নহ মাতা নহ কন্যা
International Women's Day 2024: ব্যক্তিগত সংগ্রাম, সংসার ও খেলার জীবনকে কখনও মিশিয়ে দিয়ে, কখনও ভিন্ন আধারে রেখে যুগে যুগে স্বপ্ন বুনেছেন যে মেয়েরা, তাঁদের প্রণাম।
অবসর কথাটা আমি কোনওদিনই পছন্দ করি না। আমার কাছে এটা মোটেই ‘আধুনিক’ কোনও শব্দ নয়। আমি যা করতে চলেছি, তার সঠিক শব্দ হয়তো ‘বিবর্তন’। মার্কিন এক পত্রিকাতে নিজের অবসর নিয়ে একপ্রকার জবাবদিহি করতে বসে ঠিক এই কথাগুলিই লিখেছিলেন সেরিনা উইলিয়মস! না, তাঁর নামের আগে তথাকথিত ‘টেনিস তারকা’, ‘বিশিষ্ট অমুক অমুক এবং অমুক’ লেখার প্রয়োজন বোধ করছি না। করছি না, কারণ তাঁর নামের সামনে আজ যা-ই বসাব, আড়েবহরে সেই বিশেষণকে কমজোরি বলে মনে হবে।
নারীদিবসের মুখে এ লেখা লিখতে বসে ভাবছিলাম, মেয়েদের বিপ্লব, সংঘাত, তর্ক, বাঁধ ভেঙে দেওয়ার পূর্ণতা সবই প্রায় এসেছে বহির্জগতের দোরগোড়া পেরোতে চেয়ে। ‘সংসার’ নামক মহাঘূর্ণির জাঁতাকলে ঘুরতে ঘুরতে, পিষে যেতে যেতে মেয়েরা যেন কোথাও বুঝেছিল মুক্তির আকাশ খিড়কি থেকে সিংহদুয়ারের ওপারের ভুবনে। সংসারের ডাল-ভাত, চ্যাঁ-ভ্যাঁ, গ্যাস, মুদি, ধোপা, নাপিত সামলানোর চেয়ে মুক্তির হাতিয়ার হিসেবে সে বেছে নিয়েছিল লেখাপড়া, চাকরি, রোজগার আর স্বাধীনচেতা নামের কণ্টকবিস্তৃত সরণিকে। সেসব পথ খোঁজা এক দশকে হয়নি। তবে সে পথে পা রেখেছিল একসময় মেয়েরা। 'কণ্টকবিস্তৃত' বললাম, কারণ এই পথ কখনওই ফুলেল ছিল না। নয় আজও। শুধু মেয়ে আর নারী হওয়ার দায়ে তাকে আজও দশভুজা সাজতে হয়। ভান করতে হয় ঘর-বার সব নিখুঁত সামলানোর। তাতেও সে তাল রাখতে না পারলে জোটে গঞ্জনা। রাতে বাড়ি ফিরে সন্তানের মুখের দিকে তাকালে ভিড় করে আসে অপরাধবোধ। ইউনিট টেস্টে তার নম্বর কম এলে, বরের জ্বরজারির দিন অফিস বেরতে হলে সেই অপরাধবোধের উপর জমা হয় গ্লানির টপিং। ইদানীং এমন অবশ্য এসব ব্যাগেজ সরাতে বহু মেয়েই সংসারে জড়াতে চাইছেন না। নিজ শর্তে সাজিয়ে তুলছেন জীবনের ধারাপাত। মাতৃত্বের চেয়েও তাঁকে প্রাণিত করছে ঝামেলাবিহীন নিঃশর্ত স্বাধীন জীবনগালিচা। তবে সেরিনা সে দলে পড়েন না। খেলোয়ারসত্তা ও মাতৃত্ব দুইয়ের মাঝে দাঁড়িয়ে সে একসময় হেঁটে যায় অপারেশন থিয়েটারের দিকে।
আরও পড়ুন: যুদ্ধবিধ্বস্ত প্যালেস্টাইনের হাতে জয়ের পুরস্কার তুলে দিলেন টেনিস তারকা
ছোটবেলায় দিদি ভেনাসকে দেখে তাঁর টেনিসে আসা। আমেরিকার বর্ণবৈষম্য ও পুরুষপ্রধান টেনিস কোর্টের সঙ্গে লড়াই করতে করতে তাঁর বড় হওয়া। যখন প্রথম টেনিস ব়্যাকেট ধরেন, তখন তিনি সাড়ে তিন বছরের শিশু। সেই শুরু ছুট। পাড়ার গলি থেকে আন্তর্জাতিক মঞ্চ। দম শেষ হওয়ার বিলাসিতা তাঁকে যে সাজে না!
সেরিনা সমাজের উচ্চবিত্ত অংশের প্রতিনিধি কোনওকালেই ছিলেন না। উইলিয়ামস বোনেরা নিম্নবিত্ত অংশের উপহার। তবু অর্থবানদের খেলা টেনিসে রাজকীয় সিংহীর মতোই তাঁদের পদার্পণ। ১৯৯৯ সালে ইউএস ওপেনে চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেরিনা এই দাপটের ঘরে যোগ করেছিলেন স্পর্ধার খুশবু। মহিলাদের টেনিসের ভরকেন্দ্র পরিবর্তনের সূচনার ওই শুরু।
ঝুলিতে তাঁর ২৩টি একক গ্র্যান্ড স্ল্যাম। শুধু তাই-ই নয় মহিলা টেনিস দুনিয়ায় তিনিই সেই মেয়ে, একক ও দ্বৈত প্রতিযোগিতা মিলিয়ে যাঁর নামের পাশে রয়েছে সর্বোচ্চ গ্র্যান্ড স্ল্যাম। তবে সেসব এই সহজ গদ্যটির মতো তরল ছিল না। গায়ের রং কালো হওয়ায় প্রতি পদে নিজেকে প্রমাণ করতে করতে এগোতে হয়েছে সেরিনাকে। একাধিক গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের পরেও টেনিস বিশ্বের একটা অংশের অসূয়া তাঁর যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলত। পান থেকে চুন খসলেই উঠতে হয়েছে কাঠগড়ায়। স্রেফ টেনিস ব়্যাকেট দিয়ে সব উপহাসের উত্তর দিয়েছেন সেরিনা।
এমনকী, মেয়ে অলিম্পিয়া যখন গর্ভে, আড়াই মাস চলছে, তখনও টেনিস কোর্টে ক্ষুধার্ত সিংহীর মতো ছুটে বেরিয়েছেন তিনি। গ্র্যান্ড স্ল্যামে অংশ নিয়েছেন। মা হতে গিয়ে বেড়েছে জটিলতা। সেই যুদ্ধও ঠান্ডা মাথায় সামলে ফের ফিরে এসেছেন কোর্টে।
এহেন সেরিনাও একদিন থমকে গেলেন। থেমে গেলেন বড় মেয়ে অলিম্পিয়ার কাছে। মেয়ে সেদিন গাড়িতে বসে আছে মায়ের পাশে। একটা স্পোর্টস পেজ দেখতে দেখতে হঠাৎ মায়ের ফোনের রোবট তাকে জিজ্ঞেস করে, সে বড় হয়ে কী হতে চায়। মেয়ের ইচ্ছের হদিশ পেতে কান খাড়া করলেন সেরেনা। অলিম্পিয়া রোবটকে জানাল, 'আমি বড় হয়ে একজন বড় দিদি হতে চাই।' মেয়ের যে বরাবর ছোট এক বোনের শখ রয়েছে তা জানতেন সেরিনা। সেদিনের পর চমকে উঠলেন আরও! বয়স ততদিনে ৪০! এই বয়সে দ্বিতীয়বার মা হওয়া মানে টেনিসকে চিরতরে বিদায় জানানো। মাতৃত্ব ও খেলোয়ার জীবনের মাঝে এই টানাপড়েনে সেরেনা বেছে নিলেন সংসার। কেরিয়ারের শিখরে থেকে তুলে রাখলেন টেনিস ব়্যাকেট। অবসরের মতো শব্দ যাঁর না-পসন্দ, তাঁকেই অকাল অবসরের ঘূর্ণি তখন গিলে খাচ্ছে। কষ্ট আর কান্নার মাঝে বড় মেয়ে অলিম্পিয়ার খুশি ও ইচ্ছেকে আঁকড়ে ধরলেন সেরেনা।
তিনি লিখছেন— "বিশ্বাস করুন, কখনও এরকম পরিস্থিতি চাইনি যেখানে টেনিস এবং পরিবারের মধ্যে যে কোনও একটা আমায় বেছে নিতে হবে। আমার মতে, ব্যাপারটা ঠিক নয়। আমি যদি ছেলে হতাম তাহলে আমাকে এটা লিখতে হত না। তখন আমি কোর্টে নেমে অনায়াসে খেলতে পারতাম এবং জিততাম। পরিবার বাড়ানোর জন্য আমার স্ত্রী অসহ্য শারীরিক যন্ত্রণা সহ্য করত। দয়া করে আমাকে ভুল বুঝবেন না। মেয়ে হয়ে আমি খুশি। ...আমি হলাম সেই মেয়েদের একজন, যে গর্ভবতী হওয়াটাকে ভাল চোখে দেখেছে এবং হাসপাতালে যাওয়ার আগে পর্যন্ত নিজের কাজটা করে গিয়েছে। কিন্তু অন্যদিকে পরিস্থিতি খুবই কঠিন ছিল। অসম্ভবকে সম্ভব করেছি আমি।" মেয়েদের জীবনের এই অসহায় আত্মসমর্পণকে ব্যক্তিগত ইচ্ছে, পছন্দের সঙ্গে পেশার এই দ্বৈরথকে সামলাতে অনেক কেঁদেছেন সেরিনা, লেগেছে থেরাপিস্টের সাহচর্যও।
আবার সব সামলে,দ্বিতীয় সন্তানের জন্মের পর, অসম্ভবকে সম্ভব করে অবসর ভেঙে কোর্টে ফিরেছেন নিজস্ব ভঙ্গিতে। তখন বৃদ্ধ শরীর ভেঙে যাওয়া সিংহীর মতোই তাঁর গতি শ্লথ। টাইমিংয়ে অনেক ভুল। এক বছর কোর্ট থেকে দূরে থাকলে যা হয়! বিপক্ষের যেসব গোলা নিমেষে উড়িয়ে দিতেন সেগুলোও কষ্ট করে সামলাচ্ছেন। ফর্মের তলানিতে ডুবে যেতে যেতে ফিনিক্সের মতো উঠে এলেন একদিন! আর্থার অ্যাশ স্টেডিয়ামে জ্বলে উঠলেন টেনিস সুন্দরী। দুই সন্তানের জননী চল্লিশ পেরোনো সেরিনা ডাঙ্কা কোভিনিচকে হারালেন ৬-৩, ৬-৩ গেমে। পাঁচ বার বিপক্ষের সার্ভিস ব্রেক করে গড়লেন রেকর্ড। সেদিন সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে টেনিস কোর্টেই ভাসিয়ে দিলেন অহঙ্কার ও আত্মবিশ্বাসের নির্ঘোষ। "আই অ্যাম সেরিনা, ইউ নো!"
আত্মবিশ্বাস আসলে অতি সংক্রামক। যা আমেরিকার বাতাস থেকে ভেসে ভেসে হাজির হতে পারে এদেশের নিজামের আকাশেও। সেখানেও একটি মেয়ে অনেক ছোটবেলায় জেনে গিয়েছিল, যে কোনও ধর্মের মেয়েদেরই খেলাধুলো করতে গেলে অনেক কথা শুনতে হয়। তবে সমাজের কথা শুনলে চলবে না। সমাজের অবাধ্য সেই মেয়েটাই ভারতের একমাত্র টেনিস তারকা যিনি গ্র্যান্ড স্ল্যামের মঞ্চে দেশকে দিয়েছেন সর্বোত্তম পরিচয়। সানিয়া মির্জা। পাশ্চাত্যের মৌরসীপাট্টার কোর্টে যিনি পুঁতে দিয়ে এসেছিলেন ভারতীয় আগমার্কা স্পর্ধা। ২০১২-য় চোটের জন্য সিঙ্গলস ছেড়েছেন বটে, তবে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন ডাবলস-এ। সুইস তারকা মার্টিনার সঙ্গে তাঁর জুটি ছিল বিশ্ব ব়্যাঙ্কিংয়ে পয়লা নম্বর। একটানা ৪১টি ম্যাচে অপরাজিত ছিলেন তাঁরা। এর আগে ভারতের কোনও মেয়ে ডাবলসে বিশ্বের ফার্স্টগার্ল হয়নি। ছ'বার গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতা ও ৪২বার ট্যুর উইনার এই মেয়ের জীবনে খ্যাতির সঙ্গে বিড়ম্বনা ও বিতর্ক ছায়া ফেলেছে অবিরাম। ছোটবেলায় বাগদান হওয়া ছেলেই সঙ্গে বিয়ে ভেঙে দেওয়াই হোক বা টেনিস কোর্টে ইসলাম-বিরোধী পোশাক, সব নিয়েই সমাজের ট্রোল তাঁর পিছু ছাড়েনি। সেসব বিতর্ককে ঘাড় ধরে কোর্টের বাইরে পাঠিয়ে স্বেছায় বিয়ে করেছিলেন পাকদলের ক্রিকেট অধিনায়ক শোয়েব মালিককে। ভারত-পাক সম্পর্কের উত্তপ্ত রাজনৈতিক আবহে এই বিয়ে যেন আরও বেশি করে আগুনের ফুলকি উড়িয়ে দিয়েছিল হাওয়ায়। পাকিস্তানের বউ হওয়ায় তাঁকে তেলেঙ্গানার ব্র্যান্ড আম্বাসাডর হতেও বাধা দেন একশ্রেণির মানুষ। শুনতে হয় গদ্দার অপবাদ। তবু মাথা নোয়াননি হায়দরাবাদে খানদান মুসলমান পরিবারের মেয়েটি। সব বিতর্ককে হেলায় উড়িয়ে, অবজ্ঞা করে ঘোষণা করেছিলেন, আজীবন ভারতের হয়ে খেলবেন। খেলেছেনও তাই। বেশিরভাগ সময় থেকেছেন এ দেশেই। একসময় সম্পর্কে তৃতীয় ব্যক্তির হানায় ক্ষতবিক্ষত হয়েছেন। খুইয়েছেন সম্পর্ক, ভালোবাসা, সংসার। তবু টেনিস আঁকড়েই ভুলতে চেয়েছেন জীবনের ক্ষত।
ভারতীয় টেনিসের ‘পোস্টার গার্ল’ সানিয়া শেষ ম্যাচ খেলেন দুবাই টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপে। আমেরিকার ম্যাডিসন কি-কে নিয়ে নেমে ৪-৬, ০-৬-তে হারেন। লড়াকু এই মেয়ের চোখের জলে টেনিসকে বিদায় দেওয়ার মুহূর্তে টেনিস দেবতাও বোধহয় অলক্ষ্যে কেঁদেছিলেন। তাই জীবনের শেষ প্রদর্শনী ম্যাচ খেলে যখন কোর্ট ছাড়ছেন, হায়দরাবাদের লাল বাহাদুর টেনিস স্টেডিয়াম সেদিন কানায় কানায় তারকাখচিত। ব়্যাকেট হাতে অংশ নেন যুবরাজ সিং, বেথানি ম্যাটেক থেকে রোহান বোপান্না। সানিয়াকে দেখেই চিৎকারে ফেটে পড়ে গ্যালারি। একসময় আবেগের বাঁধ ভাঙে সানিয়ার। দীর্ঘ ২০ বছরের টেনিস জীবনের ওঠাপড়া বলতে গিয়ে আনন্দে কেঁদে ফেলেন নিজাম-বালিকা।
সেইদিন হয়তো টেনিস দেবতা নিশ্চিন্তে হাসলেন। মনে মনে হয়তো বলে উঠলেন, ‘চক দে!’
এই 'চক দে ইন্ডিয়া'-র জমানায় 'চাকদা ইন্ডিয়া'-র কথাই বা ভুলি কেমনে! চাকদার লালপুরে জন্ম এ মেয়ের। ডাকনাম বাবুল। ছোটবেলা থেকে বাবুল ফুটবল পাগল। পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে ফুটবল লাথিয়ে বেড়ায়। কিন্তু '৯২-এর ক্রিকেট বিশ্বকাপ বদলে দিল তার মন। শুরু হল অদ্ভুত এক স্বপ্ন, নিজেও একদিন ক্রিকেট খেলবে ভারতের হয়ে! এ মেয়ে বলে কী? মেয়ে হয়ে ব্যাট-বল নিয়ে ধিঙ্গিপনা! চাকদহের গ্রামে তখনও সব ঘরে শিক্ষার আলো ঢোকেনি। মেয়ে হলে ছেলেদের সঙ্গে খেলতে যাওয়া সেখানে নষ্টামি। প্রতিবেশীদের বাঁকা কথা, ঘর বয়ে এসে মা-বাবাকে কথা শোনানো— বাদ যায়নি কিছুই। পাড়ার ছেলেরাও কখনও মুগ্ধ চোখে তাকায়নি মেয়েটা অন্যরকম ভেবে। সমর্থন শুধু ছিল বাপ-মায়ের। এলাকার ক্লাবে ক্রিকেট খেলিয়ে মেয়েকে নিয়ে বাবা নিশীথ গোস্বামী ছুটলেন কলকাতার বিবেকানন্দ ক্লাবে ক্রিকেট কোচ স্বপন সাধুর কাছে। তিনিই পরামর্শ দিলেন, এ মেয়ে ব্যাটসম্যান নয়, বোলার হওয়ার জন্যই জন্মেছে। আঙুলের জোর, কব্জির মোচড় আর গতিকে সঙ্গে নিয়ে প্রাণ ঢেলে অনুশীলন করে চলে মেয়ে। হর রোজ ট্রেন ধরে এসে পৌঁছয় চাকদহ থেকে দক্ষিণ কলকাতা। সঙ্গী ভিড় ট্রেনে সহযাত্রীদের টিপ্পনি। বাঁকা চাহনি।
১৯৯৭-এর বিশ্বকাপে ‘বল গার্ল’ হিসেবে ভারত দেখ তাঁকে। নাম তার ঝুলন গোস্বামী। তারপর শুধুই উতরাইয়ের গল্প। অনুশীলনের সময়ও ঝুলনের গতি ও পদ্ধতি হাঁটুতে কাঁপন ধরাত বিপক্ষ পুরুষ ব্যাটসম্যানদেরও। ২০০২ সালে বেঙ্গল থেকে ইন্ডিয়া ক্যাপ পেলেন ঝুলন। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে চেন্নাইয়ে হল অভিষেক। ভারতীয় ড্রেসিং রুমে তারপর থেকেই অপ্রতিরোধ্য ভরসা হয়ে ওঠেন চাকদহের বাবুল। ২০২২ সাল পর্যন্ত মোট ৫ বার বিশ্বকাপ খেলেছেন ঝুলন। ২০২২ সালের বিশ্বকাপ চলাকালীন মেয়েদের একদিনের ক্রিকেটে প্রথম ও একমাত্র বোলার হিসেবে ২৫০টি উইকেট নেওয়ার নজিরও তৈরি করে ফেললেন তিনি। ততদিনে অর্জুন পুরস্কার থেকে পদ্মশ্রী— সবই এসেছে জীবনে। ২০০৮-২০১১ অবধি ভারতীয় মহিলা দলের ড্রেসিংরুমকে এক করে সংহতির ক্রিকেট জীবন শিখিয়েছেন আমাদের ঝুলন। বিশ্ব মানচিত্রে মহিলা ক্রিকেটে ভারতীয় মেয়েদের তুলে আনার এই সংগ্রামের সেনাপতি যেন তিনিই। লর্ডস দিয়ে যাত্রা শুরু, লর্ডসেই জীবনের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন ঝুলন। এক দিনের ক্রিকেটে ঝুলনের ঝুলিতে রয়েছে ২৫২টি উইকেট। টেস্টে রয়েছে ৪৪টি। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নিয়েছেন ৫৬টি উইকেট। বাংলার দলে মেন্টরের দায়িত্বও পরে কাঁধে তুলে নিয়েছেন ঝুলন।
আরও পড়ুন: নারী মুক্তি নারী শক্তি, ফিরে দেখা নারী দিবসের ইতিহাস
৪০ পেরিয়েছেন, এখনও বিয়ে করেননি। করবেন কি না তা সময় বলবে। তবে এই ক্রিকেট মাঠের সবুজ ঘাসের সঙ্গে যে সখ্য ও সংসার তিনি পাতিয়েছেন তা যেন আজীবন ক্রিকেটের ইতিহাসে দখিনা বাতাস বয়ে এনে দেবে মেয়েদের জন্য। সেখানে যেন দূরাগত আকাশ থেকে মেয়েদের জন্য ভেসে আসছে বাধা, বঞ্চনা, সংগ্রাম, টিপ্পনি ও অবিশ্বাস। আর তাদের ফুৎকারে উড়িয়ে ঋজু হেঁটে যাচ্ছেন ওই যে দূরে, ঝুলন গোস্বামী!
ব্যক্তিগত সংগ্রাম, সংসার ও খেলার জীবনকে কখনও মিশিয়ে দিয়ে, কখনও ভিন্ন আধারে রেখে যুগে যুগে স্বপ্ন বুনেছেন যে মেয়েরা, তাঁদের আমার প্রণাম। বিশ্বমননে তাঁরা শুধুই বিপ্লব, প্রতিরোধ ও হার না-মানার অন্য নাম।
নহ মাতা। নহ কন্যা