জিমন্যাস্টিক বিশ্বকাপে পদকজয়! মিশরে যে নজির গড়লেন বঙ্গকন্যা প্রণতি
Pranati Nayak: মিশরের কায়রোতে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতায় ভল্ট ইভেন্টে ব্রোঞ্জ জিতেছেন প্রণতি। ফাইনালে ১৩.৬১৬ স্কোর করেন প্রণতি।
জিমন্যাস্টিকের দুনিয়ায় বিশ্বমঞ্চে এতদিন তেমন জায়গা করতে পারেনি ভারত। ২০১৬ সালে রিও অলিম্পিক্সে চমকে দিয়েছিলেন আগরতলার বঙ্গকন্যা দীপা কর্মকার। প্রথম ভারতীয় জিমন্যাস্ট হিসেবে অলিম্পিক্সেও প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন তিনি। তাঁর জন্য প্রদুনোভা ভল্টের নাম পৌঁছে গিয়েছিল দেশের প্রতিটি কোণায়। তবে শেষরক্ষা হয়নি। অল্পের জন্য় পোডিয়াম ফিনিশ করতে পারেননি ব্রাজিলে। দীপা শেষ করেছিলেন চতুর্থ স্থানে। তবে দীপার সেই শূন্যস্থান পূরণ করেছেন আরেক বঙ্গকন্যা। ভারতকে ফের আরও একবার জিমন্যাস্টিকের স্বপ্ন দেখিয়েছে বাংলার আরেক কন্যা প্রণতি নায়েক।
পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলার মেয়ে প্রণতি। মিশরের কায়রোতে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতায় ভল্ট ইভেন্টে ব্রোঞ্জ জিতেছেন প্রণতি। ফাইনালে ১৩.৬১৬ স্কোর করেন প্রণতি। এই বিভাগে সোনা জিতেছেন উত্তর কোরিয়ার আন চ্যাং ওক। তাঁর স্কোর ১৪.২৩৩। দ্বিতীয় স্থানে শেষ করে রুপো জিতেছেন বুলগেরিয়ার ভ্যালেন্টিনা জর্জিয়েভা। তাঁরও স্কোর প্রণতির মতোই ১৩.৬১৬। সমান পয়েন্ট পেলেও টেকনিক্যাল দিক থেকে এগিয়েছিলেন ভ্যালেন্টিনা। তাই রুপো জিতেছেন তিনি। ব্রোঞ্জ নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে বাংলার মেয়েকে। তাঁর এই সাফল্যের জন্য প্রণতিকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন: ডোপিংয়ের জেরে দু’বছরের নির্বাসন, কলঙ্ক কাটিয়ে ফের জাদু দেখাতে পারবেন দীপা কর্মকার?
এই অলিম্পিকে সোনা রূপো হাত থেকে ফস্কালেও সাফল্য ঝাড়গ্রামের কন্যাকে এই সাফল্য আরও এক ধাপ এগিয়ে দিয়েছে প্যারিস অলিম্পিকে ছাড়পত্র পাওয়ার দিকে। তৃতীয় ভারতীয় মহিলা জিমন্যাস্ট হিসাবে জিমন্যাস্টিক্সের বিশ্বকাপে পদক জিতলেন ঝাড়গ্রামের মেয়ে প্রণতি। তাঁর আগে ২০১৮ সালে অনুণা রেড্ডি ও ২০১৮ সালে দীপা পদক জিতেছিলেন। এ বারের প্রতিযোগিতা ভাল যায়নি দীপার। ফাইনালের জন্য যোগ্যতা অর্জন রাউন্ডে প্রণতির থেকে ভাল স্কোর করেছিলেন তিনি। কিন্তু ফাইনালে তাঁর স্কোর হয় ১৩.৩৮৩। ফলে পঞ্চম স্থানে শেষ করতে হয় ত্রিপুরার জিমন্যাস্টকে।
প্যারিস অলিম্পিক্সের যোগ্যতা অর্জনের জন্য বিশ্বকাপের একটি সিরিজ়ের আয়োজন করা হয়। চারটি প্রতিযোগিতা হয় সেখানে। কাইরোতে হয়েছে প্রথম প্রতিযোগিতা। এর পরে ২২ থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি জার্মানির কটবাস, ৭ থেকে ১০ মার্চ আজেরবাইজানের বাকু ও ১৭ থেকে ২০ এপ্রিল কাতারের দোহায় হবে প্রতিযোগিতা। এই চারটি বিশ্বকাপ শেষে প্রতিটি বিভাগ থেকে পুরুষ ও মহিলাদের শীর্ষ দুই জিমন্যাস্ট প্যারিস অলিম্পিক্সের যোগ্যতা অর্জন করবেন।
কায়রোর জিমন্যাস্টিকের বিশ্বকাপ টুর্নামেন্টের এই সাফল্য যে প্রণতির কেরিয়ারের অন্যতম বড় মাইলস্টোন তাতে কোনও সন্দেহ নেই। এই জয় শুধুমাত্র তাঁর ঝুলিতে পদক সংখ্যাই বাড়ায়নি, বরং আসন্ন ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকেও তাঁর জায়গা ইতিমধ্যেই পাকা করে দিয়েছে। বিশ্বের তাবড় জিমন্য়াস্টিকদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয়েছে প্রণতিকে। আর এই সাফল্যের পথটা মোটেই সহজ ছিল না তাঁর। সবচেয়ে বড় কথা, নিজের রাজ্য বাংলা ছেড়ে ওডিশায় ভারতীয় জিমন্যাস্টিক্স হাই পারফরম্যান্স সেন্টারে দিনের পর দিন অনুশীলন করতে হয়েছে প্রণতিকে। তবে তার জন্য বাংলার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই বলেই জানিয়েছেন ২৮ বছর বয়সি এই খেলোয়াড়। বরং OGHPC-তে অনুশীলন তাঁর পারফরম্যান্সকে আরও ভালো করেছে বলেই মনে করেছেন তিনি। প্রণতি সাফ বললেন, 'বাংলার বিরুদ্ধে আমার কোনও অভিযোগ নেই। তবে ওডিশায় এসে অনুশীলন করার জন্য আমার আরও উন্নত যন্ত্রপাতি, আরও ভালো কোচ পেয়েছি। আর এগুলোই একজন খেলোয়াড়ের পারফরম্যান্স উন্নত করতে সাহায্য করে।'
আরও পড়ুন: প্রথমবার মহিলাদের খেলা, বাঘকে চুমু! গ্রেট বেঙ্গল সার্কাসের নেপথ্যে ছিলেন এই বাঙালিই
গত ১৫ বছর ধরে প্রণতি মিনারা বেগমের অধীনে অনুশীলন করেছেন। তবে গত ২ মাস ধরে তিনি ইজিপ্টের কোচ আমানির কোচিংয়ে অনুশীলন করছেন। প্রণতি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যে আমানির থেকে পাওয়া টিপস তাঁকে পারফরম্যান্স উন্নত করতে অনেকটাই সাহায্য করেছে। পাশাপাশি নিজের ফিটনেস উন্নত হওয়ার কারণেও যারপরনাই খুশি। বললেন, 'আমার ফিটনেস আগের থেকে অনেকটাই উন্নত হয়েছে। এবার আমি নিজের ভল্টের উপরেই আরও বেশি করে মনোনিবেশ করতে চাই।'
কায়রোর বিশ্বকাপ টুর্নামেন্ট তো হল। আপাতত প্যারিস অলিম্পিকস পাখির চোখ প্রণতির। ২০১৬ সালের অলিম্পিকে বাঙালির স্বপ্ন অধরা রয়ে গিয়েছিল জিমন্যাস্টিকে। সেই স্বপ্ন কি এবার পূরণ হবে বাংলা তথা আপামর ভারতের! প্রণতির হাত ধরে আশায় বুক বেঁধেছে দেশবাসী।