অনশন, ধর্না কতদিন? জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে রফাসূত্র কেন বের করতে পারছে না রাজ্য?

Junior Doctor Protest Carnival: সরকার স্পষ্ট জানিয়েছে, এর মধ্যে বাকি তিনটি দাবি কবে পূরণ হবে, সেই সময়সীমা আগে থেকে বেঁধে দেওয়া সম্ভব না।

মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন উৎসবে ফিরতে। ডাক্তাররা উৎসবের পাশাপাশি শুরু করেছিলেন দ্রোহ! দুূুর্গোৎসব শেষ। রাজ্যে পুজোর এই সমাপ্তিতে নয়া সংযোজন হয়েছে কার্নিভাল। অনশনরত জুনিয়র ডাক্তাররা সেই উৎসবের কার্নিভালের পাশাপাশি ডাক দিয়েছেন দ্রোহের কার্নিভালের। আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের আমরণ অনশন চলছে ১১ দিন ধরে। অসুস্থ হয়েছেন অনেeকেই। অনেকেই হাসপাতালে ভর্তি। তবু এই উৎসবের মধ্যে ডাক্তারদের বিষয়ে কোনও শব্দই খরচ করেনি সরকার। ডাক্তারদের প্রতি সংহতি জানিয়ে তাই দুর্গাপুজোর কার্নিভালের দিনই ‘দ্রোহের কার্নিভাল’ ডেকেছে জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টর্স।

মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে গত মাসে ডাক্তারদের বৈঠক হয়েছিল। তাতে সরকারের সদর্থক ভূমিকা নিয়ে খানিক আশ্বস্তও হয়েছিলেন বিক্ষোভরত ডাক্তাররা। প্রথমে পাঁচ দফা দাবি নিয়ে হাজির হয়েছিলেন তারা যার মধ্যে অন্যতম ছিল পুলিশ কমিশনার ও স্বাস্থ্য অধিকর্তার অপসারণ। সেই দাবি মানা হয়েছে। আরও বেশ কিছু দাবি নিয়েও আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। এরপর স্বাস্থ্যভবনের সামনে থেকে অবস্থান তুলে নেন ডাক্তাররা। আংশিক কর্মবিরতিও প্রত্যাহার করেন। তবে জানিয়েছিলেন, সমস্ত দাবি না মানা হলে আবারও পূর্ণ কর্মবিরতির পথে হাঁটবেন তারা। শেষবার দশদফা দাবি নিয়ে হাজির হয়েছিলেন তারা। সেই দাবিগুলিতে কর্ণপাত করেনি সরকার। মুখ্যমন্ত্রীর উৎসবে ফেরার নির্দেশকে খানিক চ্যালেঞ্জ করেই পুজোর মধ্যেই অনশন শুরু করেছেন তারা।

আরও পড়ুন- কেন সোনম ওয়াংচুকদের আন্দোলনে নীরব কেন্দ্র সরকার?

কিন্তু সরকার কেন জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে বৈঠক করেও কোনও রফাসূত্র বের করতে পারছে না? বিচার চেয়ে আমরণ অনশনের জেরে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। সরকারের তরফে কোনও হেলদোল নেই। ধর্না কতদিন চলবে, সরকার কী চাইছে কোনওটাই স্পষ্ট নয়। আরজি কর হাসপাতাল, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, কল্যাণী জেএনএম হাসপাতাল–সহ কয়েকটি সরকারি হাসপাতালের সিনিয়র ডাক্তাররা গণইস্তফা দিয়েছেন। এত কিছুর পরেও কেন নীরব সরকার?

চিকিৎসক সংগঠনগুলির সঙ্গে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ বৈঠক করেছিলেন। সেখানে জুনিয়র ডাক্তারদের ১০টি দাবির মধ্যে সাতটির বিষয় নিয়ে কথা এগিয়েছে। কিন্তু সরকার স্পষ্ট জানিয়েছে, এর মধ্যে বাকি তিনটি দাবি কবে পূরণ হবে, সেই সময়সীমা আগে থেকে বেঁধে দেওয়া সম্ভব না। সিনিয়র ডাক্তার তাঁদের বক্তব্য, জুনিয়র ডাক্তারদের ১০ দফা দাবি পূরণের বিষয়ে কোনও লিখিত প্রতিশ্রুতি দেয়নি সরকার। অথচ সরকার বলছে হাসপাতালে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফেরাতে। সিনিয়র ডাক্তারদের বক্তব্য, 'থ্রেট কালচার' মুক্ত না হলে হাসপাতালে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরতে পারে না। দুর্নীতিগ্রস্ত লোকেরাই স্বাস্থ্য প্রশাসনে বিভিন্ন পদে বসে রয়েছেন। পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তারা। সরকার এই হুমকির সংস্কৃতিকে না মেটাতে পারলে কাজের পরিবেশ সুস্থ স্বাভাবিক হবে না।

আরও পড়ুন- জুনিয়র ডাক্তারদের পাশে দাঁড়িয়ে এবার গণইস্তফা সিনিয়রদের, কী হতে চলেছে নবান্নের পরবর্তী পদক্ষেপ?

সিনিয়র চিকিৎসকেরা শ্রীরামপুরের বিধায়ক তথা তৃণমূলের চিকিৎসক-নেতা সুদীপ্ত রায়কে রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রশাসন থেকে অপসারণের দাবি তোলেন। সিনিয়র চিকিৎসকরা বলছেন, রাজ্য স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে নির্বাচিত প্রতিনিধিকে এই ভাবে সরানো যায় না। সুদীপ্ত রায় রাজ্যের হেল্‌থ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের সদস্য, আরজি করের রোগী কল্যাণ সমিতির প্রাক্তন চেয়ারম্যানও। সিনিয়র ডাক্তাররা আগেও বলেছেন, রাজ্যের হেল্‌থ রিক্রুটমেন্ট বোর্ড এবং ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল কাউন্সিলে দুর্নীতি রয়েছে অগাধ! তাহলে সরকার আখেরে দুর্নীতি ইস্যুতে কোনও পদক্ষেপ কি করতে চাইছে না বলেই জুনিয়র ডাক্তারদের দাবিও মিটছে না? এই সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নতুন নয়। শিক্ষা থেকে রেশন, কয়লা থেকে গরু পাচার, এখন স্বাস্থ্যও দুর্নীতির পাঁকে। প্রথম থেকেই সরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলিতে তৃণমূল তথা শাসক ঘনিষ্ঠদের দাদাগিরির দিকেই আঙুল উঠেছে। পরিস্থিতি সামলাতে কয়েকজনকে সরানো হয়েছে ঠিকই তবে ডাক্তারদের একাংশই বলছেন শিকড় গভীরে। সেই শিকড়ে টান দিলে কি দুর্নীতির বৃক্ষটিই উপড়ে পড়ার সম্ভাবনা? তাই কি সরকার জুনিয়র ডাক্তারদের বিষয়ে এতটা উদাসীনতা দেখাচ্ছে? 

মুখ্যসচিব জানান, তিনটি দাবির বিষয়ে মতৈক্যে পৌঁছনো যায়নি। সিনিয়র ডাক্তার, জুনিয়র ডাক্তার সকলেই 'টাইমলাইন' চাইছেন। রাজ্য বলছে এই হুমকির সংস্কৃতি কবে কাটবে এই জাতীয় দাবির ক্ষেত্রে সময় বেঁধে দেওয়া সম্ভব না। তবে জুনিয়র ডাক্তারদের স্বাস্থ্য নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। অনশন প্রত্যাহার করে কাজে ফেরার অনুরোধ করেছেন মুখ্যসচিব। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য কিছু বলেননি। রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ রানি রাসমণি রোডে দ্রোহের কার্নিভাল না করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন উদ্যোক্তাদের। সরকারের যুক্তি ছিল, উৎসবের কার্নিভালের দিনেই দ্রোহের কার্নিভাল ডাকা রাজ্যের ভাবমূর্তির জন্য ‘অমর্যাদাকর’। এদিকে কলকাতা হাইকোর্টও নির্দেশ দিয়েছে, পুজোর কার্নিভালে কোনও বিঘ্ন ঘটানো যাবে না। তবে ঢিল ছোড়া দূরত্বে দ্রোহের কার্নিভাল থেকে যে দুর্গা কার্নিভালে বিচারের দাবির চিৎকার ঢুকে পড়বে না, এই 'গ্যারান্টি' কেউই দিতে পারছেন না।

More Articles