'ন্যায় যাত্রা' নিয়ে মালদহে রাহুল, নিজের গড়ে কেন গড়হাজির ডালু?

Bharat Jodo Nyay Yatra: মালদহ আদতে যার গড়, যে নেতার জন্য মালদহে কংগ্রেসের এত প্রতাপ, সেই আবু হাসেম খান চৌধুরী ওরফে ডালু কোথায় এই বিরাট ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রায়?

বাংলা, বিহার ঘুরে ফের বাংলায় পা রেখেছে রাহুল গান্ধির 'ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা'। মালদহে ইতিমধ্যে পৌঁছেও গিয়েছেন রাহুল। সেই যাত্রায় যোগ দিতে উত্তরবঙ্গে পৌঁছেছেন বহু বাম নেতাই। তৃণমূল নেত্রীকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু তিনি সেই ডাকে সাড়া দেননি। এদিন মালদহেই আলাদা সভা রয়েছে মমতার। এদিকে মালদহ আদতে যার গড়, যে নেতার জন্য মালদহে কংগ্রেসের এত প্রতাপ, সেই আবু হাসেম খান চৌধুরী ওরফে ডালু কোথায় এই বিরাট ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রায়?

ইন্ডিয়া জোটে একে অপরের জোটসঙ্গী তৃণমূল এবং কংগ্রেস। তবে প্রায় কোনও কথাতেই একমত হতে পারেনি দুই দল। বরং গোড়া থেকেই 'একলা চলো' নীতির কথা বলে এসেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রায় বারবার তৃণমূলনেত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তিনি তা এড়িয়েছেন। বরং যাত্রার দিনেই মালদহে সভা করছেন তিনিও। কার্যত বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন, তিনিও কম যান না কোনও ভাবেই। তবে বারবার তৃণমূল ও কংগ্রেসের মৈত্রীর কথা শোনা গিয়েছে যাঁর মুখে তিনি ডালু। এমনকী বামেদের সঙ্গে জোটের চেয়ে তৃণমূলের সঙ্গে বন্ধুত্বকেই এগিয়ে রাখতে চেয়েছেন তিনি। বারবার তিনি দাবি করেছেন, যাতে বাংলায় তৃণমূলের সঙ্গেই জোট বাঁধে কংগ্রেস।

মালদহ দক্ষিণ কেন্দ্রে পর পর তিনবারের সাংসদ ডালু। মালদহ কার্যত তাঁর দুর্গ। বছরের গোড়াতেও তাঁকে নিয়মিত দলের কর্মসূচীতে অংশ নিতে দেখা গিয়েছে। জনসংযোগের কাজে মন দিয়েছেন। দক্ষিণ মালদহ লোকসভা কেন্দ্র থেকে চতুর্থবারের জন্য প্রার্থী হওয়ার কথাও ঘোষণা করেছিলেন নিজের মুখেই। স্বাভাবিক ভাবেই তাঁর এই সক্রিয়তা নজর কেড়েছিল রাজনৈতিক মহলের। অনেকেই প্রশ্ন তোলেন, এতদিন কোথায় ছিলেন ডালু? যদিও বিরোধীদের কথায় তেমন কান দেননি কংগ্রেস নেতৃত্ব। কিছুদিন আগেই দলে যাঁর এত সক্রিয়তা ছিল, সেই ডালু কেন রাহুলের যাত্রায় গড়হাজির? স্বাভাবিক ভাবেই উঠেছে প্রশ্ন। দলের তরফে ব্যাপারটি যতই আড়াল করার চেষ্টা চলুক না কেন, তবু বারবার নানা মহলে উঠে আসছে ডালুর কথা। দলীয় সূত্রের খবর, আবু হাশেম খান চৌধুরী তথা ডালু নাকি বর্তমানে বেশ অসুস্থ। কোনও কোনও পক্ষ আবার দাবি করেছে, রাহুলের যাত্রায় অংশ না নিলেও বুধবার মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক সভায় দেখা যেতে পারে ডালুকে। এ নিয়ে অবশ্য কোনও পক্ষই মুখ খোলেনি।

আরও পড়ুন: কাঁচ ভাঙল রাহুলের গাড়ির! ন্যায় যাত্রায় নিরাপত্তার ব্যবস্থাই করেনি তৃণমূল প্রশাসন?

বুধবার সকালে বিহারের কাটিহার জেলার লাভা হয়ে ৮১ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে মালদার হরিশ্চন্দ্রপুরের মাহারিপাড়ায় রাহুল গান্ধীর ন্যায় যাত্রা প্রবেশ করবে। বিহারের কংগ্রেস নেতৃত্বের কাছ থেকে পতাকা হস্তান্তর হবে পশ্চিমবঙ্গের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরীর হাতে। জেলার নেতারা উপহার দিয়ে রাহুলকে স্বাগত জানাবেন। কিন্তু খোদ জেলা সভাপতি তথা সাংসদ ডালুবাবু সে সময়ে উপস্থিত থাকছেন না বলেই সূত্রের খবর। এখনও পর্যন্ত ঠিক রয়েছে, ইংরেজবাজারে পথসভা করবেন রাহুল। এমনকী, ডালুর সংসদীয় ক্ষেত্র এবং অন্যতম ভোটব্যাঙ্ক সুজাপুরে রাহুল রাত্রিযাপন এবং কর্মী বৈঠক করবেন। এর কোনওটাতেই থাকবেন না সাংসদ। জেলা কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি কালীসাধন রায় মঙ্গলবার বলেন,"ডালুবাবুর করোনা হয়েছিল। তার পর থেকেই নানা রকম উপসর্গ তাঁকে ভোগাচ্ছে। সম্প্রতি তিনি ফের অসুস্থ হয়েছেন। চিকিৎসকরা বাইরে যেতে নিষেধ করেছেন। তাই রাহুলের সফরসূচিতে থাকতে পারছেন না তিনি।"

 Why MP Abu Hashem Khan Chowdhury is not staying in Malda Rahul Gandhi Bharat Jodo Nyay Yatra

২০০৬ সালে উপনির্বাচনে অবিভক্ত মালদহ লোকসভা কেন্দ্র থেকে প্রথমবার সাংসদ নির্বাচিত হন কোতোয়ালি পরিবারের এই সদস্য। তারপর ২০০৯ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত দক্ষিণ মালদহের সাংসদ নির্বাচিত হয়ে এসেছেন তিনি। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনেও যে তিনি আরও একবার দক্ষিণ মালদহের প্রার্থী হতে প্রস্তুত তা স্পষ্টতই ধরা পড়েছে ডালুবাবুর বক্তব্যে। বছরের গোড়া থেকেই রীতিমতো ময়দানেও নেমে পড়তে দেখা গিয়েছে অশীতিপর এই সাংসদকে। সম্প্রতি বারবার দলের অন্দরেই সওয়াল করতে দেখা গিয়েছে তৃণমূলের সঙ্গে জোটের পক্ষে। বেশ কয়েক বছর ধরেই রাজ্যে বামেদের সঙ্গে জোটে গিয়ে ভোট লড়ছে কংগ্রেস। তবে ২০২৪ ভোটে বামেদের হাত ছেড়ে তৃণমূলের হাত ধরে ভোট লড়ুক কংগ্রেস, তেমনটাই দাবি ডালুর। সম্প্রতি তিনি দাবি করেন, অবশ্যই তৃণমূলের একটা ভাল পার্সেন্টেজ এখানে আছে। সিপিএমের সেটা নেই। আমাদের যেসব জায়গায় কংগ্রেস ভাল আছে, সেটা তো ভালই। তার সঙ্গে তৃণমূল যুক্ত হলে আরও ভাল হবে। আমরা সে আশাতেই আছি এবং আমাদের লোককেও বলছি, যদি জোট হয় এরকমভাবেই করতে হবে।”

আরও পড়ুন: জোট নয়, প্রতিপক্ষ কংগ্রেস! রাহুলের ন্যায় যাত্রার দিনেই জনসভা কেন মমতার?

এদিকে আবার, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর নেতৃত্বে বাংলার কংগ্রেস বামেদের সঙ্গে চলতেইইন্ডিয়া জোটের একাধিক বৈঠকের পরও, বাংলায় এসে অধীর চৌধুরীর গলায় তৃণমূল বিরোধী স্বর শোনা গিয়েছে বারবার। তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, এ রাজ্যে তাদের লড়াই বিজেপি এবং তৃণমূলের সঙ্গেই। যে অনেক বেশি স্বচ্ছন্দ্য, তা বারবারই ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছেন প্রদেশ নেতা। সে নিয়ে তাঁর বিরোধ বেঁধেছে প্রবীণ নেতা ডালুর সঙ্গেও। তবে সেই মতপার্থক্যের জেরে কি এবার রাহুলের যাত্রায় না যোগ দিয়ে তৃণমূলের প্রশাসনিক সভাতেই যোগ দিতে চলেছেন ডালু। তেমন একটা সম্ভাবনার কথাও কিন্তু ঘুরছে হাওয়ায়। আর সেটা যদি সত্যিই ঘটে, তবে মালদহে কংগ্রেসের গড়ে কতটা পড়তে চলেছে তার প্রভাব, সেটাই এখন দেখার।

 

 

More Articles