অবশেষে রহস্য সমাধান বিজ্ঞানীদের! কেন প্রেমে পড়লে মাথা কাজ করে না আমাদের?
Love and Brain Work Function : মহাবিশ্বের সবচেয়ে বড় রহস্যগুলির মধ্যে অবশ্যই একটি হলো প্রেম।
প্রথম প্রথম প্রেম! মানে বহু প্রেম করলেও সব প্রেমেরই একটা প্রথম থাকে, সেই পর্বে কানে কেবলই বেজে চলে রোম্যান্টিক প্লে-লিস্ট। মেসেজ আসছে না কেন এই চিন্তায় কপালে পাকাপাকি ভাঁজ পড়ে। হাতে হাত ধরে ঘুরতে না পারলে জীবন বৃথা ভেবে অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ সময়েও হাত ছাড়তে পারেন না। টিউশন কামাই হয়ে যায়, অফিসে দেরি, ভুল হয়ে যায় বাজারের ফর্দে। আজ ম্যায় উপর আসমান নীচে কেস হয়ে উল্টে যায় পৃথিবীর স্বাভাবিক গতি! কিন্তু কেন? প্রেমের উত্তেজনা হরমোনের উচাটন সবই নয় বোঝা গেল। কিন্তু প্রেমে পড়লে বাস্তব সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা হ্রাস পায় কেন? গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক বা কেরিয়ারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কেন প্রেম বাধা হয়ে দাঁড়ায়? প্রেমে পড়লে কেন মাথা গুলিয়ে যায়? বিজ্ঞান এতকাল ধরে এই নিয়ে নির্দিষ্ট করে কিছুই বলতে পারেনি। তবে একটি নতুন গবেষণা এই বিষয়ের অন্ধকার খানিক দূর করেছে।
অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির পিএইচডি ছাত্র অ্যাডাম বোড বলছেন, মনে করা হয় যে, রোমান্টিক প্রেম প্রথম আবির্ভূত হয়েছিল প্রায় পাঁচ মিলিয়ন বছর আগে। অর্থাৎ আমরা আমাদের পূর্বপুরুষ এপস থেকে পৃথক হওয়ার পরেই 'প্রেম' বিষয়টির আবির্ভাব। প্রাচীন গ্রিকরা এই বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক ঘাঁটাঘাঁটি করেছিল সেই সময়। অনেক দার্শনিকই বিষয়টা নিয়ে কাজ করেন। তারা বলেছিলেন, প্রেম অত্যাশ্চর্য বিষয়, একইসঙ্গে প্রবল আহত হওয়ার মতোও বিষয়। এখনও পর্যন্ত পাওয়া প্রাচীনতম কবিতাটি প্রায় ২০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের, সেটি একটি প্রেমেরই কবিতা।
এই দীর্ঘ ইতিহাস সত্ত্বেও, আমরা আসলে রোমান্টিক প্রেমের বিবর্তন সম্পর্কে খুব কমই জানি। ইউনিভার্সিটি অফ ক্যানবেরা এবং ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ অস্ট্রেলিয়ার ডঃ ফিল কাভানাঘের সঙ্গে এই নিয়ে একটি সমীক্ষা চালায়। ১,৫৫৬ জন তরুণ প্রাপ্তবয়স্কের উপর একটি সমীক্ষা চালায় যারা দাবি করেছেন যে তারা প্রেমে পড়েছেন। তাঁদের বিবিধ প্রশ্ন করা হয়। এই প্রশ্নগুলোর উদ্দেশ্য ছিল তাঁদের প্রেমিক বা প্রেমিকার প্রতি তাঁদের অনুভূতি এবং আচরনের মূল্যায়ন করা।
আরও পড়ুন- “আমি আপনার স্ত্রীকে বিয়ে করতে চাই” : নির্ভীক প্রেমিক জগজিৎ সিং রইলেন আড়ালেই
প্রারম্ভিক প্রেমের তীব্রতার দিকে তাকিয়ে গবেষণার দ্বিতীয় পর্যায়ে মূল অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে মাত্র ৮১২ জনকে বেছে নেওয়া হয়, যারা দুই বছরের বেশি সময় ধরে প্রেমের সম্পর্কে থাকার কথা জানিয়েছিলেন। বিজ্ঞানীরা দেখতে চেয়েছিলেন, বিহেভিয়ারাল অ্যাক্টিভেশন সিস্টেম (BAS) অর্থাৎ মন এবং শরীরের মধ্যেকার একটি প্রক্রিয়া যা এমন আচরণ তৈরি করে যাতে আমাদের আনন্দ হয় তা এই রোমান্টিক সম্পর্কে অর্থাৎ প্রেমেও একই ভূমিকা পালন করে কিনা। গবেষণাটি এই BAS-কে মানুষের আচরণের বিভিন্ন দিক, এমনকী বাইপোলার ডিসঅর্ডারের মতো মানসিক অবস্থার সঙ্গেও সংযুক্ত করছে।
গবেষণা বলছে, অনেকেই প্রেমে পড়ার সময় নিজেরাই অনুভব করেন যে মাথা অন্যভাবে কাজ করছে। চিন্তাভাবনা এবং কাজকর্ম (সাময়িক হলেও) সবসময় নিজের প্রেমিক বা প্রেমিকাকে ঘিরেই আবর্তিত হয়। আচরণে এই পরিবর্তনগুলি কীসের জন্য হয়? হরমোন রয়েছে এরও নেপথ্যে।
অক্সিটোসিন প্রেমে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমরা আমাদের প্রিয় মানুষের সঙ্গে সংযোগে এলেই আমাদের স্নায়ুতন্ত্র এবং রক্তপ্রবাহ জুড়ে এর তরঙ্গ সঞ্চালিত হয়। আমাদের জীবনে যে প্রিয় মানুষরা বিশেষ গুরুত্ব পায় তার নেপথ্যে আছে ডোপামিনের সাথে অক্সিটোসিনের সংমিশ্রণ। আমাদের মস্তিষ্ক প্রেমের সময় এই রাসায়নিকগুলির ক্ষরণ ঘটায়। প্রেম মূলত ইতিবাচক অনুভূতির সঙ্গে যুক্ত মস্তিষ্কের পথগুলিকে সক্রিয় করে।
পুরুষ এবং মহিলাদের মধ্যে প্রেমের বিভিন্ন পদ্ধতির কথা মাথায় রেখেই বিজ্ঞানীরা আরও একটি নতুন গবেষণার পরিকল্পনা করছেন। বিশ্বব্যাপী প্রেমে পড়া মানুষদের সমীক্ষা করা হবে কারণ প্রেমে পড়লেও প্রেম সম্পর্কে আমরা এখনও অনেক কিছুরই ব্যাখ্যা পাই না। মহাবিশ্বের সবচেয়ে বড় রহস্যগুলির মধ্যে অবশ্যই একটি হলো প্রেম।