মৃত মাছের মহামারী! যে কারণে এই দেশে জারি জরুরি অবস্থা
Dead Fish Crisis: দেখে মনে হচ্ছে মৃত মাছের শরীর দিয়ে এক রুপোলি কম্বল যেন। পচা গন্ধে টিকতে পারছেন না বাসিন্দারা। সমস্ত পরিস্থিতি বিবেচনা করে দেশ জুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করেছে দেশের জলবায়ু মন্ত্রক।
দেশ জুড়ে জারি জরুরি অবস্থা। না, দেশের মানুষ হঠাৎ করে গণঅভ্যুত্থান জারি করেছে এমন নয়। নয় কোনও রাজনৈতিক অস্থিরতাও। তবে দেশ জুড়ে এই সামগ্রিক অস্থিরতার নেপথ্যে রয়েছে একগুচ্ছ মাছের মৃত্যু। একদিন ভোরে উঠে দেখা গেল গ্রিসের ভোলোস বন্দর সংলগ্ন নদীতে ভেসে উঠেছে অসংখ্য় মৃত মাছ। না, একটা-দু'টো নয়। প্রায় ১০০ টন মাছের মৃত্য়ুর নেপথ্যে রয়েছে আদতে কোন কারণ?
দেখে মনে হচ্ছে মৃত মাছের শরীর দিয়ে এক রুপোলি কম্বল যেন। পচা গন্ধে টিকতে পারছেন না বাসিন্দারা। সমস্ত পরিস্থিতি বিবেচনা করে দেশ জুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করেছে দেশের জলবায়ু মন্ত্রক। প্যাগাসেটিক উপসাগরীয় বন্দর পরিষ্কার করার কাজটি তাড়াতাড়ি সেরে ফেলতেই এই জরুরি অবস্থা জারি বলে জানানো হয়েছে। এই ভাবে হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ মাছেদের হঠাৎ মৃত্যুর কারণই বা কী? মনে করা হচ্ছে এর নেপথ্যে রয়েছে সেই চিরন্তন জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা। আজ থেকে নয়, বহু দিন ধরেই পরিবেশবিদদের ভাবাচ্ছে এই ক্লাইমেট চেঞ্জ বিষয়টি। যার জন্য দায়ী বিশ্ব উষ্ণায়ন, পরিবেশ দূষণের মতো হাজারও সমস্যা। আর এই জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্রমশ বিলয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে পৃথিবী।
আরও পড়ুন: Climate Change: বদলাচ্ছে পৃথিবীর আকৃতি, যে ভয়াবহ বিপদের মুখে আমরা
২০২৩ সালে বিধ্বংসী ঝড় ড্যানিয়েল হানা দিয়েছিল গ্রিসে। সেই ঝড়ের দাপটে ভয়াবহ বন্যার মুখোমুখি হয়েছিল প্রাচীন এই দেশ। সেই ঝড় ও বন্যার সঙ্গে এই মাছেদের মৃত্যু অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িত বলেই মনে করছেন পরিবেশবিদরা। আপাতত গ্রিসে গ্রীষ্মকাল চলছে। সেই মনোরম পরিবেশে বাধ সেধেছে এই মৃত মাছেদের ভেসে ওঠা। ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাসছে মরা মাছেদের ভেসে ওঠার দৃশ্য। আপাতত এক মাস যাবৎ দেশ জুড়ে জরুরি অবস্থা চলবে বলেই জানিয়েছেন জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের নাগরিক সুরক্ষা মহাসচিব ভ্যাসিলিস পাপেজর্জিউ। যত দ্রুত ওই বন্দর এলাকা থেকে মৃত মাছ পরিষ্কার করা যায়, তার চেষ্টা করছে গ্রিক সরকার।
Environmental Crisis in
— DISASTER TRACKER (@DisasterTrackHQ) August 29, 2024
📌 #Volos | #Greece 🇬🇷
The picturesque port of Volos has turned into a scene of environmental distress as it's inundated with tons of dead fish, a stark aftermath of last year's catastrophic floods. This ecological disaster not only paints a grim… pic.twitter.com/JwEfWcgp4U
কার্যত গত বছর থেসালি অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যার পর থেকে এই দ্বিতীয় পরিবেশগত বিপর্যয় যেন গ্রীসে। ১৯৬২ সালে ম্যালেরিয়া দমন করার উদ্দেশ্যে খালি করে ফেলা হয়েছিল একটি হ্রদ। সাম্প্রতিক এই বন্যায় যা শুধু ভরেই যায়নি, তিনগুণ ফুলে ফেঁপে ওঠে সেই হ্রদের জ্ল। গত বছরে ড্যানিয়েল ও ইলিয়াস ঝড়ের পরে থেসালির প্রায় ২০ হাজার হেক্টর সমভূমি প্লাবিত হয়েছিল। সে সময় নদী থেকে অসংখ্য মাছ সমুদ্রে চলে যায়। এদিকে হ্রদের জল বেড়ে যাওয়ায় মিষ্টি জলের মাছ চলে যাচ্ছে ভোলোস বন্দর সংলগ্ন সমুদ্রে। কিন্তু নদীর মিঠে জলের মাছেদের পক্ষে সমুদ্রে টিকে থাকা কঠিন। তার ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। অজস্র মৃত মাছ প্রায় প্রতিদিন ভেসে উঠছে সেখানে।
More than 100 tons of dead fish had been collected in and around the port of Volos, in central Greece, following a mass die-off linked to extreme climate fluctuations.
— Katie Liane (@TheKaterPotater) August 29, 2024
Yeah... I'm sure that's what it was pic.twitter.com/8tMs32nucf
সেই মৃত মাছগুলিকে সরাতে গ্রিস প্রশাসন এক ধরনের বিশেষ জাল ব্যবহার করা হচ্ছে, যা রাখা হচ্ছে জিরিয়া নদীর মুখে। কিন্তু এই বিপুল সংখ্যক মরা মাছ সংগ্রহ করতে প্রবল চাপের মুখে পড়ছে সেই জালও। গত বছর থেকে বন্যার কারণে গ্রিসের এই সব এলাকায় পর্যটকদের আনাগোনাও কমেছে। তার মধ্যে এই মৃত মাছের দুর্গন্ধ। কার্যত এক ভয়ঙ্কর পুতিগন্ধময় নরকে পৌঁছে দিয়েছে বাসিন্দাদের। এই পরিস্থিতিতে পর্যটকেরা আর কেউ আসবে বলেও মনে হয় না। যার ফলে বিপাকে পড়েছে ওই সব এলাকার রেস্তোঁরা ও বারগুলি। তাদের অ্যাসোসিয়েশনের তরফে জানানো হয়েছে, গত কয়েকদিনে তাদের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৮০ শতাংশ কমেছে।
আরও পড়ুন:জলবায়ু পরিবর্তন এবং নিরপরাধ দ্বীপ রাষ্ট্রগুলি
এই পরিবেশগত সঙ্কট পরিস্থিতির ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে একদল সরকারি আইনজীবী। তবে এই মৃত মাছেদের চাদর এলাকা থেকে দ্রুত সরানো না গেলে, তা যে ক্রমশ ওই এলাকার বাসিন্দাদের ঠেলে দেবে সঙ্কট থেকে সঙ্কটতর পরিস্থিতিতে, তা ভালোই বুঝতে পারছে প্রশাসন। কার্যত এই পরিস্থিতিতে ভয়াবহ উদ্বেগ ছড়িয়েছে বাসিন্দাদের মধ্য়েও।