আরও এক রাতদখল! তিলোত্তমার জন্য যে ভাবে জেগে থাকল, জাগিয়ে রাখল বাংলা
RG Kar hospital protest: বুধবার ঘরের আলো নিভিয়ে রাখার আবেদন করেছিলেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা । এদিন রাত ৯টা থেকে ১০টা এক ঘণ্টা ঘরের আলো নিভিয়ে প্রদীপ হাতে রাস্তায় মানববন্ধনেরও ডাক দেন জুনিয়র চিকিৎসকরা।
আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে উত্তাল গোটা রাজ্য। প্রায় এক মাস হয়ে গেলেও প্রতিবাদ-বিক্ষোভের ঝড় এখনও থামেনি। ৫ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর মামলার শুনানি হওয়ার কথা ছিল। সেই শুনানির আগের রাতে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদের স্বরকে তীব্র করে তুলতে চেয়েছিলেন নাগরিকেরা। তবে অজ্ঞাত কারণে পিছিয়ে যায় সুপ্রিম কোর্টের শুনানি। সেই ঘটনা আরও বেশি বিক্ষোভের জন্ম দিয়েছে মানুষের ভিতরে।
১৪ অগস্টের পর আবার ৪ সেপ্টেম্বর ফের রাতদখলের কর্মসূচীতে নেমেছিল শহর কলকাতা। শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ছিল রাতদখলের কর্মসূচী। সেখানে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে জমায়েত হতে দেখা যায় মানুষকে। গত রবিবার থেকে লালবাজারের সামনে আন্দোলনে বসেছেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। সেই আন্দোলনে মিশে গিয়েছে সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন চিকিৎসকদের স্রোত। পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের ইস্তফার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। সেই আন্দোলনের পাশাপাশি শহরের বিভিন্ন কোণায় আয়োজন করা হয়েছিল মানববন্ধন কর্মসূচীর।
আরও পড়ুন: রাজ্য সরকারের ‘অপরাজিতা’ বিলে কেন আপত্তি বিক্ষোভরত চিকিৎসকদের?
দ্য পিপলস ফোরামের উদ্যোগে কলেজ স্ট্রিট থেকে শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড় পর্যন্ত মিছিলের আয়োজন করা হয়। প্রথমে ছিল জমায়েত ও পরে রাত দখল কর্মসূচী। সেখানে মিছিলে যোগ দিতে এসে গো ব্যাক স্লোগান শুনে পিছু হঠতে হয়েছে অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তকে। বিপুল ভিড় প্রত্যক্ষ করা গিয়েছে শ্য়ামবাজার পাঁচ মাথার মোড় তথা নেতাজির মূর্তির পাদদেশে। জমায়েতের আয়োজন করা হয়েছিল যাদবপুর এইটবি বাসস্ট্যান্ডেও। সেখানেও বিশাল জমায়েত হয় মানুষজনের।
বুধবার ঘরের আলো নিভিয়ে রাখার আবেদন করেছিলেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা । এদিন রাত ৯টা থেকে ১০টা এক ঘণ্টা ঘরের আলো নিভিয়ে প্রদীপ হাতে রাস্তায় মানববন্ধনেরও ডাক দেন জুনিয়র চিকিৎসকরা ৷ তাঁরা এই কর্মসূচির নাম দিয়েছেন 'বিচার পেতে আলোর পথে'। জুনিয়র ডাক্তারদের ডাকা 'বিচার পেতে আলোর পথে' কর্মসূচিতে যোগ দেন সিনিয়র ডাক্তাররাও ৷ এর পরে রাত এগারোটা থেকে আরও একটি কর্মসূচি ছিল সিনিয়র চিকিৎসকদের ৷ কলকাতার পাশাপাশি বিভিন্ন জেলাতেও পালিত হয়েছে চিকিৎসকদের এই রাত দখল কর্মসূচি। মোট ২৯টি জায়গায় রাত দখল করেছেন চিকিৎসকরা। সেই ডাকে স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া মেলে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের। সোশ্যাল মিডিয়া ভেসেছে মোমবাতি জ্বালানোর অসংখ্য ছবিতে।
এর পাশাপাশি বিশ্ববাংলা গেট, সিঁথির মোড়, বারাসত ডাকবাংলো মোড়, লেকগার্ডেন্সের কাছে লর্ডসের মোড়, রুবি মোড়, কলকাতা, করুণাময়ী, সল্টলেক-সহ একাধিক জায়গায় জমায়েত ও রাতদখল কর্মসূচীর ডাক দেওয়া হয়েছিল। এছাড়া বিভিন্ন এলাকাতেই ছোট বড় বিভিন্ন জমায়েত হয়েছে স্থানীয়দের উদ্যোগে। পিছিয়ে ছিল না মফসসলও। এমনকী জেলায় জেলায় আরজি করের নির্যাতিতার সুবিচারের দাবিতে আন্দোলনে নামেন মানুষ। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক, কোথায় কোথায় বুধবার রাতে রাতদখলে নেমেছিলেন বিক্ষোভকারীরা।
- কলেজ স্ট্রিট থেকে শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড় পর্যন্ত মিছিল ৷ তারপর জমায়েত ও রাত দখল। (দ্য পিপলস ফোরামের উদ্যোগে)
- যাদবপুর 8বি বাসস্ট্যান্ড
- বিশ্ববাংলা গেট
- সিঁথির মোড়
- বারাসাত ডাকবাংলো মোড়
- লর্ডস মোড়, লেক গার্ডেন্স
- কল্যাণপুর হাউসিং, আসানসোল
- দাঁইহাট রাজবাড়ি মোড়, বর্ধমান
- বালুরঘাট
- বহরমপুর চৌতারা
- কলেজ স্ট্রিট, বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রিট ক্রসিং
- করুণাময়ী, সল্টলেক
- সখেরবাজার, বেহালা
- রুবি মোড়, কলকাতা
- কল্যাণী
- বিশ্রামতলা মোড়, কান্দি
- কালিবাড়ী, গোবরডাঙা
- আগরপাড়া
- ঝাড়গ্রাম
- চতুরঙ্গ ময়দান, দুর্গাপুর
- মন্দিরতলা, হাওড়া
- পর্ণশ্রী, বেহালা বাসস্ট্যান্ড
- লর্ড’স বেকারি মোড়
- সল্টলেক, পিএনবি
- বেহালা কদমতলা
- বাঘাযতীন স্টেট জেনারেল হসপিটাল
- ঘড়ির মোড়, চুঁচুড়া
- নোয়াপাড়া থানার পাশে
- ব্যারাকপুর স্টেশন ১ নম্বর প্ল্যাটফর্ম চত্বর
- রহড়া বাজার মোড়
- লেকটাউন ঘড়ির মোড়
- চাঁচাই, বারোয়ারিতলা, পূর্ব বর্ধমান
- রাসবিহারী
- সোদপুর ট্রাফিক মোড়
- রাণুছায়া মঞ্চ, অ্যাকাদেমি চত্বর
- মধ্যমগ্রাম চৌমাথা
- গড়িয়া, বোড়াল, রক্ষিতের মোড়
- গান্ধি মূর্তির পাদদেশ, শিলিগুড়ি
- গড়িয়ার মোড়
- ক্যানিং হসপিটাল মোড়
- গড়ফা বাজারের সামনে
- দানেশ শেখ লেন বাসস্ট্যান্ড
- দমদম স্টেশন (রিলায়ন্স ট্রেন্ডস) থেকে নাগেরবাজার
- শিবতলা, ধান্যকুড়িয়া
- দোলতলা থেকে কাটাখাল, মধ্যমগ্রাম।
- কদমতলা পাওয়ারহাউস, হাওড়া
- পলতা এসবিআই
- রিলাইফ হসপিটাল থেকে গৌরী সিনেমা হল, উত্তরপাড়া কলেজ হল্ট, আলিপুরদুয়ার
- বারাসাত স্টেশন ১ নং থেকে কলোনি মোড়।
- বাগুইয়াটি নেতাজি মূর্তি থেকে চিনার পার্ক হয়ে জোড়ামন্দির।
- জেএন হাসপাতালের হাসপাতালের মেইন গেট থেকে কল্যাণী মেইন স্টেশন।
- নর্থল্যান্ড বড় গেটের গেটের সামনে, ইছাপুর
- গান্ধি মোড়, কাঁচড়াপাড়া।
- নিউ ব্যারাকপুর মিনি বাস স্ট্যান্ড
- চৌরঙ্গী মোড়, রানাঘাট
- সোনারপুর স্টেশন মোড়
- জামরুলতলা, সেন্ট্রাল সিঁথি
- নিউটাউন অ্যাকশন এরিয়া ১
- নেতাজি মোড়, মালদা
- 8নং মোড়, অশোকনগর কল্যাণগড়।
- বাঁকুড়া কলেজ মোড় থেকে মাচানতলা মোড়
- বিবেকানন্দ রোড ক্রসিং
- চন্দননগর স্ট্র্যান্ড, জোড়া ঘাট
- বটতলা, শ্রীরামপুর
- ধর্মতলা মেট্রো চ্যানেল
- এয়ারপোর্ট 1 নম্বর ট্যাক্সিস্ট্যান্ড
- বজবজ চৌরাস্তা
- পোস্ট অফিস মোড়, কৃষ্ণনগর
- হাজরা মোড়
- ঢাকুরিয়া বাসস্ট্যান্ড
- রাসবিহারী
- সিঁথি রায়পাড়া ময়দান
আরও পড়ুন: ধর্ষণ রুখতে আরও কড়া বাংলা! ধর্ষকদের জন্য কোন কোন শাস্তির নিদান ‘অপরাজিতা বিলে’
সুপ্রিম কোর্টে শুনানির ঠিক আগের রাতে আরজি কর কাণ্ডে সুবিচার চেয়ে ফের সাধারণ মানুষকে পথে নামার আর্জি জানিয়ে সমাজমাধ্যমে জোর প্রচার শুরু হয়েছিল আগে থেকেই৷ তবে শেষ মুহূর্তে শুনানি পিছিয়ে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। বুধবার সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্টের তরফে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানানো হয়েছিল, প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) বসবে না। ওই বেঞ্চের বাকি দুই সদস্য বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্র আলাদা করে ১০ নম্বর কোর্টের কিছু মামলা শুনবেন। কিন্তু কোন কোন মামলা তাঁরা শুনবেন, তা তখনও স্পষ্ট ছিল না। ফলে আরজি করের শুনানি নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। এর পরে সুপ্রিম কোর্ট থেকে দ্বিতীয় বিজ্ঞপ্তি জারি করে ১০ নম্বর কোর্টের মামলার নতুন তালিকা প্রকাশ করা হয়। আপাতত ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শুনানি পিছিয়ে দেওয়ার নির্ণয় নিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
হঠাৎ করে সুপ্রিম কোর্টের শুনানি পিছিয়ে দেওয়ায় ক্ষোভে ফেটেছেন আন্দোলনরত চিকিৎসকেরা। ক্ষোভ উস্কে উঠেছে সাধারণ মানুষেরও। বৃহস্পতিবার এ নিয়ে সাংবাদিক বিবৃতি করে নিজেদের মতামত জানানোর কথা রয়েছে বিক্ষোভরত চিকিৎসকদের।