আয়ুর্বেদ ডায়েট, যোগব্যায়াম! চমকে দেবে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির রুটিন
Chief Justice DY Chandrachud: দেশের সংবিধান রক্ষার গুরুভার তাঁর কাঁধে। সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জানান, তাঁর দিন শুরু হয় রাত থাকতে থাকতেই। ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ বিছানা ছাড়েন তিনি।
ইলেক্টোরাল বন্ড বাতিল থেকে শুরু করে বিজেপি ঘনিষ্ঠ রামদেবের সংস্থা পতঞ্জলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা। খোদ রামদেবকে আদালতে সমন। তাঁর জমানায় সুপ্রিম কোর্টের আলাদাই ছবি যেন দেখতে পাচ্ছে দেশ। লোকসভা ভোটের মুখে একের পর এক কেন্দ্রবিরোধী সিদ্ধান্ত নিতে কুণ্ঠাবোধ করে না যে শীর্ষ আদালত, সেখানকার বর্তমান প্রধান বিচারপতি তিনি। ধনঞ্জয় যশবন্ত চন্দ্রচূড়। ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় নামেই অবশ্য তিনি বেশি পরিচিত। মাত্র বছর দুয়েক আগেই দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতির জোব্বা গায়ে চাপিয়েছেন। কেউ কেউ বলেন, তিনি নাকি অতি অল্পেই মেজাজ হারান। সম্প্রতি ইলেক্টোরাল বন্ড মামলার শুনানিতে তিন প্রবীণ আইনজীবী জোর বকা খেয়ে যান প্রধান বিচারপতির কাছে। আবার সেই প্রধান বিচারপতিই শীর্ষ আদালতের রাঁধুনীর পদে থাকা কর্মীর মেয়ের আইনজীবী হওয়ার খবর পেয়ে তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। সঙ্গে অবশ্য ছিলেন অন্যান্য বিচারপতিরাও। দেশের ৫০তম প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় যে নির্ভীক, স্পষ্টবাদী, তা এতদিনে অনেকেই জানেন। তার বাইরের ব্যক্তিমানুষটি কেমন? কেমন করে কাটে তাঁর সারাটা দিন?
বাবা যশবন্ত বিষ্ণু চন্দ্রচূড় ছিলেন ভারতের দীর্ঘতম প্রধান বিচারপতি। মা ছিলেন বিখ্যাত শাস্ত্রীয় সঙ্গীতশিল্পী। পারিবারিক প্রথা মেনেই আইনের জগতেই এসে পড়েন ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনের ডিগ্রি পোরেন ঝুলিতে। ২০০০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বম্বে হাইকোর্টের বিচারক এবং ২০১৩ থেকে ১০১৬ পর্যন্ত ইলাহাবাদ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবে কাজ করেছেন। ২০১৬ সালের মে মাসে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিযুক্ত হন। ২০২২ সালে গায়ে চাপে প্রধান বিচারপতির জোব্বা। সাম্প্রতিক কালের ইলেক্টোরাল বন্ড মামলা তো রয়েইছে, এছাড়াও রাম জন্মভূমি রায়, গোপনীয়তা মামলা, সমকামিতা মামলা, শবরীমালা মামলা, জম্মু-কাশ্মীরের ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের মতো একাধিক মামলার অংশ ছিলেন বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়।
আরও পড়ুন: এবার সুপ্রিম কোর্টে সশরীরে ডাক পড়ল রামদেবের! কী কী অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে?
দেশের সংবিধান রক্ষার গুরুভার তাঁর কাঁধে। সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জানান, তাঁর দিন শুরু হয় রাত থাকতে থাকতেই। ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ বিছানা ছাড়েন তিনি। সেই সময়টা চারদিকের পরিবেশ শান্ত থাকে। কোনও হট্টগোল থাকে না। ফলে সেই সময় ভাবনাচিন্তা করতে সুবিধা হয় তাঁর। ওই ভোরে উঠে প্রথমেই যোগব্যায়াম সেরে ফেলেন প্রধান বিচারপতি। গত পঁচিশ বছর ধরে যোগব্যায়াম করছেন ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। একই সঙ্গে আয়ুর্বেদেও ভালো মতোই বিশ্বাস করেন তিনি। আর এ ব্যাপারে তাঁর সঙ্গী স্ত্রী কল্পনা দাস। তাঁর সবচেয়ে কাছের বন্ধুও স্ত্রী কল্পনাই। তাঁর সঙ্গেই কড়া আয়ুর্বেদ ডায়েট মেনে চলেন প্রধান বিচারপতি।
প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় বা তাঁর স্ত্রী কল্পনা, কেউই আমিষ খাবারদাবার ছোঁন না। শুধু যে নিরামিশাষী তা-ই নয়, উদ্ভিদ-ভিত্তিক খাবারদাবারই একমাত্র খান তাঁরা। প্রধান বিচারপতি বিশ্বাস করেন, মানুষ যা খায়, তা তার মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করে। শুধু তা-ই নয়, ফিটনেসের মতো ব্যাপার বাইরে থেকে নয়, মানুষের ভিতর থেকে আসে বলেই বিশ্বাস তাঁর। হৃদয়ের সেই ফিটনেসেই বিশ্বাস প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। স্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়ায় বিশ্বাসী প্রধান বিচারপতি জানিয়েছেন, তিনি হোল গ্রেইনসের থেকে রাজগিরা বা রামদানা খেতে বেশি পছন্দ করেন। মহারাষ্ট্র এলাকায় উপবাসের দিনগুলিতে সাবুদানার খিচুড়ি খাওয়ার চল। গত ২৫ বছর ধরে প্রতি সোমবার করে উপবাস রেখে আসছেন। সেই নিয়মের অন্যথা হয়নি কখনও। রামদানাও খুব জনপ্রিয় একটি খাবার মহারাষ্ট্রে। খুব হাল্কা ও স্বাস্থ্যকর খাবার এটি। যা প্রধান বিচারপতির মেনুতে থাকবেই। তবে সপ্তাহে একটা দিন করে চিটডে-ও রয়েছে ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের রুটিনে। সেই দিনটা আইসক্রিম খেতে ভালোবাসেন তিনি।
আরও পড়ুন: SBI-এর কাছে সমস্ত বন্ডের আলফা-নিউমারিক নম্বর চাইল সুপ্রিম কোর্ট, কী এই ইউনিক কোড?
ব্যক্তিগত জীবনে কম উত্থান-পতন দেখতে হয়নি তাঁকেও। এত গুরুতর পদ সবসময়েই বাড়তি চাপ তৈরি করেই। তবে প্রধান বিচারপতি সব সময়েই আশাবাদী। তিনি বিশ্বাস করেন, জীবনের প্রতিটা সমস্যারই আসলে কোনও না কোনও উদ্দেশ্য রয়েছে। সে সময় আমরা বুঝতে পারি না। তবে পরবর্তীকালে সেই শিক্ষা আমাদের অনেকটাই এগিয়ে দেয়। প্রধান বিচারপতি বিশ্বাস করেন, যে কোনও ধরনের সমস্যার অর্ধেকটাই সমাধান করে ফেলা যায়. যদি আপনার মন আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকে। সেই প্রচেষ্টাই নিরন্তর করে চলেন তিনি। আর সেই স্থৈর্য নিয়েই দেশের আইনরক্ষার দায়িত্ব সুনিপুণ ভাবে পালন করে চলেছেন প্রধান বিচারপতি। ইলেক্টোরাল বন্ড কেলেঙ্কারির মতো মামলা ইতিমধ্যেই প্রধান বিচারপতির উপর প্রত্যাশা বাড়িয়ে দিয়েছে নাগরিকদের। আগামী দিনে দেশবাসীর সেই ভরসা কতটা রেখে চলতে পারেন তিনি, সেটাই দেখার।