আরএসএস-এর বিশ্বস্ত দিল্লির চতুর্থ মহিলা মুখ্যমন্ত্রী! কে এই রেখা গুপ্ত?

Rekha Gupta Delhi CM: ২০০২ সালে বিজেপিতে সরাসরি যোগ দেন রেখা গুপ্ত এবং ভারতীয় জনতা যুব মোর্চার দিল্লি ইউনিটের সম্পাদক হন। পরবর্তীকালে তিনি এই সংগঠনের জাতীয় সম্পাদক পদে উন্নীত হন।

সুষমা স্বরাজ, শীলা দীক্ষিত, আতিশী মারলেনার পর, আবার রাজধানী দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী একজন মহিলা। দিল্লিকে আম আদমি পার্টির হাত থেকে ছিনিয়ে নেওয়া বিজেপির কাছে নিঃসন্দেহে এক বড় অর্জন। ডবল ইঞ্জিন সরকারের তালিকায় দিল্লির নয়া সংযোজন সারা ভারতের রাজনীতিতেই দক্ষিণপন্থীদের জন্য বিশেষ গুরুত্বের। আর এই গুরুত্বপূর্ণ আসনের চালকের ভূমিকায় কাকে নিয়োগ করা হবে, তাও এক বিশাল সিদ্ধান্ত ছিল। দিল্লির রাশ কার হাতে দিতে চাইবেন মোদি-শাহরা? এমন আসনে কোন বিশ্বস্ত মুখকে নিয়ে আসতে চাইবে বিজেপি নেতৃত্ব? বুধবার সন্ধ্যায়, জানা গেল রেখা গুপ্ত হচ্ছেন দিল্লির পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী। বিজেপি প্রচার করছে, নারীশক্তির কথা। ভারতে মহিলাদের কতখানি সম্মান দেওয়া হয় সেই কথা। সেই কথা বাস্তবে কতখানি মর্যাদা পায় সেই বিতর্কে না গিয়ে রেখা গুপ্তকে মনোনীত করার কারণগুলি খতিয়ে দেখা যাক।

মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তর স্বামী মণীশ গুপ্ত পেশায় একজন ব্যবসায়ী। শ্বশুরবাড়ির সকলেই বিজেপি নেত্রীর এই উত্থানে চমৎকৃত! শাশুড়ি মীরা গুপ্ত মিষ্টি বিতরণ করেছেন, বলেছেন, “আম আদমি পার্টি যা করতে পারেনি, ও তা করবে। ও একজন ভালো পুত্রবধূ এবং একজন ভালো মুখ্যমন্ত্রী হিসেবেও নিজেকে প্রমাণিত করবে।” দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে ৭০টি আসনের মধ্যে ৪৮টি আসনে জয়ী হয়ে বিজেপি ২৬ বছর পর জাতীয় রাজধানীতে ক্ষমতায় ফিরে এসেছে। শালিমারবাগের প্রথমবারের বিধায়ক এবং একজন অভিজ্ঞ পৌর কাউন্সিলর রেখা গুপ্ত হবেন দিল্লির চতুর্থ মহিলা মুখ্যমন্ত্রী। বর্তমানে বিজেপি-শাসিত রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রী হবেন তিনিই।

আরও পড়ুন- ২৭ বছর পর বিজেপির প্রত্যাবর্তন! কেন দিল্লিতে হারল কেজরিওয়ালের দল?

বছর পঞ্চাশের রেখা গুপ্তর জন্ম হরিয়ানার জিন্দ জেলার নন্দগড় গ্রামে। বাবা-মা যখন পাকাপাকি দিল্লিতে চলে আসেন তখন রেখার বয়স মাত্র দুই। বাবা কাজ করতেন স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়াতে। ১৯৯৩ সালে দৌলত রাম কলেজে রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয় রেখার। আরএসএস-এর অধীনস্থ ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদে যোগ দেন রেখা। ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত দিল্লি ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (DUSU)-এর সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন রেখা। ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৭ সাল অবধি তিনি ছিলেন এর সভাপতি। বাণিজ্য বিভাগেই তাঁর পড়াশোনা। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবস্থাপনা এবং কলাবিভাগে স্নাতকোত্তর পড়াশোনা করেছেন তিনি। বিজেপি নেত্রী রেখা গাজিয়াবাদের একটি আইন কলেজ থেকে আইনে স্নাতকও হন পরবর্তীতে। মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তর দুই সন্তান। কন্যা অস্ট্রেলিয়ায় স্নাতকোত্তর পাঠরত, ছেলে তামিলনাড়ুর ভেলোরে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছেন।

 

২০০২ সালে বিজেপিতে সরাসরি যোগ দেন রেখা গুপ্ত এবং ভারতীয় জনতা যুব মোর্চার দিল্লি ইউনিটের সম্পাদক হন। পরবর্তীকালে তিনি এই সংগঠনের জাতীয় সম্পাদক পদে উন্নীত হন। ২০০৫ সাল পর্যন্ত এই পদেই ছিলেন তিনি। রেখা গুপ্ত দিল্লি বিজেপির মহিলা মোর্চার সাধারণ সম্পাদক, বিজেপি মহিলা মোর্চার জাতীয় ভাইস-চেয়ারপার্সন, উত্তরপ্রদেশ মহিলা মোর্চার জাতীয় ইনচার্জ এবং বিজেপি জাতীয় কার্যনির্বাহী সদস্য হিসাবেও কাজ করেছেন।

২০০২ সালে বিজেপির যুক্ত হলেও নির্বাচনী রাজনীতিতে রেখার প্রবেশ ২০০৭ সালে। উত্তর পিতামপুরা ওয়ার্ড থেকে দিল্লি মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন (এমসিডি) নির্বাচনে জয়লাভ করেন তিনি এবং মহিলা কল্যাণ ও শিশু উন্নয়ন কমিটির চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হন। পাঁচ বছর পরে এই একই ওয়ার্ড থেকে আবারও নির্বাচিত হন রেখা এবং এমসিডির শীর্ষ আর্থিক সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থার স্থায়ী কমিটির ভাইস-চেয়ারপার্সন হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১২ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত, তিনি নতুন দিল্লি মিউনিসিপ্যাল কাউন্সিলের (NDMC) শিক্ষা সচিবের চেয়ারপার্সন হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

আরও পড়ুন- “দিল্লি এসো শিগগির”! ইন্দিরার নির্দেশ না মেনে ভোটে লড়েন প্রণব মুখোপাধ্যায়! পরিণাম?

২০১৫ সালে প্রথম বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন রেখা। সেবার আম আদমি পার্টির প্রার্থী বন্দনা কুমারীর কাছে ১০,৯৭৮ ভোটে হেরে গিয়েছিলেন। পাঁচ বছর পর, আবারও বন্দনা কুমারীর কাছেই হেরে যান তিনি। তবে সেবার হারের ব্যবধান কমে গিয়ে হয় ৩,৪৪০ ভোট। ২০২২ সালে রেখা গুপ্ত আবার MCD নির্বাচনে লড়েন এবং শালিমারবাগ ওয়ার্ড থেকে জয়ী হন। এমসিডি-র মেয়র নির্বাচনের জন্য বিজেপি রেখা গুপ্তকে মনোনীত করেছিল ঠিকই কিন্তু আপ-এর শেলি ওবেরয়ের কাছে হেরে যান তিনি। এবছর বিধানসভা নির্বাচনে বন্দনা কুমারীর বিপরীতে আবার রেখাকেই প্রার্থী করে বিজেপি। এবার ২৯,৫৯৫ ভোটে জয়ী হন রেখা।

দীর্ঘ বহু বছর ধরে রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় রেখা। এবিভিপি এবং আরএসএস-এর সঙ্গে যুক্ত থাকায় ছাত্র রাজনীতি থেকেই তাঁর উত্থান, যা সাংগঠনিক নেতৃত্বে তাঁর পথ প্রশস্ত করতে সাহায্য করেছে। দিল্লির রাজনৈতিক মহল বলছে, দীর্ঘকাল ধরে মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন সামলানোর ফলে জনগণের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের জায়গা তৈরি হয়েছিল রেখার। মানুষের অভাব-অভিযোগ শুনতেন খতিয়ে। ফলে আপ-এর শাসনে কোন কোনও ফাঁক দিয়ে আক্রমণ করা যায়, মানুষের সঙ্গে আম আদমি পার্টির দূরত্ব কোথায় বাড়ছে, তা ছিল তাঁর নখদর্পণে।

More Articles