নাসরুল্লাহের মৃত্যুর পরে ইজরায়েলকে হুঁশিয়ারি! হিজবুল্লাহের শীর্ষে কে এই নঈম কাসেম?

Naim Qassem: নাসরুল্লাহের মৃত্যুর পরে ইজরায়েলকে হুঁশিয়ারি দিতে যাকে দেখা গিয়েছিল, তিনি নঈম। যিনি এতদিন হিজবুল্লাহের সশস্ত্র গোষ্ঠীর প্রধান তো ছিলেনই, তার পাশাপাশি ছিলেন হিজবুল্লাহের সেকেন্ড ইন কম্যান্ডও।

গাজা, লেবানন এবং ইরান, তিন জায়গায় একসঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে ইজরায়েল। নিজেদের শক্তির খতিয়ান দিতে ইরানে শেষপর্যন্ত হামলা চালিয়েছে ইজরায়েল। তার প্রত্যাঘাত স্বরূপ ইরান পাল্টা কোন দায় দেয়, তা এখন আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগের বিষয়। দিন কয়েক আগেই লেবাননে হামলা চালিয়ে হিজবুল্লাহ প্রধান সৈয়দ হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যা করেছে ইজরায়েলি সেনা। তার রেশ কাটতে না কাটতে গাজায় হামাসপ্রধান সিনওয়ার খুন হন ইজরায়েলি সেনার হাতে। এই ধারা চলছেই। নাসরুল্লাহের মৃত্যুর পরেই ইজরায়েলকে হুমকি দিয়েছিল ইরান। এমনকী ইজরায়েলকে সায়েস্তা করতে মাঠে নেমে পড়েছিল ইয়েমেনের জঙ্গি সংগঠন হাউথিরাও। এই পরিস্থিতিতে এতদিন খালিই ছিল হিজবুল্লাহ প্রধানের পদ। অবশেষে সেখানে অভিষিক্ত হলেন হিজবুল্লাহের সশস্ত্র গোষ্ঠীর প্রধান শেখ নঈম কাশেম।

জল্পনা ছিলই। নাসরুল্লাহের মৃত্যুর পরে ইজরায়েলকে হুঁশিয়ারি দিতে যাকে দেখা গিয়েছিল, তিনি নঈম। যিনি এতদিন হিজবুল্লাহের সশস্ত্র গোষ্ঠীর প্রধান তো ছিলেনই, তার পাশাপাশি ছিলেন হিজবুল্লাহের সেকেন্ড ইন কম্যান্ডও। গত ২৭ সেপ্টেম্বর লেবাননের রাজধানী বেইরুটে হিজবুল্লাহের সদর দফতরে হামলা চালায় ইজরায়েলি সেনা। সেই হামলাতেই হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরুল্লাহের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যায়।

আরও পড়ুন: ইজরায়েলের হামলায় নিহত নাসরাল্লাহ, এবার হিজবুল্লাহর দায়িত্ব সামলাবেন কে?

তাঁর মৃত্যুর পর হিজবুল্লাহের শীর্ষপদে বসতে পারেন নাসরুল্লাহের খুড়তুতো ভাই হাশেম সফিউদ্দিন, এমনও জল্পনা শুরু হয়েছিল। শোনা যায়, সেই ১৯৯০ সাল থেকেই নাকি তাঁকে নাসরুল্লাহের উত্তরসুরি হিসেবে মনোনীত করা রয়েছে। তখনও অবশ্য ইরানে পড়াশোনা করছিলেন তিনি। সে যাই হোক, শেষপর্যন্ত সেই জল্পনায় সিলমোহর পড়েনি। কারণ সপ্তাহ তিনেক আগে ইজরায়েলি হামলায় মৃত্যু হয় সেই হাশেমেরও। তাঁর পরিবর্তে হিজবুল্লাহের সশস্ত্র শাখার প্রধান ৭১ বছর বয়সী নঈমকেই বেছে নিয়েছে সংগঠন।

সেই ১৯৯১ সাল থেকে হিজ়বুল্লার দ্বিতীয় শীর্ষ পদে রয়েছেন কাশেম। তখন লেবাননের এই গোষ্ঠীর প্রধান ছিলেন আব্বাস আল্‌-মুসায়ি। সেই আব্বাসেরও মৃত্যু হয়েছিল ইজ়রায়েলি হানায়। পরবর্তী সময়ে হিজবুল্লাহের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব যায় নাসরুল্লাহের হাতে। কাশেম পালন করেছেন সংগঠনের দ্বিতীয় শীর্ষ পদে দায়িত্ব। হিজ়বুল্লার অন্যতম মুখপাত্র হিসাবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। ২০০৬ সালে নাসরুল্লাহ আন্ডারগ্রাউন্ডে যাওয়ার পর থেকে বিভিন্ন বিদেশি সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার দায়িত্বও ছিল তাঁরই উপর।

১৯৫৩ সালে লেবাননের দক্ষিণে, বেইরুটে জন্ম কাশেমের। শিয়া আমাল আন্দোলনের মাধ্যমে রাজনৈতিক ময়দানে ক্রমে সক্রিয় হতে থাকেন কাশেম। যদিও ১৯৭৯ সালে সেই দলই ত্য়াগ করে বেরিয়ে আসেন কাশেম। ১৯৮২ সালে হিজবুল্লাহের জন্ম হয় লেবাননে। এই নঈম কাশেম ছিল প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের অন্যতম। ১৯৯২ সালে প্রথম বার সংসদীয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করে হিজবুল্লাহ। সে সময় হিজবুল্লাহের সংসদীয় নির্বাচনী প্রচারণার সাধারণ সমন্বয়কারীর ভূমিকায় ছিলেন কাশেম।

নাসরুল্লাহের মৃত্যুর সংবাদমাধ্যমের সামনে এসে ইজরায়েলকে হুঁশিয়ারি দিতে দেখা গিয়েছিল কাশেমকে। ইজরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার কথা শোনা গিয়েছিল তাঁর মুখে। নাসরুল্লাহ জমানাতেও হিজ়বুল্লার অন্দরে কাশেমের গুরুত্ব ছিল যথেষ্ট। জানা যায়, উপপ্রধান পদে থাকার সময়ে সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক অভিযানগুলির পরিকল্পনার পাশাপাশি ধর্মীয় কার্যকলাপগুলি পরিচালনা করতেন তিনি। সেই কাশেমকেই এবার প্রধান নেতা হিসেবে বেছে নিল হিজবুল্লাহ।

গত কয়েক মাসে ইজরায়েল-হিজবুল্লাহ দ্বন্দ্বের মধ্যে নিহত হয়েছেন অসংখ্য হিজবুল্লাহ কম্যান্ডার। লেবাননে যেখানে লাগাতার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইজরায়েল, সে সময় হিজবুল্লাহের শীর্ষপদ ফাঁকা থাকাটা মোটেই ভালো বার্তা দিচ্ছিল না শত্রু দেশগুলিকে। অবশেষে কাশেমকেই অভিভাবক বেছে নিল হিজবুল্লাহ। এদিকে লেবাননে তো বটেই, গাজাতেও লাগাতার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইজরায়েল। উত্তর গাজায় ইজরায়েলের সাম্প্রতিক হামলায় প্রায় একশোর কাছাকাছি মানুষ নিহত হয়েছেন বলে খবর। এর সঙ্গেই গাজায় সাহায্যকারী রাষ্ট্রসঙ্ঘের সংস্থা UNRWA-কে নিষিদ্ধ করেছে ইজরায়েল। খুব শিগগিরই তাদের বিরুদ্ধে আইনও আনতে চলেছে নেতানিয়াহুর দেশ। সংস্থার কর্মীদের বিরুদ্ধে ইজরায়েলবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগ এনেছে ইজরায়েল। এই বিষয়টি নিয়ে গভীর ভাবে ক্ষুব্ধ রাষ্ট্রপুঞ্জ। এই বিষয়টি অমানবিক বলেই দাবি তাদের।

আরও পড়ুন:হিজবুল্লাহর গোপন বাঙ্কারে বিপুল সোনাদানা, ধনরাশির খোঁজ! হাসপাতালের নীচে কেন মজুত এত অর্থ?

এদিকে নাসরুল্লাহের মৃত্যুর পরেই ইজরায়েলের রাজধানী-সহ একাধিক শহরে হামলা চালিয়েছিল ইরান। সেই হামলার পর ছেড়ে কথা বলতে চায়নি ইজরায়েলও। তারা জানিয়ে দেয়, ইরানকে যদি যথাযথ উত্তর দিতে না পারে, তাহলে গোটা বিশ্ব তাকে দুর্বল ভাববে। আর সেই পথে হেঁটেই ইরানে সাহস করে হামলা চালিয়ে বসেছে ইজরায়েল। শনিবার ভোর থেকে ইরানে একের পর এক হামলা চালিয়েছে নেতানিয়াহু সেনা। রোববার প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইসরায়েল ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন সিস্টেম বিকল করে দিয়েছে। তিনি বলেন হামলায় ইরানের প্রতিরক্ষা এবং ক্ষেপণাস্ত্র বানানোর সক্ষমতার মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। ইরানের কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে ইসরায়েলের হামলার প্রভাবকে খুব একটা গুরুত্ব দেননি। তারা বলেছেন বেশীরভাগ ক্ষেপণাস্ত্রকে রুখে দেয়া হয়েছে। আর যেগুলো ঠেকানো যায়নি সেগুলো আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সামান্য ক্ষতি করেছে। যদিও ওই হামলার পর প্রথমবারের মতো মন্তব্য করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলি খামেনেই। তিনি বলেছেন, “কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করবেন, তারা কীভাবে ইরানি জনগণের ইচ্ছে ও শক্তিকে ইসরায়েলি সরকারের কাছে পৌঁছে দেবেন এবং দেশ ও জাতির স্বার্থরক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন”। ইরানের প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ানও তার দেশের সর্বোচ্চ নেতার সুরেই কথা বলেছেন। মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি বলেছেন: “আমরা যুদ্ধ চাই না, কিন্তু আমাদের দেশ ও জাতির অধিকারকে সুরক্ষিত রাখব”।

ইরানের মদতপুষ্ঠ জঙ্গি সংগঠন হিজবুল্লাহেরা এতদিন অভিভাবকহীন অবস্থায় বেশ খানিকটা ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। অবশেষে তখতে রয়েছেন প্রধান। সেই জোরে ভর করেই কি এবার লেবাননে তো বটেই, পাশাপাশি ইরান এবং গাজায় ইজরায়েলের হামলার প্রত্যাঘাত ফিরিয়ে দেবে হিজবুল্লাহ? ঠিক কী পরিকল্পনা আঁটছে তারা? একই সঙ্গে ইরানই বা কী ব্যবস্থা নেবে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে? আপাতত গোটা বিশ্ব তাকিয়ে রয়েছে সে দিকেই।

More Articles