অভূতপূর্ব উপস্থিতি দেখা গেছে। ব্যক্তিগত স্তরে মহিলাদের সঙ্গে সংযোগ করার ক্ষমতা প্রিয়াঙ্কাকে অনেকখানি এগিয়ে রেখেছে। বেশ কয়েকটি প্রচারে প্রিয়াঙ্কা গান্ধি বারেবারে মহিলাদের জীবনের বাস্তব সমস্যাগুলিকে গুরুত্ব দিয়ে তুলে এনেছেন। মহিলাদের ভূমিকা এবং দায়িত্বগুলিকে গুরুত্ব দিয়ে স্বীকার করেছেন তিনি। প্রিয়াঙ্কা গান্ধির প্রচারের স্টাইলই তাঁকে আলাদা করেছে। কয়েক মাসেই ওয়ানাড়ের জনগণের স্নেহ অর্জন করে নিয়েছেন প্রিয়াঙ্কা। এই অঞ্চলের সঙ্গে তাঁর অপরিচিতিকে স্বীকার করে তাকেই হাতিয়ার করে নিয়েছেন।
২০১৯ সালে ভাই রাহুল গান্ধি নিজের প্রচারে নীতিগর্ভ আলোচনাই করেছিলেন। প্রিয়াঙ্কা অনেক বেশি সহজভাবে মানুষকে ছুঁতে চেয়ছেন সহজ কথায়। ব্যাপকভাবে ওয়ানাড়ে ঘুরেছেন তিনি। যেখানেই ভোটারদের অপেক্ষা করতে দেখেছেন সেখানেই নেমে তাঁদের সঙ্গে দেখা করেছেন তিনি এবং ভীষণ গুরুত্বপূর্ণভাবে, প্রকাশ্যে সরাসরি রাজনৈতিক বক্তব্য এড়িয়ে গেছেন প্রিয়াঙ্কা। কংগ্রেস আগেও প্রিয়াঙ্কাকে পরবর্তী ইন্দিরা গান্ধি হিসাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছিল। প্রচারে পারিবারিক উত্তরাধিকারকে তুলে ধরতেই কংগ্রেস এই কৌশল নেয়। সেই কৌশলের যোগ্য মুখ হয়ে উঠেছেন প্রিয়াঙ্কা।