জি-২০-র ডিনারে কোন টেবিলে কার পাশে মমতা, নীতীশ? জোর চর্চা ইন্ডিয়া শিবিরে
Mamata at G20 Dinner : এটা বলা যাবে না যে শুধু অমিত শাহ আর যোগী আদিত্যনাথের সঙ্গেই ডিনার টেবিলে ছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।
রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর নৈশভোজে শুধুই নিরামিষ পদ। ১৩ সেপ্টেম্বর ইন্ডিয়া জোটের পরের বৈঠক। তার আগে জি ২০-র নৈশভোজ নিয়েই আমিষ রাজনীতির চর্চা তুঙ্গে। কেন চর্চা? চর্চার বিষয়বস্তু কী? নৈশভোজের আসরে টেবিলগুলোর নাম দেওয়া হয় ভারতের প্রধান প্রধান নদীর নামে। এক একটা টেবিল একটা নদী। গঙ্গা, যমুনা, কৃষ্ণা, এ রকম। তো সেই টেবিলেই কোন নদী কার সঙ্গে মিলিত হল, বিরোধী শিবিরের আমন্ত্রিতরা কে কোথায় বসলেন? কোথায় বসলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? কোথায় বসলেন নীতীশ কুমার?
এক হিমাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিং সুখু ছাড়া বাকি কংগ্রেস শাসিত রাজ্যের কোনও মুখ্যমন্ত্রী জি-২০-এর নৈশভোজে যোগ দেননি। ইন্ডিয়া জোটের অন্যতম প্রধান মুখ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নৈশভোজ যোগ দিয়েছিলেন। যোগ দিয়েছিলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার, ঝাড়খণ্ডের হেমন্ত সোরেন, তামিলনাড়ুর এম কে স্ট্যালিনের মত ইন্ডিয়া জোটের নেতারা। নিরামিষ টেবিলের এই কুশীলবদের ভিতর রাজনীতির আমিষচর্চা মমতা এবং নীতীশ কুমারকে ঘিরে।
রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর ভোজসভায় কে কোন টেবিলে বসবেন আগে থেকেই ঠিক করা ছিল। হেমন্ত সোরেনের এক্স হ্যান্ডল (এক সময়ের টুইটার) থেকে পাওয়া ছবিতে দেখা যাচ্ছে ফ্রেমের ডানদিকের টেবিলে বসে রয়েছেন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। তাঁর পাশেই রয়েছেন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আসন ছিল ওই টেবিলেই। যা নিয়ে সমালোচনায় মুখর ইন্ডিয়া জোটের শরিকরা। বিশেষ করে এ রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেস এবং সিপিএম।
আরও পড়ুন- ইন্ডিয়া নয়, ভারতেই জোর মোদির! জি-২০ তে স্পষ্ট হচ্ছে যেসব ইশারা
মমতার সঙ্গে ওই এক টেবিলেই ছিলেন লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা। কাজেই এটা বলা যাবে না যে শুধু অমিত শাহ আর যোগী আদিত্যনাথের সঙ্গেই ডিনার টেবিলে ছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু তাতে কি! প্রশ্ন করতে ছাড়েননি অধীররঞ্জন চৌধুরীরা। 'মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রিত নৈশভোজে যোগ না দিলে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যেত না। মাথার উপর আকাশ ভেঙে পড়ত না।' বলছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী। মমতার ডিনারে যোগ দেওয়ার পিছনে অন্য কোনও কারণের 'গন্ধও' পেয়েছেন অধীর। তৃণমূল কংগ্রেসও পাল্টা জবাব দিতে দেরি করেনি। সাংসদ সৌগত রায়ের বক্তব্য, 'মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একজন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে জি-২০-র নৈশভোজে যোগ দিয়েছেন। এটা নিতান্তই সৌজন্যমূলক। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। অধীররঞ্জন চৌধুরীর এ নিয়ে কোনও মন্তব্য না করাই উচিৎ। হিমাচল প্রদেশ তো কংগ্রেস শাসিত রাজ্য। সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিং সুখুও তো নৈশভোজে যোগ দিয়েছেন।' অধীরকে মনে করিয়ে দিয়েছেন সৌগত।
বিজেপির হাত ছেড়়ে ইন্ডিয়া শিবিরে পা রেখেছেন নীতীশ কুমার। লালু প্রসাদের আরজেডি, কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। জি-২০-এর ডিনারে যোগ দেন তিনিও। যে নীতীশ দুদিন আগেও বলেছেন নরেন্দ্র মোদির মুখ দেখতেও রাজি না, সেখানে দ্রৌপদী মু্র্মুর নৈশভোজে তাঁর উপস্থিতি জল্পনা উসকে দিয়েছে। তবে কি আবার শিবির বদলাতে চলেছেন নীতীশ? বিরোধী ইন্ডিয়া জোটে কি তেমন কলকে পাচ্ছেন না তিনি? এই জল্পনা আরও জোরালো হয়েছে নৈশভোজের একটি ছবিতে। যেখানে একই ফ্রেমে প্রধানমন্ত্রীর পাশেই দেখা যাচ্ছে নীতীশ কুমারকে। দেখা যাচ্ছে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন, রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডো বাইডেনকে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজে নীতীশের সঙ্গে বাইডেনের আলাপ করিয়ে দেন।
আরও পড়ুন- দ্রৌপদীর ডিনারে নিরামিষ ‘ভারত’, শেষপাতে ‘মধুরিমা’
১৩ সেপ্টেম্বর ইন্ডিয়া জোটের সমন্বয় কমিটির বৈঠক রয়েছে নয়াদিল্লিতে। এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ারের দিল্লির বাসভবনে ওই বৈঠক হওয়ার কথা। জোটের রণকৌশল, আসন ভাগাভাগি, পরবর্তী স্তরে জোটকে এগিয়ে নিয়ে যেতে কী কী আলোচ্যসূচি থাকতে পারে, তা নিয়ে ওই দিন আলোচনা হবে। তার আগে জোটের দুই অন্যতম প্রধান মুখ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং নীতীশ কুমারকে নিয়ে সিপিএম এবং অধীররঞ্জনের অবস্থানে কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে পড়েছে ইন্ডিয়া জোট। যেমন সুজন চক্রবর্তী তো প্রকাশ্যেই বলছেন, ডাল মে কুছ কালা হ্যায়। আর বিজেপি এই সুযোগে চিমটি কেটে দিয়েছে। পদ্ম শিবিরের একাংশ বলছে, 'এই সামান্য ঘটনাতেই এত জলঘোলা। এরপর জোটের নেতারা পাশাপাশি বসে অন্ত্যক্ষরী খেলবেন?'
মমতা, নীতীশ এঁদের আমন্ত্রণ জানানো হলেও কেন কংগ্রেসের জাতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গেকে নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস। বিজেপি মনে করিয়ে দিয়েছে, তাঁদের দলের সভাপতি জগৎপ্রকাশ নাড্ডাকেও জি২০-র নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানাননি রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু।