৬০৪টি তাজমহলকে ঢেকে ফেলতে পারে ভারতের প্লাস্টিক-বর্জ্য! সামনে এল যে ভয়ঙ্কর তথ্য

world’s biggest plastic polluter: পৃথিবীর অন্যতম দূষণকারী চার দেশ, নাইজিরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, চিন এবং পাকিস্তানকেও ছাপিয়ে গিয়েছে সম্প্রতি ভারত প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদনে।

প্লাস্টিক! নিত্য দিনের দুর্দান্ত প্রয়োজনীয় এই জিনিসটি যে পৃথিবীকে ক্রমশ ঠেলে দিচ্ছে ধ্বংসের দিকে, তা আমরা কম বেশি সকলেই জানি। কিন্তু বিশ্বাস করি না। ফলে ব্য়বহারও কমে না। বাজারে, দোকানে সর্বত্র সাদা-কালো প্লাস্টিকের ব্যবহার ত সদ্য গিয়েছে ভারতের স্বাধীনতা দিবস। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বারবার প্লাস্টিকমুক্ত ভারত গড়ার কথা বলতে শোনা গিয়েছে। কিন্তু কোথায় কী! সম্প্রতি নেচার জার্নালে লিডস বিশ্ববিদ্য়ালয়ের একটি গবেষণায় ধরা পড়েছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদনে পৃথিবীর সমস্ত দেশকেই ছাপিয়ে গিয়েছে ভারত।

গবেষণা বলছে, প্রতি বছর প্রায় ৫৭ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক দূষণের নেপথ্যে রয়েছে আমাদের সুজলা সুফলা ভারত। আর এই পরিমাণ যে বিশ্বের সমস্ত দেশের চেয়ে বেশি। যা ক্রমশ ছড়িয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর প্রতিটি কোণায়। গভীরতম খাদ থেকে শুরু করে পাহাড়ের চুড়া, এমনকী মানুষের মস্তিষ্কেও। প্রতি বছর গোটা বিশ্বে তৈরি হওয়া প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ এতটাই, যা নিউ ইয়র্ক সিটির সেন্ট্রাল পার্ক বা ১৫৭টি এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং ভরিয়ে ফেলার পক্ষে যথেষ্ট। আর ভারতে প্রতিবছর উৎপন্ন যে প্লাস্টিক বর্জ্য, তা নাকি ৬০৪টি তাজমহল সমান এলাকা ভরিয়ে ফেলতে পারে যে কোনও মুহূর্তে। তেমনটাই জানাচ্ছেন গবেষকেরা।

আরও পড়ুন: Climate Change: বদলাচ্ছে পৃথিবীর আকৃতি, যে ভয়াবহ বিপদের মুখে আমরা

পৃথিবীর অন্যতম দূষণকারী চার দেশ, নাইজিরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, চিন এবং পাকিস্তানকেও ছাপিয়ে গিয়েছে সম্প্রতি ভারত প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদনে। এতদিন সেই তালিকায় শীর্ষে ছিল চিন। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে বর্জ্য পোড়ানো ও নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট অগ্রগতি করেছে তারা। কার্যত নিজেকে প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদনে চতুর্থ স্থানে নামিয়ে আনতে পেরেছে চিন। কিন্তু ভারত সেই তিমিরেই।

ভারত এখনও বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে সেই জায়গায় নিয়ে যেতে পারেনি। এদিকে দেশের জনসংখ্যা বিশ্বে শীর্ষে। এই বিপুল জনসংখ্যার দেশে সঠিক বর্জ্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা না থাকায় স্বাভাবিক ভাবে বিশ্বের মধ্যে প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদনে প্রথম স্থানে চলে এসেছে মোদির ভারত। অথচ সেই ২০১৯ সাল থেকে মোদির মুখে শোনা যাচ্ছে প্লাস্টিকমুক্ত দেশ গড়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে যে তেমনটা আদৌ হয়নি, তার প্রমাণ এই গবেষণা।

২০২২ সালে ভারতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্লাস্টিক দূষণ রুখতে প্লাস্টিকের কাটলারি, মোড়ানো ফিল্ম, বেলুনের কাঠি, প্লাস্টিকের পতাকা, ব্যানার থেকে শুরু করে প্রায় শতাধিক রকমের প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগের উৎপাদন ও বিক্রয় ও ব্যবহার বন্ধ করেছে। তবে তার পরেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। আদতেই কি বন্ধ করা গিয়েছে প্লাস্টিকের ব্যবহার, নাকি প্লাস্টিকের ব্যবহার সেই তলে তলে চলছেই। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ভারতের প্লাস্টিক দূষণের ৫৩.৪ শতাংশই আসে অসংগঠিত মিউনিসিপ্য়াল বর্জ্য থেকে। এবং প্রায় ৩৮.২ শতাংশই আসে বিভিন্ন ল্যান্ড ডিসপোজাল সাইটের পোড়া বর্জ্য থেকে।

বহু ক্ষেত্রেই মনে করা হয়, প্লাস্টিক পুড়িয়ে ফেলা মানেই দূষণ থেকে মুক্তি। কিন্তু সেটা একেবারেই ভুল ধারণা। পরিবেশগত ও স্বাস্থ্যগত প্রভাবের কথা না ভেবেই বহু জায়গায় প্লাস্টিক পুড়িয়ে ফেলা হয়। প্লাস্টিকের এই অনিয়ন্ত্রিত পোড়ানো মানুষের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বলেই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এর ফলে মানুষের নিউরোডেভলপমেন্টাল, প্রজনন ও জন্মগত সমস্যা বাড়ছে। সবচেয়ে বেশি সমস্যা দারিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষদের। পাশাপাশি বাস্তুতন্ত্র ও সমাজের উপরও ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে এই দূষণ।

আরও পড়ুন: মৃত মাছের মহামারী! যে কারণে এই দেশে জারি জরুরি অবস্থা

বিগত কয়েক দশক ধরেই পরিবেশবিদদের বড়সড় মাথাব্যথার বিষয় জলবায়ু পরিবর্তন। আর যার জন্য খুব বেশি মাত্রায় দায়ী বিশ্ব উষ্ণায়ন। ক্রমশ গলে যাচ্ছে পৃথিবীর হিমবাহগুলি। বাড়ছে সমুদ্রের জল। নির্বিচারে গাছ কেটে শহর বাড়িয়ে তোলা, পুকুর বোজানো তো আছেই, তার সঙ্গে বিরাট কি ফ্যাক্টর প্লাস্টিক দূষণ। আর যেখানে সব চেয়ে বড় অবদানকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে ভারত। কীভাবে মিটবে এই সমস্যা। ১৫ অগস্টের ভাষণে মোদি বলেছিলেন, প্লাস্টিক ব্যবহার কমিয়ে আনার কথা। কিন্তু আদৌ কি তেমন কিছু হয়েছে? এ ভাবে চলতে থাকলে অচিরেই বড় বিপদের দিকে এগিয়ে যাবে দেশ। তার জন্য কোনও প্রতিকারের কথা কি ভাবছে সরকার। প্রশ্ন থেকেই যায়।

More Articles