মিছিল চলছে, মশাল জ্বলছে! বাংলায় তবু থামেনি ধর্ষণ
Rape culture in Bengal: রাজ্য-দেশ যখন ধর্ষণের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামছে, পথে রাত জাগছে গোটা বাংলা, তখনও অক্লান্ত বাংলা জুড়ে ধর্ষণ, গণধর্ষণের ধারা।
আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে বিক্ষোভে ফুটছে বাংলা। বাংলা ছাপিয়ে সেই দ্রোহের ঝড় পৌঁছে গিয়েছে দেশ, এমন কী দেশের বাইরেও। গত ৯ অগস্ট আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সেমিনার রুমে উদ্ধার হয় এক তরুণী চিকিৎসকের ক্ষতবিক্ষত দেহ। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে মেলে ভয়াবহ অত্যাচার ও ধর্ষণের প্রমাণ। সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে অভিযুক্ত সন্দেহে এক সিভিক ভলিন্টিয়ারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সেই ঘটনায় বিক্ষোভের ঝড় ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। রাত দখলে রাস্তায় নামে। কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা, আরজি করের নির্যাতিতার সুবিচারের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। কার্যত আরজি কর কাণ্ডকে কেন্দ্র করে রাস্তায় নামতে দেখা গিয়েছে সব স্তরের মানুষকে। প্রায় এক মাস হয়ে গেলেও সেই দ্রোহের ঝড় থামেনি এখনও।
আরজি করের ঘটনার জল গড়িয়েছে অনেক দূর। ইতিমধ্যেই মামলার তদন্তভার গিয়েছে সিবিআইয়ের হাতে। ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা করে সুপ্রিম কোর্ট। সেই মামলার শুনানির তারিখ ছিল ৫ সেপ্টেম্বর। যদিও অজ্ঞাত কারণে তা পিছিয়ে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সেই নিয়ে নতুন করে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। আরজি করের প্রেক্ষিতে ধর্ষণবিরোধী আইনে কড়াকড়ি আনতে নয়া বিল এনেছে রাজ্যও। ধর্ষণ, নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে এই এত প্রতিবাদ, এত রাস্তায় নামা, তাতে কি ধর্ষকেরা আদৌ ভয় পেয়েছে? আদৌ রোখ টানা গিয়েছে তাঁদের এই ভয়ঙ্কর প্রবণতায়?
আরও পড়ুন: আরও এক রাতদখল! তিলোত্তমার জন্য যে ভাবে জেগে থাকল, জাগিয়ে রাখল বাংলা
রেকর্ড কিন্তু তেমনটা বলছে না। গোটা অগস্ট জুড়ে অসংখ্য ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে পুলিশের কাছে। তার মধ্যে রয়েছে শিশু নির্যাতনের ঘটনাও।
দেখে নেওয়া যাক, এই এক মাসে কোথায় কোথায় নির্যাতনের স্বীকার হয়েছেন মহিলারা, শিশুরা।
- ১৩ অগস্ট
বর্ধমানের দেওয়ানদিঘিতে বন্ধুর সঙ্গে মেলায় গিয়েছিলেন তরুণী, সেই মেলায় যাওয়ার রাস্তায় বন্ধুর সামনেই ধর্ষিতা হন তিনি। - ১৫ অগস্ট
শিলিগুড়িতে গণধর্ষণের শিকার নাবালিকা। - ২১ অগস্ট
বোলপুরে গৃহবধূর কপালে বন্দুকের নল ঠেকিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ, যৌনাঙ্গে বন্দুকের নল ঢুকিয়ে চলে বীভৎস অত্যাচার। যন্ত্রণায়-অপমানে আত্মহত্যারও চেষ্টা মহিলার। - ২২ অগস্ট
রায়গঞ্জে ধর্ষিতা মূকবধির মহিলা। - ২৫শে অগস্ট
দিনহাটায় এক নাবালিকাকে ধর্ষণ। - ২৬ অগস্ট
প্রতিবেশী তরুণীকে মাদক খাইয়ে ধর্ষণের অভিযোগ মালদহে। - ২৬ অগস্ট
কোচবিহারে ধর্ষণ দুই নাবালিকাকে, একটি ঘটনায় অভিযুক্ত খোদ বাবা, অন্যটিকে প্রতিবেশী - ২৮ অগস্ট
হাঁসখালিতে রেল স্টেশনের কাছে মিলল এক অর্ধনগ্ন এক নাবালিকার ক্ষতবিক্ষত দেহ। - ২৯ অগস্ট
বংশীহারীতে ধর্ষণের শিকার বছর তেরোর আদিবাসী কিশোরী, অভিযোগের তির তৃণমূল নেতার ছেলের দিকে - ৩১ অগস্ট
মালদহে আরও এক ধর্ষণের ঘটনা - ৩১ অগস্ট
ধর্ষণের ঘটনা নদীয়ার কৃষ্ণগঞ্জে - ৩১ অগস্ট
হাওড়ার একটি হাসপাতালে নাবালিকা রোগীকে যৌনহেনস্থা । - ৩১ অগস্ট
বীরভূমের ইলামবাজারে যৌনহেনস্থার শিকার কর্তব্যরত নার্স।
আরও পড়ুন: ৭২ জন ধর্ষককে ডেকে এনে দশ বছর ধরে স্ত্রীকে নির্যাতন! ভয়ঙ্কর ‘অপরাধ’ কবুল ব্যক্তির
রাজ্য-দেশ যখন ধর্ষণের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামছে, পথে রাত জাগছে গোটা বাংলা, তখনও অক্লান্ত বাংলা জুড়ে ধর্ষণ, গণধর্ষণের ধারা। ২০১২ সালে নির্ভয়া গণধর্ষণের ঘটনার পরেও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল দেশ জুড়ে। কড়া করা হয়েছিল আইন। এমনকী দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয়েছিল ধর্ষকদের। তার পরেও সমাজ বদলায়নি। ধর্ষকদের মনোভাব বদলায়নি। ফের আরজি করের মতো কলকাতার নামজাদা হাসপাতালে ধর্ষিতা হতে হয়েছে এক চিকিৎসককে। ফের পথে নেমেছে মানুষ। অথচ এত বিক্ষোভ-প্রতিবাদও একফোঁটা ভয় ধরায়নি ধর্ষকদের বুকে? কীভাবে মিলবে এই ভয়াবহ ব্যধি থেকে সমাজের মুক্তি? এ প্রশ্নের উত্তর সম্ভবত প্রশ্নের চেয়েও কঠিন, আর তা-ই বোধহয় প্রমাণ করে এই দীর্ঘতালিকা।