রাম মন্দির উদ্বোধন নিয়ে মোদির পাশে নেই বহু হিন্দুত্ববাদীই! কেন?

Ayodhya Ram Mandir inauguration : হিন্দু মহাসভা রাম মন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতেও অস্বীকার করেছে, কারণ এটি নাকি আসলে 'বিজেপি-স্পন্সরড রাজনৈতিক প্রোগ্রাম'।

এই মাসেই রামমন্দির উদ্বোধন। প্রস্তুতিপর্ব সাঙ্গ প্রায়। ২০২৪ মানেই লোকসভা নির্বাচনের বছর। আর বছরের গোড়াতেই রাম মন্দিরের উদ্বোধন যে বিজেপির তরফে হাঁকানো সবচেয়ে বড় ছক্কা, তা এতদিনে সকলেই বুঝে গিয়েছেন। কিন্তু দেশের সব হিন্দুত্ববাদী সংগঠনই কি মোদির পাশে রয়েছে? ১৫ ডিসেম্বর, অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণের তত্ত্বাবধানে থাকা ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক চম্পত রাই বলেছিলেন, মন্দিরে যে মূর্তি স্থাপন করা হবে তা বিশেষজ্ঞ ভাস্কররাই তৈরি করছেন এবং তাদের মধ্যে কোনও বৈষম্য থাকতে পারে না। রাম মন্দির নির্মাণ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় হিন্দুত্ববাদী সমর্থকদের কিছু সমালোচনার জবাবে চম্পত রাই এই কথা বললেন। সমালোচনা উঠেছে কারণ, বেশ কিছু অহিন্দু মানুষ এই রামমূর্তি এবং মন্দির নির্মাণের কাজে জড়িয়ে আছেন। কেউ কেউ এও অভিযোগ করেছেন যে মন্দিরটিতে ইসলামিক চিহ্নও রয়েছে।

চম্পত রাই কিছুকাল আগেই বলে ফেলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আসলে হিন্দু দেবতা বিষ্ণুর অবতার! এসবের পর একাংশের হিন্দুদের আপত্তি আরও বেড়ে যায়। হিন্দুত্ববাদের সেই সমর্থকরা এখন বিশাল বিক্ষুব্ধ। তারা অভিযোগ করেছে, ভারতীয় জনতা পার্টি ২২ জানুয়ারি মন্দিরের উদ্বোধনকে আসলে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার জন্যই ব্যবহার করছে, ধর্ম রক্ষার্থে নয়৷

 

“আমরাই রাম জন্মভূমি আন্দোলন শুরু করেছি, কিন্তু বিজেপি এখন মন্দিরের ঠিকাদারের মতো আচরণ করছে,” বলেছেন ভারতের অন্যতম প্রাচীন হিন্দুত্ববাদী দল, হিন্দু মহাসভার সাধারণ সম্পাদক সুনীল কুমার। ১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকে এবং ১৯৯০-এর দশকের গোড়ার দিকে রাম জন্মভূমি আন্দোলনের হোতারা দাবি করেছিলেন, অযোধ্যায় যে বাবরি মসজিদটি ছিল তা রামের জন্মস্থানেই নির্মিত হয়েছিল। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর উগ্র হিন্দুত্বের ধ্বজা উড়িয়ে উন্মত্ত জনতা মসজিদটি ভেঙে দেয়। ২০১৯ সালের মাসে সুপ্রিম কোর্ট অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণের পক্ষে রায় দিয়ে বিতর্কিত জায়গাটি হিন্দুদেরকেই দিয়ে দেয়।

 

হিন্দু মহাসভা রাম মন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতেও অস্বীকার করেছে, কারণ এটি নাকি আসলে 'বিজেপি-স্পন্সরড রাজনৈতিক প্রোগ্রাম'। শ্রী রাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্রের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে হিন্দু মহাসভা চিঠি লিখেছিল যে ট্রাস্টটি চারটি পীঠ বা ধর্মীয় মন্দিরের প্রধানদের আমন্ত্রণ না জানিয়ে সনাতন ধর্মকে অপমান করেছে। চম্পত রাই ১৮ ডিসেম্বর বলেছিলেন, প্রবীণ বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আদবানি এবং মুরলি মনোহর যোশীকে স্বাস্থ্যের কারণে অনুষ্ঠানে 'না আসার অনুরোধ' করা হয়েছে। অন্য দিকে নবতিপর প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচডি দেবগৌড়াকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে! হিন্দুত্ববাদীদেরই একাংশ বলছে, বিজেপি দুই বরিষ্ঠ নেতাকে একেবারেই সরিয়ে দিয়েছে ইচ্ছাকৃতভাবেই। বলিউডের তারকা এবং বিরোধী নেতাদেরও যেখানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে সেখানে আডবানি এবং চারটি পীঠের শঙ্করাচার্যদের না ডাকায় ক্ষুব্ধ তারা।

হিন্দুত্ববাদীদের এই অংশের সমর্থকরা প্রশ্ন তুলেছেন, কেন বিজেপি সরকার মুসলিম ভাস্কর এবং কারিগরদের মন্দিরের কাজ করার অনুমতি দিল! মন্দিরে মুসলিমদের কাজ করতে দেওয়া নাকি 'কংগ্রেস ও জিহাদি'-দের কাজের থেকেও খারাপ। এবং এখানেও বিজেপি আসলে সমস্ত সম্প্রদায়ের কাছে ভোট প্রচার করার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকেই মাথায় রাখছে।

 

মন্দিরে মুসলমান শিল্পীদের নিয়োগ করা নিয়ে বিতর্ক থামাতে মন্দির ট্রাস্ট তিনজন ভাস্করের নাম প্রকাশ করে যাদের কাজের মধ্যে একজনের তৈরি মূর্তিই গর্ভগৃহে বসানো হবে। ভাস্কর অরুণ যোগীরাজের মূর্তিই বসছে ভেতরে। হিন্দু মহাসভার সভ্যদের আরও দাবি, মন্দির এবং যে মূর্তি ভিতরে স্থাপন করা হবে তা হিন্দু শাস্ত্রে বর্ণিত নির্দেশিকা অনুসারে তৈরি করা হয়নি। অনেকে বলছেন, মন্দিরের খোদাইকর্মে ইসলামিক প্রভাব রয়েছে। তাই 'রামলালা'র মন্দিরের গর্ভগৃহে মুঘল স্থাপত্যের চিহ্ন থাকছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধরনের হিন্দুত্ববাদী শক্তিগুলি শেষ পর্যন্ত বিজেপিরই উপকার করছে। এই নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে মন্দিরের শ্রমিক ও শিল্পীদের ধর্ম নিয়ে এমন মনোভাব পোষণ বিজেপিরই সুবিধা করে দেবে। হিন্দু মহাসভার মতো সংস্থাগুলির সরাসরি রাজনৈতিক প্রভাব নেই। কিন্তু তারা প্রাসঙ্গিক থাকার জন্য চরম ডানপন্থী অবস্থান নেয়। কিন্তু যে মুহূর্তে, বিজেপি বা সংঘ পরিবার কোনও সত্যিকারের রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে হিন্দু মহাসভা আবার একসঙ্গে মিলে যাবে। এই সমস্ত নিন্দা, রাগ, সমালোচনা নেহাতই অগভীর। শিকড়ে শক্ত হিন্দুত্ববাদীরা।

More Articles