বাংলার কালীর সঙ্গে যেভাবে মিশে গেল ফ্রান্সের সারা-লা-কালী
Sara-La-Kali of France: রোমানি সম্প্রদায়ের সেন্ট সারা-লা-কালী। সারার গায়ের রঙ কালো। শরীরের গঠন এবং সাজপোশাক খ্রিস্টান ম্যাডোনার মতো।
আমার দাদু, যে সারাবছর পুজো-আচ্চা করত না, এমনকী ঠাকুরের আসনে নিয়মিত প্রণাম করতেও যাকে কোনওদিন দেখিনি, সে কালীপুজোর দিন নিরম্বু উপোস করত। বাঙালির দিওয়ালি নেই (ছিল না), হেমন্তে কালীপুজো আছে। হিম পড়া শুরু হলে, রাতভর কুয়াশার পাতলা চাদর জড়িয়ে বাঙালি দীপালিকায় জ্বালায় আলো।
দক্ষিণ ফ্রান্সে কামার্গ অঞ্চলে ‘কালীপুজো’ হয় ২৪ মে। পুজো পায় দেবী সারা-লা-কালী।
যে নামে সারা এবং কালী পাশাপাশি বসে, সেই নামের গভীরে লুকিয়ে রহস্যময় জটিল ইতিহাস, তাতে আর আশ্চর্য কী! এ এমন এক ‘ইতিহাস’ যার কিছুটা জানা, কিছুটা অনুমান, অনেকটা লোককথা, বাকিটা সময়ের সঙ্গে তাল রেখে ক্রমপরিবর্তনশীল।
রোমানি সম্প্রদায়ের সেন্ট সারা-লা-কালী। সারার গায়ের রঙ কালো। শরীরের গঠন এবং সাজপোশাক খ্রিস্টান ম্যাডোনার মতো। সারা-লা-কালীকে দর্শন করতে প্রতি বছর হাজার হাজার রোমানি ভক্তের সমাগম হয় ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী সেন্ট-মেরিস-দ্য-লা-মের গ্রামে।
রোমানিদের আমরা চলতি কথায় 'জিপসি' বলি। জিপসি নামের সঙ্গে মিশে রয়েছে বহুযুগব্যাপী অবজ্ঞা, অপমান এবং বর্তমানে আমআদমির মগজে গেঁথে যাওয়া স্টিরিওটাইপ — রোমানিরা চোর, অপরাধপ্রবণ, কালাজাদুতে তুখোড়। রোমানি জনগোষ্ঠী একটি বিশ্বব্যাপী ডায়াস্পোরা। আনুমানিক এগারো শতাব্দীতে অটোমান আক্রমণের সময় ভারত থেকে পালিয়ে মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে রোমানিরা। লেখক ইয়ান হ্যানককের অনুমান, বর্তমানে এক-তৃতীয়াংশ রোমানিদের বাস ইউরোপের বাইরে, যেমন দক্ষিণ ও উত্তর আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়ায়। নানা দেশে ছড়িয়ে থেকেও রোমানিদের আজও নিজস্ব কোনও দেশ নেই, সব দেশেই তারা পেরিফেরিতে থাকা মানুষ। তারা জন্ম-যাযাবর, চিরকালের বহিরাগত। ইতিহাস সাক্ষী, বারবার আক্রমণ এবং নিপীড়নের শিকার হয়েছে রোমানিরা। ইউরোপ এবং ছড়িয়ে থাকা উপনিবেশগুলিয়ে দাসপ্রথার শিকার হয়েছে, হলোকাস্টে নাৎসি বাহিনী ইউরোপের প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ রোমানি নাগরিকদের হত্যা করেছে। আধুনিক ইউরোপ জুড়ে রোমানিদের প্রতি বৈষম্যমূলক নীতি এবং মনোভাব আজও প্রবল।
এ হেন আজন্ম তাড়া খাওয়া উদ্বাস্তু রোমানিদের ব্যক্তিগত মানচিত্রে কামার্গের সেন্ট-মেরিস-দ্য-লা-মের একটি চিরস্থায়ী ল্যান্ডমার্ক। সামাজিক ভুলধারণা থেকে উত্তরণ এবং নিজের অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠানের একমাত্র পথ হিসেবে রোমানিরা খুঁজে নিয়েছে সারা-লা-কালীর আশ্রয়। সারা-লা-কালীর উৎসব রোমানি আইডেন্টিটির বার্ষিক উদযাপন। আমরা বাঙালিরা যেমন পুজোর সময়ে বাড়ি ফেরার দিকে তাকিয়ে থাকি, জগৎজোড়া রোমানিদের একমাত্র পিছুটান এই সারার উৎসব।
ইউরোপিয় রোমানি ইনস্টিটিউট ফর আর্টস অ্যান্ড কালচারের উপ-পরিচালক অ্যানা মিরগা-ক্রুশেলনিকা মতে সারা সার্বিকভাবেই একটি রোমানি প্রতীক। ঐতিহ্যবাহী ক্যাথলিক উপাসনার বাইরে বেরিয়ে সারা পূজিত হয় খ্রিস্টান ধারার সম্পূর্ণ বিপরীত পথে। “সারা একজন শক্তিশালী নারী, উর্বরতার প্রতীক এবং একজন রক্ষক, যিনি অত্যাচারিত, প্রান্তিক এবং পেরিফেরিতে থাকা মানুষদের যত্ন নেন,” বলেছেন মিরগা-ক্রুশেলনিকা।
আরও পড়ুন- সালঁ, সেলুন আর খুর-কাঁচির কিসসা
সারা-লা-কালীর এই নিরাপদ আশ্রয়ে হয়ে ওঠার সঙ্গে বাঙালির দক্ষিণাকালীর মাতৃরূপ বিবর্তনের খানিক মিল পাই। বাঙালির মা কালী আর্তের সহায়ক। ভারতীয় মিথোলজিতে কালীর দেবীরূপের অভ্যুত্থান নিয়ে নানা ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। পূর্ববৈদিক কালী কী করে বেদ-পুরাণে অন্তর্ভুক্ত হল, এই নিয়েও নানা গবেষণা হয়েছে। তান্ত্রিক ধারার বামাকালীর ভয়ঙ্কর রূপ যেমন জড়িয়ে রয়েছে মৃত্যুর সঙ্গে, দক্ষিণাকালীর রূপ সেখান থেকে কিছুটা সরে আসে। বামাকালীর পুজোয় সাহসী হওয়া প্রয়োজন, শ্মশানবাসী হওয়া জরুরি। এই কালী রক্ত চায়, এমনকী তার নিজের সন্তানের রক্ত চায়। নজরুলের লেখায় পরাধীন দেশের মেটাফর হিসেবে বারবার ফিরে আসে রক্তপিপাসু শ্মশানকালীর বর্ণনা — যুবসমাজের কাছে সে রক্তাক্ত বিপ্লব দাবি করে। বামাকালীর মূর্তিতে তার বাঁ পা এগোনো, ডান হাতে ধরা খড়্গ। সে ধ্বংসের দেবী। বাঙালি ঘরের দক্ষিণা কালীর মূর্তিতে ডান পা এগোনো, তার দুই দক্ষিণহস্তে বরদান এবং আশীর্বাদের ভঙ্গি। সে এসেছে তার সন্তানকে রক্ষা করতে। গল্পকথায় জানা যায়, তান্ত্রিক কালী থেকে বাঙালির মা কালী হয়ে ওঠার নেপথ্যে রয়েছে কবি রামপ্রসাদ সেনের গুরু কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশের স্বপ্নে পাওয়া আদেশ — কালীকে উপস্থাপন করতে হবে নতুন রূপে। এক গ্রামীণ বধূর ডান পা এগিয়ে ঘুঁটে দেওয়ার ভঙ্গিমা এবং কৃষ্ণানন্দকে দেখে সেই মেয়ের লজ্জিত হয়ে দাঁতের ফাঁকে জিভ রাখা নাকি দক্ষিণাকালী রূপের উৎস। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এশিয়ান ও মধ্যপ্রাচ্য সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপিকা এবং কালী গবেষক র্যাচেল ফেল ম্যাকডারমটের মতে, শিবকে ভক্ত হিসেবে চিত্রিত করে দক্ষিণাকালী রূপের জন্ম। নিজের অহংকার বিসর্জন দিয়ে কালীর চরণে আত্মসমর্পণ করে মোক্ষ প্রাপ্তির আশায় তার কাছে নিজেকে নিবেদন করে শিব। অর্থাৎ, দক্ষিণাকালীর সঙ্গে জড়িয়ে চরম ভক্তি, নিজেকে সমর্পণ করে বাঁচার আশ্বাস।
বাঙালির দক্ষিণাকালী উপাসনার সঙ্গে উদ্বাস্তু রোমানিদের সারা-লা-কালীকে আশ্রয় করে বাঁচার মধ্যে সাদৃশ্য খুঁজে অত্যুক্তি করব না, কিন্তু বাঙালির মা কালী আর ফরাসির সারা-লা-কালীর অভয়দাত্রী চিত্রায়ণে সাদৃশ্য অনস্বীকার্য।
সারাবছর সারা থাকে সেন্ট-মেরিস-দ্য-লা-মের গির্জায়। ক্যাথলিসিজম তাকে স্বীকৃতি দেয়নি। উদ্বাস্তু মানুষ তাকে উপাসনা করে দক্ষিণ ফ্রান্সের এই গির্জায় এতখানি জনপ্রিয়তা দিয়েছে যে খ্রিস্টান ধর্মতত্ত্ববিদদের কাছে এই 'ব্ল্যাক সারা' হয়ে উঠেছে 'সেন্ট' সারা-লা-নোয়ার। গায়ের রঙ কালো বলেই কি সেন্ট সারা আর কালীর নাম একইসঙ্গে উচ্চারিত হয়? নাকি, রোমানিদের ভারতীয় উৎস এর কারণ?
গবেষকরা একমত যে, রোমানিরা মূলত ভারতের বাসিন্দা। তাদের ভাষার শেকড়ে সংস্কৃত। জিনগত প্রোফাইল মিলে গেছে উত্তর-পশ্চিম ভারতের পাঞ্জাবি, মেঘওয়াল, গুজরাতি, ভীল, জৈন, গন্ড, খরিয়া এবং সৎনামী জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে। তাদের সংগীতে ভৈরবী সুরের আনাগোনা, সামাজিক ব্যবস্থায় পঞ্চায়েত ট্রাইব্যুনালের ছাপ। কিন্তু ভারতের যে অঞ্চলের সঙ্গে রোমানিদের যোগসূত্র, সেখানে কালীর পুজো জনপ্রিয় নয়। সারা-লা-কালীর উৎসবের সঙ্গে বরং বাঙালির দুর্গা-কালীপুজোর আশ্চর্যজনক মিল। উৎসব চলে এক সপ্তাহ ধরে। সারাকে নতুন বস্ত্র দিয়ে উৎসবের শুরু, যেমন মায়ের পুজোয় শাড়ি দেয় বাঙালিরা। উৎসবের শেষদিন সারার গালে কপালে চুমু দিয়ে তাকে আদর জানায় রোমানিরা। পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে না, পায়ে চুমো দিয়ে ভালোবাসা জানায়। যেমন স্নেহময় আদরে বিসর্জনের আগে বাঙালির ঘরে প্রতিমা বরণ হয়। এরপর সারাকে কাঁধে নিয়ে শোভাযাত্রায় বের হয় গ্রামবাসী। নাচ গানের মাধ্যমে, কামার্গ অঞ্চলের সাদা ঘোড়ার রাজকীয় মিছিলে শামিল হয়ে সারা পৌঁছয় সমুদ্রে। সেখানে স্নান করে শেষ হয় উৎসব। সারা-লা-কালী উৎসবরীতির সঙ্গে ইতিহাসবিদরা মিল পেয়েছেন বাঙালির পুজো শেষে প্রতিমা বিসর্জনের। রোমানি-কানাডিয়ান লেখক-ভাষাবিদ রোনাল্ড লি বলছেন,
“If we compare the ceremonies with those performed in France at the shrine of Sainte Sara (called Sara e Kali in Romani), we become aware that the worship of Kali/Durga/Sara has been transferred to a Christian figure... in France, to a non-existent "sainte" called Sara, who is actually part of the Kali/Durga/Sara (এই নামটি দুর্গা বা কালীর নামান্তর হিসেবে দুর্গাসপ্তশতী তেও পাওয়া যায়) worship among certain groups in India.”
মিরগা-ক্রুশেলনিকা জানান, কামার্গের রোমানি উৎসব এক বিরল ঘটনা। বিশ্বের সব জায়গা থেকে রোমানিরা একজোট হয়ে উদযাপন করতে আসে সারা-লা-কালীকে, আসলে এই উৎসব এক প্রান্তিক আইডেন্টিটি উদযাপনের সাক্ষীবাহী। রোমানিদের নিজের পরিচয় এবং জীবনের উপর নিয়ন্ত্রণ ঝালিয়ে নিয়ে গর্ব করার উৎসব। “এখানে আমরা (রোমানিরা) প্রধান চরিত্র।”
আরও পড়ুন- রেডিওর সুরে এক হয়ে যায় আজও ফরাসি আর বাঙালিরা?
সারা-লা-কালীর সঙ্গে বাঙালি কালীর যোগসূত্র নিয়ে তর্কও রয়েছে। ঠিক তর্ক নয়, বলা উচিত এর অপরপিঠে চালু রয়েছে একটি যুক্তিসঙ্গত বিকল্প গল্প। যিশুর মৃত্যুর পর লাজারুস, তার দুই বোন মার্থা ও মেরি, ম্যাক্সিমিন (যে পরে ফ্রান্সের এক্স-অঁ-প্রনঁস শহরের বিশপ হবে), মেরি সালোমে (জন এবং জেমস, এই দুই অ্যাপোস্লের মা) এবং মেরি জ্যাকব নৌকো করে এসে পৌঁছয় কামার্গ উপকূলবর্তী গ্রামে। পরে, এই তিন মেরির নামে গ্রামের নাম হয় সেন্ট-মেরিস-দ্য-লা-মের। গল্পে আছে, এদের সঙ্গে নৌকোয় ছিল এক মিশরীয় দাসী যার নাম সারা। মিশরদেশের পুরনো বন্দর শহর বারানিস-এর বাসিন্দা সারার গায়ের রঙ ছিল কালো। বারানিস অঞ্চলের লোকজনের আদি উৎস নাকি ভারতের মালাবার কোস্ট। আশ্চর্য সমাপতন! এই সারাকেই পরবর্তীকালে রোমানিরা সেন্ট সারা বলে মানতে শুরু করে, যদিও ক্যাথলিক চার্চ মতে, সারা সেন্ট নয়।
১৪৩৮ সালে প্রথম সেন্ট সারা-লা-কালীর সঙ্গে রোমানিদের জড়িয়ে থাকার উল্লেখ পাওয়া যায়, যদিও গ্রামে এই সেন্ট সারার শোভাযাত্রা শুরু হয় ১৯৩৫ সালে। এই বাইবেলভিত্তিক গল্পের সূত্র ধরে আধুনিক পপ-কালচারে সারা-লা-কালীকে বেশ কিছু সাহিত্যে দেখা যায়। যেমন ড্যান ব্রাউনের 'দা ভিঞ্চি কোড'-এর ভক্তরা বিশ্বাস করেন, সারা ছিলেন যিশুর কন্যা, যার পরিচয় গোপন রাখার জন্য দেশান্তরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ধর্মীয় ঐতিহাসিকদের কাছে ফ্রান্সের কামার্গের গির্জার ক্রিপ্টে এই 'ব্ল্যাক ম্যাডোনা' লাতিন আমেরিকা, ক্যারিবিয়ান, আফ্রিকা এবং পূর্ব ইউরোপের অন্যান্য ব্ল্যাক ম্যাডোনাদের মতোই এক নারীবাদী দেবী। ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাসে আধুনিক ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক এবং লেখক মালগোরজাতা ওলেশকিভিচ-পেরালবা বলেছেন, এই ধরনের মাতৃসুলভ দেবীর চিত্রায়ন সারা বিশ্বে বিভিন্ন সংস্কৃতিতে পাওয়া যায়। সারা-লা-কালী বিভিন্ন ঐতিহ্যের মিশ্রণ – হিন্দু দেবী কালীর সৃষ্টির এবং ধ্বংসের এক শক্তিশালী যোদ্ধার আধুনিক রূপ সারা, একইসঙ্গে সে মাতৃময়ী ব্ল্যাক ম্যাডোনা। সারার মধ্যে আমরা খুঁজে পাই শক্তি এবং আশ্রয়ের সহাবস্থান।
র্যাচেল ফেল ম্যাকডারমটের মতে, কালী আদ্যন্ত ভারতীয় এমন এক ধারণা যা ধর্মীয় গ্লোবালাইজেশনের মাধ্যমে ক্রমশ হয়ে উঠেছে পাশ্চাত্য নারীবাদের প্রতীক। ফ্রান্সে আমার অনেক বন্ধু-বান্ধবের গায়ে উল্কিতে কালীর মুখ বা বাংলায় বা হিন্দিতে লেখা কালীর নাম দেখেছি। পপ কালচারেও কালীকে নানা সময়ে ব্যবহার করা হয়েছে পাশ্চাত্যের শিল্পে। নিল গেইমানের 'আমেরিকান গডস' উপন্যাসের এক প্রধান চরিত্র কালী। রোলিং স্টোনস ব্যান্ডের জগদ্বিখ্যাত দুই ঠোঁট-জিভের লোগো নাকি কালীর থেকে ধার করা! ১৯৭২ সালে প্রকাশিত আমেরিকার প্রথম নারীবাদী ম্যাগাজিন Ms.- এর প্রথম সংখ্যার প্রচ্ছদে ব্যবহার করা হয় কালীর একটি রূপ যেখানে তার অসংখ্য হাত সমকালীন আমেরিকান নারীর দৈনন্দিন দায়িত্ব ও কাজের প্রতীক।
মিরগা-ক্রুশেলনিকা মতে, "সারা একটি রোমানি প্রতীক," যা ধীরে ধীরে হয়ে উঠেছে রোমানি নারীবাদের আইকন। রোমানিয়ার বুখারেস্টে মিহায়েলা ড্রাগানের রোমা নারীবাদী গুইভলিপেন থিয়েটার কোম্পানি এবং অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় সিমোনিদা সেলিমোভিচের 'বিবি সারা কালী' প্রদর্শনী উভয়ই আধুনিক শিল্পে রোমানি অধিকার এবং নারীবাদের রূপায়ন। ফিনিশ-রোমানি শিল্পী কিবা লুমবার্গের অন্যতম কাজ 'ব্ল্যাক সারা', যেখানে সারাকে একজন আধুনিক রোমানি নারী হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। দক্ষিণ ফ্রান্সের মার্সেই শহরে ইউরোপিয় এবং ভূমধ্যসাগরীয় সভ্যতার জাদুঘরে ২০২৩ সালে ইউরোপে রোমানি শিল্প সংস্কৃতি এবং ইতিহাস নিয়ে 'বার্ভালো' নামে একটি প্রদর্শনী হয় যেখানেও সারা-লা-কালীকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।
সারা-লা-কালী প্রাচীন এবং আধুনিক, দুই সময়েই উপাস্য। তাকে ঘিরে থাকা গল্প ও ধারণা বদলেছে সময়ের সঙ্গে। সারা-লা-কালী হয়ে উঠেছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী রোমানিদের মুখ। “আমরা চাই রোমানি সংস্কৃতি আবিষ্কৃত হোক, দেখা হোক, এবং বিশেষত সম্মানিত হোক,” বলেছেন মিরগা-ক্রুশেলনিকা। একইভাবে, প্রাচীনকাল থেকে সময়ানুগ পরিবর্তন হয়েছে ভারতীয় দেবী কালীরও। বাঙালির দক্ষিণাকালী হয়ে বিশ্বদরবারে নারীবাদের প্রতীক হয়ে ব্ল্যাক ম্যাডোনা সারার সঙ্গে মিলেমিশে গেছে কালী। তাই, কালীর থেকে সারার জন্ম, না সারার থেকে কালীর নবজন্ম, এই আলোচনার কোনও শেষ নেই, এমন বিশ্লেষণের চেষ্টাও হয়তো অবান্তর। আমি কেবল বিস্মিত হয়েছি দক্ষিণ ফ্রান্সের ‘কালীপুজো’ খুঁজে পেয়ে।