মালেগাঁওয়ের কৃষক পরিবার থেকে শার্ক ট্যাঙ্কে কামাল! এখন কেমন আছেন 'জুগাড়ু কমলেশ'?

Jugadu Kamlesh Shark Tank India : ‘জুগাড়ু কমলেশ’ – নামটাই যথেষ্ট তাঁর জন্য। এই নামেই গোটা ভারত আজ তাঁকে চেনে।

কথায় বলে, বাঙালি নাকি ব্যবসা করতে পারে না। এই কথাটি যে কতটা ভুল, সেটা অনেকেই বেশ ভালোভাবে বুঝিয়ে দিয়ে গিয়েছে। নতুন প্রজন্মও যে ব্যবসার দিকে উৎসাহী, সেটাও একটু খোঁজখবর রাখলেই দেখা যায়। তবে ইদানীং আরও একটি ব্যাপার নজরে এসেছে। ২০২২ সাল থেকে ভারতের আট থেকে আশি, অনেকেই বসে পড়ছেন টিভির সামনে। কিংবা হাতে উঠে এসেছে মোবাইল। ইকুইটি, ভ্যালুয়েশন ইত্যাদি ব্যবসায়িক শব্দগুলি লোকের মুখে মুখে ঘুরছে। কারণ? শার্ক ট্যাঙ্ক ইন্ডিয়া। আমেরিকার জনপ্রিয় এই অনুষ্ঠান ২০২২-এই ভারতে এসেছে। শুরু হয়েছে দেশের নিজস্ব স্টার্টআপ অনুষ্ঠান।

একের পর এক উদ্যোগপতি, তরুণ থেকে প্রবীণ অন্ত্রেপ্রেনর, নিত্যনতুন ভাবনা সামনে এসেছে মানুষের। ভারতের ঘরের লোক হয়ে গিয়েছেন অসনির গ্রোভার, আমান গুপ্তা, পীযূষ বনসল, নমিতা থাপাররা। তবে এসবের বাইরেও এক বিশেষ তরুণের ভক্ত হয়ে গিয়েছে আপামর ভারত। ‘জুগাড়ু কমলেশ’ – নামটাই যথেষ্ট তাঁর জন্য। এই নামেই গোটা ভারত আজ তাঁকে চেনে। সেই শার্ক ট্যাঙ্কই হয়েছে তাঁর সাফল্যের রাস্তা।

মহারাষ্ট্রের মালেগাঁওয়ের ছোট্ট কৃষক পরিবারের ছেলে কমলেশ ঘুমারে। শার্ক ট্যাঙ্কের প্রথম সিজনে তিনি এসেছিলেন নিজের আবিষ্কৃত বিশেষ প্রোডাক্ট নিয়ে। সেখানেই উঠে আসে তাঁর গল্প। কমলেশের সঙ্গে জড়িয়ে আছে তাঁর বন্ধু নাড়ু। ‘কেজি অ্যাগ্রোটেক’ (KG Agrotech) নামের সংস্থা তৈরি করেছেন কমলেশ। ছোট থেকেই বিভিন্ন বস্তু নিয়ে কিছু না কিছু জিনিস বানিয়ে চলেছেন তিনি। যে কোনও সমস্যার সমাধান পাওয়া যাবে তাঁর কাছে। সেজন্যই নিজের গ্রামে তিনি এক এবং অদ্বিতীয় ‘জুগাড়ু কমলেশ’।

 
 
 
 
 
View this post on Instagram
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 

A post shared by Kamlesh Ghumare (@jugadu.kamlesh)

কমলেশ নিজে একজন কৃষকের সন্তান। ছোট থেকে দেখেছে, নিজের বাবা, কাকারা কত কষ্ট করে কাজ করেন। কাঁধে পেস্টিসাইডের বড় বোঝা নিয়ে মাঠময় ঘোরা, কখনও কখনও সেই রাসায়নিক চোখে মুখেও লেগে যায়। এটা কেবল একটা পরিবারের নয়, ভারতের হাজার হাজার কৃষকের সমস্যা। সবাই তো আর বড় কৃষক, বিশাল জমির মালিক নন। তাঁদের কথা ভেবেই কমলেশ তৈরি করেছিলেন বিশেষ এক ধরনের গাড়ি। যেটায় পেস্টিসাইড রেখে মাঠের মধ্যে অনেক ভালোভাবে ঘোরাফেরা করতে পারবেন কৃষকরা।

আরও পড়ুন : হু হু করে বাড়ছে কৃষক আত্মহত্যা! দেশজুড়ে অন্নদাতাদের দুর্দশার দায় কার

সেরকম ‘জুগাড়’ নিয়েই শার্ক ট্যাঙ্কের মঞ্চে এসেছিলেন জুগাড়ু কমলেশ। সঙ্গী ছিলেন নাড়ু। সেখানেই তাঁর পিচ, তাঁর ভাবনা সবাইকে প্রভাবিত করে। তাঁর কথা বলার ধরন, আত্মবিশ্বাসে কিছু তো একটা ছিল যেটা সবাইকে ছুঁয়ে যায়। ‘আমরা কৃষক, আমরা কারোর সামনে মাথা ঝোকাই না। কারোর গোলামি করি না।’ মঞ্চের ওপর ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে এই কথা উচ্চারণ করতে ধক লাগে। কিন্তু আগে তো কেউ তাঁর পাশে দাঁড়ায়নি। কী করে ব্যবসা এগোবে?

এগিয়ে এলেন লেন্সকার্টের প্রতিষ্ঠাতা, শিল্পপতি, অনুষ্ঠানের অন্যতম বিচারক পীযূষ বনসল। তিনি এসে কমলেশ আর নাড়ুর হাত ধরেন। কেজি অ্যাগ্রোটেকের হাত ধরলেন পীযূষ। গোটা ভারত সেদিন হাততালি দিয়ে উঠেছিল। শার্ক ট্যাঙ্ক ইন্ডিয়ার প্রথম সিজনের সবচেয়ে ভালো চুক্তি, সবচেয়ে ভালো মুহূর্তের সাক্ষী থেকেছিল ভারত।

 
 
 
 
 
View this post on Instagram
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 

A post shared by Kamlesh Ghumare (@jugadu.kamlesh)

এখন শার্ক ট্যাঙ্কের দ্বিতীয় সিজন চলে এসেছে। কেটে গিয়েছে একটা বছর। এখন কোথায় আছেন জুগাড়ু কমলেশ? তাঁকে প্রায় দেখাই যায় না! তাঁর কাজ, তাঁর লক্ষ্য কি এগোচ্ছে? সেই ব্যাপারে নিশ্চিত করেছেন পীযূষ বনসল নিজে। এই মুহূর্তে লেন্সকার্ট অ্যাকাডেমিতে ব্যবসার নানা দিক নিয়ে ট্রেনিং করছেন কমলেশ এবং নাড়ু। তাঁদের সঙ্গে সব সময় রয়েছেন পীযূষ নিজে। কেজি অ্যাগ্রোটেক নিজের প্রথম যন্ত্রের ডিজাইন প্রোটোটাইপও তৈরি করে ফেলেছে। শুধু পীযূষ বনসলই নন, অন্যান্য ‘শার্ক’রাও জুগাড়ু কমলেশকে আগলে রেখেছেন। এখন অবশ্য কমলেশের একটা বড় ফ্যানবেস তৈরি হয়েছে। অটোগ্রাফও দিচ্ছেন তিনি। রাস্তায় গেলেই মানুষজন তাঁকে চিনে ফেলছে। ঘিরে ধরছে তাঁকে। 

আরও পড়ুন : ফসল ফলিয়েও অপুষ্টিতে ভুগছে কৃষকদের সন্তানরাই! যেভাবে লড়ছে অসমের জনজাতিরা

একটি সাক্ষাৎকারে পীযূষ নিজেই বলেছেন যে, কমলেশের মধ্যে একটা অদ্ভুত প্যাশন রয়েছে। সমস্যাকে গুরুত্ব দিয়ে সমাধান, সবসময় মুখে হাসি, আত্মবিশ্বাস, অন্যকে সম্মান দেওয়া আর নিজের দুঃসময়ের বন্ধুকে না ভোলা – সমস্তটা নিয়েই কমলেশ। ভারতের আগামী দিনের উদ্যোগপতির এমন ঝকঝকে চেহারাই তো দেখতে চেয়েছিলেন সবাই। এখন একটু একটু করে স্বপ্নের দিকে এগোচ্ছেন জুগাড়ু কমলেশ। আকাশ ছুঁতে যে এখনও অনেকটা পথ পেরোনো বাকি।

More Articles