পরম্পরা ভেঙে ভোটাভুটি নাকি জোর বিজেপিরই? কে হচ্ছেন লোকসভার ১৮তম স্পিকার?

Speaker of the Lok Sabha: স্বাধীনতার পর থেকে এতদিন পর্যন্ত কখনও লোকসভার স্পিকার নির্বাচনের জন্য ভোটাভুটি হয়নি। সবসময় সর্বসম্মত ভাবেই লোকসভার স্পিকারকে বেছে নিয়েছে সংসদ।

ভোটে জিতে তৃতীয়বার সরকার গড়েছে এনডিএ জোট। মোদি তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসলেও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় জোটসঙ্গীদের উপরে বেশ খানিকটা নির্ভর করতে হয়েছিল বিজেপিকে। সেই সুযোগে নিজেদের দাবিদাওয়া ভালো মতোই বিজেপির সামনে পেশ করেছিল শরিক দলগুলি। ইতিমধ্যেই গঠন হয়ে গিয়েছে মন্ত্রিসভা। জোটসঙ্গীদের নিরাশ না করলেও তাদের সমস্ত প্রত্যাশা পূরণ করেছে গেরুয়া শিবির, এমনটাও বলা যায় না। এবার সরকার গড়ার ক্ষেত্রে এনডিএ জোটের সবচেয়ে বেশি ক্ষমতা ছিল বিহারের নীতীশ কুমারের দল জেডিইউ ও অন্ধপ্রদেশে চন্দ্রবাবুর দল পিডিপি-র হাতেই। কার্যত তাঁরাই ছিল কিংমেকারের জায়গায়। তাঁদের মধ্যে চন্দ্রবাবু বাদবাকি দাবিদাওয়ার সঙ্গেই জানিয়েছিলেন লোকসভার স্পিকার পদের দাবি।

আলোচনা পর্বেই কানাঘুষো শোনা গিয়েছিল, স্পিকার পদ নয়, তবে ডেপুটি স্পিকার পদের দায়িত্বের জন্য চন্দ্রবাবুকে বোঝাতে বিজেপি। মন্ত্রিসভা গঠন হলেও এখনও খালি লোকসভার স্পিকার পদ? কে বসতে চলেছেন সেই চেয়ারে? আপাতত সেটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। মন্ত্রিসভায় একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রিপদের দাবি জানিয়ে রেখেছিলেন চন্দ্রবাবু নাইডু। তার সঙ্গে ছিল স্পিকার পদের দাবি। তবে তা যে শরিকদলের হাতে দিতে খুব ইচ্ছুক গেরুয়া শিবির, তেমনটা মনে হয় না। তবে শোনা যাচ্ছে, বিজেপির সিদ্ধান্তে পাশে রয়েছে নীতীশ ও চন্দ্রবাবুর দল। এদিকে, বহু বছর পর বিরোধী দলনেতা পেতে চলেছে লোকসভা। এবার লোকসভা ভোটে এনডিএ জোটকে রীতিমতো কাঁটা কা টক্কর দিয়েছে জোট ইন্ডিয়া। ফলে প্রায় দীর্ঘ এক দশক পর সংসদে দেখা যাবে বিরোধী দলনেতাকে। দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে কংগ্রেস থেকেই কেউ বিরোধী দলনেতা নির্বাচিত হতে চলেছে, তা-ও মোটামুটি ঠিক। সে ক্ষেত্রে রাহুল গান্ধিকেই ওই পদে অভিষিক্ত করার জন্য সুপারিশ রয়েছে জোটের অন্দরেই। তার জোরদার টক্করে সংসদে বিজেপি-বিরোধিতার জায়গা আরও জোরালো হবে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক অভিজ্ঞরা।

আরও পড়ুন: মিলে গেল কেজরিওয়ালের ভবিষ্যদ্বাণী! মোদি কি বানপ্রস্থের পথে?

স্বাধীনতার পর থেকে এতদিন পর্যন্ত কখনও লোকসভার স্পিকার নির্বাচনের জন্য ভোটাভুটি হয়নি। সবসময় সর্বসম্মত ভাবেই লোকসভার স্পিকারকে বেছে নিয়েছে সংসদ। তবে এবার এতগুলো বছর পরে সেই ঘটনার ব্যতিক্রম হলেও হতে পারে বলে মনে করছেন অভিজ্ঞরা। মনে করা হচ্ছে, জোট ইন্ডিয়া এবার স্পিকার পদের জন্য নির্বাচন করতে বাধ্য করতে পারে। সেই ১৯২৫ সালের ২৪ অগস্ট প্রথমবার ব্রিটিশ ভারতের আইনসভায় সেন্ট্রাল লেজিসলেটিভ অ্য়াসেম্বলির স্পিকার পদের নির্বাচন হয়েছিল ইম্পেরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের নিম্নকক্ষে। সেই পদে মনোনীত হয়েছিল স্বরাজ পার্টির মনোনীত প্রার্থী বিঠলভাই জে প্যাটেল। মাত্র দু'টি ভোটে হেরে গিয়েছিলেন টি রাঙ্গাচারিয়া। বিঠলভাই পেয়েছিলেন ৫৮টি ভোট, আর রাঙ্গাচারিয়া ৫৬টি।

তার পর থেকে আর কখনও লোকসভার স্পিকার নির্বাচনের জন্য ভোট করতে হয়ে ভারতের সংসদকে। সবসময়েই আলোচনার মাধ্যমে স্পিকার নির্বাচনের কাজ সমাধা হয়েছে। তবে এবার সম্ভবত তেমনটা হবে না। সাধারণ ভাবে, লোকসভা ভোটের পর লোকসভার প্রথম বৈঠকে স্পিকার নির্বাচন করে ফেলা হয়। পাঁচ বছরের মেয়াদের জন্য লোকসভার বর্তমান সদস্যদের মধ্যে থেকেই একজনকে স্পিকার হিসেবে বেছে নেওয়া হয়।

যতদূর জানা যাচ্ছে, লোকসভার স্পিকারের পদ নিজেদের কাছেই রাখতে চাইছে গেরুয়া শিবির। ডেপুটি স্পিকারের পদ দিতে চাইছে এনডিএ শরিকদলকে। এ নিয়ে শরিক দল ও বিরোধীদলগুলির সঙ্গে আলোচনা করে ঐক্যমত্যায় পৌঁছনোর জন্য দলের হাইকম্যান্ড দায়িত্ব দিয়েছে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংকে। ইতিমধ্যেই এ নিয়ে রবিবার নিজের বাসভবনে প্রথম পর্যায়ের বৈঠকও সেরেছেন রাজনাথ। সেখানে উপস্থিত ছিলেন জেপি নড্ডা, রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব, কিরেন রিজিজু, জেডিইউ নেতা লালন সিং, লোক জনশক্তি পার্টির প্রধান চিরাগ পাসওয়ান-সহ বহু নেতাই। রবিবার ওই বৈঠকের পর কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গের সঙ্গে দেখাও করতে যান সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু।

সব ঠিক থাকলে আগামী ২৪ জুন থেকেই লোকসভার বিশেষ অধিবেশন শুরু হওয়ার কথা। যা চলবে ৩ জুলাই পর্যন্ত। তার মধ্যে ২৪ ও ২৫ জুন নতুন সাংসদদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান হওয়ার কথা। ২৬ জুন লোকসভার স্পিকার বেছে নেওয়ার জন্য নির্বাচন হতে পারে, যদি সর্বসম্মত ভাবে স্পিকার বেছে নিতে রাজি না থাকে জোট ইন্ডিয়া।

আরও পড়ুন: মোদি বিরোধিতাই পথ! বিরাট সিদ্ধান্ত নিল ‘ইন্ডিয়া’ জোট

২০১৪ বা ২০১৯ সালে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি পড়তেই হয়নি বিজেপিকে। ওই দুবছরই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল গেরুয়া শিবির। ফলে সুমিত্রা মহাজন বা ওম বিড়লাকে কোনও প্রতিযোগিতার সামনে দাঁড়াতেই হননি। সরাসরিই লোকসভার স্পিকার নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। ১৬তম লোকসভায় ডেপুটি স্পিকার ছিলেন AIADMK-র এম তাম্বি দুরাই। ১৭তম লোকসভায় ডেপুটি স্পিকার পদে কেউ ছিলেন না। এবারও স্পিকার পদে ওম বিড়লার কথাই ভাবছে বিজেপি, তেমনটাই জানা যাচ্ছে। পাশাপাশি উঠে আসছে ডি পুণ্ডরেশ্বরী এবং ভতৃহরি মাহতাবের নামও। আবার কংগ্রেস সাংসদ কে সুরেশ প্রোটেম স্পিকার হতে পারেন, সেই সম্ভবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। এই নিয়ে অষ্টম বার জিতে সাংসদ নির্বাচিত হলেন তিনি।

স্বাধীনতার পর থেকে চলে আসা পরম্পরা ভাঙতে চলেছে এই বছর, নাকি শেষপর্যন্ত বিজেপি বিরোধী শিবিরকে মানিয়ে নিয়ে ফের লোকসভাতেও নিজের প্রতাপ বজায় রাখতে সফল হবে, সেটাই এখন দেখার। তা জানার জন্য অবশ্য আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।

More Articles