কারও পকেটে ৭০০ কোটি তো কারও ৩০ হাজার! মোদি-মন্ত্রিসভার সবচেয়ে ধনী ও দরিদ্রতম সদস্য কারা জানেন?
Modi cabinet 3.O: একদিকে যেখানে মোদির মন্ত্রিসভায় রয়েছে চন্দ্রশেখর পেম্মাসানির মতো ধনীতম ব্যক্তি, তেমনই রয়েছে আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা মন্ত্রীও। খাতায়-কলমে যার সম্পত্তির পরিমাণ সবচেয়ে কম।
মোদির মন্ত্রিসভা ঘোষণা হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। কার কাঁধে যাচ্ছে কোন দলের দায়িত্ব, তা-ও এদ্দিনে স্পষ্ট। লোকসভা ভোটে জিতলেও এবার একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি বিজেপি। ফলে সরকার গড়ার জন্য এনডিএ জোটের শরিকদের উপর বেশি ভরসা করতে হয়েছিল গেরুয়া শিবিরকে। যে কারণে তাদের দাবিদাওয়া চাহিদা মেনেই মন্ত্রিসভা সাজাতে হয়েছে বিজেপিকে।
রবিবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রধানমন্ত্রী মোদী-সহ ৭২ জন সাংসদ রাষ্ট্রপতি ভবনে মন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন। তাঁদের মধ্যে ৩০ জন পূর্ণমন্ত্রী। বাকিরা কেউ প্রতিমন্ত্রী, কেউ আবার স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছেন। তার মধ্য়ে বহু মুখই চেনা। বেশিরভাগ চেনা কাঁধেই পরিচিত দফতরের দায়িত্ব রাখতে চেয়েছে গেরুয়া শিবির। মেরুকরণের রাজনীতির সমীকরণ মেনেই এবার মন্ত্রিসভায় জায়গা পাননি একজন মুসলিম সাংসদও। তার মধ্যেই শরিকদের দাবিদাওয়া পূরণ, সহজ ছিল না। তা-ও সমস্ত শর্ত মেনে তৃতীয়বার ক্ষমতায় এসেছে এনডিএ জোট।
আরও পড়ুন: স্বাধীনতার পর এই প্রথম! দেশের মন্ত্রিসভায় ঠাঁই হল না একজন মুসলিম সাংসদেরও
তবে মোদির মন্ত্রিসভায় সবচেয়ে ধনীতম সাংসদের পরিচয় জানলে চমকে উঠতেই হয়। না, তিনি অবশ্য সরাসরি বিজেপির সদস্য নন। বরং এনডিএ জোটের শরিক দলের সদস্য তিনি। এবারের লোকসভা ভোটের পর সরকার গড়ার বিষয়ে কিংমেকারের জায়গায় ছিলেন অন্ধ্রপ্রদেশের তেলুগু দেশম পার্টি (টিডিপি)। এনডিএ-র অন্যতম শরিক দল তারা। এ বারের লোকসভা নির্বাচনে ১৬টি আসন পেয়েছে চন্দ্রবাবু নায়ডুর দল। একগুচ্ছ মন্ত্রিত্ব ও পদের দাবি জানিয়ে রেখেছিল তারা। তবে মোদির মন্ত্রিসভায় জায়গা পেয়েছেন টিডিপির মাত্র দুই নেতা।
রবিবার মন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন অন্ধ্রপ্রদেশের টিডিপি-র দুই সাংসদ। এক জন পূর্ণমন্ত্রী এবং এক জন প্রতিমন্ত্রী। টিডিপি নেতা কে রামমোহন নায়ডু মন্ত্রী হয়েছেন তৃতীয় মোদী সরকারের মন্ত্রিসভায়। অন্যজন হয়েছেন প্রতিমন্ত্রী। রবিবার প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন চন্দ্রশেখর পেম্মাসানি। এই চন্দ্রশেখরই এখন চর্চার কেন্দ্রে। অন্ধ্রপ্রদেশের গুন্টুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে এ বার টিডিপি-র টিকিটে লড়েছিলেন চন্দ্রশেখর। তিনি প্রায় সাড়ে তিন লাখ ভোটে হারিয়েছেন জগন্মোহন রেড্ডির দল ওয়াইএসআরসিপি-র প্রার্থী কিলারি ভেঙ্কটা রোয়াইয়াকে। কিন্তু কেন তাঁকে নিয়ে এত আলোচনা? কারণ মোদি মন্ত্রিসভার ধনীতম সাংসদ ও সদস্য তিনি।
গুন্টুরেরই বাসিন্দা চন্দ্রশেখর। সেখানকার বুরিপালেম গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ৪৮ বছর বয়সি এই রাজনীতিবিদ পেশায় চিকিৎসক। ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিবিএস পাশ করেন চন্দ্রশেখর। তার পর পাড়ি দেন বিদেশে। জন্স হপকিন্স ইউনিভার্সিটি এবং লিনাইল হাসপাতালে পাঁচ বছর প্র্যাকটিস করেছেন চন্দ্রশেখর। এ ছাড়াও ডাক্তারি পড়ুয়াদের পড়াতেন তিনি। পাশাপাশি অনলাইন লার্নিং প্ল্যাটফর্মও তৈরি করেছিলেন চন্দ্রশেখর। নাম ‘ইউ ওয়ার্ল্ড’। বর্তমানে সেই সংস্থার সিইও তিনি। আমেরিকাতে থাকতেই সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত হন চন্দ্রশেখর। তাঁর পরিবার বরাবরই চন্দ্রবাবু নায়ডুর দলের সমর্থক। টিডিপি এনআরআই সেলের সক্রিয় সদস্য ছিলেন তিনি। আমেরিকায় থাকতেই বিভিন্ন দলীয় অনুষ্ঠান আয়োজন করতেন চন্দ্রশেখর। ২০২০ সালে আমেরিকায় থাকাকালীন তরুণ উদ্যোক্তা হিসাবে পুরস্কারও জেতেন তিনি। ‘আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়ং’ অ্যাওয়ার্ডও পান। এ ছাড়াও পেন্নাসানি ফাউন্ডেশন নামে একটি সংস্থার প্রতিষ্ঠা করেন চন্দ্রশেখর। যারা বিভিন্ন স্বাস্থ্যশিবির আয়োজন করে থাকে। শুধু তা-ই নয়, বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে পানীয় জল সরবরাহ করে থাকে তারা।
২০১৪ সাল থেকে গুন্টুর লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ পদে ছিলেন জয় গাল্লা। তবে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে আচমকাই রাজনীতি ছাড়েন তিনি। তাঁর ছেড়ে যাওয়া আসনে টিডিপি প্রার্থী করে চন্দ্রশেখরকে। এবং সেই আসন থেকে জিতেও যান চন্দ্রশেখর। বর্তমানে তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ পাঁচ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। ভোটাধিকার সংস্থা অ্যাসোসিয়েশন অফ ডেমোক্রেটিক রিফর্মস বা এডিআর-এর দেওয়া দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চন্দ্রশেখরই দেশের ধনীতম মন্ত্রী। এডিআর-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে আট হাজার ৩৬০ জন প্রার্থী হয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সম্পত্তি রয়েছে চন্দ্রশেখরেরই। শুধু নিজের সম্পত্তিই নয়। পারিবারিক সম্পত্তিও কম নয় চন্দ্রশেখরের। আর তাঁর আর্থিক ভাবে এগিয়ে থাকার নেপথ্যে আসলে রয়েছে সেটাই বলে দাবি একাংশের।
আরও পড়ুন:মোদির মন্ত্রিসভা ৩.০ তৈরি! মন্ত্রিত্বে কারা? পদ খোয়ালেন কারা?
একদিকে যেখানে মোদির মন্ত্রিসভায় রয়েছে চন্দ্রশেখর পেম্মাসানির মতো ধনীতম ব্যক্তি, তেমনই রয়েছে আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা মন্ত্রীও। খাতায়-কলমে যার সম্পত্তির পরিমাণ সবচেয়ে কম। তবে তিনিও কিন্তু সরাসরি বিজেপি শিবিরের নন। আর্থিক ভাবে দুর্বলতম সদস্যটিও রয়েছে এনডিএ শিবিরে। এবং মোদির তৃতীয় জমানার মন্ত্রিসভায় জায়গা মন্ত্রীও হয়েছেন তিনি। তিনি বিহারের হিন্দুস্তানী আওয়াম মোর্চার প্রেসিডেন্ট জীতন রাম মাঝি। তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণই নাকি ৩০ হাজার। ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্প মন্ত্রকের দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি। তার পরে গরিব সাংসদের মধ্যে রয়েছেন তেলঙ্গানার বিজেপি সাংসদ বান্দি সঞ্জয় কুমার, উত্তরাখণ্ডের বিজেপি সাংসদ অজয় তামতা, পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি সভাপতি ও সাংসদ সুকান্ত মজুমদার ও অসমের বিজেপি সাংসদ পবিত্র মার্গেরিটা। এদের সকলের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১ থেকে দেড় লক্ষের মধ্যে। অন্তত ভোটের আগে দেওয়া হলফনামায় তো তেমনটাই জানিয়েছেন তাঁরা।