১০০-তে শূন্য! প্রকৃতি সংরক্ষণ সূচকে কেন এমন লজ্জাজনক অবস্থা ভারতের?

India Nature Conservation Index Rank: বিশ্বের অবৈধ বন্যপ্রাণী ব্যবসার ক্ষেত্রে চতুর্থ স্থানে রয়েছে ভারত।

প্রকৃতি, আবহাওয়া, জলবায়ু দ্রুত বদলে যাচ্ছে। খুব তথ্য ও তত্ত্বগত ধ্যানধারণা ছাড়াই যে কোনও সাধারণ মানুষ খালি চোখেই তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন। এককালে ভারতের পিঠে উন্নয়নশীল দেশের ট্যাগ ছিল। এখন সরকার বলেছে দেশ এতই এগিয়ে গেছে যে বিশ্বের এই বৃহত্তম গণতন্ত্র জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসন লাভের দিকে এগোচ্ছে। কোন কোন মাপকাঠিতে এগোচ্ছে তা অবশ্য স্পষ্ট নয়। দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চাকরির মতো মানবকল্যাণ বিষয় এখানে যে উপেক্ষিত তা কয়েদিক আগেই জাতিসংঘের এক রিপোর্টে প্রকাশ পেয়েছে। বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দরিদ্র মানুষের বাস ভারতে। মানুষের কল্যাণই যেখানে গৌণ সেখানে প্রকৃতির দফারফা হবে সেই স্বাভাবিক। প্রকৃতি সংরক্ষণ সূচক বলছে, প্রাকৃতিক পরিবেশ সুরক্ষার ক্ষেত্রে ভারত ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৭৬ তম স্থানে রয়েছে। ১০০ নম্বরের মধ্যে আমাদের দেশ পেয়েছে ৪৫.৫।

প্রকৃতি সংরক্ষণ সূচকের জন্য দেশগুলিকে তাদের প্রচেষ্টার ভিত্তিতে চারটি মাপকাঠিতে বিচার করা হয়েছিল: সুরক্ষিত অঞ্চল পরিচালনা, জীববৈচিত্র্যের বিরুদ্ধে হুমকির মোকাবিলা, প্রকৃতি এবং সংরক্ষণ আর একটি দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতের ভাবনা। গোল্ডম্যান সোনেনফেল্ড স্কুল অফ সাসটেইনেবিলিটি অ্যান্ড ক্লাইমেট চেঞ্জ এবং BioDB.com-এর রিপোর্টে বলা হয়েছে, “যদিও ভারতের স্থলভাগের ৭.৫ শতাংশ সুরক্ষিতই, তবে সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকায় উন্নতির প্রয়োজন। এখানে মাত্র ০.২ শতাংশ জাতীয় জলের অংশ এবং কোনটিই এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোনে পড়ছে না।”

আরও পড়ুন- বাতাসে শ্বাস নেওয়া ভার, নদীতে বিষ! কোন পথে দূষণ-রাক্ষসকে রুখবে রাজধানী দিল্লি?

এই সূচকে প্রকৃতি সংরক্ষণের ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানীয় দেশগুলির মধ্যে রয়েছে লুক্সেমবার্গ, এস্তোনিয়া, ডেনমার্ক, জিম্বাবুয়ে এবং কোস্টারিকা সহ অন্য কিছু দেশ। সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা দেশটি কিরিবাতি। এই সূচকে ১৮০ নম্বর স্থানে রয়েছে এই দেশ। ভারত তার কয়েক ধাপ আগে, ১৭৬ নম্বর স্থানে। এই উপমহাদেশের একমাত্র দেশ যেটি সেরা ১৫ টি দেশের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে, তা হল ভুটান। ভুটান বাসস্থান, সুরক্ষিত এলাকা এবং সংরক্ষণের জন্য অর্থনৈতিক ও নীতিগত প্রতিশ্রুতি ও প্রচেষ্টার জন্য প্রশংসিত হয়েছে বিশ্বে।

যে চারটি মূল ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে এই সূচক নির্ধারিত হয়েছে তাতে মোট ২৫ টি মাপকাঠি ছিল। প্রতিটি দেশকে তার প্রাপ্ত নম্বরের উপর ভিত্তি করে এই তালিকায় স্থান দেওয়া হয়েছে। ভারত সংরক্ষিত এলাকার পরিবেশগত বৈচিত্র্য এবং সংরক্ষণের লক্ষ্যে অর্থনৈতিক প্রচেষ্টার মতো কিছু নির্দিষ্ট মাপকাঠিতে ফল খারাপ করেনি। তবে সমস্ত নম্বর কাটা গিয়েছে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণে নিষ্ক্রিয়তার কারণে। সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকার ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের নানা প্রজাতির সুরক্ষায় ভারত ১০০-র মধ্যে ০ পেয়েছে।

আরও পড়ুন- পাকিস্তানের চেয়েও দ্বিগুণ! বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে দরিদ্র মানুষ ভারতেই, জানাচ্ছে রিপোর্ট

এই প্রতিবেদনে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, ভারতের বিশাল এবং বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক এলাকার কারণে, দেশে সংরক্ষণ যোগ্য বেশ কয়েকটি 'অনন্য আবাসস্থল' রয়েছে এবং ভারত সেগুলির সংরক্ষণে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভালো কাজ করছে। মাটির স্বাস্থ্য এবং দূষণের গুরুত্বের উপরও জোর দেওয়া হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। বিশেষ করে দেশে ব্যাপক পরিমাণে কীটনাশক ব্যবহারের কারণে মাটির যে ক্ষতি হচ্ছে তার আশু সমাধান প্রয়োজন বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। শিল্প ও অন্যান্য উদ্দেশ্যে বনভূমিকে কেটে ফেলার বিরুদ্ধেও সতর্ক করা হয়েছে। সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণ ছাড়া আরেকটি ক্ষেত্রেও ভারতের অবস্থা তথৈবচ। দেশে ব্যাপক পরিমাণে বন্যপ্রাণীর অবৈধ ব্যবসা চলছে বলে দেখা গেছে সমীক্ষায়।

স্থলজ প্রজাতির সুরক্ষায় ভারত ১০০-র মধ্যে ৭৩ পেয়েছে। পাশাপাশি এও উঠে এসেছে যে, বিশ্বের অবৈধ বন্যপ্রাণী ব্যবসার ক্ষেত্রে চতুর্থ স্থানে রয়েছে ভারত। বন্যপ্রাণীর বেচাকেনায় বার্ষিক আনুমানিক ১৫ বিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের এই ব্যবসার অংশ ভারত। এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ ভারত। সম্পদ সীমিত অথচ বাড়ছে জনসংখ্যা। ফলে দ্রুতই প্রকৃতিকে শেষ করে চলছে মানব উন্নয়ন। ভবিষ্যতে ভারতের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ এই জনসংখ্যাই! প্রাকৃতিক সংরক্ষণ অবশ্যই জনসংখ্যার ঘনত্বের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ হতে হবে। যদি এই ব্যাপক জনসংখ্যা আগামীতে আরও বৃদ্ধি পায় তাহলে প্রকৃতি সংরক্ষণ নিছকই প্রহসন হবে বলা বাহুল্য।

More Articles