৭২ জন ধর্ষককে ডেকে এনে দশ বছর ধরে স্ত্রীকে নির্যাতন! ভয়ঙ্কর 'অপরাধ' কবুল ব্যক্তির

Shocking Betrayal: ফরাসি ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে স্ত্রীকে জোর করে মাদক খাওয়ানোর অভিযোগ উঠেছে প্রায় দশ বছর ধরে। তাঁকে ধর্ষণ করার জন্য এই দশ বছরে অন্তত ৭২ জন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিকে লাগাতার আমন্ত্রণও জানায় সে।

দশ বছর ধরে স্ত্রীকে মাদক দিয়ে কোমার মধ্যে রেখে দেওয়া। এই দশ বছরে লাগাতার বাইরে থেকে ধর্ষকদের ডেকে এনে লাগাতার নির্যাতন। কার্যত বিশ্বকে চমকে দিয়েছে এমন একটি ঘটনা। নির্ভয়া কাণ্ড থেকে সাম্প্রতিক কালে আরজি করের ঘটনা। বারংবার আমরা সরব হই প্রশাসনের বিরুদ্ধে। উপড়ে ফেলতে চাই সমাজ থেকে এই ভয়ঙ্কর ধর্ষকামকে। গোটা পৃথিবী জুড়ে এ যেন এক ভয়ঙ্কর ব্যধি  সমাজের। যুদ্ধ বাঁধলে আমরা দেখেছি, সব চেয়ে বিপদে পড়েন সেখানকার মহিলারা। কয়েকদিন আগেই কানে এসেছিল সুদানের খবর, গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত সেই দেশে সেনার কাছে শরীর বিকোলে তবেই মেলে খাবার। শুধু যে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির ক্ষেত্রে ধর্ষণ একটি সামাজিক সমস্যা তা নয়। প্রথম বিশ্বের দেশগুলিও সামিল এই তালিকায়। সম্প্রতি সামনে এসেছে ফ্রান্সের একটি ঘটনা, যা কার্যত শিউরে ওঠার মতোই।

বহু দেশেই দীর্ঘদিন পর্যন্ত বিবাহ পরবর্তী ধর্ষণকে তেমন আমল দেওয়া হত না। কার্যত পুরুষের তা অধিকার বলেই ধরে নেওয়া হত। সম্মতির ধারণা ঠিক জায়গা পেত না সেখানে। সম্প্রতি ফ্রান্সের আদালতে ওঠে একটি বৈবাহিক নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা। কিন্তু তা কার্যত আতঙ্কিত করেছে গোটা দেশকে। ডমিনিক পেলিকট নামে ৭১ বছর বয়সী এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে উঠেছে ভয়ঙ্কর অভিযোগ।

আরও পড়ুন: প্রতিবাদীদের মা-বোনের বিকৃত ছবি দেওয়ালে টাঙানোর হুমকি দিচ্ছেন খোদ তৃণমূল নেতা!

ফরাসি ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে স্ত্রীকে জোর করে মাদক খাওয়ানোর অভিযোগ উঠেছে প্রায় দশ বছর ধরে। এখানেই শেষ নয়। এই মাদকাসক্ত স্ত্রীকে ধর্ষণ করার জন্য এই দশ বছরে অন্তত ৭২ জন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিকে লাগাতার আমন্ত্রণ জানিয়ে গিয়েছে সে। তাদের মধ্যে থেকে ৫০ জনকে শনাক্ত করেছে পুলিশ। তাদের বয়স ২৬ থেকে ৭৪ বছরের মধ্যে। এই সমস্ত অজ্ঞাতপরিচয় ধর্ষকদের অনলাইনে যোগাযোগ করত ডমিনিক। মাদক দিয়ে দিয়ে স্ত্রীকে এমন ভাবে নেশাগ্রস্ত করে রাখত সে যে তিনি টের পর্যন্ত পেতেন না এই ভয়বহ নির্যাতনের। ডমিনিকের স্ত্রী ৭২ বছরের গিসেল পেলিকট নিজেও এই বিচারপ্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছেন।

২০২০ সালে একটি শপিং সেন্টারে তিন জন মহিলার আপত্তিকর ছবি তোলার অভিযোগে নিরাপত্তারক্ষীদের হাতে ধরা পড়ে ডমিনিক। পুলিশি তদন্তে ধরা পড়ে তার মোবাইল ভর্তি স্ত্রীর অসংখ্য আপত্তিকর ছবি ও ভিডিওর। coco.fr নামে একটি সাইটে বেশ কিছু চ্যাটও খুঁজে পায় পুলিশ। যার মাধ্যমে ডমিনিক স্ত্রীকে ধর্ষণের জন্য ধর্ষক জোগার করে আনত। এই দশ বছরে শতাধিক বার ধর্ষিত হয়েছেন গিসেল। শুধু স্ত্রীরই নয়, নিজের মেয়েরও আপত্তিকর ছবি মিলেছে তার মোবাইলে। ২০১১ সালে তারা যখন প্যারিসের কাছে বাস করত, সে সময় থেকেই স্ত্রীর সঙ্গে ওই ভয়ঙ্কর কার্যকলাপ শুরু করে ব্যক্তি। প্য়ারিস ছেড়ে মাজানে চলে যাওয়ার পরেও চলতে থাকে সেই ভয়ঙ্কর কার্যকলাপ। তবে তদন্তকারীরা এর বিনিময়ে কোনও টাকার লেনদেনের প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

যাদের স্ত্রীকে ধর্ষণের জন্য ডেকে আনত ডমিনিক, তাদের বেশিরভাগই সাধারণ লোকজন। কেউ ফর্কলিফ্ট চালান, কেউ আবার ফায়ার ব্রিগেড কর্মী, কেউ বিবাহিত, কেউ বা ডিভোর্সি। বেশিরভাগ ধর্ষকই একবার এ কাজ করেছে। কয়েক জন বারংবার এ কাজে ডাক পেয়েছিল বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। ডমিনিক তদন্তকারীদের জানায়, স্ত্রী নিজে থেকেই মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছিল, তবে বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, কার্যত কোমার পরিস্থিতিতে পৌঁছে যান মহিলা।

আরও পড়ুন: ধর্ষণ রুখতে আরও কড়া বাংলা! ধর্ষকদের জন্য কোন কোন শাস্তির নিদান ‘অপরাজিতা বিলে’?

এই মানসিক ব্যধি অবশ্য ডমিনিকের একদিনের নয়। এর পিছনে রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস। মাত্র ৯ বছর বয়সে এক পুরুষ নার্সের দ্বারা ধর্ষিত হন ওই ব্য়ক্তি। আদালতে তেমনটাই জানিয়েছে ডমিনিকের আইনজীবী। ১৯৯১ সালে তার বিরুদ্ধে একটি ধর্ষণ ও ১৯৯৯ সালে একটি ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। চিকিৎসকেরা ডমিনিককে পরীক্ষার পর জানিয়েছেন মানসিক স্থিতি ঠিক নেই তার।

এই ঘটনা প্রকাশ্য়ে আসার পরেই বিক্ষোভ শুরু হয়েছে ফ্রান্স জুড়ে। ডমিনিকের বিচার চলতি বছরের ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে বলে জানানো হয়েছে। আদালতে শুনানি চলাকালীন কালো পোশাক পরে বিক্ষোভ দেখান এক ডজনেরও বেশি মহিলা। কার্যত দেশ জুড়ে বিরাট ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে এই ভয়াবহ ঘটনা। ডমিনিকের কঠোরতর শাস্তির দাবিও উঠেছে বিক্ষোভকারীদের দিক থেকে।

More Articles