খেলার তাসে চারটে 'রাজা', একজন আবার গোঁফছাড়া, জানেন এদের আসল পরিচয়?

The Real Four Kings of Cards : আচ্ছা, কখনও খেয়াল করে দেখেছেন, চারটে রাজার মধ্যে একটি ছবিতে গোঁফ নেই! কেন এমনটা হল?

সন্ধ্যা হলেই পাড়ার রকে কিংবা ক্লাবে একজোট হওয়ার অপেক্ষা। তারপর একসঙ্গে বসে ‘খেলা শুরু’। হয় ক্যারাম, নয়তো তাস। তাসেরও আবার নানারকম খেলার ধরন। আজ থেকে নয়, কয়েকশো বছর ধরে মানুষের বিনোদনের অন্যতম জায়গা হল এই তাস খেলা। এক এক দেশে এক এক রকম গঠন। ক্লাব, হার্টস, স্পেড আর ডায়মন্ড। বাংলায় বললে যথাক্রমে চিরেতন, হরতন, ইস্কাপন, রুইতন। এই চারটে প্রতীকই তাসের সম্বল। আর তাতেই লেগে রয়েছে ইতিহাসের রঙ। লেগে রয়েছে আমাদের চিরপরিচিত খেলাগুলির ঐতিহ্য।

রংমিলান্তি হোক বা ২৯, তাসের কোনও না কোনও খেলা নিশ্চয়ই খেলেছেন। বা পাশে বসে অন্যকে খেলতেও দেখেছেন। সুতরাং তাস নিয়ে মোটামুটি সবাই অল্পবিস্তর জানেন। সংখ্যায় মোট ৫২টি, তার মধ্যে তিন ধরনের বিশেষ তাস থাকে। রাজা বা বাদশা, রানি ও গোলাম। প্রতিটা প্রতীকে একটা করে মানে, মোট ১২টি বিশেষ তাস থাকে। এদের মধ্যে রাজার চারটে তাস নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন। এক একরকম খেলায় তার এক একরকম কাজ, মানদণ্ড। আচ্ছা, কখনও খেয়াল করে দেখেছেন, চারটে রাজার মধ্যে একটি ছবিতে গোঁফ নেই! বাকি তিন রাজার মুখে ইয়া বড় একটা গোঁফ। কিন্তু একজনের নেই। কেন এমনটা হল? ছাপার ভুল? শুনলে অবাক হবেন, এর পেছনেও রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস। শুধু তাই নয়, তাসের এই চারটে রাজা কোনও কাল্পনিক ব্যক্তি নয়। সত্যিকারের চার রাজাকে চিহ্নিত করে ওই তাসগুলি!

এই প্রসঙ্গে আসার আগে একটু পেছন থেকে শুরু করা যাক। ১৪-শ শতকের শেষের দিকে ইউরোপে প্রথমবার তাস ব্যাপারটা প্রবেশ করে। ৫২টি তাস নিয়ে খেলা শুরু হলেও চারটে প্রতীক ও আধুনিক তাস খেলার ছবিটা তখন স্পষ্ট হয়নি। সেটা হয় ১৬-শ শতকের শেষের দিকে। ফ্রান্সে যারা তাস তৈরি করতেন, তাঁরাই প্রথমবার এই ক্লাব, হার্টস, স্পেড আর ডায়মন্ডের ব্যবহার করেন। সেইসঙ্গে আনেন বাদশা, রানি ও গোলামকে।

এখন প্রশ্ন, তাসের সঙ্গে জুড়ে থাকা এই চার রাজা আসলে কে? গবেষকরা বলেন, ইতিহাসের চার প্রসিদ্ধ রাজাকে সম্মান জানাতে তাঁদের নামে এই তাসগুলি করা হয়েছে। যেমন, কিং অফ স্পেড বা ইস্কাপনের রাজা হিসেবে রয়েছেন ইজরায়েলের রাজা ডেভিড। এঁর কথা বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টেও রয়েছে। কিং অফ ক্লাব বা চিরেতনের রাজা হিসেবে রয়েছেন ম্যাসিডোনিয়ার রাজা, ইতিহাসখ্যাত আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট। কিং অফ ডায়মন্ড বা রুইতনের রাজা হিসেবে আছেন রোমান সম্রাট জুলিয়াস অগাস্টাস। কোনও কোনও গবেষক আবার মনে করেন, অগাস্টাস নয়, ডায়মন্ডের রাজা হিসেবে রয়েছেন স্বয়ং জুলিয়াস সিজার।

ওপরের এই তিন রাজারই বড় গোঁফ। একমাত্র কিং অফ হার্টস বা হরতনের রাজার কোনও গোঁফ নেই। কেন? আগে জানা যাক এঁর পরিচয়। গবেষকরা বলেন, ইনি আসলে ফ্রান্সের সম্রাট শার্লেমান। বলা হয়, প্রথম দিকে নাকি কিং অফ হার্টসেরও গোঁফ ছিল। কিন্তু ১৮-শ শতকে ফের একবার তাসগুলি নতুনভাবে তৈরি করা হয়, আঁকা হয়। তখন কিং অফ হার্টসের গোঁফ হাওয়া হয়ে যায়। প্রচলিত মত, ভুলবশত শিল্পি গোঁফ আঁকতে ভুলে গিয়েছিলেন। আর সেই ভুলই এখনও প্রচলিত রয়েছে।

অবশ্য এর পেছনে নাকি আরও একটি তত্ত্ব রয়েছে। ফ্রান্সের সম্রাট শার্লেমান নাকি দেখতে অসম্ভব সুন্দর ছিলেন। রূপের জন্য তিনি নাকি নিজের গোঁফ কেটে ফেলেছিলেন। সেজন্যই তাসেও তাঁর কোনও গোঁফ নেই। তবে এই বিশেষ তাসটির দিকে আরও একবার খেয়াল করুন। বাকি রাজাদের হাতের অস্ত্রগুলি সোজাসুজি ধরা। কিন্তু হরতনের রাজা অর্থাৎ কিং অফ হার্টসের হাতের তরোয়ালটি মাথার পেছন দিকে ঢোকানো রয়েছে। যেন তিনি নিজের মাথার ভেতরেই তরোয়াল ঢুকিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। সেজন্য এই বিশেষ তাসটিকে সুইসাইড কার্ডও বলা হয়।

More Articles