একদিকে দুর্ভিক্ষ অন্যদিকে পোলিও! টিকার জন্য যুদ্ধবিরতি গাজায়
Gaza polio vaccinations: হামাসের তরফে জানানো হয়েছে, তারা গাজা উপত্যকার ৬৫০,০০০-এরও বেশি ফিলিস্তিনি শিশুর সুরক্ষায় পোলিও বিরোধী অভিযানকে বাস্তবায়িত করতে সমস্ত রকমের সহযোগিতায় প্রস্তুত।
প্রায় এক বছর ধরে গাজায় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে ইজরায়েল। একাধিক দেশের মধ্যস্থতা, অনুরোধ-উপরোধেও যুদ্ধবিরতির পথে হাঁটেনি নেতানিয়াহু সরকার। বরং হামাসদের খতম করতে কোনও কসুর বাকি রাখেনি তারা। যুদ্ধবিরতির প্রসঙ্গে ইজরায়েলকে একাধিক শর্ত দিয়েছে হামাস। কিন্তু শেষপর্যন্ত যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে রাজি হয়নি কোনও পক্ষই। অবশেষে সেই গাজায় যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে দু'পক্ষই। শিশুদের পোলিও ভ্যাকসিনেশনের জন্য তিন দিনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে ইজরায়েল ও হামাস। ওই দিন গাজায় স্বাস্থ্য় অফিসারদের কাজ করার সুযোগ দেবে ইজরায়েল সরকার।
২০২৩ সালের সেই ৭ অক্টোবর ইজরায়েলে ঢুকে হামলা চালিয়েছিল হামাস জঙ্গিগোষ্ঠী। তার পরেই গাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধঘোষণা করে দেয় ইজরায়েল। তার পর থেকে সেই যুদ্ধ চলছে তো চলছেই। প্রায় ৪০ হাজার গাজাবাসীর মৃত্যু হয়েছে এখনও পর্যন্ত। যার মধ্যে একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে শিশু ও মহিলা। জখম প্রায় ১ লক্ষের কাছাকাছি মানুষ। গোটা গাজাকেই কার্যত মৃত্যুপুরীতে পরিণত করেছে ইজরায়েলের সামরিক বাহিনী।
যেখানে গোটা শহর ভুগছে ভয়াবহ দুর্ভীক্ষে, সেখানে নিরাপদ বলে আর কিছু নেই। এই পরিস্থিতিতে পোলিও টীকাকরণের মতো বিষয় নিয়ে কী করে নমনীয় ভাব প্রকাশ করল, তা বিস্ময়ের বটে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, রবিবার থেকে প্রায় ৬ লক্ষ ৪০ হাজার শিশুকে পোলিও টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। রবিবার থেকেই শুরু হবে ওই টিকাকরণ কর্মসূচী। আর তার জন্য স্থানীয় সময় সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৩টে পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়েছে। শোনা গিয়েছে, ইজরায়েলি বাহিনী ও প্যালেস্টাইনের সশস্ত্র জঙ্গিগোষ্ঠী হামাস গাজার তিনটি পৃথক জোনে তিন দিনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।
আরও পড়ুন: ইজরায়েলি বোমা কেড়েছে সদ্যোজাত দুই সন্তান, স্ত্রী! শূন্যতা আগলে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় ‘একা’ যুবক
মধ্য গাজা দিয়ে শুরু হবে ওই টীকাকরণ কর্মসূচী। সেই হিসেবে প্রথমে মধ্য গাজায় তিন দিনের যুদ্ধবিরতি থাকছে। তার পর দক্ষিণ গাজায় চলে যাবে টীকাকরণের জন্য আসা স্বাস্থ্য দল। সেখান থেকে যাওয়ার কথা উত্তর গাজায়। প্রয়োজনে প্রতিটি জোনে বিরতি চতুর্থ দিন পর্যন্ত বাড়ানোর বিষয়ে একটি চুক্তি হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-এর ইমার্জেন্সি ডিরেক্টর মাইক রায়ান জানান, তাঁরা অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছেন, পোলিও টীকাকরণের কাজ সম্পূর্ণ করতে প্রায়শই অতিরিক্ত সময় লেগে যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রিক পিপারকর্ন জানিয়েছেন. প্রথম রাউন্ডের চার সপ্তাহ পরে দ্বিতীয় রাউন্ডের টিকা দিতে হবে। রায়ান আরও জানিয়েছেন, পোলিও প্রকোপ বন্ধ করতে এবং আন্তর্জাতিক স্তরে পোলিওর বিস্তার রোধ করতে প্রায় ৯০ শতাংশ কভারেজ প্রয়োজন।
গাজায় এখনও পোলিও প্রকোপ রয়েছে। যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জন্য যথেষ্ট উদ্বেগের। গত ২৩ অগস্ট গাজার একটি শিশুর শরীরে পোলিওর টাইপ টু ভাইরাসের খোঁজ মেলে। যা কার্যত গত ২৫ বছরে প্রথম। ফলে এই পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় ব্য়বস্থা না নিলে, ভবিষ্যতে পোলিও মাত্রা ছাড়াতে পারে গাজায়। সূত্রের খবর, এই পোলিও টিকাকরণের উদ্দেশে NoPV2 ভ্যাকসিনের ১.০৬ মিলিয়ন ডোজ গাজায় বিতরণ করা হয়েছে ইতিমধ্যেই, এখনও আরও ৪০০,০০০ ডোজ পৌঁছনো বাকি। প্রথম ধাপের টিকাকরণের পর চার সপ্তাহের মাথায় দ্বিতীয় ডোজটি শিশুদের মুখে দু'ফোঁটা করে না দিতে পারলে অসম্পূর্ণই থেকে যাবে এই টিকাকরণ। এদিকে, সে সময় যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
এই পরিস্থিতিতে হামাসের তরফে জানানো হয়েছে, তারা গাজা উপত্যকার ৬৫০,০০০-এরও বেশি ফিলিস্তিনি শিশুর সুরক্ষায় পোলিও বিরোধী অভিযানকে বাস্তবায়িত করতে সমস্ত রকমের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। অন্যদিকে, ইজরায়েলি সেনাবাহিনীর মানবিক ইউনিট (COGAT) -র তরফে জানানো হয়েছে, এই টিকাকরণ কর্মসূচীটি ইজরায়েলের সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে পরিচালনা করতে হবে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাকে। সেক্ষেত্রে তাদের কোনও আপত্তি নেই। এবং মানবিকতার কথা মাথায় রেখে তাই যুদ্ধবিরতিতেও রাজি তারা। সেই হিসেবে গাজাবাসীকে টিকাকরণ কেন্দ্র বা স্বাস্থ্য়কেন্দ্রে পৌঁছনোর অনুমতি দেবে ইজরায়েলি সেনা।
আরও পড়ুন: পৃথিবী আবার শান্ত হবে! গাজায় যুদ্ধবিধ্বস্ত কিশোরীদের স্বপ্ন দেখায় বক্সিং
এদিকে , গাজায় পোলিও টিকাকরণ কর্মসূচীকে সফল করতে জাতিসংঘের শিশু সংস্থা ইউনিসেফকে পাশে চেয়েছিল হু। এই পরিস্থিতিতে আমেরিকাও বারবার ইজরায়েলকে অনুরোধ করে, এ সময়টায় যুদ্ধে সাময়িক বিরতি টানার। সেই সমস্ত কিছু খতিয়ে দেখেই যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে নেতানিয়াহু বাহিনী। পোলিও টিকাকরণের মতো মানবিক কর্মসূচীতে মানবিক হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ইজরায়েল। অথচ এই ইজরায়েলের দৌলতেই হামাস শাসিত ছিটমহল এলাকায় মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার ফিলিস্তিনি মানুষের। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন প্রায় ২.৩ মিলিয়ন মানুষ। দেশ জুড়ে খাদ্যসঙ্কট চরমে। এমনকী আশপাশের দেশগুলি থেকে ত্রাণ সাহায্যের বিষয়েও চরম বাধার তৈরি করেছে ইজরায়েলে। আন্তর্জাতিক আদালতে গাজায় গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত ইজরায়েল। যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু।
ইজরায়েলকে বিশ্বাস নেই। এর আগে একবারই যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছিল তারা গাজায়। সেই সময়েও অতর্কিতে হামলা চালিয়ে গিয়েছে ইজরায়েলি সেনা। ফলে এই পোলিও টিকাকরণ অভিযোগকে কেন্দ্র করেও যে তেমনই কোনও সুযোগের অপেক্ষায় নেই নেতানিয়াহু সেনা, তা হলফ করে বলতে পারছেন না ওয়াকিবহাল মহল।