মেঘ ভাঙা বৃষ্টি, হড়পা বান! বিপর্যস্ত সিকিমে বাড়ছে মৃত্যু, খোঁজ নেই ২৩ সেনাজওয়ানের
North Sikkim, flash flood: উত্তর সিকিমের লোনাক লেকের উপরে মেঘ ভাঙে। যার ফলে উপচে গিয়েছে নদী। ভয়াবহ বিপর্যয়ে অন্তত ২৩ জন সেনাজওয়ান নিখোঁজ।
ফের প্রকৃতির কোপ। এবার সিকিম। মেঘ ভাঙা বৃষ্টি, ভয়ঙ্কর হড়পা বান, বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে পার্বত্য এই এলাকা। অন্তত ২৩ জন সেনাকর্মী নিখোঁজ হড়পা বানে। ইতিমধ্যেই তিনজনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। গ্যাংটক-সহ একাধিক এলাকা যোগাযোগবিচ্ছিন্ন। বিপদসীমা পার করে বইছে তিস্তা।
পাহাড়ি এলাকা মানেই প্রায় সবসময়. ধসের ভয় লেগেই থাকে। এবার বিপর্যয়ের মুখে সিকিম। ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের বিস্তীর্ণ অংশ ভাসিয়ে দিয়েছে তিস্তা। সিকিমের উত্তর-পূর্ব অংশ পুরোটাই ভেসে গিয়েছে সাম্প্রতিক বিপর্যয়ে। উত্তর সিকিমের লোনাক লেকের উপরে মেঘ ভাঙে। যার ফলে উপচে গিয়েছে নদী। ভেসে গিয়েছে সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের বিস্তীর্ণ অংশ। ভয়াবহ বিপর্যয়ে অন্তত ২৩ জন সেনাজওয়ান নিখোঁজ। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ওই হড়পা বানের সময়েই নিখোঁজ হয়ে যান সেনাজওয়ানদের ওই দলটি। তাঁদের খুঁজতে এলাকা জুড়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক তল্লাশি।
আরও পড়ুন: পুজোর বাজার মাটি, ছোট ব্যবসায়ীদের চরম দুর্ভোগ, কবে থামবে বৃষ্টি?
রাস্তা ভাসিয়ে বইছে তিস্তা নদীর জল। সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, বুধবার ভোর ছটা পর্যন্ত তিস্তার জল বিপদসীমার নিচে থাকলেও এতক্ষণে তা পার করে গিয়েছে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে। হড়পা বানের চোটে ভেসে গিয়েছে গ্যাংটক থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে সিংটামের কাছে ইন্দ্রেনি সেতু ভেসে গিয়েছে তিস্তার জলে। ভোর চারটে নাগাদ হড়পা বানে ভেসে গিয়েছে বালুটার গ্রাম। নদীর ধারের বসতিগুলি থেকে বাসিন্দাদের ত্রাণশিবিরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
গ্যাংটক থেকে ৯০ কিলোমিটার উত্তরে চাংথাং শহরের অবস্থাও তথৈবচ। তিস্তা বাঁধ সংলগ্ন এলাকা থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে নিরাপদ জায়গায়। উত্তর সিকিমের সিংটাম ও চাংথাংয়ের মধ্যে যোগাযোগকারী ডিকচু ও টুং শহরের দু'টি সেতু অনেকটাই বিপর্যস্ত হয়েছে। বর্ডার রোড অর্গানাইজেশন (বিআরও) জায়গায় জায়গায় উদ্ধারকাজ শুরু করেছে।
উত্তর ও পূর্ব সিকিমে আগেই জারি করা হয়েছিল হড়পা বানের সতর্কতা। মঙ্গলবার রাত থেকেই সিকিমের একাধিক অংশে শুরু হয়েছে ভারী বৃষ্টি। গাজলডোবা, দমোহনি, মেখালিগঞ্জ এবং ঘিশের মতো একাধিক নিচু এলাকা প্রায় জলমগ্ন। এখনও পর্যন্ত মারা গিয়েছে ৩ জন। তবে বেশ কয়েকজন নিখোঁজ বলে জানা গিয়েছে স্থানীয় প্রশাসনের তরফে। তাঁদের খোঁজে চলছে তল্লাশি অফিযান। ইতিমধ্যেই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষনে সিংটাম গিয়েছেন প্রেম সিং তামাং।
তিস্তা নদীর পাড় সংলগ্ন এলাকাগুলি থেকে জনবসতি সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রশাসনের তরফে। বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। পাশাপাশি তিস্তা নদী সংলগ্ন পর্যটনস্থলগুলিতে পর্যটকদের আসা-যাওয়ার উপরেও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে সিকিম রাজ্য় বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের তরফে।
আরও পড়ুন:বন্দে ভারতের স্লিপার কোচ কেমন দেখতে? ভারতে এমন চোখ ধাঁধানো ট্রেনও সম্ভব!
এদিকে বৃষ্টি থামার নামগন্ধ নেই। আগামী ৩-৪ দিন সিকিম জুড়ে লাগাতার বৃষ্টির সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া দফতর। হাওয়া অফিসের তরফে মাইক্রোব্লগিং সাইট এক্স-এ জানানো হয়েছে, আগামী কয়েকদিন মাঝারি থেকে হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে উত্তরবঙ্গ জুড়ে। তবে উত্তরবঙ্গের বৃষ্টির প্রভাব পড়েছে দক্ষিণবঙ্গতেও। দিন কয়েক ধরেই বৃষ্টির বিরাম নেই গোটা বাংলাতেই। আশ্বিন প্রায় শেষ হতে যায়। তবু বর্ষার বিরাম নেই এ বঙ্গে। কবে কাটবে বর্ষার ভ্রূকূটি, আপাতত সেদিকেই তাকিয়ে বাংলাবাসী।