আর কয়েক বছরেই ভ্যানিশ হবে পুরুষ? যে ভয়ঙ্কর কথা শোনালেন বিজ্ঞানীরা

Y Chromosome New Study: শুধু মানুষই নয়, অন্যান্য স্তন্যাপায়ী প্রাণীদের মধ্যেই ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে এই ক্রোমোজোম। এই ওয়াই ক্রোমোজোম মূলত পুরুষ লিঙ্গটির নির্ধারক।

আগামীর পৃ্থিবী থেকে ভ্যানিশ হয়ে যেতে চলেছে পুরুষেরা। ঠিক কেমন দেখতে হতে চলেছে পুরুষহীন দুনিয়া, ভেবে দেখেছেন কখনও। একটা সময় ছিল মাতৃতান্ত্রিক সমাজ, এখনও পর্যন্ত ভারতের উত্তর-পূর্বের একাধিক রাজ্যে মাতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা রয়েছে বটে। তবে সেগুলি নামেই। আসলে সমাজ নামক গাড়িটিকে তো ঠেলে নিয়ে চলে নারী-পুরুষ উভয়েই। কোনও একটি চাকা বসে গেলেই, থমকে যাবে সভ্যতার গাড়ি। তবে সম্প্রতি একটি গবেষণায় ধরা পড়েছে এমনই এক ভয়াবহ তথ্য। যেখানে জানা যাচ্ছে, ক্রমশ কমে যাচ্ছে পুরুষের শরীরে থাকা ওয়াই ক্রোমোজোমটি। যে ক্রোমোজোমটিই আসলে পুরুষের জন্মের জন্য দায়ী।

শুধু মানুষই নয়, অন্যান্য স্তন্যাপায়ী প্রাণীদের মধ্যেই ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে এই ক্রোমোজোম। এই ওয়াই ক্রোমোজোম মূলত পুরুষ লিঙ্গটির নির্ধারক। গবেষণা অনুযায়ী, যেভাবে ক্রমে ক্রমে কমে যাচ্ছে এই ক্রোমোজোম, তাতে একসময় সম্পূর্ণ রূপে অদৃশ্য পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে সেটি। আর তেমনটা হলে পুরুষের চিহ্ন মুছে যাবে দুনিয়া থেকে। ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সে প্রকাশিত একটি গবেষণায় সম্প্রতি ধরা পড়েছে এই তথ্য।

আরও পড়ুন: ভিনসেন্টের বিখ্যাত সব ছবির সেই গ্রাম, আজও যেন আস্ত ক্যানভাস

মানুষের দেহের প্রতি কোষে একজোড়া ক্রোমোজোম থাকে। এক্স এবং ওয়াই। নারীদেহে এই একজোড়া ক্রোমোজোমের দুটিই এক্স। তবে পুরুষ দেহে থাকে একটি এক্স এবং একটি ওয়াই। ডিম্বাণু নিষেকের সময় সেটি এক্স না ওয়াই কোন টাইপ ক্রোমোজোমের সঙ্গে মিলিত হচ্ছে, তার ওপর নির্ভর করে গর্ভস্থ সন্তানের লিঙ্গ। কিন্তু বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, পুরুষের শরীর থেকে ক্রমাগত অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে এই ওয়াই ক্রোমোজোম। ফলে ভবিষ্যতে শুধুমাত্র কন্যাসন্তান জন্মানোর সম্ভাবনাই বাড়ছে। আর এ ভাবে চলতে থাকলে একদিন পুরুষশূন্য হয়ে যাবে বিশ্ব।

সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা ইঁদুরের উপরে একটি গবেষণা করেন। যেখানে দেখা যাচ্ছে মেল-ডিটারমিনিং জিন তথা ওয়াই ক্রোমোজোমে বড়সড় বিবর্তন ঘটছে। গবেষণা বলছে, মানুষেরও ওয়াই ক্রোমোজোম ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে। এবং ধীরে ধীরে তা বিলুপ্ত হওয়ার পথে। পুরুষের এই ওয়াই ক্রোমোজোমের সঙ্গেই নারীদেহের এক্স ক্রোমোজোমের মিলন ঘটে। তাতেই পুত্রসন্তানের জন্ম হয়। সে ক্ষেত্রে ওয়াই ক্রোমোজোম যদি ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথে যেতে শুরু করে তাহলে আগামী দিনে নারী তার এক্স ক্রোমোজোমের সঙ্গে মিলনের জন্য প্রয়োজনীয় ক্রোমোজোম পাবে না। ফলে এমনটা হলে ভবিষ্যতে পৃথিবীতে আর পুরুষের অস্তিত্ব থাকবে না। ক্রমশই এ গ্রহ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে পুরুষ। স্বাভাবিক ভাবেই এই গবেষণা সভ্যতার পক্ষে যথেষ্ট উদ্বেগজনক।

গবেষণায় ধরা পড়েছে, গত ৩০০ মিলিয়ন বছরে মানুষের ১,৪৩৮টি জিনের মধ্যে প্রায় ১,৩৯৩টি জিনই হারিয়ে গিয়েছে। বেঁচে রয়েছে মাত্র ৪৫টি জিন। জেনেটিক্স বিশেষজ্ঞ জেনিফার এ. মার্শাল গ্রেভস জানাচ্ছেন, ওয়াই ক্রোমোজোমের সময় ক্রমশ ফুরিয়ে যাচ্ছে। আর এই প্রবণতা চলতে থাকলে আগামী ১১ মিলিয়ন বছরের মধ্যে সম্পূর্ণ অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে এই ক্রোমোজোমটি। সেক্ষেত্রে পুরুষ জন্মানোর হারও নেমে আলবে তলানিতে।

আরও পড়ুন:মহাবিশ্ব মোটা হচ্ছে! এর বয়স কত? যেভাবে মেপেছিলেন এই বিজ্ঞানী

রই মধ্যে ‘Proceedings of the National Academy of Sciences’-এ প্রকাশিত একটি গবেষণা জানাচ্ছে, দু'টি প্রজাতির ইঁদুরের মধ্যে পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, তারা তাদের Y ক্রোমোজোম হারিয়েছে, তবুও তারা তাদের প্রজাতিকে বাঁচাতে সফল হয়েছে। স্পাইনি নামে জাপানের একটি স্থানীয় ইঁদুরের প্রজাতির উপর করা হয় পরীক্ষাটি। দেখা গিয়েছে, ওয়াই ক্রোমোজোম বিলুপ্ত হওয়ার আগেই একটি নতুন ধরনের ক্রোমোজোম তৈরি করতে পেরেছিল, যা পুরুষ ইঁদুরের জন্মের জন্য প্রয়োজনীয়। আর সেই পরীক্ষা থেকে বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, তেমন কিছু ঘটতে পারে মানুষের ক্ষেত্রেও।

সত্যিই কি পুরুষ তেমন কোনও অভিযোজন ঘটাতে পারবে? নাকি বিলুপ্তিই তার ভবিতব্য? পৃথিবীর চাবি শেষপর্যন্ত যেতে চলেছে তবে নারীদের হাতেই? পুরুষশূন্য পৃথিবীকে কীভাবে ফিরবে তবে ভারসাম্য? একগুচ্ছ প্রশ্ন তুলে দিয়ে গেল এই গবেষণা।

More Articles