হিন্ডেনবার্গের চাঞ্চল্যকর রিপোর্টে নাম এই ভারতীয় কন্যার, কী তাঁর আসল পরিচয়, জানেন?

Amrita Ahuja Hindenburg Report : হিন্ডেনবার্গের সাম্প্রতিক যে রিপোর্ট চাঞ্চল্য ফেলে দিয়েছে, তাতেই রয়েছে সেই ভারতীয় মহিলার নাম। কে তিনি?

ফের একবার সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ। মাত্র কয়েক মাস আগেই গৌতম আদানি এবং তাঁর আদানি গ্রুপকে নিয়ে বিস্ফোরক রিপোর্ট বার করেছিল তারা। জানুয়ারির শেষের দিকের সেই ঘটনা যাতে আর না হয়, সেটাই মনেপ্রাণে চাইবেন আদানিরা। কিন্তু হিন্ডেনবার্গের দুই বছর ধরে চলা সেই গবেষণার ফলে আদানির শেয়ার এক ধাক্কায় অনেকটা পড়ে যায়। কারচুপি আর শেয়ার দরে জালিয়াতি করার এই অভিযোগের ভিত্তিতে রাতারাতি কয়েক হাজার কোটি টাকার লোকসান হয় আদানির। বিশ্বের তৃতীয় ধনী ব্যক্তির জায়গা থেকেও সরে গিয়েছেন।

এখন ফের বোমা ফাটাল আমেরিকার এই সংস্থা। এবার অবশ্য তাদের লক্ষ্য জ্যাক ডোরসি। গোটা বিশ্ব যাকে চেনে জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া টুইটারের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে। তবে কেবল টুইটারই নয়, আরও অনেকরকম ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন জ্যাক ডোরসি। সেরকমই তাঁর একটি সংস্থা হল ব্লক ইঙ্ক। এই পেমেন্ট ফার্মের বিরুদ্ধেই মূলত মুখ খুলেছে হিন্ডেনবার্গ। তাদের দাবি, এই সংস্থায় বিস্তর কারচুপি ও জালিয়াতির ঘটনা রয়েছে। এখানেও দু’বছর গবেষণা করার পর সমস্ত তথ্যপ্রমাণ নিয়ে হাজির হয়েছে তারা। বক্তব্য, ব্লক সংস্থার ৪০ থেকে ৭৫ শতাংশ অ্যাকাউন্টই নাকি ভুয়ো! খোদ সংস্থার প্রাক্তন কর্মীরাই নাকি এমনটা জানিয়েছেন। সেইসঙ্গে গ্রাহকদের পেছনে খরচের অঙ্কটিও কমিয়ে দেখানো হয়েছে ব্লক সংস্থার তরফ থেকে।

এভাবেই একটু একটু করে নিজেদের শেয়ার দর বাড়িয়েছে ব্লক ইঙ্ক নামের সংস্থাটি। আর এই জালিয়াতি, কারচুপির সঙ্গে জড়িয়ে গেল এক ভারতীয়ের নামও। হিন্ডেনবার্গের সাম্প্রতিক যে রিপোর্ট চাঞ্চল্য ফেলে দিয়েছে, তাতেই রয়েছে সেই মহিলার নাম। অমৃতা আহুজা, পেশায় ব্লক ইঙ্ক সংস্থার সিওও এবং সিএফও (Chief Operating Officer and Chief Financial Officer)। অনেক অল্প বয়স থেকেই তাঁর নাম ব্যবসায়িক মহলে প্রসিদ্ধ। একটু একটু করে নিজের জায়গা তৈরি করেছেন তিনি। হঠাৎ কেন হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টে তাঁর নাম উঠে এল? ব্যাপারটাই বা কী?

গোড়া থেকে শুরু করা যাক। অমৃতা আহুজা আদতে প্রবাসী ভারতীয়। আমেরিকারই বাসিন্দা তিনি। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের রিপোর্ট অনুযায়ী, ক্লিভল্যান্ডেই নিজের মা-বাবার সঙ্গে থাকতেন তিনি। তাঁদের পরিবারে একটি ছোট্ট ডে-কেয়ার ব্যবসা আছে। সেখান থেকেই একটু একটু করে বেড়ে ওঠা। ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে স্নাতক এবং পরে পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ-ও করেছেন তিনি। ওয়াল্ট ডিজনি, ব্লিজার্ড এন্টারটেইনমেন্ট, ফক্স নেটওয়ার্কস, মরগ্যান স্ট্যানলির মতো বিখ্যাত ও বড় প্রতিষ্ঠানে সাফল্যের সঙ্গে কাজ করেছেন অমৃতা। এমনকী, ২০২১ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিনের ৫০ ওভার ৫০ লিস্টেও জায়গা করে নিয়েছিলেন অমৃতা আহুজা।

রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৮ সালে তিনি জ্যাক ডোরসির ব্লক সংস্থায় চিফ ফাইনান্সিয়াল অফিসার বা সিএফও হিসেবে যুক্ত হন। তাঁর কাজ নিয়ে সবাই সন্তুষ্ট। কিন্তু হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টে তাঁর নাম উঠে এল কেন? প্রথমত সিএফও হওয়ার দরুন সংস্থার যাবতীয় হিসেবনিকেশ, আর্থিক মন্দা কিংবা ভালো অবস্থা দেখার দায়িত্ব তাঁর। অমৃতা আহুজাকে এড়িয়ে নিশ্চয়ই কোনও কাজ হওয়ার কথা নয়। আর তিনি যে নিজের কাজে সিদ্ধহস্ত, সেটা তাঁর জীবনপঞ্জি দেখলেই জানা যায়। তাহলে তাঁর উপস্থিতিতে কী করে এমন কাজ হল? কী করে কারচুপি হল?

তাহলে কি অমৃতাও এই কাজের সঙ্গে যুক্ত? স্পস্ত করে সেই ইঙ্গিত না দিলেও, হিন্ডেনবার্গের মতে, অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্তার মতো অমৃতাও ব্লকের স্টকে কয়েক মিলিয়ন ডলার ঢেলেছেন। এভাবেই কৃত্রিমভাবে শেয়ার স্টককে বাড়ানো হয়েছে। হিন্ডেনবার্গ রিপোর্ট প্রকাশের পরই ব্লকের শেয়ার বাজারে ধস নেমেছে। ২০ শতাংশ পড়ে গিয়েছে সেই স্টক। এখন পরবর্তী পরিস্থিতি কী হবে, সেদিকেই নজর বিশ্বের বাণিজ্য দুনিয়ার।

More Articles