এই নির্বাচনে মোদি সত্যিই প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন? যে বিস্ফোরক প্রশ্ন তুলছেন কেজরিওয়াল
Narendra Modi: এই বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর নরেন্দ্র মোদি নিজেই পঁচাত্তর পার করছেন। তাহলে কি মোদির নিয়ম অনুযায়ী তাঁর নিজের অবসর নেওয়া উচিত?
এই লোকসভা নির্বাচনের পরে নরেন্দ্র মোদি আবার প্রধানমন্ত্রী হবেন তো? যদি না হন, তাহলে বিজেপির প্রধানমন্ত্রীর মুখ কে? এই প্রশ্নটা তুলে দিলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী এবং ইন্ডিয়া জোটের অন্যতম শরিক আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল। প্রায় ৫০ দিন পরে, তিহার জেল থেকে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জামিন পাওয়ার পরে, কেজরিওয়াল তাঁর দলের সদস্য সমর্থকদের জন্য যে জনসভা করেন, সেখান থেকেই এই প্রশ্নটা তুলে দেন তিনি। তারপর থেকেই জাতীয় স্তরের রাজনীতিতে মুখ্য আলোচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, সত্যিই মোদি না হলে কে?
এবারের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রচারের অন্যতম দিক হচ্ছে, মোদি ছাড়া কেই বা প্রধানমন্ত্রী হবেন? বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের তো অনেকেই প্রধানমন্ত্রিত্বের দাবিদার। তাহলে কি প্রত্যেক বছর ইন্ডিয়া জোটের পক্ষ থেকে নতুন নতুন প্রধানমন্ত্রী হবেন? শুধু বিজেপির পক্ষ থেকে নয়, স্বয়ং নরেন্দ্র মোদি এই প্রশ্ন তুলে ধরেছেন নানা সময়ে, নানা জনসভা থেকে। সোজা কথায় বলতে গেলে, বিরোধী ঐক্যকে আগেই ভেঙে দিতে পারলে প্রধানমন্ত্রিত্বের
বিষয়টিকে মুখ্য আলোচ্য বিষয় করে তোলা গেলে, যে বিষয়গুলো বিরোধীরা তুলছেন তা আর আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে না।
আরও পড়ুন- মোদি আর বিজেপি দুই-ই এবার ব্যাকফুটে || মুখোমুখি পরাকলা প্রভাকর
বিজেপির এ খুবই সচেতন প্রয়াস কিন্তু আমাদের দেশ আমেরিকা নয়, এই দেশের নাগরিকরা ভোট দিয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করেন না। এই দেশে এখনও সংসদীয় গণতন্ত্র আছে। এখানে সংসদের প্রতিনিধি নির্বাচিত হন। সেখানে কোনও একটি দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে, সেই দল বা দলসমূহ যাঁকে নেতা নির্বাচিত করবে, তিনিই দেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন, এটাই প্রচলিত নিয়ম। এইখানে মোদি বনাম কে এই ধারণার ওপর ভিত্তি করে নির্বাচন হয় না। যদিও সুপ্রিম কোর্টের একজন প্রাক্তন বিচারপতি, একটি সর্বভারতীয় দৈনিক ‘দ্য হিন্দু’র সম্পাদক এবং আরও কয়েকজন মিলে একটি বিতর্ক সভার আয়োজন করেছেন এবং সেখানে রাহুল গান্ধি আর নরেন্দ্র মোদিকে আহ্বান করা হয়েছে, যাতে তাঁরা দু’জনে মুখোমুখি বিতর্কে নামেন। বিজেপি এখানে নরেন্দ্র মোদিকে রাহুলের সামনে আনতেই চাইছে না। বিজেপি তাদের যুব মোর্চার সহ সভাপতি অভিনব প্রকাশকে মোদির হয়ে সওয়াল করতে নামাচ্ছে।
বিজেপি স্পষ্টতই বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধির মুখোমুখি আনতে চাইছে না নরেন্দ্র মোদিকে। তাই এই ধরনের বিতর্কসভা থেকে মোদি না হলে কে, এই জাতীয় প্রশ্নের উত্তর আশা করা যায় না। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য আরও গুরুত্বপূর্ণ এক কথা বলেছেন, যা নিয়ে বেশি করে আলোচনা করা জরুরি। বিবিধ নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে নরেন্দ্র মোদি তাঁর গ্যারান্টি বা নিশ্চয়তার প্রসঙ্গ তুলছেন বটে, কিন্তু আদৌ কি নরেন্দ্র মোদি তৃতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন? তিনি নিজেই যে নিয়ম তৈরি করেছেন নিজের দলের জন্য, সেই নিয়ম অনুযায়ী কোনও ব্যক্তি যদি পঁচাত্তর বছর পার হয়ে যান, তাহলে তাঁর আর বিজেপির
বা দেশের নেতৃত্বে থাকার অধিকার নেই। তাঁর অবসর গ্রহণের বয়স হয়ে গেছে ধরে নিয়ে, তাঁকে বিশ্রামে পাঠানোর সিদ্ধান্ত তখন দলীয় কর্তব্য। সেই নিয়ম মেনেই লালকৃষ্ণ আদবানি, মুরলি মনোহর জোশী, সুমিত্রা মহাজন বা যশবন্ত সিনহাদের বিশ্রামে পাঠানো হয়েছে। এই বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর নরেন্দ্র মোদি নিজেই পঁচাত্তর পার করছেন। তাঁর ক্ষেত্রেও নিশ্চিত একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে? কেজরিওয়ালের বক্তব্য অনুযায়ী, নরেন্দ্র মোদিই যদি না থাকেন তাহলে মোদির গ্যারান্টি কে পূরণ করবেন? নরেন্দ্র মোদি তবে কাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বসিয়ে যেতে চাইছেন? যোগী আদিত্যনাথ না অমিত শাহ? এমনিতে শোনা যায়, নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে যোগী আদিত্যনাথের সম্পর্ক খুব সুমধুর নয়। হাতে রইল অমিত শাহ। গুজরাতের সময় থেকেই নরেন্দ্র মোদির অত্যন্ত বিশ্বস্ত
অমিত শাহ, তাঁকেই তখতে বসাতে চাইছেন নরেন্দ্র মোদি? তাঁর সমস্ত কুকীর্তির সঙ্গী অমিত শাহই কি নরেন্দ্র মোদির উত্তরসূরি?
আরও পড়ুন- মোদির ‘বিকশিত ভারতে’র দাবি আদৌ সত্য? আসলে যেখানে দাঁড়িয়ে দেশের অর্থনীতি
এই বক্তব্যে যে যথেষ্ট সারবত্তা আছে, তার প্রমাণ অবশ্য সঙ্গে সঙ্গেই পাওয়া গেছে। অমিত শাহ সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর প্রতিক্রিয়াতে জানিয়েছেন, পঁচাত্তর বছর পেরিয়ে গেলেও নরেন্দ্র মোদিই প্রধানমন্ত্রী থাকবেন। এর মধ্য দিয়ে দুটো কথা বেশ পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। এক, বিজেপিতে এখনও নরেন্দ্র মোদির কোনও বিকল্প নেই এবং দুই, সবার জন্য যে নিয়ম প্রযোজ্য, মোদির জন্য তা প্রযোজ্য নয়। যদি তর্কের খাতিরে ধরে নেওয়া যায়, বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেল না, তাহলে কি নরেন্দ্র মোদি বিরোধী দলনেতার চেয়ারে বসবেন? নাকি তখন তিনি পঁচাত্তর বছরের ধুয়ো তুলে বিশ্রামে যাবেন?
কেজরিওয়াল বোঝেন বিজেপির অন্দরে নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে অসন্তোষ আছে। তাই তিনি অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সেই বিতর্কটাকে উস্কে দিয়েছেন। যদি নরেন্দ্র মোদি একবার কাঙ্খিত সংখ্যায় না পৌঁছতে পারেন, তাহলে তাঁর দলের মধ্যে থেকেই যে বিরোধিতা আসবে, তা নরেন্দ্র মোদি এবং অমিত শাহ জানেন। আজকে যাঁরা সেলাম ঠুকছে, তাঁরাও যে নরেন্দ্র মোদির ঘোর বিরোধিতা করবেন না, সেই গ্যারান্টি খোদ মোদিও দিতে পারবেন না। মানুষের একাংশের মধ্যে তাঁর দশ বছরের প্রধানমন্ত্রিত্ব নিয়ে যথেষ্ট ক্ষোভ আছে। তাই বিরোধী রাহুল গান্ধির মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ পেয়েও কোনও ভয়ে তিনি এড়িয়ে যান। প্রশ্নহীন আনুগত্য আর কতদিন?