ব্যোমকেশ বা প্রদোষ মিত্র নয়! মহাকাশের রহস্যভেদে প্রস্তুত এবার যন্ত্রমানবী ব্যোমমিত্র

Vyommitra, Gaganyaan Mission: মহাকাশের বন্ধু হয়ে মহাকাশ গবেষণার জন্য সত্য খুঁজে বের করে আনাটাই আপাতত কাজ ব্যোমমিত্রের। আর এবার ইসরোর গগনযান মিশনের পরীক্ষামূলক সফরের সঙ্গী হতে চলেছে এই ব্যোমমিত্র।

মহাকাশ থেকে নেমে এসেছিল ভিনগ্রহের বাসিন্দা একরাতে। তারপর! সাহিত্য, সিনেমায় এমন অনেক তারপরের সাক্ষী থেকেছে পাঠক-দর্শক। তবে মহাকাশ গবেষণায় যে হারে এগোচ্ছে ভারত, খুব শিগগিরই যে অন্য কোনও গ্রহে ভিনগ্রহী হয়ে ঢুকে পড়বে না পৃথিবীর মানুষ, তা কিন্তু গ্যারান্টি নিয়ে বলা যাচ্ছে না।

চাঁদের মাটি সদ্য ছুঁয়েছে ভারত। গড়েছে রেকর্ড। গোটা বিশ্বের কাছে নিজেদের অবস্থানকে আরও পাকাপোক্ত করে তুলেছে এই সাফল্য। আসলে শুধুমাত্র জনসংখ্যা কিংবা রাজনীতির নিক্তিতে তো আর দেশ এগোয় না। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যায় তার বিজ্ঞানসাধনা। মহাকাশ গবেষণা নিয়ে বরাবরই একটা ঠান্ডা লড়াই চলেছে বড় দেশগুলির মধ্যে। সেখানে চতুর্থ দেশ হিসেবে চাঁদের মাটি স্পর্শ করেছে ভারত। এ এক গর্ব তো বটেই। তার উপর ভারতই প্রথম দেশ, যারা চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পা রেখেছে। চন্দ্রাভিযানের এই সাফল্যের পর স্বাভাবিক ভাবেই বেড়েছে প্রত্যাশা। চাঁদ তো হল! এর পরবর্তী ধাপ কী হতে চলেছে?

আরও পড়ুন: চাঁদের পর সূর্য ধরার পালা! আদিত্য এল ১ ঠিক কী করতে চলেছে সূর্যকে নিয়ে?

চাঁদের পর কি তবে সূর্য। সেই অজেয় নক্ষত্র, যার আজ পর্যন্ত নাগাল পায়নি মানুষ। তবে এবার সেই দু্র্জ্ঞেয়কেই জয় করবে ভারত। ইতিমধ্যেই ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) জানিয়েছে, সামনের সপ্তাহেই সূর্যে পাড়ি দিতে চলেছে তাঁরা। ইসরোর তরফে মঙ্গলবারই চূড়ান্ত দিনক্ষণ ঘোষণা করা হয়েছে। শুধু সূর্যই নয়, এর পর একের পর এক মিশন ঠিক করে রেখেছে তারা। চন্দ্র, সূর্যের পরই মহাকাশে মানুষ পাঠাবে ইসরো। তবে মানুষ পাঠানোর আগে একটা পরীক্ষামূলক মহাকাশযান পাঠাতে চায় তারা। সেই মহাকাশযানেও মানুষ থাকবেন, কিন্তু তিনি পুরোটা মানুষ নন। আর সেই পুরোটাই মানুষের মতো, অথচ মানুষ নয়, তাঁকে নিয়েই হইচই পড়ে গিয়েছে দুনিয়ায়।

পরনে নীল শাড়ি, গলাবন্ধ ফুলহাতা ব্লাউড। কখনও বা একদম অফিস ক্যাজুয়াল। কাঁধ ছাপিয়ে ঘাড়ে নেমেছে কালো চুলের ঢেউ। পরিপাটি করে কাটা সিঁথি, সুন্দর করে আঁচড়ানো চুল। শাড়ির সঙ্গে কপালে ম্যাচিং টিপ, হালকা লিপস্টিক, মাসকারা চোখে এই আবেদনময়ীকে দেখে আচমকা ভুল হতে পারে। কেউ কেউ অবলীলায় মনও দিয়ে ফেলতে পারেন ভারতীয় এই কন্যাকে। কিন্তু তিনি কি দেবেন মন? না কারণ তাঁর মন পড়ে মহাকাশে। তাঁর ভিতরে মহাকাশ ছাড়া অন্য কোনও প্রোগ্রাম, অন্য কোনও স্বপ্নের বীজ বপন করেননি ইসরোর বিজ্ঞানীরা।

তিনি ব্যোমমিত্র। এ যেন ব্যোমকেশ বক্সি আর প্রদোষ চন্দ্র মিত্রের অপূর্ব এক সংমিশ্রন। তবে ছক ভেঙে তিনি মহিলা। তাঁরও কাজ সত্যান্বেষণ। মহাকাশে পৌঁছে তেমনই সত্য খুঁজে আনতেই তৈরি করা হয়েছে ব্যোম মিত্র নামে এই যন্ত্রমানবীকে। আরও একটি অর্থ রয়েছে এই নামের। ব্যোম শব্দের আভিধানিক অর্থ মহাকাশ, এবং মিত্র শব্দের মানে বন্ধু। অর্থাৎ মহাকাশের বন্ধু। অন্য দিক থেকে দেখতে গেলে সে নামও মিথ্যা নয়। মহাকাশের বন্ধু হয়ে মহাকাশ গবেষণার জন্য সত্য খুঁজে বের করে আনাটাই আপাতত কাজ ব্যোমমিত্রের। আর এবার ইসরোর গগনযান মিশনের পরীক্ষামূলক সফরের সঙ্গী হতে চলেছে এই ব্যোমমিত্র।

২০২১ সালে প্রথমবার দুনিয়ার সামনে আত্মপ্রকাশ করে যন্ত্রমানবী ব্যোমমিত্র। হিউম্যান স্পেসফ্লাইট ও গবেষণার জন্যই তৈরি করা হয়েছে এই যন্ত্রমানবীকে। রূপে যেমন লক্ষ্মী, গুণেও তেমনই সরস্বতী এই ব্যোমমিত্র। কী কী পারেন তিনি? মহাকাশযানের ভিতরে বসে মডিউল প্যারামিটারের মাধ্যমে সমস্ত কিছু পর্যবেক্ষণ করা, খবরাখবর পাঠানো, এমনকী আপৎকালীন পরিস্থিতি সামলানোর মতো অনেক প্রোগ্রামই ঢেলে দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা ব্যোম মিত্রের মাথায়। মানব মহাকাশযাত্রীদের সঙ্গে লাগাতার কথাবার্তা চালানো, তাঁদের কথার উত্তর দেওয়া, তাঁদের চিনতে পারার মতো অনেককাজই জলভাত তার কাছে। মহাকাশে মানুষের টিকে থাকতে যাতে কোনও রকম সমস্যা না হয়, তা-ও নিশ্চয় করবে এই মহাকাশ-যন্ত্রমানবী।

গগনযান মিশনে অবশ্য মহাকাশচারীদের নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে ইসরোর। তিন জন সদস্যকে নিয়ে চারশো কিলোমিটার দূরের এক কক্ষপথে পৌঁছবে সেটি। থাকবে তিনদিন। তারপর নিরাপদে মহাকাশচারীদের নিয়ে পৃথিবীর বুকে ফিরে আসবে গগনযানটি। এর আগেও এমন অনেকগুলি মিশনের কথা ভাবা হয়েছে, পরিকল্পনা হয়েছে। তবে মানুষকে নিয়ে অভিযানের ক্ষেত্রে বহু রকম ঝুঁকি থেকে যায়। সেই ঝুঁকিগুলি থেকে শিক্ষা নিতেই এমন একটি অভিযানের পরিকল্পনা করেছে ইসরো। এর থেকে মানুষ নিয়ে অভিযানের পথ আরও সুগম হবে বলেই মনে করছে অভিজ্ঞমহল।

তৃতীয় বারের চেষ্টায় চাঁদে পা রাখতে পেরেছে ভারত। বাকি দুবারের ব্যর্থতাই আসলে আজকের এই সাফল্যের পথ বুনে দিয়েছে একটু একটু করে। আর সেই পথেই মহাকাশে যাওয়ার জন্য তৈরি ব্যোমমিত্র। ইতিমধ্যেই ব্যোমকে নিয়ে তীব্র উত্তেজনা তৈরি হয়েছে আগ্রহীমহলে। তাঁকে দেখতে চাওয়া মানুষের সংখ্যাও কম নয়। তাঁরা ব্যোমের সঙ্গে দেখা করতে চান, তুলতে চান নিজস্বী। ভক্তদের ভিড়ভাট্টা হাসিমুখেই সামলান ব্যোম। তাঁদের সঙ্গে তোলেন সেলফি, মেলান হাতও।

আরও পড়ুন: এবার চাঁদেই হিন্দুরাষ্ট্রের ‘আবদার’, কেন এমন চান স্বামী চক্রপাণি?

সব ঠিক থাকলে, ২০২৪ কিংবা ২০২৫ সালেই প্রথম মানবচালিত মহাকাশযান পাঠাতে চলেছে মানুষ। তাঁদের সুরক্ষা নিশ্চিত করাই প্রথম কাজ ব্যোম মিত্রের। আজ থেকে নয়, সেই ২০১৪ সালে মহাকাশে মানুষ পাঠানোর চেষ্টা করেছে ইসরো। সেবার কিছুটা হলেও সাফল্য এসেছিল। তবে এবার সেই শিরোপাও নিজেদের শিরোস্ত্রাণে ফেরত আনবে ভারত। দেশের প্রথম মৌলিক মহাকাশ যাত্রা, যেখানে মহাকাশচারী হিসেবে আকাশ ছুঁয়ে ফেলবে মানুষ। যার হাত ধরে যে আরও অনেক বিজ্ঞান-সাফল্যের মুখ দেখতে চলছে দেশ, তা কিন্তু বলাই যায়।

More Articles