সবার টাকা বিজেপির ঘরে! ইলেক্টোরাল বন্ডের যে তথ্যে তোলপাড়

Electoral Bond: যে ১৮টি সংস্থা ইলেক্টোরাল বন্ড মারফত সব থেকে বেশি চাঁদা দিয়েছে, দেখা যাচ্ছে, বিজেপির তহবিলে টাকা গিয়েছে তাদের প্রত্যেকের তরফ থেকে, এমনটাই জানা গিয়েছে এসবিআইয়ের তরফ থেকে।

ইলেক্টোরাল বন্ড সংক্রান্ত সমস্ত নথি এখন সকলের সামনে। প্রথম দফায় কারা কারা ওই ইলেক্টোরাল বন্ডের মাধ্যমে টাকা দিয়েছিল, সেই তথ্য সামনে এনেছিল এসবিআই। তার সঙ্গেই সামনে আসে ইলেক্টোরাল বন্ড থেকে কোন কোন রাজনৈতিক দল মোট কত অনুদান পেয়েছে সেই অঙ্কও। সুপ্রিম-রায়ের পর নানা টালবাহানা শেষে শেষমেশ ওই তথ্য জমা দিতে বাধ্য হয়েছিল স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া। সেই তালিকায় টাকার অঙ্ক ও রাজনৈতিক দলগুলির পাওয়া অনুদানের অঙ্ক দেখে চোখ কপালে উঠেছিল অনেকেরই। তবে সেই নথিতে সন্তুষ্ট হয়নি সুপ্রিম কোর্ট। কারণ তার পরেই নানা মহলে প্রশ্ন উঠতে থাকে, কোন কোন সংস্থা বা কোন কোন ব্যক্তি কোন রাজনৈতিক দলকে অনুদান দিয়েছেন, তা জানা যায়নি ওই তালিকা থেকে। তার পরেই স্টেট ব্যাঙ্ককে ইলেক্টোরাল বন্ড সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য হলফনামা-সহ প্রকাশ করতে বলে সুপ্রিম কোর্ট। এমনকী প্রকাশ করতে বলা হয় ইলেক্টোরাল বন্ডের ইউনিক আলফা নিউম্যারিক কোডগুলিও। যা থেকে জানা সম্ভব, কোন কোন দল কোন কোন সংস্থা বা ব্যাক্তির থেকে উপকৃত হয়েছে ইলেক্টোরাল বন্ড থেকে।

বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। সেই নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সমস্ত তথ্য সামনে এনেছে স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া। সুপ্রিম নির্দেশে বলা হয়েছিল, সেই নথি ইলেকশন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে। মানা হয়েছে সেই নির্দেশও। সেই নথি থেকে দেখা গিয়েছে, রিল্যায়েন্স গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত কুইক সাপ্লাই চেইন প্রাইভেড লিমিটেড সংস্থার থেকে অন্তত ৩৭৫ কোটি টাকা গিয়েছে বিজেপিতে। দিন কয়েক আগেই জমকালো প্রাক-বিয়ের অনুষ্ঠানে মেতে উঠেছিল অম্বানি পরিবার। সেই অনুষ্ঠানে জলের মতো টাকা ওড়ানো এবং জাঁকজমকের পরিমাণ দেখে চোখ কপালে উঠেছিল প্রায় সকলেরই। জানা যায়, যে বিপুল পরিমাণ টাকা ছেলের প্রাক-বিয়েতে খরচা করেছিলেন, তা নাকি তাঁর মোট সম্পত্তির এক আঁজলামাত্র। অম্বানির সঙ্গে বিজেপি ঘনিষ্ঠতার কথা কারওরই অজানা নয়। ফলে ইলেক্টোরাল বন্ডের মাধ্যমে মোটা টাকা যে বিজেপির কোষাগারে যাবে, তা একপ্রকার প্রত্যাশিতই ছিল না। তবে শুধু বিজেপিতে নয়, ওই সংস্থার কেনা আরও ৩৫ কোটি টাকার বন্ড থেকে বেশ কিছুটা অংশ গিয়েছে শিবসেবনা ও ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টির কাছে। যা দেখা যাচ্ছে, তাতে ২০২২ সালের ৫ জানুয়ারি তারিখে কুইক সাপ্লাই ২২৫ কোটি টাকার বন্ড কেনে। আর সেখান থেকে প্রায় ২০০ কোটিই অনুদান দেওয়ার মাত্র ৫ দিন পরেই ভাঙায় বিজেপি। ৬ জানুয়ারি ২৫ কোটি টাকা ভাঙায় শিবসেনা।

আরও পড়ুন: ইলেক্টোরাল বন্ডে সবচেয়ে বেশি টাকা অনুদান! কে এই লক্ষ্মী মিত্তল?

এদিকে, লটারি ব্যবসার অন্যতম মুখ তথা মার্টিনের সংস্থা ফিউচার গেমিং অ্যান্ড হোটেল সার্ভিসেসের থেকে ইলেক্টোরাল বন্ডের মাধ্যমে প্রায় ১০০ কোটি টাকা পেয়েছে বিজেপি। তালিতায় বারবার করে ঘুরে ঘুরে এসেছে মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং নামে একটি সংস্থার নাম। ইলেক্টোরাল বন্ডের মাধ্যে মোট ৯৮০ কোটি টাকার চাঁদা দিয়েছে তারা। যতদূর জানা গিয়েছে ওই সংস্থার থেকে অন্তত ৫৫৮ কোটি টাকা পেয়েছে বিজেপি। মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং তো বটেই, তার শাখা সংস্থা পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ বিদ্যুৎ পরিবহণও বিজেপিকে বিপুল অঙ্কের চাঁদা দিয়েছে। খাতায় কলমে সেই অঙ্কটা প্রায় ৬৬৪ কোটি টাকার মতো।

Which Are the Companies Which Donated the Most to BJP Through Electoral Bonds?

যে ১৮টি সংস্থা ইলেক্টোরাল বন্ড মারফত সব থেকে বেশি চাঁদা দিয়েছে, দেখা যাচ্ছে, বিজেপির তহবিলে টাকা গিয়েছে তাদের প্রত্যেকের তরফ থেকে, এমনটাই জানা গিয়েছে এসবিআইয়ের তরফ থেকে। প্রথম দফার তথ্য় ও নথি হাতে আসতেই ফিউচার গেমিং সংস্থার নাম উঠে এসেছিল। জানা যায়, স্যান্টিয়াগো মার্টিনের এই সংস্থা মোট ১৩৬৮ কোটি টাকা চাঁদা দিয়েছে। প্রথম দফার নথি হাতে আসার পরেই জানা যায়, এই ইলেক্টোরাল বন্ড প্রকল্প থেকে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ অনুদান পেয়েছি বিজেপিই। মোট টাকায় প্রায় ৪৮ শতাংশই ঢুকেছে বিজেপির কোষাগারে। তার পরে রয়েছে তৃণমূল এবং তার পরে কংগ্রেস। ২০১৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে মোট ১২,৭৬৯ কোটি টাকা চাঁদার প্রায় অর্ধেক, ৬,০৬১ কোটি চাঁদা বিজেপি পেয়েছিল।

বিজেপিকে সবচেয়ে বেশি অনুদান দিয়েছে মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং। সূত্রের খবর, টিভিনাইন নিউজ নেটওয়ার্কের বড় অংশের শেয়ার এখন হায়দরাবাদের ওই সংস্থার হাতেই। এর পরেই বিজেপিকে সবচেয়ে বেশি টাকা দিয়েছে কুইক সাপ্লাই। কলকাতার শিল্পপতি এম কে জালানের সংস্থাও বিপুল টাকা দিয়েছে বিজেপিকে। তালিকায় নাম রয়েছে, মদনলাল লিমিটেড, কেভেন্টার্স ফুডপার্ক, এমকেজে এন্টারপ্রাইজ এবং সাসমল নামক সংস্থাগুলিও। সব মিলিয়ে ৩৩৯.৪২ কোটি টাকা বিজেপির কোষাগারে এসেছে এই সব সংস্থাগুলির কাছ থেকে। এসবিআইয়ের তথ্য থেকে জানা গিয়েছে, ২০১৯ সালে ভোটের সময়ই প্রায় ১,৫০৫ কোটি টাকা নগদ করেছিল বিজেপি।

আরও পড়ুন:নির্বাচনী বন্ডের নামে কীভাবে তোলাবাজি চক্র চালাচ্ছিল মোদি-শাহের বিজেপি?

গত ফেব্রুয়ারি মাসে বিজেপি সরকারের ইলেক্টোরাল বন্ড প্রকল্পকে বেআইনি ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্ট। সেই সংক্রান্ত সমস্ত নথি জনগণকে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয় স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়াকে। সামনেই লোকসভা ভোট। ইতিমধ্যেই ঘোষণা হয়ে গিয়েছে দিনক্ষণ। অধিকাংশ রাজ্যেই ঘোষণা হয়ে গিয়েছে প্রার্থীতালিকাও। এই সময়ে ইলেক্টোরাল নথি সম্পর্কিত তথ্য সামনে আসা ভোটের মুখে প্রভাব ফেলতে পারে ব্যালটবাক্সে। সুপ্রিম কোর্টে এসবিআইয়ের কাছ থেকে আবেদন জানানো হয়েছিল, যাতে সেই তালিকা জুন মাসের শেষে প্রমাণ করা যায়। তবে কোর্ট সেই প্রস্তাবে সম্মত হয়নি। ফলে একপ্রকার বাধ্য হয়েই ওই নথি প্রকাশ করে এসবিআই। ইতিমধ্যেই কোন কোন সংস্থার কাছ থেকে কী পরিমাণ আর্থিক সহায়তা পেয়েছে বিজেপি, তাও জনগণের সামনে স্পষ্ট। সত্যিই তার প্রভাব পড়তে চলেছে ভোটবাক্সে? তা অবশ্য বোঝা যাবে ক'দিন পরেই।

More Articles