অভিনয়কে ‘টাটা’, রাজনীতির ময়দানেও ভক্তের ভোট পাবেন সুপারস্টার বিজয়?

Thalapathy Vijay: ২০২৬ সালে তামিলনাড়ুতে বিধানসভা ভোট। শোনা যাচ্ছে, সেই বিধানসভা ভোটকেই পাখির চোখ করে এগোচ্ছেন অভিনেতা বিজয়।

একের পর এক হিট তাঁর ঝুলিতে। আজও তিনি পর্দায় এলে প্রেক্ষাগৃহ ফেটে পড়ে চিৎকারে। খাতায়-কলমে তিনি অবশ্য দক্ষিণী অভিনেতা। তবে সেই ভৌগোলিক ব্যবধান ঘুচিয়ে অচিরেই তিনি পৌঁছে গিয়েছেন দেশের প্রতিটি কোণায়। তিনি অভিনেতা বিজয়। দর্শক-ভক্তদের কাছে তিনি পরিচিত থ্যালাপ্যাথি বিজয় নামে। মূলত তামিল সিনেমায় কাজ করলেও গোটা দেশের হয়ে উঠতে সময় লাগেনি বিজয়ের। কার্যত ভারতীয় অভিনেতাদের মধ্যে অন্যতম সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত অভিনেতা হিসেবেও খ্যাতি রয়েছে তাঁর। ফোর্বস ইন্ডিয়ার টপ হান্ড্রেড সেলিব্রিটি তালিকায় জায়গায় করে নিয়েছে সাত বার। জনপ্রিয়তার এমন শীর্ষে থাকা থ্যালাপ্যাথি বিজয় অভিনয় ছাড়লেন। ছুটি নিলেন রঙিন চলচ্চিত্রের দুনিয়া থেকে। রাজনীতির মঞ্চে পা দিতে ছেড়ে এলেন বিপুল পারিশ্রমিকের লোভ, রংচঙে দুনিয়ার মোহও।

দক্ষিণী অভিনেতাদের রাজনীতির আঙিনায় প্রবেশ তেমন বিরল কিছু নয়। কমল হাসান থেকে শুরু করে থ্যালাইভা রজনীকান্ত, সক্রিয় রাজনীতিতে এর আগেও প্রবেশ করেছেন অসংখ্য জনপ্রিয়তম তারকা। কমল হাসান মাক্কাল নিধি মায়াম নামে নিজস্ব একটি রাজনৈতিক দল শুরু করেছিলেন ২০১৮ সালে। জুনিয়র এনটিআরের মতো জনপ্রিয়তম দক্ষিণী তারকার পরিবারে রয়েছে দীর্ঘ রাজনীতিক ইতিহাস। বিজয়ের অবশ্য তেমন কোনও নেপথ্য-ইতিহাস নেই। তাঁর বাবা এস এস চন্দ্রশেখর ছিলেন একজন তামিল চলচ্চিত্র পরিচালক। মা শোভা চন্দ্রশেখর একজন সুগায়িকা। ১৯৮৪ সালে বাবার নির্দেশনায় 'ভেট্রি' নামে একটি ছবি দিয়ে পর্দার দুনিয়ায় পা রাখেন তিনি। তার পর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সত্তরেরও বেশি বাণিজ্যসফল ছবি করেছেন বিজয়। দর্শকের মন জিতেছেন। বেশ কয়েক দিন ধরেই কানাঘুষো শোনা যাচ্ছিল, অভিনয় থেকে নাকি বিদায় নিতে চলেছেন এই দক্ষিণী তারকা। তবে অনেকেই মনে করছিলেন, এই দাবি সত্য নয়। তবে সেই গুজবই সত্যি হল শেষমেশ। সম্প্রতি খোদ বিজয় জানালেন, রাজনীতির জন্য অভিনয়ের দুনিয়া পাকাপাকি ভাবে ছাড়ছেন তিনি।

আরও পড়ুন: উপমুখ্যমন্ত্রিত্বে স্তালিন-পুত্রই, ভারতীয় রাজনীতিতে কতটা গভীরে পরিবারতন্ত্রের শিকড়?

গত ফেব্রুয়ারিতেই বিজয় ঘোষণা করে দিয়েছিলেন তাঁর নিজস্ব রাজনৈতিক দলের। যার নাম রাখা হয় তামিলগা ভেত্রি কাজগাম তথা টিভিকে। অগস্ট মাসে নির্বাচন কমিশনের কাছে আনুষ্ঠানিক ভাবে নিবন্ধিত হয়ে যায় বিজয়ের নয়া দল। ওই সময়েই দলের পতাকাও সকলের সামনে নিয়ে এসেছিলেন তিনি। আর তার পর আরও একটা মাইলফলক ছুঁয়ে রবিবার তামিলনাড়ুতে তাঁর প্রথম জনসভা (স্থানীয় ভাষায় যাকে বলে মানাডু) করলেন জোসেফ বিজয় চন্দ্রশেখর তথা থ্যালাপ্য়াথি বিজয়। ঠিক কোন জায়গা থেকে চলচ্চিত্রের রঙিন দুনিয়া ছেড়ে রাজনীতির শুষ্ক আঙিনায় পা রাখা, তা তুলে ধরলেন বিজয় সেই জনসভা থেকেই।

একের পর এক হিট, এত জনপ্রিয়তা, বিপুল পারিশ্রমিক, সে সব ছুড়ে ফেলে কেন এলেন তিনি রাজনীতিতে? তা-ও আবার কোনও প্রতিষ্ঠিত দল নয়, একেবারে শূন্য থেকে শুরু, স্বাভাবিক ভাবেই লড়াইটা যে সহজ হবে না, তা ভালোই জানেন তিনি। তবে কোন জায়গা থেকে এতবড় ঝুঁকি নেওয়া? জানা গিয়েছে তাঁর আসন্ন ছবি 'থ্যালাপাথি ৬৯' ছবির জন্য নাকি ২৭৫ কোটি টাকা পারিশ্রমিক নিয়েছেন তিনি। যেখানে কমল হাসানের সঙ্গে সহ-চিত্রনাট্যকার হিসেবেও কাজ করেছেন বিজয়।

সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পাশাপাশি পারিবারিক রাজনীতির বিরুদ্ধেও সরব হন বিজয় সেদিন জনসভা থেকে। ভারতে পারিবারিক রাজনীতির ইতিহাস দীর্ঘ। সেই পারিবারিক রাজনীতির ধারাকেও কার্যত সেদিন মঞ্চ থেকে বিঁধেছেন বিজয়। সম্প্রতি স্টালিনপুত্র উদয়নিধিকেই রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী করেছে ডিএমকে। সেই ঘটনা নিয়ে নতুন করে তামিলনাড়ুর রাজনীতিতে শুরু হয়েছে পরিবারতন্ত্রের দাপট নিয়ে চর্চা। একই সঙ্গে সভা থেকে নাম না করেই কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ও তামিলনাড়ুর ডিএমকে সরকার উভয়কে বিঁধেছেন তিনি। পেরিয়ারের রাজনীতিই তাঁর আদর্শ, সে কথা বলতেও ভোলেননি বিজয়।  ভিল্লপুরম জেলার বিক্রভান্দি শহরে আয়োজন করা হয়েছিল বিজেয়ের প্রথম রাজনৈতিক সমাবেশ। যেখানে প্রায় ৩ লক্ষ মানুষ হাজির হয়েছিলেন।

সেখান থেকে নিজেকে চলচ্চিত্র তারকা হিসেবে নয়, বরং রাষ্ট্রের একজন নতুন পথ নির্ধারণকারী নেতা হিসেবে তুলে ধরেন। কথা বলেন, বিকল্প রাজনীতির। উঠে আসে অভিনয়ের প্রথম দিনগুলোর কথাও। সে সময় চেহারা ভালো নয় বলে কম কথাবার্তা সহ্য করতে হয়নি বিজয়কে। তবে সেই সব সমালোচনাকে পিছনে ঠেলে নিজেকে প্রমাণ করেছেন তিনি। জনগণের উদ্দেশে তাঁর বার্তা, কেরিয়ারের ঝুঁকি নিয়ে, লোভনীয় পারিশ্রমিককে ছুড়ে ফেলে তিনি এসেছেন শুধুমাত্র বিজয় হয়েই। সেই বিশ্বাস, সেই আশা থেকেই মানুষকে পাশে চান তিনি। পাশাপাশি আদর্শগত জায়গা থেকেই রাজনৈতিক শালীনতা বজায় রাখার কথা বারবার উঠে এসেছে তাঁর কাছ থেকে।

আরও পড়ুন: জলের ওপর ভাসছে পাথর! কীভাবে সম্ভব? যে রহস্য লুকিয়ে রয়েছে তামিলনাড়ুর মন্দিরে

২০২৬ সালে তামিলনাড়ুতে বিধানসভা ভোট। শোনা যাচ্ছে, সেই বিধানসভা ভোটকেই পাখির চোখ করে এগোচ্ছেন অভিনেতা বিজয়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, রাজনীতির মঞ্চেও কি থ্যালাপ্যাথি বিজয় ম্যাজিকে মজবেন তামিলনাড়ুবাসী। নাকি সেক্ষেত্রে রাজনীতির পাকাপোক্ত খেলোয়ার স্ট্যালিন কিংবা অন্যান্য চেনামুখের উপরেই বেশি ভরসা রাখবেন মানুষ? গ্ল্যামারের দুনিয়া ছেড়েছুড়ে বিজয়ের এই রাজনীতির আঙিনায় পা রাখা শেষপর্যন্ত কতটা লাভজনক হতে চলেছে তাঁর জন্য? যদিও জনসভায় ৩ লক্ষ মানুষের ভিড় তার উত্তর খানিকটা দিয়েছে। তবুও সংশয়। দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান নিয়ে তামিলনাড়ুর রাজনীতিতে ২০১৮ সালে পা রেখেছিল সুপারস্টার কমল হাসানের দল মাক্কাল নিধি মায়াম। তবে তামিল রাজনীতিতে এখনও পর্যন্ত তেমন কোনও ছাপ রাখতে পারেনি কমলের দল। বিজয়ের ক্ষেত্রে কি গল্পটা অন্যরকম হবে? সেদিকে চোখ থাকবে গোটা দেশের।

More Articles