আপাত হার সত্ত্বেও কি সরকার গড়তে চলেছে জোট INDIA-ই? যা জানালেন রাহুল

Lok Sabha Election 2024: গত লোকসভা ভোটে ৫২টি আসন পেয়েছিল কংগ্রেস। তবে পাঁচ বছর পর সেঞ্চুরির দোরগোরায় গিয়ে থেমেছে কংগ্রেস। সাফল্য পেয়েছে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন জোট ইন্ডিয়াও।

বুথ ফেরত সমীক্ষা বলেছিল, দেশ জুড়ে মুখ থুবড়ে পড়বে জোট ইন্ডিয়া। ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর বলেছিলেন, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধির আগামী কয়েক বছর রাজনীতি থেকে দূরে থাকা প্রয়োজন। অথচ সেই রাহুলই ২০২৪ লোকসভা ভোটে দু'দুটি আসনে লড়লেন, এবং বলাই বাহুল্য বিপুল ভোটে জিতলেন। গত লোকসভা ভোটের তুলনায় দ্বিগুণ আসন এবার জিতে নিয়েছে কংগ্রেস। গত লোকসভা ভোটে যা ছিল ৫২, তা-ই এবার হয়েছে ৯৯। শুধু কংগ্রেস নয়, সমস্ত বুথ ফেরত সমীক্ষার মুখে ছাই দিয়ে ভালো ফল করেছে জোট ইন্ডিয়াও। মোট ২৩৩টি ভোট পেয়েছে ইন্ডিয়া জোট। যদিও ২৯২টি আসনে জয় নিয়ে ফের সরকার গড়তে চলেছে সেই এনডিএ। যার মধ্যে ২৪০টি আসন একাই জিতেছে বিজেপি। সে যাই হোক, লড়াই কিন্তু হয়েছে হাড্ডাহাড্ডি। কার্যত বিরোধীশূন্য জায়গা থেকে একটা জায়গায় উঠে আসতে পেরেছে দেশের অবিজেপি জোট। আর লোকসভা ভোটের ফলপ্রকাশের পরেই সাংবাদিক বৈঠকে হাজির হলেন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব।

লোকসভা নির্বাচনে বহু বছর পর ঘুরে দাঁড়াতে দেখা গিয়েছ কংগ্রেসকে। এর নেপথ্যে রয়েছে বহু সমীকরণ। ভারত জোড়ো যাত্রার মাধ্যমে যেভাবে জনসংযোগ করতে দেখা গিয়েছিল রাহুলকে, তার ফল কি কিছুটা হলেও পেল কংগ্রেস। যদিও সাংবাদিকের মুখোমুখি হয়ে দলীয় নেতৃত্ব জানালেন, মানুষের রায়ে হার হয়েছে মোদির। দেশবাসী জানিয়ে দিয়েছেন, মোদি-শাহকে তাঁরা চান না।

আরও পড়ুন: আসন ভাগ করতে চাননি রাজ্যে, এবার কি ইন্ডিয়া জোটের মাথা হতে চাইবেন মমতা?

লোকসভা ভোটে জিতে সরকার গড়তে চললেও প্রত্যাশিত ফল আসেনি বিজেপির ঝুলিতে। যে উত্তরপ্রদেশ, যে অযোধ্যা, যে গোবলয় নিয়ে এত গর্ব গেরুয়া শিবিরের, সেখানেই মুখ থুবড়ে পড়েছে বিজেপি। লোকসভা ভোটের কথা ভেবেই রামমন্দির উদ্বোধনের একগুচ্ছ কর্মসূচী বছরভর সাজিয়েছিল বিজেপি। একের পর এক জনসভায় সংখ্যালঘুর বিরুদ্ধে কুকথা বলে হিন্দুভোট টানতে চেয়েছেন মোদি। তবে আসলে তেমনটা হয়নি। মোদি মুখে যতই ক্লিন সুইপের দাবি করুক না কেন, তাঁর চারশো পারের দাবি ধুয়ে মুছে তো গিয়েইছে। এমনকী ৩০০ পর্যন্ত পেরোতে পারেনি বিজেপি।

গত লোকসভা ভোটে ৫২টি আসন পেয়েছিল কংগ্রেস। তবে পাঁচ বছর পর সেঞ্চুরির দোরগোরায় গিয়ে থেমেছে কংগ্রেস। সাফল্য পেয়েছে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন জোট ইন্ডিয়াও। ওয়েনাড় ও রায়বরেলি- দুটি কেন্দ্র থেকে ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন রাহুল। গত কয়েক বছরের ব্যর্থতার ইতিহাস মুছে জয় এসেছে এই লোকসভা ভোটে। দুটি আসনেই বিপুল ভোটে জিতে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। তার পরেই কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গের সঙ্গে সাংবাদিক বৈঠকে হাজির হন রাহুল। হাতে ছিল সংবিধান। সঙ্গে ছিলেন সনিয়া ও কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা জয়রাম রমেশ।

কংগ্রেস সভাপতি খাড়্গে এদিন সাংবাদিকদের সামনে জানান, “কংগ্রেসকে অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে নির্বাচন লড়তে হয়েছে। সমস্ত স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলোকে নিজেদের কুক্ষিগত করতে চেয়েছিলেন মোদি। কংগ্রেসের ইস্তেহারও অপব্যাখ্যা করেছিল বিজেপি।” তবে শত চেষ্টা সত্ত্বেও কংগ্রেসকে আটকানো যায়নি বলেই মনে করছেন খাড়গে। দলের এই সাফল্যের নেপথ্যে রাহুলের দুই যাত্রার বড় ভূমিকা রয়েছে বলেই জানান তিনি।

চেনা আক্রমণের সুরেই বিজেপিকে কটাক্ষ করতে দেখা গিয়েছে রাহুলকেও। কংগ্রেস নেতা জানান, সংবিধান বদলের ষড়যন্ত্র করছিল বিজেপি। কিন্তু নির্বাচনে সেই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করেছেন ভারতের আমজনতা। দরিদ্র, দলিত, কৃষকরা এই চেষ্টা বিফল করে দিয়েছেন। সেই সঙ্গে রাহুলের দাবি, দেশবাসী জানিয়ে দিয়েছেন তাঁরা মোদি-শাহকে আর চান না। প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি আরও জানান, কংগ্রেস কোনও একটা দলের বিরুদ্ধে লড়তে নামেনি। মোদির ‘দখল’ করা সমস্ত সংস্থার বিরুদ্ধেও সংগ্রাম চালিয়ে গিয়েছে কংগ্রেস। তারই প্রতিফলন হয়েছে নির্বাচনের ফলাফলে।

ভোট শেষ হতেই কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে জানিয়েছিলেন, ইন্ডিয়া জোট ২৯২ আসনে জিতবে। সেই আসন না জিততে পারলেও ২৩৩টি আসন পেয়েছে ইন্ডিয়া জোট। এদিকে, মোদি বলেছিলেন চারশো পারের কথা। টেনেটুনে ২৯২টি আসন পেয়েছে এনডিএ। ফলে বোঝাই যায়, খুব বেশি ব্যবধান নেই ইন্ডিয়া আর এনডিএ-র প্রাপ্ত ভোটের মধ্যে। আগামী ৫ জুন অর্থাৎ বুধবারই ইন্ডিয়া জোটের শরিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চলেছে কংগ্রেস। মঙ্গলবার রাহুল সাংবাদিক বৈঠকে জানান, ইন্ডিয়া জোটের শরিকদের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন: রায়বরেলি কংগ্রেসেরই! দুই আসনেই যেভাবে ব্যাপক জয়ের মুখে রাহুল গান্ধি!

তবে কি কোনও ভাবে ক্ষমতায় আসতে পারে ইন্ডিয়া জোট? কিন্তু কীভাবে? বিশেষজ্ঞদের মতে, সেই সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না মোটেও। কারণ তেলুগু দেশম পার্টি এবং নীতীশ কুমারের জেডিইউ- দুই দলই অতীতে কংগ্রেসের জোটসঙ্গী ছিল। এবারের নির্বাচনে টিডিপি এবং জেডিইউ, দু'দলই ১৫টি আসনের কাছাকাছি জিতেছে। এনডিএ ছেড়ে তারা ইন্ডিয়াতে যোগ দিতে পারে, সেই সম্ভাবনাও প্রবল। শোনা গিয়েছে, জোট ইন্ডিয়ার তরফে নীতীশকে উপ-প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। এর আগে নিজের সুবিধা মতো একাধিক বার দল বদলেছেন নীতীশ। কিছুদিন আগেই ইন্ডিয়া জোটকে অন্ধকারে ফেলে এনডিএ-র হাত ধরেন নীতীশ। এবার রাতের ভুলোমনের মতোই কি ফের কংগ্রেসের সঙ্গে ফিরে আসবেন নীতীশ? বদলে যাবে সমস্ত সমীকরণ? তবে এ নিয়ে এখনই কিছু জানাতে চাননি রাহুল। তাঁর কথায়, “এখন বললে মোদি সব জেনে যাবেন, সতর্ক হয়ে যাবেন।”

তবে কি শেষপর্যন্ত মোদিকে সরিয়ে ক্ষমতায় আসবে ইন্ডিয়া জোট? তৃতীয়বার কুর্সিতে বসার ক্ষমতা হারাবেন মোদি? তা নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনা হতে চলেছে ইন্ডিয়া জোটের ৫ তারিখের বৈঠকেই। একই সঙ্গে ইন্ডিয়া জোটের সঙ্গে কীভাবে থাকবে তৃণমূল, আদৌ থাকবে কিনা, তা নিয়েও সিদ্ধান্ত হবে কালই। তবে তৃণমূলের হাত ছাড়া বিপদের হতে পারে জোটের জন্য। কারণ রাজ্যে বিপুল ভোটে জিতে গিয়েছে তৃণমূল। তবে লোকসভা ভোটে বাংলা জয়ের পর যেভাবে মমতা শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাহুলকে, তাতে সে সংশয়ের অবকাশ কম বলেই মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল। তবে রাজনীতির খেলা বলে কথা! না আঁচালে যে বিশ্বাস নেই, সেটাই বোধহয় সার কথা জোটের রাজনীতিতে।

More Articles