কারা, কীভাবে তুলেছিলেন ভারতের প্রথম সেলফি? তাক লাগাবে ১৮৮০ সালের এই ইতিহাস

First Indian Selfie: ১৮৮০ সালের দিকে তোলা এই ছবিতে রাজা ও রানিকেই দেখা যাচ্ছে ঘনিষ্ঠ আলিঙ্গনে।

নিজের ছবি নিজেই তোলা। হাতে মোবাইল ক্যামেরা মানে তার গ্যালারি জুড়ে নিজের নানা মুখভঙ্গির ছবি। যে মানুষটি খুব কম মোবাইল ব্যবহার করেন তারও ফোনে একটি অন্তত সেলফি থাকবেই। উপরে, নিচে, বাঁয়ে, ডাঁয়ে ফোন ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সে এক শিল্প!। স্মার্টফোন কেনার অন্যতম চাহিদাই এখন ভালো ক্যামেরা থাকা। ২০১৩ সালে, অক্সফোর্ড অভিধান 'সেলফি'কে বছরের সেরা শব্দ হিসাবে ঘোষণা করেছিল। নিজের ছবি নিজে তোলার মধ্যে কতখানি আত্মরতি, কতখানি আত্মকেন্দ্রিকতা আছে, সে তর্ক অন্য বিষয়। কিন্তু আপনি কি জানেন ভারতের প্রথম সেলফি কারা তুলেছিলেন? কবেই বা তোলা হয় সেই ছবি?

ভারতের প্রথম ‘সেলফি’

ইতিহাস বলছে, ১৯ শতকের মহারাজা বীর চন্দ্র মাণিক্য এবং মহারানি খুমান চানু মনমোহিনী দেবীর গল্পেই লুকিয়ে আছে ভারতীয় নিজস্বীর ইতিহাস। এই রাজ দম্পতি শিল্পকলা এবং ফটোগ্রাফির প্রতি ভীষণই অনুরাগী ছিলেন। মহারাজা বীর চন্দ্র মাণিক্যের একটি ক্যামেরাও ছিল। সেই যুগে নিজস্ব ক্যামেরা থাকা দ্বিতীয় রাজা ছিলেন তিনিই। প্রথমজন ছিলেন ইন্দোরের রাজা দীনদয়াল।

আরও পড়ুন- দেশভাগ, উদ্বাস্তু জীবন, যাদের ছবি ধরা রইল না ক্যামেরার লেন্সে

মহারাজা বীর চন্দ্র মাণিক্যের ফটোগ্রাফির প্রতি যেমন ভালোবাসা ছিল, তেমনই আগ্রহ ছিল স্থাপত্যে। ভারতীয় স্থপতি হিসেবে আধুনিক আগরতলা পরিকল্পনার কৃতিত্ব তাঁরই। একজন চিন্তাশীল রাজা হিসেবে ত্রিপুরায় সংস্কৃতির পর্যপ্ত পৃষ্ঠপোষকতা করতেন তিনি। মানুষকে নতুন ধারণা নিয়ে চিন্তা করতে উৎসাহিত করতেন। তিনিই ভারতের প্রথম 'সেলফি' তুলেছিলেন। মহারাজা বীর চন্দ্র মাণিক্য এবং মহারানি খুমান চানু মনমোহিনী দেবীর এই সেলফিই ভারতের প্রথম নিজস্বী।

১৮৮০ সালের দিকে তোলা এই ছবিতে রাজা ও রানিকেই দেখা যাচ্ছে ঘনিষ্ঠ আলিঙ্গনে। খুব ভালো করে ক্ষতি দেখলেই বোঝা যাবে রাজার হাত ডানদিকে একটি ছোট যন্ত্র ধরে আছে। যন্ত্রটি খানিক লিভারের মতো কাজ করে। এটি ক্যামেরার সঙ্গে একটি লম্বা তার দিয়ে সংযুক্ত। লিভার টানলেই ছবি তোলা যাবে। এই পদ্ধতিতেই রাজা ও রানি দু'জনের মধ্যকার সুন্দর মুহূর্তটিকে ক্যামেরাবন্দি করেন, কোনও চিত্রগ্রাহকের উপস্থিতি ছাড়াই।

আরও পড়ুন- ‘সত্যজিৎ রায়ের ক্যামেরাম্যান’ হয়ে রয়ে গেলেন, যে সুব্রত মিত্রকে চিনল না বাঙালি

দ্য হিন্দুকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে প্রয়াত মহারাজার বংশধর এম কে প্রজ্ঞা দেব বর্মণ জানান, মহারাজা এবং তাঁর স্ত্রী দু'জনেই শিল্প ও ফটোগ্রাফির অনুরাগী ছিলেন। এই জুটিই শিল্পের সঙ্গে ত্রিপুরার ঐতিহাসিক বন্ধনের ভিত্তি স্থাপন করেন। কিন্তু একটা প্রশ্ন থেকেই যায়। ভারতীয় সমাজে ছবি তোলা সেই সময় বিরল ঘটনা ছিল। তাহলে কীভাবে ছবি তোলার কাজটি সম্পন্ন হলো?

যে যুগের কথা হচ্ছে, ক্যামেরা দেশে এলেও তা ছিল বিলাসিতাই। ইউরোপীয়রা বড় শহরে ফটোগ্রাফি ক্লাব তৈরি করলেও ভারতীয়দের সাধারণত এইসব জায়গায় দেখাও যেত না। মহারাজা বীর চন্দ্র রানির ছবি তুলতে খুব পছন্দ করতেন। তাই তিনি নিজেই একটি 'ডার্ক রুম' তৈরি করেন যেখানে তিনি ছবিগুলি রিল থেকে ডেভেলপ করতে পারবেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রাজা স্টুডিওতে বিভিন্ন ধরনের পর্দা ও নানা জিনিসের ব্যবস্থাও করেন। মহারাজা চাইতেন যে তার রানিও ছবি তোলা ও বাকি কৌশল শিখুন। মহারাজা বীরচন্দ্র আগরতলার প্রাসাদের একটি ক্যামেরা ক্লাবও স্থাপন করেন, এখানেই তাঁর তোলা ছবি প্রদর্শন করতেন তিনি। অনেক পরে, এই 'সেলফি'-টি মহারাজা এঁকেওছিলেন এবং প্রায়ই ত্রিপুরার নানা প্রদর্শনীতে তা দেখা যায়।

More Articles