হচ্ছে না স্পেসএক্সের মহাকাশযানের উৎক্ষেপণ, কীভাবে পৃথিবীতে ফিরবেন সুনীতারা?
Sunita Williams: ফের থমকে গেল স্পেস এক্সের সেই মিশন। ৩০ অগস্ট, শুক্রবারই উৎক্ষেপণের কথা ছিল সেই মহাকাশযানের। তবে শেষ মুহূর্তে এসে পিছিয়ে গেল সেই সফর।
ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে আটকে থাকা সুনীতা উইলিয়ামসদের ফেরার পথে আরও বড় কাঁটা। যে স্টারলাইন মহাকাশযানে চেপে স্পেস স্টেশনে উড়ে গিয়েছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত মহাকাশচারী সুনিতা উইলিয়ামস, বুচ উইলমোর-সহ ৯ নভোশ্চর, একের পর এক যান্ত্রিক ত্রুটির জেরে বেহাল অবস্থা সেই মহাকাশযানের। পরিস্থিতি এমন, সেই মহাকাশযানে চাপিয়ে তাঁদের পৃথিবীতে ফেরানোর আশায় ক্রমেই বালি পড়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে একটি বিকল্প পরিকল্পনা ছকে রেখেছিল মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। ঠিক ছিল ইলন মাস্কের সংস্থা স্পেস এক্সের পোলারিস ডন মিশনের জন্য নির্ধারিত মহাকাশযানটিতে করেই সুনীতাদের ফেরানো হবে পৃথিবীতে। সময়সাপেক্ষ হলেও মহাকাশে আটকে পড়া নভোশ্চরদের জন্য সে রাস্তাটি হবে অনেক বেশি নিরাপদ। তবে সেই পথেও এবার কাঁটা। ফের থমকে গেল স্পেস এক্সের সেই মিশন। ৩০ অগস্ট, শুক্রবারই উৎক্ষেপণের কথা ছিল সেই মহাকাশযানের। তবে শেষ মুহূর্তে এসে পিছিয়ে গেল সেই সফর। আবহাওয়া বিরূপ হওয়ায় বাতিল করা হল ৩০ অগস্টে উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা।
গত রবিবারই ইলন মাস্কের সংস্থা স্পেস এক্সের তরফে আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করা হয়েছিল, তাঁদের সমস্ত রকম পরীক্ষা এবং মহড়ার কাজ শেষ। তাদের স্পেসক্র্যাফ্ট পোলারিস ডন মিশনের জন্য সম্পূর্ণ ভাবে প্রস্তুত। সব ঠিক থাকলে মঙ্গলবারই সফর শুরু করার কথা ছিল সেটির। কিন্তু সেদিন হিলিয়াম লিকের কারণে পিছিয়ে যায় প্ল্যান। ঠিক হয়, বুধবার সেই উৎক্ষেপণ হবে। কথা ছিল, একটি ক্রু ড্রাগন ক্যাপসুলে করে চার-পাঁচজনকে পাঁচদিনের জন্য কক্ষপথে পাঠানো হবে। তাদের মধ্যে দু'জন প্রথমবার বেসরকারি ভাবে স্পেসওয়াক করবেন, যার মাধ্যমে রেডিয়েশন বেল্টের কাছে পৌঁছে যাবেন তাঁরা। এই মিশনটিতে কম্যান্ডারের দায়িত্বে রয়েছেন মার্কিন ধনকুবের এবং অভিজ্ঞ বিমানচালক জ্য়ারেড আইজ্যাকম্যান। তাছাড়া রয়েছেন মার্কিন বায়ুসেনার অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল স্কট। বাকি ক্রু-সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন স্পেস এক্সের সারাহ গিলস ও আনা মেনন। ফ্লোরিডায় নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে উৎক্ষেপণের কথা ছিল। তবে মঙ্গলবার অনেক দেরিতে স্পেস এক্সের তরফে ঘোষণা করা হয়, ফ্লোরিডার উপকূল এলাকায় আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় এই মিশন পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন: প্রকাণ্ড ডানা, অপার্থিব সৌন্দর্য! মহাকাশে কীভাবে লুকিয়ে দানবাকৃতি মহাজাগতিক প্রজাপতি?
আবহাওয়ার পূর্বাভাস যা বলছে, তাতে আগামী দুদিনের মধ্যে আবহাওয়া অনুকূল হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। তাই ঝুঁকি নিতে চাইছে না স্পেস এক্সও। এদিকে এই মহাকাশযানে চাপিয়েই সুনীতাদের পৃথিবীতে ফেরানোর কথা রয়েছে। আর সেই মিশনে যেভাবে বারবার কাঁটা পড়ছে, তাতে সুনীতাদের নিয়ে সংশয় বাড়ছেই। সেই গত ৫ জুন স্টারলাইনারের মহাকাশযানে চেপে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে গিয়েছিলেন সুনীতারা। কথা ছিল, ২৬ জুন পৃথিবীর উদ্দেশে ফের রওনা দেবেন তাঁরা। কিন্তু একের পর এক বিপদ ঘটতে থাকায় তেমনটা হয়নি। প্রথমে স্পেস স্টেশনের সামনেই বিস্ফোরণ ঘটে রাশিয়ান এক উপগ্রহের। তার টুকরো ছড়িয়ে যায় মহাকাশ স্টেশনের আশপাশে। তার পরেই এক এক করে শুরু হয় মহাকাশযানের যান্ত্রিক ত্রুটি-বিচ্যুতি। প্রথমে হিলিয়াম লিক, তার পর রিঅ্যাকশন কন্ট্রোল প্যানেলের একের পর এক থ্রাস্টার ফেটে যাওয়া, ক্রমে পৃথিবীতে ফেরার পক্ষে অযোগ্য হয়ে ওঠে স্টারলাইনারের ওই মহাকাশ যান। যদিও বোয়িং ইঞ্জিনিয়ারেরা ওই স্টারলাইনের মহাকাশযানে করেই সুনীতাদের ফেরানোর অঙ্কে বাজি লড়েছিল। রাজি হয়নি নাসা। এর আগে কল্পনা চাওলাদের পৃথিবী ছোঁয়ার মুখে ভস্ম হয়ে যেতে দেখেছে নাসা। সুনীতাদের বেলা আর সেই ঝুঁকি নেওয়ার সাহস করেনি তারা।
অগত্য়া বিকল্প পরিকল্পনা ছিল, স্পেস এক্সের এই পোলারিস ডন মিশন। যে স্পেসক্র্যাফ্টে করে সুনীতা-বুচদের পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার ছক কষেছিল নাসা। অবশ্য সে ক্ষেত্রে তাঁদের ফিরতে ফিরতে আগামী বছর ফেব্রুয়ারি মাস হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু জানানো হয়েছিল, আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে সুনীতাদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল, খাবার- সবই মজুত রয়েছে। যদিও মহাকাশে দীর্ঘসময় থাকার ফলে শারীরিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছেন সুনীতারা। হাড় ক্ষয়ে যেতে শুরু করেছে, দুর্বল হয়ে যাচ্ছে পেশি। স্বাভাবিক ভাবেই সুনীতাদের নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে বিশ্ববাসীর। যে ভাবে একের পর এক জটিলতা এসে জড়ো হচ্ছে, তাদের ফেরার পথে, তা যথেষ্ট চিন্তার।
সুনীতাদের ফেরার অপেক্ষায় পথ চেয়ে রয়েছেন তাঁর মা বনি পান্ড্য ও স্বামী মাইকেল জে উইলিয়ামস। সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে মাইকেল জানিয়েছেন, সুনীতাদের এই সাফল্য তাঁদের আনন্দের জায়গা। দুশ্চিন্তার মধ্যেই আশার আলো জ্বেলে রেখেছেন মা বনিও। তিনি জানান, প্রত্যাশিত সময়ের তুলনায় সুনীতাদের ফিরতে সময় লাগছে ঠিকই। কিন্তু তাঁরা তাঁদের কাজে গিয়েছেন। বনি জানেন, তাঁর মেয়ে একজন পাকা মহাকাশচারী। ইতিমধ্যেই চারশো দিনেরও বেশি সময় মহাকাশে কাটিয়েছেন সুনীতা। ফলে এই সময়টাও যে তিনি ঠিক কাটিয়ে ফেলবেন, এ ব্যাপারে নিশ্চিত বনি। দু'দিন আগেই কন্যার সঙ্গে কথা হয়েছে তাঁর। সুনীতারা জানিয়েছেন, তিনি ও তাঁর সহকর্মীরা ঠিক আছেন।
আরও পড়ুন: মহাশূন্যে বিলীনও হয়ে যেতে পারেন সুনীতারা! কেন জানেন?
নাসার অ্যাডমিনিস্ট্রেটর বিল নেলসন সম্প্রতি জানিয়েছিলেন, স্পেস এক্স মহাকাশযানে করে সুনীতাদের ফেরানোর কথা। তবে সেই স্পেস এক্সের নয়া মিশনের পথে যে ভাবে বারবার বাঁধা পড়ছে, তাতে দুশ্চিন্তা বাড়ছে সুনীতাদের ফেরা নিয়েও। যদি পোলারিস ডন মিশন শুরু হতে হতে আরও খানিকটা দেরি হয়ে যায় আবহাওয়া কিংবা যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে, সে ক্ষেত্রে সুনীতাদের ফেরানোর প্রক্রিয়াও যে আরও বিলম্বিত হবে, তা একরকম ভাবে স্পষ্ট। সেক্ষেত্রে স্পেস স্টেশনে এত দীর্ঘ সময় আদৌ টিকে থাকতে পারবেন সুনীতারা? ফের সেই প্রশ্নকেই জোরালো করে তুলেছে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি।